somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঈদ ই মিলাদুন্নবি (সঃ) নিয়ে দু' কথা

২০ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ১০:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেওবন্দী সুফি ঘরানায় আমার ইসলাম শিক্ষা। আমাদের পাক - ভারত উপমহাদেশে দেওবন্দী আর বেরেলভি / রেজাখানি এই দুটো ট্র্যাডিশনের গুরুত্ব অনেক।
.
বেরেলভি ট্র্যাডিশনের সবচে সুন্দর প্রতিশব্দ, আমার মতে - ফোক (Folk) ইসলাম। মানে, ইসলাম পাক - ভারতীয় উপমহাদেশে আসার পর, শত শত বছরের পথ পরিক্রমায় আউলিয়া - সূফী, এবং তাদের ভক্ত - খাদেমদের হাতে যে শেইপ লাভ করেছে, সেটা। তারা নিজেদের আলাদাভাবে সুন্নি বা সূফীও দাবি করেন। মাইজভাণ্ডার হচ্ছে এই ট্র্যাডিশনের বোধগম্য একটা উদাহরন, বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে।
.
আর দেওবন্দী ট্র্যাডিশনের জন্ম একটা এন্টি কলোনিয়াল, এন্টি ব্রিটিশ স্ট্রাগল থেকে, সিপাহী বিদ্রোহের পর পর, ১৮৬৬ সালে। এটা প্রথমত একটা সূফী ট্র্যাডিশন, কারন দেওবন্দী ধারার প্রধানপুরুষ যিনি, সেই হাজি ইমদাদুল্লাহ সাহেব মূলত সূফী, এবং আধ্যাত্মিক সাধক ছিলেন। সিপাহী বিপ্লবের সময় সাহারানপুর - থানাভবন থেকে সরাসরি যে ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র সংগ্রাম মুসলমানেরা আয়োজন করে, তার সর্বাধিনায়ক ছিলেন এই হাজি সাহেব। মুসলিমরা পরাজিত হলে হাজি সাহেব মক্কায় হিজরত করেন, কারন তার নামে গ্রেফতারি, এবং ফাঁসির পরোয়ানা ছিল ব্রিটিশদের তরফ থেকে। এই হাজি সাহেবের শিষ্য, মাওলানা কাসেম নানুতবি (রহঃ) দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রধানতম প্রতিষ্ঠাতা।

.
বেরেলি - দেওবন্দী বাদেও এই উপমহাদেশে লা মাজহাবি / গায়রে মুকাল্লিদ / আহলে হাদিস / সালাফি / ওয়াহাবিরাও ছিলেন, আছেন। সুন্নিদের মধ্যে মোটাদাগে এই কিছু ভাগ আমাদের এখানে।
.
ঈদ এ মিলাদুন্নবী (সঃ) - নামে বিশাল উৎসব আয়োজন, সমাবেশ, মিলাদের জলসা আয়োজন করেন বেরেলভি ট্র্যাডিশনের হজরতরা। দেওবন্দী ট্র্যাডিশনে এই দিন আলাদাভাবে সেলিব্রেট করা হয় না। সালাফিরা সরাসরি একে বিদাত উল্লেখ করে হারাম ঘোষণা করেন। উদাহরনত - জাকির নায়েক সাহেব যেমন তার সাম্প্রতিক ফেসবুক পোস্টে ঈদ এ মিলাদুন্নবী আয়োজন জাহান্নামের রাস্তায় নিয়ে যাবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
.
যা হোক, বেরেলি ট্র্যাডিশনের হজরতদের জশনে জুলুস, মিলাদের আয়োজন নিয়ে আমাদের দেওবন্দী মুরুব্বিদের সমস্যা নেই, যতক্ষণ না এটা ঘিরে ব্যবসা শুরু হয়। অর্থাৎ, সাধারণ মানুষ এবং মুরিদদের কাছ থেকে পয়সা / চাঁদা উঠিয়ে ব্যাপক ধুমধাম করে ঈদ এ মিলাদুন্নবি আয়োজন করা হয়।
.
দেওবন্দী ট্র্যাডিশনের প্রতিষ্ঠাতা ও আধ্যাত্মিক গুরু হাজি ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী মিলাদে অংশ নিতেন, এবং মিলাদে কিয়াম করতেন, কোন কোন সূত্রে এমনটা জানা যায়। তবে ওনার প্রধানতম খলিফা, 'ফকিহুল উম্মাত' মওলানা রাশিদ আহমাদ গাঙ্গুহি (রহঃ) অবশ্য উরস - মিলাদ - কিয়াম ইত্যাদির ঘোর বিরোধী ছিলেন, কারন তার নিজের মহল্লা গঙ্গুহে মাজারের নামে ব্যবসা চলতো। উঁচুমাপের আলেমে দ্বীন হিসেবে ইসলামের নামে এই মাজার ব্যবসা - মাজার পূজা তাকে অত্যন্ত কষ্ট দিতো, এবং আমৃত্যু চেষ্টা করেও তিনি উরস বন্ধ করতে পারেন নি। হজরত গাঙ্গুহি (রহঃ) এর জীবনী 'তাজকিরাতুর রাশিদ' এ মাওলানা আশেকে এলাহি মিরাঠী (রহঃ) লেখেন, গঙ্গুহ এলাকায় যখন উরস চলতো, তখন হজরত রাশিদ আহমাদ (রহঃ) অতিথিদের আসতে মানা করে দিতেন তার সঙ্গে দেখা করতে।
.
কিন্তু আমার সিলসিলা হাজি সাহেবের যে খলিফা - সূফীর সঙ্গে গিয়ে মেলে, সেই হাকিমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভি (রহঃ) এর (বিশেষত বাংলাদেশী) শিষ্যবৃন্দ মিলাদ - কিয়ামের ব্যাপারে কঠোরতা অবলম্বন করেন নি, নিজেরা তা আয়োজন না করলেও। মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরি (রহঃ) এর জীবনী পড়লে তা জানা যায় (ইসলামিয়া প্রকাশনী)।
.
পুরনো ঢাকায় দেওবন্দী ট্র্যাডিশনের হাজরাতদের ছোট বেলা থেকে দেখে বড় হয়েছি। রাসুল (সঃ) - এর ছোট থেকে ছোট সুন্নাহ-এর নিবিড় অনুসরন- অনুশীলন করতেন তারা। মাওলানা আশরাফ আলী থানভি (রহঃ) এর সুলুক - তাসাউফের ওপর ছোট কিন্তু খুবই কার্যকর বই - কসদুস সাবিলে হজরত স্পষ্ট করে লিখেছেন যে - এটা আমাদের বিশ্বাস, কোন ব্যক্তি যদি এরকম একটা জায়গায় থাকে, যেখানে তার আত্মার পরিশুদ্ধি অর্জনের জন্য কোন সূফী সাধক পাওয়া যাচ্ছে না, তবে সে (ফরজ ইবাদতের পর) খুব শক্তভাবে দুরুদ শরিফের আমল আঁকড়ে ধরবে। রাসুল (সঃ) এর ওপর পড়তে থাকা দুরুদ আল্লাহতা'লার মনোযোগ আকর্ষণে অত্যন্ত কার্যকর। যেকোনো বিপদগ্রস্থ, পথভোলা মানুষ রাসুল (সঃ) এর ওপর দুরুদ পাঠ করলে তাকে পথ দেখানোর দায়িত্ব স্বয়ং খোদা নিয়ে নেন, এমনটা আমাদের বিশ্বাস। এভাবে রাসুল (সঃ) এর ওপর দুরুদ ও সালাম পাঠ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এছাড়াও, দেওবন্দী হাজরাতদের সূফী আড্ডায় প্রচুর পরিমানে নাত ও নাশিদ পাঠ করা হতো রাসুল (সঃ) এর সম্মানে ও ভালোবাসায়।
.
এই হচ্ছে আমি যেই সূফী ট্র্যাডিশনে বড় হয়েছি, সেই দেওবন্দী ট্র্যাডিশনের দৃষ্টিভঙ্গীতে ঈদ ই মিলাদুন্নবি (সঃ) আয়োজন। রাজারবাগ পীরের "ঈদ ই মিলাদুন্নবি পালন করা ফরজ", আর সালাফি - গায়েরে মুকাল্লিদদের "ঈদ ই মিলাদুন্নবি আয়োজন বিদআত ও হারাম" - এই দুই এক্সট্রিম অবস্থানের মধ্যে এই হচ্ছে দেওবন্দি ট্র্যাডিশনের সহনশীল মধ্যপন্থী অবস্থান।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ১০:২৯
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রম্য: টিপ

লিখেছেন গিয়াস উদ্দিন লিটন, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৫




ক্লাস থ্রীয়ে পড়ার সময় জীবনের প্রথম ক্লাস টু'এর এক রমনিকে টিপ দিয়েছিলাম। সলজ্জ হেসে সেই রমনি আমার টিপ গ্রহণ করলেও পরে তার সখীগণের প্ররোচনায় টিপ দেওয়ার কথা হেড স্যারকে জানিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বৈশাখে ইলিশ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৪০



এবার বেশ আশ্চর্য ঘটনা ঘটেছে । বৈশাখ কে সামনে রেখে ইলিশের কথা মনে রাখিনি । একদিক দিয়ে ভাল হয়েছে যে ইলিশকে কিঞ্চিত হলেও ভুলতে পেরেছি । ইলিশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রিয় কাকুর দেশে (ছবি ব্লগ) :#gt

লিখেছেন জুন, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৩



অনেক অনেক দিন পর ব্লগ লিখতে বসলাম। গতকাল আমার প্রিয় কাকুর দেশে এসে পৌছালাম। এখন আছি নিউইয়র্কে। এরপরের গন্তব্য ন্যাশভিল তারপর টরেন্টো তারপর সাস্কাচুয়ান, তারপর ইনশাআল্লাহ ঢাকা। এত লম্বা... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেরত

লিখেছেন রাসেল রুশো, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:০৬

এবারও তো হবে ইদ তোমাদের ছাড়া
অথচ আমার কানে বাজছে না নসিহত
কীভাবে কোন পথে গেলে নমাজ হবে পরিপাটি
কোন পায়ে বের হলে ফেরেশতা করবে সালাম
আমার নামতার খাতায় লিখে রেখেছি পুরোনো তালিম
দেখে দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসরায়েল

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮

ইসরায়েল
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

এ মাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বাবাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
নিরীহ শিশুদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এই বৃ্দ্ধ-বৃদ্ধাদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ ভাইক হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বোনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
তারা মানুষ, এরাও মানুষ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×