somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কবরের আলিঙ্গন

২৫ শে জুলাই, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ কতদিন পর সামুতে আসলাম নিজেরও হিসাব নেই। বহুত কষ্ট করে সামুতে লগইন করতে পেরেছি। কি লিখবো, ভেবে পাচ্ছি না। অনেক খুঁজে এই অনুবাদ গল্পটা লিখেছি। আশা করি ভাল লাগবে।


আমি বোধহয় দেরি করে ঘুমিয়েছি।এই জায়গাটা খুবই সঙ্কীর্ণ এবং নিঃশ্বাস নিতে আমার ভীষন কষ্ট হচ্ছে। একটু থামুন, আলোটা জ্বালিয়ে দিই।এখানে ঘুটঘুটে অন্ধকার। শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে আমার এত কষ্ট হচ্ছে কেন? উফ্! মাথাটা কিসের সঙ্গে ধাক্কা লাগলো। ঘরের ছাদের সঙ্গে তো মাথার ধাক্কা লাগার কথা নয়। কিন্তু এটা কি করে সম্ভব? দয়া করে আমাকে এক মুহূর্ত ভাবতে দিন।আমি এখন কোথায় আছি এবং কেন আছি?
মনে হয় কেউ একজন আমার দিকে এগিয়ে আসছে।হয়তো তার হাতে একটা জ্বলন্ত লন্ঠন। দূর থেকে আগন্তুককে আমার বন্ধু বলে মনে হলো না।না, আমি তাকে চিনতে পারছি না।আসলে তার হাতে কোনো লন্ঠনই নেই।তাহলে কি দুজন আমার দিকে এগিয়ে আসছে?আলোটাই বা কিসের? কোন্ আলো হতে পারে?মনে হয় ওরা আমাকে নিয়ে আলাপ করছে। একটু সবুর করুন।আমি ওদেরকে জিজ্ঞেস করছি, ' এই তোমরা কারা?  এই জায়গাটা কোথায়?'
'আমরা বলব না। একটু পরে তুমি নিজেই জানতে পারবে।ভেবে দেখো।এক মুহূর্তের জন্য নিজের কথা চিন্তা করো।সবকিছু মনে পড়বে।তখন তুমি তোমার প্রশ্নের সঠিক উত্তর পেয়ে যাবে।'
'হুম! এখন আমার স্পষ্ট মনে পড়ছে।আমি তো ডুজাখ গ্রামের পাশে ছিলাম।ইসলামের জন্য যুদ্ধ করতে এবং আমার বিশ্বাসকে রক্ষা করার জন্য আমি কয়েকজন সৈনিক জোগাড় করেছিলাম।
'ইসমকে জিন্দা করার জন্য তুমি সৈনিক জোগাড় করেছিলে।'
'আমি! মোটেও না।কিছুতেই না।আমি ধর্মযুদ্ধে জড়িত ছিলাম। আমি একজন মোজাহিদ।'
'কখনোই না। তুমি কখনোই মোজাহিদ ছিলে না।
ওটা কখনোই ধর্মযুদ্ধ ছিল না। ধর্মযুদ্ধ হচ্ছে পবিত্র কাজের মধ্যে অন্যতম।তুমি ধর্মযুদ্ধের প্রতিটি অক্ষরকে অবমাননা করেছ।
আমি...আমি...আমি কি তাহলে মোজাহিদ নই?কিন্তু কেন? কি করে এটা সম্ভব? ' অতীতের কাজ নিয়ে ভাবো।তাহলেই বুঝতে পারবে আসলে তুমি কি ছিলে।'
' একটু থামুন। আমাকে ভাবতে দিন। ও হ্যাঁ,মনে পড়ছে। আমি ধর্মযুদ্ধ করেছি। ধর্মযুদ্ধে অংশগ্রহন করার জন্য আমাকে পাহাড়ি এলাকায় পাঠানো হয়েছিল। '
'ঠিক আছে ধর্মযুদ্ধ করার জন্য তোমাকে পাহাড়ি এলাকায় পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু কে তোমাকে পাঠিয়েছিল?'
'কে আমাকে পাঠিয়েছিল?  আমি নিজেই গিয়েছি। না, আসলে আমি সেচ্ছায় যায় নি। প্রথমে আমি ডুজাখে কয়েকজন জেনারেলের প্ররোচনায় উদ্বুদ্ধ হই।পাহাড়ি এলাকায় যুদ্ধ করার জন্য তারা আমাকে উৎসাহ যুগিয়েছে এবং বলেছে যে ওখানে আমাদের আসল যুদ্ধের ময়দান, 'দার আল-হার্ব।'
'তাই। তারা তোমাকে পাহাড়ি এলাকায় যুদ্ধ করতে পাঠিয়েছিল।
তোমার কাছে ইসলাম কি ডুজাখের পাহাড়ি এলাকা থেকে তাৎপর্যমন্ডিত ছিলনা।
ওখানে যুদ্ধ করা কি অবৈধ নয়?তুমি কি তোমার মুসলমান ভাইদের হত্যা করতে ধর্মযুদ্ধে শরীক হও নি?'
'না কিছুতেই আমি হত্যাকারী নই।'
ভালো করে ভেবে দেখো,তুমি কোথায় গিয়েছিলে এবং কি করেছ।'
'হ্যাঁ, এখন আমার মনে পড়েছে।আমি যখন পাহাড়ি এলাকায় যাই,তখন ওরা আমাকে একটা স্কুলের ঠিকানা দিয়ে বলছিল ওখানে আমি যেন বিধর্মীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করি।কেননা বিধর্মীরা এসে ঐ স্কুলের ছেলেমেয়েদের ইসলামের বিরুদ্ধে শিক্ষা দিচ্ছিল। '
'বিধর্মী, ঠিক আছে। কিন্তু ওরা তো অন্য ধর্মের মূল্যবান কথা বলেছে। এবং তুমি ওখানে গিয়ে অবুঝ ছেলেমেয়েদের, যারা বন্ধু ও শত্রুর মধ্যে পার্থক্য বুঝতে শেখেনি, নির্দ্ধিধায় হত্যা করেছ।'
'ঠিক আছে, কিন্তু এ জায়গাটা কোথায়? '
' এখনও কি বুঝতে পারোনি? এটা একটা কবর এবং তুমি মৃত। '
' আমি মৃত?  না, আমি মৃত হতে পারি না।আমি যদি মারাই যাই, তাহলে আমি একজন শহীদ। '
' এই নাও কোমার কিতাব।'
'এতে কি আছে? '
' এতে তোমার কৃতকর্মের হিসাব-নিকাশ লেখা আছে।'
'আমার কৃতকর্মের হিসাব-নিকাশ! দাঁড়ান, ডান হাত দিয়ে নিতে দিন।আপনি জানেন আমি একজন শহীদ। এ কি! আমার তো ডান হাত নেই। এখন আমি কি করব? অগত্যা আমি বাম হাতে কৃতকর্মের কিতাব গ্রহন করি।হায় আল্লাহ, আপনি কেন আমাকে জাহান্নামে পাঠাচ্ছেন?  আমি কি শহীদ নই?'
না তুমি শহীদ নও।তুমি একজন হত্যাকারী ছাড়া আর কিছু নও।
নির্বিচারর তুমি নিরীহ মুসলমানদের হত্যা করেছ।'
' না, না, না। অসম্ভব, এ কিছুতেই হতে পারে না।'
আহ্, জায়গাটা ভীষণ উত্তপ্ত।
আমার মুখ শুকিয়ে কারবালা।
চারপাশে কি ভীষণ অন্ধকার।
সত্যি এখানে নড়াচড়া করার মতো এক চিলতে জায়গাও নেই।
আল্লাহ আমাকে বাঁচান।
হে সর্বশক্তিমান পরওয়ারদেগার।


"কবরের আলিঙ্গন" গল্পটি আফগান গল্পকার, কবি এবং অনুবাদক 'মাহমুদ মারহুনের' ইংরেজিতে  'এমব্রেসড্ বাই দা গ্রেভ' গল্পের অনুবাদ।পশতু ভাষা থেকে মুল গল্প ইংরেজিতে অনুবাদ করেন 'অ্যান্ডার্স উইডমার্ক।'
ইংরেজিতে গল্পটি ২০১১ সালের মে সংখ্যা 'ওয়ার্ডস উইদ্আউট্ বর্ডার্স' ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়।

সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুলাই, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৩৬
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×