somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ল্যাতিন অ্যামেরিকার বিখ্যাততম কবি পাবলো নেরুদার ১১৮ তম জন্মদিনে, তার দুটো অনুবাদ কবিতা

১২ ই জুলাই, ২০২২ রাত ১১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



(আজ কবি পাবলো নেরুদার ১১৮তম জন্মদিন। তার স্মরণে ওনার দুটো কবিতা, আমার অনুবাদে। পেঙ্গুইন ক্লাসিকসের করা ইংরেজি অনুবাদ হতে বাংলা অনুবাদ। কবিতাদুটো ২০১৪ সালে অনুবাদ করা।)
.
কবিতা ১ঃ
নক্ষত্র পতনের রাত ( To Night I can write/puedo escribir los versos...)
.
আজরাতে, আমি লিখতে পারি তুমুল বেদনাবিধুর পংতিমালা।
.
লিখতে পারি, যেমন ধরো, ‘বিস্ফোরিত রাত্রি যখন চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে ছিটকে ছড়িয়ে পড়লো,
নীলাভ তারাগুলো তখন দূরে দাঁড়িয়ে কাঁপছিল তিরতির করে’।
.
নিশুতি রাতের বাতাস আকাশ ঘিরে পাক খায় আর গান গায়।
.
আজ রাতে, আমি লিখতে পারি নীল নীল দুঃখের পংতিমালা।
তাকে ভালবাসতাম আমি, সেও বাসত ভালো, আমায়, হয়তোবা, কখনো।
.
গহীন রাতের মত আমি আঁকড়ে ধরতাম তার পেলব কোমল হাত
প্রশস্ত আকাশকে সাক্ষী রেখে চুমোয় চুমোয় ভরিয়ে দিতাম তার মুখ।
.
সে ভালবাসত আমায়, আমিও বাসতাম ভালো, তাকে, হয়তোবা, কখনো
সৃষ্টির আদিকাল থেকে, কেউ কি তার সমুদ্রের মত গভীর দৃষ্টিকে উপেক্ষা করতে পেরেছে?
.
আজ রাতে, আমি লিখতে পারি হৃদয় নিংড়ানো কষ্টের পংতিমালা।
এই ভেবে, যে সে আর আমার পাশে নেই। এই ভেবে, যে আমি তাকে হারিয়েছি।
.
নিস্তব্ধ রাতের প্রগাঢ় হুংকার, তার অনুপস্থিতিতে, বুকে চেপে বসেছে পাথরের মত।
হৃদয়ে শিশিরের মত টুপ টুপ করে ঝরে পড়ছে এক একটি দুঃখস্নাত শব্দ।
.
আমার প্রেমে সে শক্তি ছিল না যে তাকে ধরে রাখে
চোখের সামনে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাচ্ছে এই রাত, অথচ সে আমার পাশে নেই।
.
এইতো, দূরে কেউ গান গাইছে, দূরে, বহুদূরে।
আর আমার আত্মা ধুঁকে মরছে, কারণ সে আমার পাশে নেই।
.
আমার দৃষ্টি তাকে উন্মত্তের মত খোঁজে দশদিকে,
অথচ আমার হৃদয় বেদনার রঙ্গে নীল, কারণ সে আমার পাশে নেই।
.
সেই রাতগুলির মত আজকের এ রাতও আকাশ নক্ষত্র ভরা
কিন্তু, আমরা, আগের মত নেই আর।
.
এখন আর তাকে ভালোবাসিনা, নিশ্চিত আমি, কিন্তু কি তীব্রভাবেই না ভালবাসতাম তাকে!
আমার কান্নাজড়িত কণ্ঠ, দখনে বাতাসে ভেসে যদি তার কাছে পৌঁছুতো!
.
আরেকজনার। সে এখন আরেকজনার। উষ্ণ চুম্বনের রাত্রিগুলোর মতই সে অতীত এখন-
তার কিন্নরী কণ্ঠ, সোনারঙ্গা শরীর, তার অতল গভীর দু’চোখ।
.
আমি তাকে বাসি না আর ভালো- নিশ্চিত জানি, নাকি বাসি এখনও?
ভালোবাসা যদি ক্ষণকালের হয়, ভুলে যাওয়াটা এত দীর্ঘ কেন?
.
কারণ, এই রাতের মতই আমি জড়িয়ে ছিলাম তার হাত
তাকে হারিয়ে, আমার আত্মা আজ মৃতপ্রায়।
.
যদিও এটাই শেষ যন্ত্রণা, যা সে আমায় দিয়ে যাচ্ছে,
এবং এই শেষ পংতি, যা আমি তাকে নিয়ে রচে চলেছি।
.
কবিতা ২ঃ
স্মৃতির খাতা অথবা কবিতার পাতা (Memories)
.

সবকিছু টুকে রাখি মাথার খাতায়,
ঘাসের ডগায় আলোর নাচন, দরকারি-বেদরকারি ঘটন–অঘটন,
রাস্তার দু’পাশ, বাড়িঘর – যেখানে যেমন,
লাফ দিয়ে টানটান শুয়ে পড়া সর্পিল রেলপথ থেকে নিয়ে
কষ্টের কারুকার্যমণ্ডিত মুখ,
বেদনার বেদনভরা মুখোশ –
সবকিছু!
.
যদি বাদ পড়ে একটি লাল গোলাপের ঝাড়, কবিতায়,
যদি নিশির মতন নিকষ কিছুকে কাব্যিকতায়-
গুলিয়ে ফেলি, বলি খরগোসের মতন সাদা!
যদি বর্ণনের সময় বাদ পড়ে যায় একটি দেয়ালও,
কেঁচে গণ্ডূষে শুরু করি সবকিছু পুনরায়-
জলকণা, সোঁদা গন্ধওয়ালা মাটি, মাটির বুকে ঘাস, পাতা,
রমণী, কেশ, অথবা একেকটি ইট- দেয়ালের বুকে গাঁথা,
অথবা আমায় বিদ্ধ করেছিল যে ফুলের কাঁটা,
অথবা খুব গতিময় কিছু!
.
সৌখিন লেবাস চাপিয়ে
ধান খেয়ে গান গেয়ে পৃথিবীতে চড়ে ফেরা দু’ঠেঙে প্রাণীসকল-
সদয় হও কবির প্রতি!
(কেননা কবির কবিতা তোমার গল্পও বলে)
.
এই মনে রাখা-রাখির ব্যাপারে কি অপটুই না ছিলাম আমি!
দিনরাত্রি ছেনেছুনে দিনমান,
হাতে থাকতো কেবল ধোঁয়াশার তেলেভাজা নুড়িপাথর।
অথবা একদমই অপ্রয়োজনীয় কিছু খণ্ডচিত্র।
যেমন ধরো-
কুয়াশায় আচ্ছন্ন কিছু সুঘ্রাণ,
অথবা সুঘ্রাণ মাখা কুয়াশা!
কিংবা কোন মানবীর দেহ,
যার পেলব ত্বক আমার অধরস্পর্শে
কেঁপে কেঁপে উঠেছিল ঘুমকুমারীর মত-
এসব!
.
কখন? কোথায়? কিভাবে?
দিনক্ষণের ঠিকুজী কুলুজী জানতে চেয়ে বিব্রত কোরোনাকো বাপু!
হয়তো এমন কোন পথের কথা বলবো- যার কোন পথিক নেই,
হয়তো বলবো এমন কোন দেশের কথা- যাতে কেউ বাস করেনি কখনো,
হয়তো এমন কিছু সত্য বলবো- যা তোমাদের অভিধানে অসত্য নয়, বরং মিথ্যা!
তোমাদের ঠিকবেঠিকের বেরসিক দাঁড়িপাল্লার প্রেষণে
আমার কবিতার খাতায় ভোরের ছবি আঁকার সুযোগ হয় নি কোনদিন।
এখানে কেবল রাতের রাজত্ব,
যেখানে আমার স্বপ্নেরা
জোনাকের মত ওড়ে,
আর আঁধারের বুকে আলো দেয়!

ছবিসুত্রঃ [link|https://l.facebook.com/l.php?u=https://mymodernmet.com/george-digalakis-surreal-nature-photography/?fbclid=IwAR08LDk8PC0CE6F0KW1anGo2tVK6UuOliGHTYeFXJ1wGPZbaoK1lcWADG3c&h=AT00gerBFUVV9YfbQfY-gmVUtb1OXooCmhksL9YOQ9jvfN4uMZrDYgwnjKMF-kssC9YxIcV0g0UB6hW1_5i-oXzf4DZK8rAB__suCjAawRl-PtHPGnOf-_cIo6BBGtw2SBY&__tn__=R]-R&c[0]=AT3V985hc8Kfcy9Q_hswZQ6sgbZ8sgadjN6jjbg6x7AUNEzQGHM696KWqIciqRQ45ukpcGmTzSwWvX9hsRpyEaAhZ0RBygxgBMRDB2Pr0et4HKRdtbt1DXCIK9CsZ4jdHjZDq4F8rKsPXflV1nryBdNsCp0jjofIOGk8C4h-bhlUp-CWU58|view this link]
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুলাই, ২০২২ রাত ১১:০০
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×