somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পদ্মাসেতু প্রসঙ্গে দুটো কথা

২৬ শে জুন, ২০২২ রাত ৯:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অরিয়েন্টেশন ক্লাসে আমার স্টুডেন্টরা প্রায়ই জিজ্ঞেস করে, আমার বাস্তুভিটা কোথায়। আমি উত্তর দিই মাদারীপুর। একটু পজ দিয়ে বলি, সারাজীবনে ২-৩ বার গিয়েছি মাত্র। শেষবার গিয়েছি ২০০৫ সালে। আজ ১৭ বছরে একবারও যাওয়া হয় নি। আমি মূলত ঢাকাইয়া ই। তাতেও অনেকের আগ্রহ কমে না। প্রশ্ন করে, বাড়িতে যাই না কেন। তখন ইতস্তত করে উত্তর দিই, লঞ্চডুবির মধ্যে পড়েছিলাম ছোটবেলায়। তারপর আর ১ বার যাওয়া হয়েছে, ছোটবোনের আকিকার উদ্দেশ্যে। আর যাই নি কখনো।
.
লঞ্চডুবির ট্রমা ব্যাখ্যাতীত, অনতিক্রম্য এক বস্তু, যার আঁধার আমি এখনো বুকে বয়ে বেড়াই। ডুবুডুবু এক লঞ্চ, তার যাত্রীদের উদ্ধার করার জন্যে পাশে এসে দাঁড়িয়ে থাকা আর একটি লঞ্চ, সব যাত্রীদের ডুবন্ত লঞ্চের এক সাইডে এসে জমা হওয়া, ফলে যাত্রীদের ওজনে লঞ্চটা হুড়মুড় করে কাত হয়ে পড়া, নীচে ঘূর্ণায়মান ঘোলা কালো পানি, এরি মধ্যে লাফ দিয়ে পাশের লঞ্চের ডেকে ছিটকে গিয়ে পড়া, কোনরকমে। ১৯৯৭/৯৮ সালের ঘটনা।
.
এই ঘটনার ফলশ্রুতিতে, সত্যিসত্যিই আমি মানসিকভাবে বাস্তুচ্যুত একজন মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠেছি। নাড়ির বিন্দুমাত্র টানও নাই, দাদাবাড়ির প্রতি। নানাবাড়ি নোয়াখালীতে সেই অনুপাতে অনেকবার যাওয়া হয়েছে।
.
গতকাল আব্বু এলাকায় শ্রমিক আর দিনমজুর শ্রেণীর মানুষদের নিয়ে দোয়া মাহফিল, আর হালকা খাবার - মিষ্টি ইত্যাদির আয়োজন করেছিলেন পদ্মাসেতু অর্জনে শুকরিয়াজ্ঞাপন করে, আর সেতুর দীর্ঘস্থায়িত্ব কামনা করে। আমি নিজেও অবাক হয়েছি প্রথম প্রথম তার এ আয়োজনে। পরে ব্যাপারটা আমার উপলব্ধিতেও এসে জমা হতে থাকে, একটু একটু করে।
হয়তো আমার শেকড়ের সঙ্গে আরও গভীর সন্নিবেশ থাকতো শৈশবে শাহজাহান খাঁর ট্রান্সপোর্ট মাস্তানিতে জর্জর হয়ে দেশের বাড়ি যাওয়া বন্ধ না করলে।
.
১৭ বছর আগের স্মৃতি থেকে আবছা আবছা যা মনে পড়ে, তা থেকে স্মরণ হয় যে মাদারীপুর অসম্ভব সুন্দর একটা জায়গা। এতো সবুজ, আর এতো এতো পানি চারিদিকে! পুকুর, খাল, বিল, নদী - কি নেই? বাড়ির কাছে ছোট্ট একটা হাট, টুইব্বার হাট তার নাম। সকালবেলা সে হাটে গিয়ে অদ্ভুত রকমের স্বাদের একটা মিষ্টি দিয়ে পরোটা সহ নাস্তা করতাম। তার আগে ভোর বেলা গাছ পাড়া খেজুরের রস ভর্তি গ্লাসে চুমুক। ঈদের দিন সকালে দেশভাগের সময় এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়া গা ছমছমে জমিদারনিবাস - বড়বাড়ির আঙ্গিনায় ঈদের জামাত। আত্মীয় স্বজনের বাড়ি বাড়ি ঘুরে সাকুল্য ৭২ টাকা সালামি। রাতের বেলা উঠোনে পাটি পেতে আয়োজন করা ছোট্ট সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা, বড়বোনদের গল্পের আসর। স্মৃতির ঝুলি আরও লম্বা হতে পারতো। যাই ই নি কখনো, হবে আর কি?
.
যা হোক, হয়তো এখন হবে। হয়তো আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের দাদাবাড়ির সঙ্গে নাড়ির টান আমাদের চেয়েও বেশী হবে।
.
পদ্মাসেতু শুধু পদ্মার দুই পাড়কে নয়, আমাকে আমার অনুৎযাপিত শৈশবের সঙ্গেও সংযুক্ত করে। এ সেতু নিয়ে আমাদের উচ্ছ্বাসের কারন আপনার বাড়ি কুমিল্লা, ফেনি, নোয়াখালী, সিলেট বা চট্টগ্রাম হলে বাই ডিফলট বোঝার কথা না। সাধারণ মানুষের উচ্ছ্বাসকে ঢালাওভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বিবেচনা করাটা নিজের রাজনৈতিক বোধেরও দুর্বলতার পরিচায়ক।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০২২ রাত ৯:২৪
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×