somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাঙ্গাল মস্তিষ্কের বি - উপনিবেশায়ন, নোকতা ২ঃ পাশ্চাত্য দর্শনের ঐতিহাসিক বেআদবি

১৪ ই মে, ২০২০ রাত ৩:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এক।

কোথায় দাঁড়িয়ে এ আলাপের শুরু?

সমাজের পুঁজিপতিদের জন্যে না হলেও, চিন্তাশীল - অনুভূতিসম্পন্ন মানুষদের কাছে ২০২০ সালের প্রেক্ষিতে সবচে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে এমন একটা সমাজব্যবস্থার তালাশ যা সর্বমত সহনশীল, যা মানুষের জৈবিক ও আচারগত বৈচিত্র্য, তথা কালচারাল প্লুরালিটি সংরক্ষণে সহায়ক। পুঁজির বিকাশের সাথে পুঁজিপতিদের শত্রুর বিচিত্রমুখিনতা আমাদের হয়রান করে। কখনো গায়ের রঙ, কখনো, ধর্মবিশ্বাস, কখনো ভৌগলিক অবস্থান, কখনো মনুষ্যপ্রজাতিকে অতিক্রম করে প্রকৃতি নিজেই দাঁড়িয়ে যায় পুঁজির বিকাশে শত্রু হয়ে। তখন প্রয়োজন দেখা দেয় নির্দিষ্ট বর্ণ - ধর্ম - সংস্কৃতির জাতিগোষ্ঠীর ওপর দমনপীড়ন চালিয়ে তাদের ভূসম্পত্তির দখল, ক্ষেত্রবিশেষে সমুলে নাশ, বা এথনিক ক্লিন্সিং। সেইসূত্রেই কখনো প্রয়োজন পড়ে বিশাল বনভুমি কেটে ফেলবার, পাহাড় উড়িয়ে দিয়ে রাস্তা বানাবার। এমন এক অস্থির সময়ে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যসহ মানুষকে তাঁর সম্মান নিয়ে বাঁচতে দেয়ার লড়াই - প্রধান লড়াই, অন্তত পৃথিবীর বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কাছে। পুঁজির বিকাশের পীঠস্থান পাশ্চাত্য - তাঁর বৈজ্ঞানিক ,গানিতিক, যুক্তিবাদী দার্শনিক জীবনব্যবস্থাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, তাদের উপনিবেশসমূহ হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার পর থেকেই, নানা হেজিমনির মাধ্যমে তাদের প্রাক্তন কলোনি, তথা আমাদের সামনে একমাত্র অনুসরণযোগ্য জীবনব্যবস্থা হিসেবে উপস্থাপন করে।

তাদের বয়ান তৈরিতে সহায়তাকারী পাশ্চাত্য মিডিয়ার প্রোপ্যাগান্ডায়, পাশ্চাত্যের বৈজ্ঞানিক জীবনব্যবস্থার বিপরীতমুখী যেকোনো স্থানিক চিন্তাচেতনা ধারন, বা তার প্রচারের প্রচেষ্টাকেই চিহ্নিত করে মধ্যযুগীয় , পশ্চাৎপদি চিন্তার স্টেরিওটাইপে। প্রাক্তন কলোনিগুলোর দীর্ঘ লালিত সংস্কার ও ধর্ম যেহেতু পশ্চিমা দর্শনকে তাদের পূর্বের ঠগবাজির সাথে মিলিয়ে সন্দেহের চোখেই দেখবে, কাজেই শুধু বিজ্ঞানভিত্তিক জীবন নয়, সাংবিধানিকভাবে সেকুলার হওয়াকেই পৃথিবীজুড়ে ভিন্ন ধর্ম - সংস্কৃতির মানুষে মানুষে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের একমাত্র পন্থা হিসেবে পশ্চিমা দেশের একশ্রেণীর "মুক্তমনা" তাত্ত্বিকরা বর্ণনা করেন। পৃথিবীর ম্যাপ খুলে বসলে দেখা যাবে, সাংবিধানিক ভাবে সেকুলার রাষ্ট্রের তালিকায় আছে অ্যামেরিকা , আছে রাশিয়া, আছে চীন, আছে আমাদের পার্শ্ববর্তি দেশ ভারতও। সেকুলার রাষ্ট্রসমূহের নামের সংক্ষিপ্ত তালিকা দেখার পর যুক্তি নির্ভর, বিজ্ঞানভিত্তিক সেকুলার সংবিধান মাত্রই ঘরে বাইরে মানবাধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব হয়, - আপ্তবাক্যটি আপনার ঠোঁটের কোনে একফালি বাঁকা হাসি ফুটিয়ে তুলছে কী?

পাঠক, আলোচনার শুরুতেই খোলাসা করি যে - আমার এ লেখাটি সংবিধান সেকুলার, বা ধর্মপরিচয়ভিত্তিক হওয়া উচিৎ কিনা , তা নিয়ে নয়। বরং "যুক্তি - বিজ্ঞান - আধুনিকতার" ট্যাগলাইনে বিগত প্রায় একশতক ধরে পাশ্চাত্য, এবং পাশ্চাত্য দর্শনের দার্শনিকেরা ঠিক কি তত্ত্ব ঔপনিবেশিক বঙ্গে প্রচার করেছে, এ ভু অঞ্চলের কোন কোন মূর্ত - বিমূর্ত বস্তু বা অনুভূতির প্রতিপক্ষ হিসেবে পাশ্চাত্য গণিত - যুক্তি ও জ্ঞানকে দাঁড়া করিয়ে দিয়েছে, এবং কীভাবে তাদের জ্ঞান অখণ্ডতা, এবং জ্ঞানের সর্বজনীন একমুখী ইতিহাসের তৈরি আপ্তধারণার বিরুদ্ধে টু শব্দটি উচ্চারণ করলেই অধিকাংশ সময় তাঁরা ফ্যাসিস্টদের মত গোঁড়া, পশ্চাৎপদ, মধ্যযুগীয় বর্বর হিসেবে স্টেরিওটাইপ করেছে , তাঁর একটি তত্ত্বতালাশ।

শুরু এবং শেষ বাদ দিলে আমার আলোচনা চারটি অংশে বিভক্তঃ

প্রথমত, ইউরোপীয় দর্শন ও তত্ত্বকে সর্বজনীন বলে প্রচার করবার ঐতিহাসিক তৎপরতার ছক নির্ণয়,
দ্বিতীয়ত, ইউরোপীয় বিজ্ঞান ও দর্শনের আপ্তধারণা সমূহের মধ্যে যে পরস্পর বিরোধিতা আছে, তাঁর সূত্রান্বেষণ,
তৃতীয়ত, প্রাচ্যদেশীয় দর্শনের ব্যাপারে তাদের প্রচারিত বিভিন্ন ভ্রান্তধারণা খণ্ডন,
এবং চতুর্থত, তত্ত্ব কীভাবে পণ্যের আকারে আমাদের মাঝে সাংস্কৃতিক উপনিবেশায়ন চালিয়ে যাচ্ছে, তাঁর মুখোশ উন্মোচন।


দুই।

ইউরোপীয় দর্শনের ইতিহাস , না সর্বজনীন দর্শনের ইতিহাস?

রায়হান রাইনের 'বাংলার দর্শন, প্রাক উপনিবেশ পর্ব' বইয়ের সূচনাপর্ব পাঠপূর্বক আমরা জানতে পারি, উনিশ শতকের গোড়ার সময়কাল থেকে নিয়ে গত শতকের চল্লিশের দশক পর্যন্ত পাশ্চাত্যে রচিত ইতিহাসের বইসমূহে ঔপনিবেশিক সংস্কৃতির আধিপত্য প্রতিষ্ঠার প্রয়াস বেশ খোলামেলাভাবেই চোখে পড়ে।

এই টাইমফ্রেমের মধ্যেই যখন পাশ্চাত্যে - 'দর্শনের ইতিহাস' রচনার প্রথম প্রয়াস হাতে নেয়া হয়, ইউরোপের পণ্ডিতদের দেখা যায় পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাসকেই সমগ্র পৃথিবীর দর্শনের সর্বজনীন ইতিহাস বলে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টায় রত অবস্থায়। তাঁরা দাবী করেন, ইউরোপেই সুসমঞ্জস্য চিন্তার প্রথম আবির্ভাব ও বিকাশ ঘটে। তাই তাঁরা দর্শনের ইতিহাসকে খ্রিস্টপূর্ব ও পরবর্তী ইতিহাসকে চারটি যুগে ভাগ করে তাঁর বিবরণকে বিশ্ব দর্শনের ইতিহাস বলে প্রচার করার চেষ্টা করেন। যদিও, এটা তাদের অজানা ছিল না যে, প্রাচীন গ্রিসে দার্শনিক থেলিসের জন্মের আগেই প্রাচীন মিসরীয়দের মাঝে দার্শনিক চিন্তার একটি ধারা প্রবহমান ছিল , যার সম্বন্ধে প্লেটো এবং অ্যারিস্টটল ওয়াকেফহাল ছিলেন, এবং তাদের লেখার মাঝেও এ বিষয়গুলি এসেছে। অ্যারিস্টটল তার রচনায় মিসরীয় পুরোহিতদের পৃথিবীর আদি দার্শনিক হিসেবে উল্লেখ করেন।

উল্লেখ্য যে তখন , এবং তারও প্রায় হাজার বছর আগে, ভারতীয় উপমহাদেশে বুদ্ধ, এবং বৈদিক বা বেদ - উপনিষদের দর্শন বিদ্যমান ছিল। হয়তো সরাসরি সংস্পর্শের অভাবে অ্যারিস্টটলের লেখায় তাঁর উল্লেখ নেই। কিন্তু দর্শনের ইতিহাসের আধুনিক রচয়িতারাও যখন জেনেও এ সত্যটি এড়িয়ে যান, তখন তাদের বর্ণবাদি দৃষ্টিকোন স্পষ্ট হয়।

ফ্রাঙ্ক থিলির মত পণ্ডিত ব্যক্তি তাই এমন বক্তব্য প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেন যে - ষষ্ঠ শতকের গ্রিসের আয়োনিয়ানদের মধ্যেই প্রথম সুসমঞ্জস চিন্তার উদ্ভব। থিলির দর্শনের ইতিহাসের বইটির নামকরণেই তাঁর বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গী স্পষ্ট। তিনি লেখেন পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস, কিন্তু বইটির নাম দেন - 'আ হিস্টোরি অফ ফিলসফি', বা দর্শনের ইতিহাস, যেটি দর্শনের এমন এক ইতিহাস, যাতে আমার - আপনার উপস্থিতি নেই, যাতে প্রাচ্যদেশীয় মানুষদের চিন্তার ইতিহাস সযত্নে এবং সুচতুরভাবে ছেঁটে ফেলা হয়েছে। শুধু ভারতের না, দূর প্রাচ্যের চীন - জাপানের সমৃদ্ধ ইতিহাসও তিনি উহ্য রেখে বিশ্ব দর্শনের ইতিহাসের আলাপ চালিয়ে গেছেন। অথচ, জ্ঞানতাপস আবদূর রাজ্জাক ফাউন্ডেশন আয়োজিত সিরিজ বক্তৃতামালায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদের চীনের দর্শন - রাষ্ট্রনীতি ও ইতিহাস সংশ্লিষ্ট এক বক্তৃতায় শুনেছিলাম - পৃথিবীর সকল জাতির মধ্যে নিজের সভ্যতার ব্যাপারে সবচে প্রাচীনকাল থেকে লিখিত ইতিহাসের বর্ণনা পাওয়া যায় চীনাদের মধ্যে। আবার পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর বই - এ গ্লিম্পস অফ ওয়ার্ল্ড হিস্ট্রিতে তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত মহাচীন যে বারবার পাশের ছোট সাম্রাজ্যবাদী দেশ জাপানের দ্বারা শোষিত হয়েছে, তার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন যে - চীনের গৌরব ও নির্ভরতার জায়গা ছিল তাদের সংস্কৃতি, তাদের দর্শনমুখী জীবন। ফলে তাঁরা ভায়লেন্সের পথ বেছে নেয় নি। পৃথিবীর আর কোন জাতির এত প্রাচীন, এত সমৃদ্ধ, এত বিস্তৃত ইতিহাসের আলোচনা লিখিত অবস্থায় নেই।

থিলির মত একই সাম্রাজ্যবাদী দৃষ্টিকোন থেকে বিশ্ব দর্শনের ইতিহাস লেখার চেষ্টায় রত অবস্থায় পাওয়া যায় উইল ডুরান্ট, এফ. কপলেস্টন সহ আরও অনেক পণ্ডিতকেই।

তাদের এই প্রচেষ্টার ফসল ঘরে তুলতে তাদের বেগ পেতে হয় নি। আজকের বাংলাদেশে বসে নিজের পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি নিয়ে একটু চিন্তা করে দেখুন - যারাই টুকটাক দর্শনের জ্ঞান কপচায়, তাদের মুখে কোন দার্শনিকদের নাম আপনি সবচে বেশী শোনেন? সক্রেটিস? অ্যারিস্টটল, প্লেটো? বা যারা আর একটু পড়াশোনা করার চেষ্টা করে, তাদের মুখে দেকার্ত, কান্ট , বা হেগেল? বা হাল আমলের নিটশে, বা অস্তিত্ববাদী দর্শনের সূত্র ধরেই জ্যা পোল সারত্রে? পশ্চিমা দর্শনের ইতিহাসকে বিশ্ব দর্শনের ইতিহাস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে তাঁরা যে সফল - তাঁর প্রমাণ হচ্ছে এই যে - নিজেকে উন্নত চিন্তার অধিকার প্রমাণ করার চেষ্টায় রত অনেক ভুঁইফোঁড় বাঙ্গালীই হুটহাট এই পাশ্চাত্য দার্শনিকদের নাম ঝেড়ে , তাদের তথ্য অধিকাংশ সময়ে পরম্পরাহীনভাবে উপস্থাপন করে তর্কে প্রবৃত্ত হয়, এবং জিততে চায়। এভাবে স্মার্টনেসের সংজ্ঞায়ন হয়, এবং বাঙ্গালীর মাটির নীচে চাপা পড়ে যাওয়া নৃতাত্ত্বিক আত্মপরিচয়ের প্রত্নতাত্ত্বিক পুনরাবিষ্কারের সম্ভাবনা প্রতিবার মাটির আরও এক মাইল নীচে চাপা পড়ে যায়।

সাম্প্রতিক সময়ের দর্শনের ইতিহাস রচয়িতারা অবশ্য এ হীন কর্মকাণ্ড থেকে সরে এসেছেন। প্রসঙ্গতই এসে যায় জন শ্যান্ড, হ্যারলড টাইটাস, বা বার্টান্ড রাসেল ও তাদের দর্শনের বইয়ের নাম। ওয়েস্টার্ন অ্যাকাডেমিয়ায় এখন ভারতীয়, বা চৈনিক, বা মুসলিম দর্শনের ওপর আলাদা বিভাগ খোলা হয়েছে, যদিও সংখ্যায় তা অপ্রতুল। এর একটা কারণ রায়হান রাইন উল্লেখ করেন যে - ঔপনিবেশায়নের ফলশ্রুতিতে জন্ম এসকল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোই দাঁড়িয়ে আছে কাঠামোগতভাবে লব্ধ ঔপনিবেশিক জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে।

তিন।

গণিত - যুক্তি - বিজ্ঞান এবং "আধুনিকতা" কালচারাল প্লুরালিটি সংরক্ষনে সক্ষম ?


সারা পৃথিবী জুড়ে গণিত - যুক্তি - বিজ্ঞান এবং আধুনিকতাকে এক লাইনে, একটা শ্লোগান আকারে প্রচার করা হয়। মিডিয়ায়, চায়ের টেবিলের আড্ডায়, ক্লাসরুমে, দেয়াল লিখনে। সাহিত্য , সঙ্গীত, চিত্রকলা, সিনেমা - ইত্যাদি বিষয়ের ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতিভিত্তিক পরম্পরা আছে। উদাহরণস্বরূপ, পাশ্চাত্যের ধ্রুপদ সঙ্গীত , এবং আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশের ধ্রুপদ সঙ্গীত। পরম্পরা ভিন্ন, প্রকাশ ভিন্ন, সবকিছুই ভিন্ন।

কিন্তু, গণিত , বা যুক্তিভিত্তিক যে বিজ্ঞানচর্চা আমরা করি - তা কি ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতিতে ভিন্ন ভিন্নভাবে চর্চিত হয়? চাইনিজ গণিত, বা ভারতীয় গণিত - বলে কিছু শুনেছেন, বা শুনে থাকলেও - প্র্যাকটিস করার সুযোগ হয়েছে কখনো?

৯৯ শতাংশ বাঙ্গালীর উত্তর হবে, না।

কাজেই, অন্তত এ একটা বিষয়ে আমরা প্রথমেই সম্মত হতে পারি যে, গণিত - গণিতের সূত্র ধরে যুক্তি - যৌক্তিক চিন্তার সূত্র ধরে বিজ্ঞান, এই চেইনের উৎসমুখ পাশ্চাত্যে? পশ্চিমা গণিতবাদ ও যুক্তি প্রক্রিয়ার যে একটা সর্বজনীন বস্তুনিষ্ঠতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এ বিষয়ে কোন সংশয় নেই।

এই প্রসঙ্গে আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে পরবর্তী, এবং সর্বজনীনভাবেই খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন হল - পশ্চিমা দর্শন যে গণিত, যুক্তি ও বিজ্ঞান-প্রযুক্তিনির্ভর জীবনের স্বপ্ন আমাদের দেখায়, তা কী কালচারাল প্লুরালিটির পক্ষে যায়, না বিপক্ষে কাজ করে?


আর বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে একই বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল, এদেশে যারা মুক্তবুদ্ধির চর্চাকে পাশ্চাত্যের ধারাবাহিকতায় আসা বিজ্ঞানমুখিনতায় আত্মসমর্পণ হিসেবে চিহ্নিত করেন, তাঁরা আমাদের ঠিক কি কি বস্তুর বিপরীতে বিজ্ঞানকে প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করান? আমাদের ধর্ম, আমাদের সংস্কৃতি, এবং আমাদের মূল্যবোধের সীমারেখা নির্ণয় করবে বিজ্ঞান?

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের করায়ত্ত পৃথিবী কি ইউটোপিয়া, না ডিসটোপিয়া?


প্রথম প্রশ্ন, গণিত ও কালচারাল প্লুরালিটির প্রসঙ্গে আগে আসি। আলোচনা শুরু করি আর্নেস্ট ক্যাসিরারের নামক বিংশ শতাব্দীর এক প্রখ্যাত জার্মান কালচারাল ফিলসফারের আলোচনা দিয়ে। আর্নেস্ট ক্যাসিরারেরঃ দা লাস্ট ফিলোসফার অফ কালচার নামে, প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত এক বইয়ে ক্যাসিরারকে আমরা লক্ষ্য করি গণিতকে এমন একটি দৃষ্টিকোন থেকে দেখার, এবং ভাষার বিপরীতে তার টেন্ডেন্সিগুলো চিহ্নিত করবার চেষ্টায় রত অবস্থায়, যা গণিত এবং বিজ্ঞানের দিগ্বিজয়ী রথযাত্রার পেছনের চালিকাসূত্রকে তালাশ করে।

ক্যাসিরার বলেন -

"Language possesses no general principle of order. Each word has its own relatively limited radius of action, beyond which its force doesn't work. Language still lacks the means of combining several different spheres of signification into a new linguistic whole designated by a unitary form.This final achievement belongs to mathematical natural science. Number emerges as the indispensable instrument of unification, for it alone has the power to organize heterogeneous sensory impressions into homogeneous ordered series. How else, except by translation into numerical terms, can the red of the strawberries and the blast of a trumpet be rendered commensurable? Number is a kind of universal acid, by means of which the plurality of objects and properties is dissolved into a functional whole. "

প্যারাটির আক্ষরিক অনুবাদে যদি যাই, দেখা যাবে ক্যাসিরার বলছেন - ভাষার সুনির্দিষ্ট কোন ক্রমানুসার তৈরির সক্ষমতা নেই (যেমন ধরুন, ১ এর পর ২ আসে, ২ এর পর ৩, এরকম কোন শব্দের শৃঙ্খলাবদ্ধ স্রোত নেই) । প্রতিটি শব্দের অর্থ এবং তাৎপর্যের একটা নির্দিষ্ট গণ্ডি আছে , তাঁর বাইরে সে কাজ করে না। ভিন্ন ভিন্ন সিগনিফাইয়ারকে একটি নির্দিষ্ট স্রোতে প্রবাহিত করবার জন্যে ভাষার আরও দূর পথ অতিক্রম করা বাকি। এই কাজটি করবার জন্যে আবিষ্কার হয়েছে প্রাকৃতিক গানিতিক বিদ্যার। সংখ্যাতত্ত্বের জন্মই হয়েছে ইউনিফিকেশনের জন্যে কারণ, শুধুমাত্র সংখ্যারই সক্ষমতা রয়েছে হেটেরজেনাস স্নায়বিক অভিজ্ঞতাকে হোমোজেনাস ধারাবাহিকতায় সাজাবার। নইলে কিভাবেই বা একটা আপেল কতটুকু লাল, বা একটা বাঁশি কত জোরে বাজছে - এটাকে অঙ্কে / সংখ্যায় অনুবাদ করা যায়? সংখ্যা হচ্ছে সেই সার্বজনীন অ্যাসিড, যা বস্তুর বৈচিত্র্যকে গলিয়ে কর্মক্ষম একটা এককে পরিণত করবার ক্ষমতা রাখে।

সহজ করি যদি বলি, ভাষা, বাই ডেফিনেশন অ্যান্ড ফাংশান, তার সীমাবদ্ধতার কারণে কালচারাল প্লুরালিটির পক্ষে যায়। পৃথিবীজুড়ে তাই বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন ভাষা ভিত্তিক সমাজ - সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। কিন্তু সমাজ বহুমুখী হলেও ভিন্নভিন্ন সংস্কৃতির লোকেদের একটা সাধারণ বিনিময় মাধ্যম তো লাগবে, না হলে পারস্পারিক লেনদেন হবে কি করে? ভাষার এই সীমাবদ্ধতার জায়গা থেকে জন্ম হয় সংখ্যাতত্ত্বের। সংখ্যার এমনি গুণ, যে তা যেকোনো রকমের প্লুরালিটিকে অ্যাসিডের মত গলিয়ে হোমোজেনাস আইডেন্টিটিতে পরিণত করতে পারে।

তাই এ বিষয়ে আমরা একমত হতে পারি যে - গণিত, তাঁর জন্মের সূত্র ধরেই কখনো সাংস্কৃতিক প্লুরালিটি বা ডাইভারসিটির পক্ষে যাবে না। এমনকি মানুষের মূল্যবোধ ও সংস্কৃতি পাঠেও গণিতের সক্ষমতা নগণ্য, প্রায় নেই বললেও ভুল হয় না।

উদাহরণ দিই - আপনার হাতে একহাজার টাকার দশটি নোট দিয়ে বললাম, গুনে বলুন কতোটাকা। আপনি দু'বার গুনে নিশ্চিত হয়ে বললেন, দশহাজার। আবার একটু পর আপনি বাইরে গিয়ে দেখলেন, আপনার অপেক্ষায় কিছু মানুষ দাঁড়িয়ে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ওখানে ক'জন মানুষ। আপনি গুনে বললেন - দশজন মানুষ।

আমার প্রশ্ন হল, হাজারটাকার দশটি নোট যেমন শুধুই হাজার টাকার দশটি নোট, দশজন মানুষ কি সেই অর্থেই দশজন মানুষ?

উত্তর হল, না। এই দশ জন মানুষের প্রতি জনের একটি আলাদা গল্প আছে, ইতিহাস আছে, মন আছে, মনন আছে, সংস্কৃতি আছে, দুর্বলতা আছে, শক্তি আছে। এই দশজন মানুষ চাপের মুখে হয়তো একশো জন মানুষ। এই দশজন মানুষ, প্রণোদনার অভাবে হয়তো একজন মানুষও না।

আবার একজন মানুষ স্বাভাবিক অবস্থায় কতটুকু শব্দসীমা পর্যন্ত শব্দের উপদ্রব সহ্য করতে পারে, সে বিষয়ে একটা ধরাবাঁধা গাণিতিক লিমিট প্রযুক্তি আমাদের দেয়। কিন্তু মানুষের মুড , শারীরিক অবস্থা, অবস্থানের তারতম্যে তাঁর চে কম শব্দদূষণেও যে সে আধপাগল হয়ে যেতে পারে - এর উপর গণিতের আলোকপাত করার সক্ষমতা নেই।

কাজেই গণিতের কাজ সরলীকরণ, সামান্যীকরণ। সব সমস্যার সার্বজনীন টোটকা সমাধান দেয়া, যেটা ক্ষেত্রবিশেষে কাজে লাগে।

নৈতিকতা, বা মূল্যবোধ সৃষ্টিতেও গণিতের কোন ভূমিকা নেই।

কতটুকু ইউরেনিয়াম জমা করলে একটা পারমাণবিক বোমা তৈরি করা সম্ভব , তাঁর নিখুঁত সমাধান গণিত আপনাকে দিতে পারবে, টেকনিক আপনাকে বিজ্ঞান শিখিয়ে দেবে, কিন্তু তা যে কোন অবস্থায়ই মানুষের উপর ছুঁড়ে মারা উচিৎ হবে না - আপনার মধ্যে সেই নৈতিকতাবোধ তৈরির দায়ভার গণিত নেয় না।

একই দোষে দোষী বিজ্ঞানও। দোষটা আসলে ঠিক বিজ্ঞানের উপর দেয়া নয়, বিজ্ঞানকে যারা ঈশ্বরের স্থান দিতে চান, তাদের।

আপনি যদি বিবর্তনবাদে বিশ্বাসী হন, আপনাকে বিশ্বাস করবেন মানুষ বাঁদরের একটা উন্নত শ্রেণীবিভেদ। হালের স্টার জিউইশ হোমোস্যাক্সুয়াল হিস্টোরিয়ান ইউভাল নোয়াহ হারারির বই পড়ে আপনি জানবেন যে মানুষের নৃতাত্ত্বিক ইতিহাসে বর্ণিত হয় হোমো রুডলফেনসিস, হোমো ইরেক্টাস এবং হোমো নিয়েন্ডারথ্যালেনসিসের চামড়া খসিয়ে মানুষের হোমো স্যাপিয়েন্স বা হোমো জিনধারীদের মধ্যে বিজয়ী গ্রুপে পরিণত হবার গল্প।

কিন্তু বিবর্তনবাদে বিশ্বাসী আধুনিক মানুষ যখন চিড়িয়াখানার খাঁচায় আটকে রাখা বাঁদরকে দেখতে যায়, গিয়ে বাদাম ছুঁড়ে দেয়, বিবর্তনবাদ কিন্তু তার নৈতিকতার জায়গায় চাড় দিয়ে এ মূল্যবোধ তৈরি করার দায়িত্ব নেয় না যে - মিউটেশনের রেসে পরাজিত ভাইদের খাঁচার মধ্যে আটকে রাখতে নেই।

আলোচনার সার হচ্ছে এই যে, গণিত - যুক্তি ও বিজ্ঞানকে বাংলাদেশে, অথবা পৃথিবীর যেকোনো দেশের ভাষা, সংস্কৃতি ও ধর্মের প্রতিরূপ হিসেবে প্রতিস্থাপিত করার চেষ্টার গোঁড়ায় গলদ আছে, কারণ তা কখনোই মানুষকে তার পেছনের হাজার বছরের সংস্কার সংস্কৃতি সহ পরিপূর্ণ এবং ব্যাপক সম্ভাবনাময় একটি আনরিডেবল প্রাণী হিসেবে চিহ্নিত করতে পারবে না।

এ ক্ষেত্রে খুব জোর দিয়ে এটা বলা প্রয়োজন যে বিজ্ঞানমুখীনতা বা প্রযুক্তি নির্ভরতায় আমাদের আপত্তি থাকার কথাই আসে না, কিন্তু যুক্তি , বিজ্ঞান, গণিত - ইত্যাদির মোড়কে কে বা কারা আমাদের কি ধারণাকে প্রতিস্থাপিত করতে চাচ্ছে এ সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টি সতর্ক থাকতে হবে।

পাশ্চাত্যের গণিত ঔপনিবেশিকতার ছায়ামুক্ত?

পুনরায় ফিরে আসি রায়হান রাইনের কাছে, তিনি তাঁর 'বাংলার দর্শন, প্রাক উপনিবেশ পর্ব' বইয়ে বলেন -

"উপনিবেশ মেট্রোপলিটনের কর্তৃত্বের ভেতরে থাকে কেন্দ্রীভূতকরণ ও একীভবনের নীতি। এ নীতির নিগড়ে জল ঢালে যুক্তির
সামান্যীকরণ ও সার্বজনীনতার মিথ, এবং বস্তুনিষ্ঠতার ধারণা। পশ্চিমা জ্ঞান সার্বভৌম যুক্তির ধারণা দেয় এবং এটা বিশ্বাস করাতে চায় যে সরলীকরণ ও একীভবনের মধ্যেই সমাজের প্রগতি ও আলোকময়তা নিহিত আছে। প্রকৃতপক্ষে 'যুক্তি' - সার্বভৌম নয়, অভিজ্ঞতার পূর্বগামী বা প্রাকসিদ্ধ প্রক্রিয়াও নয়। যুক্তি প্রক্রিয়া যে ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে অনুমিত সিদ্ধান্তে পৌঁছায় , তা সমাজ ও মূল্যবোধ থেকেই আসে। অন্যদিকে যে গণিতশাস্ত্র বস্তুনিষ্ঠতার ধারণা দেয়, সেই গণিতও মূল্যবোধ নিরপেক্ষ নয়। অ্যালেন জে বিশপ বলেন - পশ্চিমা গণিত সারাবিশ্বে সার্বজনীন হিসেবে গৃহীত হয়েছে এওং সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের গোপন অস্ত্র হয়ে উঠেছে এ গণিত।"

গণিতকে নিছক একটি প্রতীকী ব্যবস্থা হিসেবে দেখা যায় কি? নাকি এর পলিটিক্যাল ইন্সট্রুমেন্টালাইজেশন সম্ভব?

রাইন আমাদের স্মরণ করিয়ে দেন পাশ্চাত্যের গণিতের সাথে জড়িয়ে থাকা কতিপয় মূল্যবোধঃ

প্রথমত, পশ্চিমা গণিত পশ্চিমা যুক্তিবাদিতার অনুপ্রেরণা দেয়, শক্তি সম্পর্কে ওয়াকেফহাল করে, যুক্তিভিত্তিক হতে উদ্দীপনা জাগায় এবং যুক্তিবাদের পূর্ণতার স্বপক্ষে কথা বলে। (ভালো শুনাচ্ছে শুনতে)

দ্বিতীয়ত, পশ্চিমা গণিত যে বিশেষ বস্তুনিষ্ঠতার ধারণা দেয়, সেটা জগতকে উপলব্ধি করার এক বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গীতো বটেই, কিন্তু এই বস্তুনিষ্ঠতার দৃষ্টিকোণ নিয়ে নানা বিতর্ক আছে। ( সন্দেহর শুরু। ঔপনিবেশিক মতলবের ঘ্রাণ পাওয়া যায় যায় অবস্থা।)

তৃতীয়ত, সর্বজনীনতা ও সাধারণীকরণের সুবিধা দেয় এই গণিত। এতে বস্তুকে প্রতিবেশ - পরিস্থিতি থেকে বিচ্ছিন্ন করে বিমূর্তভাবে স্থাপন করা হয়। অথচ কোন সংস্কৃতি যদি এমন বিশ্বাসে উপনীত হয়, যে কোন বস্তু চারপাশের অন্য বস্তুগুলোর সাথে আবশ্যিক সম্পর্ক নিয়েই অস্তিত্বশীল, তাহলে প্রতিবেশ পরিস্থিতি থেকে বিযুক্ত বস্তুর কোন অস্তিত্বই থাকে না। ( বস্তুর চারপাশের অন্যান্য বস্তুর সাথে আবশ্যিক সম্পর্কের ব্যাপারে নির্মিত একটা ব্লকবাস্টার হলিউড মুভি অ্যাভেটার। যদি রাইনের আলচনায় ফিরে আসি, এই স্থান থেকে পাশ্চাত্য গণিতের সর্বজনীনতার সাথে বৃহৎ বঙ্গের মানুষের বিরোধের সূত্রপাত।)

চতুর্থত, গণিতের সঙ্গে আছে ক্ষমতা, ও নিয়ন্ত্রণের যোগ। কারণ, প্রায়োগিক ও কৃৎকৌশলে ব্যবহৃত হয় গণিতের ধারণা, ব্যবহৃত হয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে, যা ভৌত ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। ( এই স্থলে এসে পাশ্চাত্য গণিতের ঔপনিবেশিক চেহারার মুখোশ উন্মোচন।)

আমাদের মনে রাখতে হবে যে, পশ্চিমা গণিত এখন মোটামুটি পৃথিবীর একমাত্র গানিতিক ভাষা হিসেবে গৃহীত। পশ্চিমা গণিতের সর্বজনীনতার পেছনে এর সহজবোধ্যতা তো আছেই, সাথে আছে পশ্চিমা মূল্যবোধের সাথে সংশ্লিষ্ট সামান্যীকরণের এজেন্ডা, যা উপনিবেশিক, বা আমাদের বৃহৎ বঙ্গের সংস্কৃতিকে পরাভূত করতে সাহায্য করে।

কাজেই গানিতিক যুক্তি ও বিজ্ঞান সংজ্ঞাগত, বা প্রায়োগিক অর্থেও সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ নিরপেক্ষ নয়।

নিরপেক্ষ থাকা মানে মাঝামাঝি অবস্থানে থাকা। বিজ্ঞানের অবস্থা বরাবরই রেডিক্যাল। হ্যাঁ, বা না। কিন্তু মানুষের অস্তিত্ব ও মূল্যবোধ, সংস্কার ও সংস্কৃতি সংক্রান্ত সব ইস্যুকে হ্যাঁ বা না এ সীমিত করা যায় না। আমি যদি জিজ্ঞেস করি - মানুষ কি প্রাণী? উত্তর সরাসরি দেয়া যাবে না। আপনি জিজ্ঞেস করবেন - প্রাণী কোন অর্থে মিন করছেন?যদি প্রাণী বলতে পরিশীলিত অনুভূতিহীন জানোয়ার বলেন, মানুষ তা নয়। আবার কখনো কখনো এই মানুষের কাজ দেখেই মনে হয় যে সে নিম্নশ্রেণীর মুক - বধির জানোয়ারেরও অধম।

বার বার ফিরে আসছি একটি প্রসঙ্গে, স্মরণ করিয়ে দিতে চাইছি যে - একবিংশ শতাব্দীর পৃথিবীতে মানুষ হিসেবে আমাদের মূল লক্ষ্য কালচারাল ডাইভারসিটি বজায় রেখে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। যদি পৃথিবীব্যাপী (পাশ্চাত্য) বিজ্ঞানমুখী "আধুনিক" জীবনব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হয়, তাহলে তার মূল লড়াইটা হবে, প্রথমত সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে দুর্বলের লড়াই, যাতে দুর্বল হারাবে তার ইতিহাস, তার পরিচয়, তার ধর্ম, তার সংস্কৃতি। আর যদি পৃথিবী থেকে মানুষের ধর্ম, মানুষের সংস্কৃতি, মানুষের ইতিহাস - ঐতিহ্য , সব গোঁড়া থেকে উপড়ে ফেলে বিজ্ঞানমুখী "আধুনিক" জীবন গড়া সম্ভব হয় ও, আমাদের মনে রাখতে হবে যে - তা পৃথিবী থেকে হিংসা, ঘৃণা, যুদ্ধ ইত্যাদি একদম ডিটারজেন্ট দিয়ে সাফ করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। কারণ, যদিও একটা আপ্তবাক্য আমরা প্রায়ই শুনি যে - কেবল ব্লকহেডেড ধার্মিকরাই ভায়োলেন্ট, সত্য কথাটি হচ্ছে - মানুষ চারিত্রিকভাবেই ভায়োলেন্ট। সর্বময় শান্তি কেবল স্বর্গেই পাওয়া যাবে, যদি তা আদৌ দেখার সৌভাগ্য হয়।

এই যদি হয় আলোচনার কনক্লুশান, তবে আর বিজ্ঞানভিত্তিক আধুনিকতাকে মানুষের সংস্কারের বিরুদ্ধে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড় করিয়ে দেয়া কেন? প্রযুক্তি ও মূল্যবোধ নিজ নিজ জায়গা থেকে আমাদের জীবনকে আরও ঋদ্ধ করে চলুক।

চার।

পাশ্চাত্য দর্শন ও দার্শনিকদের বেআদবি কন্টিনিউডঃ আল্পস পর্বতমালা থেকে প্রবাহিত সত্যের ধারা ও ম্যাডম্যাক্স ফিউরি রোড

পাশ্চাত্য দর্শনের আরও সাম্প্রদায়িক, ঔপনিবেশিক আপ্ত ধারণা হল -

১। দর্শনের একটি সর্বজনীন ইতিহাস আছে,
২। সত্যেরও অভিন্ন রূপ একটি , এবং
৩। বিভিন্ন দর্শনের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।


প্রচ্ছন্নভাবে এসকল ধারণা ইউরোপীয় দার্শনিকদের মধ্যে বরাবরই ছিল। পাশ্চাত্য দর্শনের প্রভাব বলয়ের মধ্যে থাকা মিসরীয়, কিংবা আরবী দার্শনিকরাও তা আদতে স্বীকার করেই নিয়েছিলেন। যেমন খোরাসানের দার্শনিক আল ফারাবি ভাবতেন, মহৎ দার্শনিকদের চিন্তা হবে পরস্পরের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। রায়হান রাইন উল্লেখ করেন, ফারাবি চেষ্টা করেছিলেন দার্শনিকের সত্য আর ধর্মের সত্যের ভেতরকার বিরোধ দূর করতে। তাঁর বিশ্বাস ছিল, দার্শনিকদের কেবল একটি সম্প্রদায় থাকবে, সেটা হবে সত্যাশ্রয়ী সম্প্রদায়। এইভাবে , নিজেদের দর্শনের ইতিহাসকে দর্শনের সর্বজনীন ইতিহাস বলা, বা সত্য - এবং জ্ঞানের একটি অভিন্ন রূপসূত্র থাকার বয়ান, মধ্যযুগের বাতিঘর বিবেচিত আরব দার্শনিকদের কাছে সেল করতে পারার বদৌলতে পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস রচয়িতাদের আর নিজেদের এজেন্ডায় অগ্রসর হতে বাঁধা পেতে হয় নি।

"এনলাইটমেন্ট" পরবর্তী কার্তেসীয় যুক্তিবাদ জ্ঞানের সর্বজনীনতা ও অখন্ডতার ধারণাকে জোরালো করেছে, পরবর্তীকালে এ আপ্তধারণার বিকাশ ঘটেছে ইমানুয়েল কান্টের আলোকপ্রাপ্তির বয়ানের মধ্য দিয়ে। কান্ট জ্ঞানের সম্ভাব্যতার সাথে যুক্ত করেন বুদ্ধি ও সামান্যীকরণের ধারণা। এই মত অনুযায়ী অভিজ্ঞতার ওপর পৌরহিত্য করে বুদ্ধির তৎপরতা এবং যুক্তি - বুদ্ধির সক্রিয় ভূমিকার ফলেই সম্ভব হয়ে ওঠে জ্ঞান। জ্ঞানের সর্বজনীনতার ও অখণ্ডতা সংক্রান্ত এ তৎপরতা পশ্চিমা পণ্ডিতদের উৎসাহিত করেছে এমন একটি চিহ্নতত্ত্ব গড়ে তুলতে , যা দিয়ে মানবজ্ঞানের সমস্ত অঞ্চলকে ব্যাখ্যা করা যায়। গত শতাব্দীর ষাটের দশকে গড়ে ওঠা কাঠামোবাদ (স্ট্রাকচারালিজম) নামে যে বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলনটি গড়ে উঠে জ্ঞানবিজ্ঞানের বিবিধ শাখার উপর প্রভাব বিস্তার করা শুরু করে, তাও কিন্তু জ্ঞানের অখন্ডতার আপ্তধারণার ওপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে। যুক্তির সার্বভৌমত্বের ধারণা এর গোঁড়ায় প্রোথিত।

এদিকে খোদ ইউরোপেই যুক্তির সার্বভৌমত্ব বা জ্ঞানের অখন্ডতার বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছে। হালের উত্তর আধুনিকতা তো , খুব সরল করে বললে সেই কেন্দ্রহীনতাকেই লালনপালন করে।

প্রকৃতপক্ষে যুক্তি বা জ্ঞানের সর্বজনীনতার বয়ানটিই প্রশ্নসাপেক্ষ, কারণ যুক্তি বা জ্ঞান - কোনটিই সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ নিরপেক্ষ নয়।

যুক্তির অনুমিতির প্রধান ভিত্তিই হল অভিজ্ঞতার জগত, যা সংস্কৃতি নির্দিষ্ট। কাজেই আলোচনা যদি সার্বভৌমত্বের হয়, তবে তা থাকতে পারে যুক্তির নয়, কেবল চেতনার। উদাহরণস্বরূপ - অর্থবণ্টন ব্যবস্থা, মানুষের বিশ্বাস, সংস্কৃতি, ধর্ম , মূল্যবোধের মধ্যে ঔচিত্য - অনৌচিত্য, শ্রেষ্ঠত্ব,অথবা কেন্দ্র - পেরিফেরির বিতর্ক সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই চলে এসেছ। কিন্তু তর্কে কোন সমাধা হয় নি, কারণ, কোন পক্ষের যুক্তিই ফেলে দেয়ার মত না। প্রত্যেকের অভিজ্ঞতার জগত থেকে তৈরি তাঁর মূল্যবোধ, এবং মূল্যবোধের জায়গা থেকে তৈরি জীবনদর্শন, এবং সে দর্শনকে আড়াল করে রাখবার জন্যে তুলে রাখা যুক্তির দেয়াল প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই ভিন্নভিন্নভাবে প্রাসঙ্গিক। কাজেই শুধু মাত্র মানুষের চেতনারই আছে নতুন আদর্শের মূল্য বিচার, গ্রহণ ও বর্জনের।

পোস্ট কলোনিয়াল লিটারেচারের খুব গুরুত্বপূর্ণ এক ফিগার, দীপেশ চক্রবর্তী তাই তাঁর প্রভিনশিয়ালাইজিং ইউরোপ গ্রন্থে ইউরোপের দার্শনিক ও তত্ত্বের প্রচার প্রসারকারীদের মুখোশ উন্মোচন করে দেখান যে - কীভাবে , এবং কোন ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ায় 'যুক্তি'র দৌরাত্ম ইউরোপের বাইরে তাদের কলোনিগুলোতে "সার্বভৌমত্ব" ও "অখন্ডতা" র মোড়কে ইউরোপিয়ান দার্শনিকরা পাচার/প্রচার করেছে, এবং সাথে সাথে এও প্রচার করেছে যে - যুক্তিবাদের একমাত্র আবাসভূমি ইউরোপ।

এই যুক্তিবাদে আশ্রিত জ্ঞানকে যখন অখন্ড ও সার্বজনীন হিসেবে উপস্থাপন করা হয়, এবং গেলানো হয়, তখন সেই সার্বজনীনতার বিমূর্ত ফাঁদে পড়ে স্থানিক মূল্যচেতনা তাঁর বিশেষত্ব ও বৈচিত্র্য হারায়।

তাই তত্ত্বের সার্বজনীনতার ধারণা ইউরোপীয় দর্শনের ইতিহাস রচয়িতারা সুপরিকল্পিতভাবে প্রচার করে গেলেও, আমদানিকৃৎ তত্ত্ব ভিন্ন সংস্কৃতির সৃজনশীল কাজগুলিকে ব্যাখ্যা করতে পারে না। এসব সৃষ্টিকর্মের ব্যাখ্যায় স্থানিক ভাবজগত থেকে সৃষ্টতত্ত্বই বরং কার্যকর। কাজেই জ্ঞান সংস্কৃতি ও অভিজ্ঞতা নির্ভর বলেই তা সর্বজনীন নয়, বরং শর্তনির্ভর।

দর্শনের এই সর্বজনীন ইতিহাসের ধারণার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হতে আমরা দেখতে পাই আমাদের বঙ্গীয় দর্শনে, বঙ্গের মাটিতেই। সর্বজনীন দর্শন, অখন্ড সত্য ইত্যাদি ধারণা দর্শনের জগতে বহুদিন ধরে বধ্যমুল থাকলেও আমরা দেখতে পাই - জগত, পরিস্থিতির বদল, জ্ঞেয়বস্তুর বদলের সাথে জ্ঞাতার নিজেরও পরিবর্তন। জ্ঞানের বদলে যাওয়া, বা দেখার বস্তুর অনিত্যতা জ্ঞাতাকেও পাল্টে দেয়। জ্ঞাতা ও জ্ঞেয়বস্তুর পাল্টানোর সূত্রে পাল্টে যায় জ্ঞান। কাজেই দর্শন ( বঙ্গীয় পরিভাষায়) কোন ধ্রুব বিষয় হতে পারে না। শ্রী অরবিন্দ তাই জ্ঞানের বিবর্তনের পথ ও গতিমুখকেই "দর্শন" - এর মতই আলাদা করে পাঠ/ অনুসন্ধানের বিষয় বলে মনে করতেন। এই প্রসঙ্গে আরও স্মরণে রাখা প্রয়োজন, বুদ্ধের অনিত্য জগতেও চূড়ান্তভাবে সত্য বলে কিছু নেই। সত্যমাত্রই সাংবৃতিক ভাবে সৃষ্ট।

২০১৬ সালে এই রোজার সময়েই দেখেছিলাম ম্যাডম্যাক্স ফিউরি রোড মুভিটা। পোস্ট অ্যাপোকেলেপটিক ওয়ার্ল্ডে ওয়ারলর্ডদের কাছে থাকে সুপেয় পানির মালিকানা। পানির প্রবাহের স্রোত যেহেতু একটাই, এবং সেটাও তাঁর কুক্ষিগত, কাজেই বাকিদের দাসের মত ব্যাবহার করতে তাঁর বেগ পেতে হয় না।

পানির একটি মাত্র উৎসের মত জ্ঞানেরও একটি মাত্র উৎস বলে দাবী করা জ্ঞানরাজ্যের টিরেনিক্যাল ওয়ারলর্ডের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর মত কাউকে কি আমরা বাংলাদেশের মাটিতে খুঁজে পাবো না?

পাঁচ।

প্রাচ্যদর্শনকে বিশ্বদর্শনের ইতিহাস থেকে ছেঁটে ফেলার বেআদবির পেছনে ইউরোপীয় দর্শনের ইতিহাস রচয়িতাদের অভিযোগগুলো কি ছিল?

গ্রীক ফিলসফির ইতিহাস রচয়িতা ডব্লিউ টি স্ট্যাস পাশ্চাত্যের সে পণ্ডিতদের একজন, যিনি পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাসকে বিশ্ব দর্শনের ইতিহাস বলে চালিয়ে দেবার চেষ্টা করেছিলেন। স্ট্যাস কোন যুক্তি ছাড়া পৃথিবীর বৃহত্তম অংশের দর্শনকে এক কথায় খারিজ করার মত জ্ঞানপাপ করেন নি। তিনি নির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ প্রাচ্যের দর্শন চর্চা নিয়ে করেছেন -

তার প্রথম অভিযোগ ছিল, প্রাচ্যের দর্শন ধর্মীয় ও ব্যাবহারিক প্রয়োজনের থেকে নিজেকে আলাদা করতে পারে নি। অ্যারিস্টটলের বরাতে তিনি বলেন - জ্ঞানকে প্রয়োজনের উর্ধে উঠতে হবে , আর এর শেকড়ে থাকবে গভীর বিস্ময়। অর্থাৎ, দর্শনের জন্ম হবে বিস্ময় থেকে , প্রয়োজনের থেকে নয়।

দ্বিতীয় অভিযোগে তিনি বলেন, অবস্থানগত দিক দিয়ে এ দর্শন মানব - উন্নয়নের মূলধারার বাইরে, ভৌগলিক ও অন্যান্য প্রতিবন্ধকতা দ্বারা এটা বিচ্ছিন্ন।

তার তৃতীয় অভিযোগ ছিল, প্রাচ্যে দর্শনচর্চার কোন পোক্ত ভাষা নেই। কারণ প্রাচ্যে দর্শনচর্চার ভাষা কাব্যিক, এদিকে ইউরোপে যেকোনো সিরিয়াস জ্ঞানমূলক আলোচনার ভাষা গদ্যের অবলম্বনে হয়।

প্রথম অভিযোগটিকে আদতে অভিযোগ হিসেবেই ধরা যায় না, এবং একই সাথে এই অভিযোগটি প্রমাণ করে, পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস রচয়িতারা প্রাচ্যের সংস্কৃতির কতটা ভুল পাঠ করেছিলেন। রায়হান রাইন বলেন - প্রাচ্যের দর্শনের উদ্ভবের পেছনে মূল প্রেষণা যুগিয়েছে জীবনের ব্যবহারিক প্রয়োজন। এ কারণেই তা জীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে যুক্ত। মানুষের জীবনে কোন কাজে আসে না, এমন 'শুদ্ধ তত্ত্বচিন্তা' র প্রচেষ্টা এ অঞ্চলে হালে পানি পায় নি বললেই চলে। আর এজন্যে নিজেদের দোষ দেয়া চলে না।

বৈদিক সংস্কৃতি, গৌতম বুদ্ধ, কনফুসিয়াস থেকে নিয়ে হজরত মুহাম্মদ (সঃ) প্রাচ্য - মধ্যপ্রাচ্য - দূরপ্রাচ্যে যত জীবনদর্শনের উদ্ভব ও বিকাশ ঘটেছে উক্ত অঞ্চলের সংস্কৃতি থেকে, জৈবিক প্রক্রিয়ায়, এবং মানুষের জীবনের সমস্যা সমাধা করার উদ্দেশ্যে। এবং তাদের প্রায়গিকতা আছে বলেই সারা পৃথিবীর আনাচে কানাচে উক্ত জীবন দর্শনে বিশ্বাসী মানুষদের উপস্থিতি।

দ্বিতীয় যে অভিযোগ, প্রাচ্যের দর্শন মানব উন্নয়নের মূলধারার বাইরে, উপনিবেশবাদী চিন্তার মত এ চিন্তার মধ্যেও কলনিয়াল - কলোনাইজডের অ্যানালজিতে কেন্দ্র - প্রান্তের বাইনারি উপস্থিত। আর এমন ভাবনার পেছনে কাজ করে জ্ঞানের ইতিহাসের অখণ্ডতার ধারণা, এবং সর্বোপরি 'আমরাই শ্রেষ্ঠ' , এমন জৈবিক বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গী

তৃতীয় অভিযোগ, দর্শন চর্চার ভাষা গদ্যই হতে হবে - এমন আপ্তধারণাও , যদি আমরা আমাদের বঙ্গীয় দর্শনচর্চার রূপ বুঝি, তাহলে বোঝা যাবে যে এই লেন্সে আমাদের মাপা যাবে না। বঙ্গে দর্শনের চর্চা হয়েছে আলাপ বাহাসের সূত্র ধরে। আর বাহাসের ভাষা পদ্য। হালের কবির লড়াইয়ের কথাই স্মরণ করা যাক।

আর পদ্যের মধ্যে গভীর দর্শন থাকতে পারে না, এ ধারনাও ভুল।

লালন ফকিরের জনপ্রিয় একটি গানের কিছু অংশ উল্লেখ করি -

"তিন পাগলে হলো মেলা নদে এসে
ওরে, তিন পাগলে হলো মেলা নদে এসে
ওরে মন, নদে এসে
তোরা কেউ...
তোরা কেউ...
তোরা কেউ যাসনে ও পাগলের কাছে
তোরা কেউ যাসনে ও পাগলের কাছে"

ছোটবেলায় বাউলের মত ঘুরে ঘুরে নেচে গেয়ে গেয়েছি এই গান। তখন বুঝি নি অথচ এখন বুঝে দেখি লালন ফকিরের এ গানের মধ্যে লুকিয়ে আছে আমাদের নদীয়ার ভাবের সুদীর্ঘ ইতিহাস। এ তিন পাগল কারা প্রশ্নের জবাবে লালন গানে বলেন - ও সে চৈতে নিতে অদ্বে পাগল নাম ধরেছে’।

লালনের গানের এই সূত্র ধরেই নদিয়ার পথে গমন করে আমরা জানতে পারি - নদিয়ার তিন পাগল ছিলেন শ্রীচৈতন্য, নিত্যানন্দ এবং অদ্বৈতাচার্য। আমরা জানতে পারি - শ্রীগৌরাঙ্গ/ শ্রীচৈতন্য নদিয়া ছেড়ে বৃন্দাবন চলে যান, কেউ বলেন জ্ঞানের আভিজাত্যে, কেউ বলে উচ্চবর্ণের গরিমায়, কেউ বলে ক্ষমতার পাকেচক্রে পড়ে। অদ্বৈতাচার্য থেকে গিয়েও জীবনপাত করেন গৌরাঙ্গের তত্ত্বালোচনায় , এবং ক্ষেত্রবিশেষে ভাবের মূর্ছনায় আপ্লুত হয়ে। ফরহাদ মজহার, তার ভাবান্দোলন বইয়ে উল্লেখ করেন যে নিত্যানন্দ গৌরাঙ্গের পদাঙ্ক অনুসরণ করে বৃন্দাবনে চলে যান নি, নিছক তত্ত্বালোচনায় বা ভাবের আবেশে আপ্লুত হয়ে থাকেন নি, বরং বাংলার বামুন - চণ্ডাল - চামার - মুচির মধ্যে থেকে গিয়েই জাতপাতবিরোধী আন্দোলনে একনিষ্ঠ হন। যেমন ভাবে আবিষ্ট লালন তাঁর আরেক গানে বলেন - 'দয়াল নিতাই কারো ছেড়ে যাবে না' ।

এই নিত্যানন্দ, বা নিতাই , লালনের তিন পাগলের এক পাগল তাই বাংলার বাউলদের কাছে এত প্রিয়। বাউল গানে অহরহ তাঁর উপস্থিতি -

'হরি নাম গেয়ে জগত মাতালে আমার একলা নিতাই ...'

অথবা

'আমার নিতাই চাঁদের বাজারে, গৌর চাঁদের দরবারে / একমন যার সেই যেতে পারে'

নিত্যানন্দের অনুসারীদের মধ্যে হতদরিদ্র মুসলিমরাও ছিল, ফলে বাংলার দর্শন কীভাবে আমাদের অঞ্চলে এথনিক ভ্যারাইটির মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিতের জন্যে অন্তত কাজ করে গিয়েছিল প্রত্যক্ষ, বা পরোক্ষ ভাবে, তা আমরা নিশ্চিত রূপে জানি। কেবল পদ্যের ভাষা বলেই এই অঞ্চলের দর্শন চর্চার ভাষাকে হেয় করে দেখাটা পাশ্চাত্যের ঔদ্ধত্যেরই বহিঃপ্রকাশ।

ছয়।

তত্ত্ব, নাকি পণ্য?

আমরা কী কখনো নিজেকে প্রশ্ন করে দেখেছি, তত্ত্ব একটা পণ্যের মত বেচাবিক্রি সম্ভব কিনা?

'জ্ঞান' - আর 'ক্ষমতা' এই দুই শব্দকে র‍্যানডমলি ইন্টারচেইঞ্জ করে ব্যাবহার করলেও যে পাপ হয় না, এই আলাপ আমাদের সামনে সবার আগে নিয়ে আসেন মিশেল ফুঁকো। পাশ্চাত্য কিভাবে জ্ঞানকে তত্ত্বাকারে প্রচার করে নিজেদের ক্ষমতার পেরিফেরি ক্রমাগত বাড়িয়ে গেছে, সেটা হাড়ি উল্টে দেখিয়ে পাশ্চাত্যের জ্ঞানকাণ্ড ধুতি ধরে টান দিয়ে খুলে দেয়ার মহৎ কাজটিও তিনি করেন। তত্ত্ব কিভাবে পলিটিক্যাল ইন্সট্রুমেন্টালাইজেশনের হাতিয়ার হতে পারে, বা তত্ত্ব প্রচার প্রসারে হাজার মাইল দূরে বসেও কিভাবে ঔপনিবেশিক কার্যক্রম পরিচালনা করে যাওয়া যেতে পারে, এ আলাপ মিশেল ফুঁকোর দ্বারা শুরু করলেই সবচে ভালো হত, কিন্তু রচনা কলেবরে বড় হয়ে চলেছে বলে বাদ দিচ্ছি। ফুঁকোর কর্মপরিধি এবং আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে প্রাসঙ্গিকিকরণ নিয়ে পরবর্তীতে ধারাবাহিকভাবে লেখার ইচ্ছা আছে।

যাক, আপাতত রায়হান রাইনের কাছ থেকে ধার নিয়ে বলা যায়, যেটা তিনি আবার বারবারা ক্রিশ্চিয়ানের বরাতে বলেন -

"তত্ত্বজগতে পশ্চিমের আধিপত্য সৃষ্টির প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আধিপত্য যেমন পশ্চাৎপট হিসেবে কাজ করেছে, তেমনি 'তত্ত্ব' নিজেই হয়ে উঠেছে এক শক্তিশালী পণ্য। জ্ঞানজাগতিক প্রতিষ্ঠানগুলিতে কে গ্রহণযোগ্যতা পাবে আর কে পাবে না, তাঁর নির্ধারক হয়ে ওঠে এই পণ্য।"

উল্লেখ্য, তত্ত্ব নামের এই পন্যের আন্তর্জাতিকীকরনে জ্ঞান ও যুক্তির সর্বজনীনতার ধারণা অনন্য ভূমিকা পালন করে। এ পন্যের ভোক্তাদের মধ্যে ঐ সর্বজনীনতার ধারণা ইতিমধ্যে তৈরি করা হতে থাকে। ফলত উপনিবেশিত জনগোষ্ঠীর পণ্ডিত ও বুদ্ধিজীবীরা 'তত্ত্ব' নামক পণ্যের সহজ ভোক্তা হয়ে ওঠে। জ্ঞানকে অখণ্ড ও সার্বজনীন মনে করার কারণে তাঁরা স্বাভাবিকভাবেই ইউরোপীয় দর্শনের পরিভাষা দিয়ে বাংলার দর্শনকে বুঝতে চেষ্টা করে। ফলে এই রকম প্রশ্নের উদ্ভব হয় যে - দেহাত্মবাদ কি ভাববাদ, না বস্তুবাদ। এটা কি জ্ঞানতাত্ত্বিক, নাকি অধিবিদ্যক?

এসব পারিভাষিক শব্দের খাঁচায় দেহাত্মবাদকে পোরার বদলে যদি তাঁরা দেখতে চেষ্টা করতেন যে কীভাবে প্রাচীন কাল থেকে এ অঞ্চলের সংস্কৃতিতে দেহকে অর্থপূর্ণ করা হয়েছে, কীভাবে দেহের অনুষঙ্গে জগতকে বুঝতে চাওয়া হয়েছে, কীভাবে এর সঙ্গে সম্পর্কিত করা হয়েছে ভাষাকে, এবং কীভাবে এঁকে সমস্ত ভাবসত্তার আধার হিসেবে দেখা হয়েছে তাহলেই হয়তো দেহাত্মবাদের প্রকৃত তাৎপর্য খুঁজে পাওয়া সম্ভব।

তত্ত্বীয়গত ভাবে যারা মানসিক ঔপনিবেশিকতার দাস হয়ে গেছেন, তাঁরা এখন বাংলার দর্শনের মধ্যে প্লেটো , হেগেল, বা নিটশেকে খুঁজে হয়রান হয়ে গেছেন, অথবা রাসেল বা জা পল সারত্রেকে খুঁজতে গিয়ে ব্যার্থ হয়েছেন।

ফলে তত্ত্ব, বা থিওরিও যে দিনের শেষে আর এক পুঁজিবাদী পণ্যই, যা পাশ্চাত্য দর্শনের সার্বজনীনতার হেজিমনি ছড়ায়, এটা মেনে তারপর পাশ্চাত্য দর্শনের পাতা উল্টাতে হবে। তুলনামূলক পাঠ যে অসম্ভব, তা নয়। কিন্তু মনে রাখতে হবে, পাশ্চাত্য দর্শনের পরিভাষায় আমাদের বঙ্গীয় দর্শনের পাঠ নিতে গেলে আমাদের ক্রমাগত আত্ম - অস্বীকার এবং আত্মধিক্কারের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। পাশ্চাত্য দর্শনের সার্বজনীনতার প্রচারকদের ইচ্ছেও অবশ্য ওটাই।

সাত।


আশাবাদী সমাপনের পথেঃ করনীয় কি?

আমার পূর্বের আলাপ খেয়াল করলে দেখবেন, বাংলাদেশের 'মুক্তমনা' সম্প্রদায়কে আমি সবসময় 'কোট আন কোট' - 'মুক্তমনা' বলে অভিহিত করি। তার অনেক কারণ আছে। সে আলাপ এখন থাক, কিন্তু আমার এ দীর্ঘ আলাপের একদম সমাপ্তিলগ্নে এসে বাংলাদেশের এক প্রকৃত মুক্তমনার উল্লেখ করতে চাই, 'বেআদবির জয় হোক' শীর্ষক প্রবন্ধে যিনি ক্রমাগত আমাদের সাম্রাজ্যবাদ - জোতদার - জমিদার শোষক শ্রেণীর বিরুদ্ধে শিরদাঁড়া ঝুঁকিয়ে সেলাম ঠোকার বৃত্তিকে তীব্রভাবে আঘাত করেছিলেন।

অধ্যাপক ডঃ আহমদ শরীফ বলেন -

"আমাদের আদব - কায়দায় সৌজন্য রয়েছে শাহ - সামন্ত যুগের নিয়ম - নীতির, রীতি রেওয়াজের ঐতিহ্য ও আদল। যিনি প্রভু তিনি তো বটেই, যিনি শ্রদ্ধেয় , ভক্তিভাজন, মান্য তিনিও দেবতুল্য ও পূজ্য।"

এই প্রভু শ্রেণীর লোকেদের তিনি শ্রেণীকরণ করেন 'হোয়াইট কলারধারী' । তিনি সাদা কলারের এই অভিজাত লুটেরা শ্রেণীর কলার চেপে ধরে বেআদবি করতে বাংলাদেশের মানুষদের আহ্বান জানান এই ভাষায় -

"এ বেআদবির অপর নাম নতুন। চিন্তায়, কর্মে ও আচরণে গোড়ায় নতুনের ধারক থাকে নগণ্য কয়জন, মধ্যে তাঁর বাহক হয় অসংখ্য, পরিণামে সর্বজনীন হয়ে স্থিতি পায় নতুন। স্বাধিকার স্বপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার গরজেই গণমানবকে বেআদব হতে হবে। অতএব বেআদবি প্রগ্রতির লক্ষণ, আত্মচেতনার অভিব্যক্তি, বিদ্রোহের বীজ, বিপ্লবের সংকেত, নতুন সমাজসংস্কৃতির পূর্বাভাস। তবে প্রসার হোক বেআদবির, জয় হোক বেআদবের।"

তবে নতুন চিন্তা, নতুন কর্ম বলতেই যে 'মুক্তমনা' ধর্মবিদ্বেষ, বা মানুষের ধর্মীয় সংস্কৃতি বা পরিচয়কে কেটে ফেলার ঘ্রাণ খুঁজে পাচ্ছেন, তাদের আশায় গুড়ে বালি। আহমদ শরীফ বিচ্ছিন্নতাবাদী ছিলেন না, তিনি ছিলেন রিক্রিয়েশনের পক্ষে। তার কর্মময় জীবনই সে প্রমাণ বহন করে। নিজে মধ্যযুগের পুঁথি সাহিত্যের ওপর থেকে ধুলো ঝেড়ে ঝেড়ে মুসলিম সাহিত্যের প্রত্নতাত্ত্বিক খনন চালিয়ে তিনি বের করেছেন আদি - মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে বাঙ্গালী মুসলমানদের অবদান কতটুকু। অতীতের উপর ভিত্তি করে নতুন পরিচয় বিনির্মাণ ছিল তাঁর শিক্ষা, আমরাও যেন আজ মুক্তচিন্তা বলতে সেই চিন্তাকেই বুঝি - যা আত্তীকরণ সেখায়, বিচ্ছিন্নতা নয়। মুক্তবুদ্ধির চর্চার নামে যারা পরিকল্পিতরূপে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ায়, তাদের জন্যে আহমদ শরীফকে অতিক্রম করে হুমায়ূন আজাদ কেন বারবার নেতার আসনটি অধিকৃত করেন, বাংলার মানুষের সেটা ভেবে দেখার সময় এসেছে। এ নিয়ে আলাদা একটা লেখা লিখবো একদিন।

প্রাসঙ্গিকভাবে এও মনে রাখা প্রয়োজন যে - অন্ধভাবে পাশ্চাত্যের সকল কিছুই বর্জন করা কাম্য নয়। এ ধরণের হার্ডলাইন অবস্থান অন্ধ জাতীয়তাবাদ উসকে দিতে পারে। পাশ্চাত্য যে আজ সুদীর্ঘকালের উপনিবেশিক শাসনের ফলে বিজ্ঞানে প্রযুক্তিতে অগ্রসর, তাতে কোন সন্দেহ তো নেই। সেতো আমাদের দাদা - পরদাদার ঘামের শ্রমের বিনিময়েই তৈরি।

তাই আমাদের পাশ্চাত্যের জ্ঞানজগতকে গ্রহণ করতে হবে আমাদের নিজস্ব যুক্তিবোধের আলোকে। যারা তা না করে পাশ্চাত্যের দর্শন , তাদের সংস্কৃতি এবং বিজ্ঞানভিত্তিক 'আধুনিক' জীবনের অন্ধঅনুকরণ - আমাদের বাংলাদেশের সংস্কৃতি , ভাষা, ধর্ম সবকিছুকেই রিপ্লেস করে আমাদের উন্নততর একটা অবস্থানে নিয়ে যাবে বলে যারা প্রচার করে, (বুঝে হোক, বা না বুঝেই হোক), পোস্ট কলোনিয়াল লিটারেচারের ট্রিনিটির ব্রহ্মা, হোমি ভাবা, সেই শ্রেণীর বুদ্ধি (পর) জীবীদের "মিমিক ম্যান" বলে চিহ্নিত করেন। যারা নিজের ঔপনিবেশিক প্রভুর অন্ধ অনুকরণ করে, পুরোপুরি তাদের মত হতে চায়, ফলে নিজের অজান্তেই "মিমিক্রি" করে, এবং দিনের শেষে নিজের স্বকীয়তাও হারায় তো বটেই, প্রভুর শ্রেণীতেও কখনোই উত্তীর্ণ হতে পারে না।

ব্রিটিশ পার্লামেন্টারিয়ান, এবং ভারতীয় উপমহাদেশের দাসখত রচনাকারীদের অন্যতম, থমাস ম্যাককাউলির সেই ঔরসজাত সন্তানদের চিহ্নিত করা আজ প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে, যারা মনে করে , এখনো বাংলাদেশে পাশ্চাত্য জ্ঞান, নির্দ্বিধায়, বিনাবিচারে, বিনা সংশ্লেষণ - বিশ্লেষণে এমন একটি 'আধুনিক' শ্রেণী গড়ে তুলতে হবে -

“ who may be interpreters between us and the millions whom we govern; a class of persons, Indian in blood and colour, but English in taste, in opinions, in morals, and in intellect”


সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ২:৫১
১২টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

×