somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালবাসার পর বাস্তবতা

২১ শে আগস্ট, ২০১৯ সকাল ৭:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



৫ বছর প্রেম করার পর যখন গার্লফ্রেন্ড বিয়ের কার্ড হাতে দিয়ে বলে,
"সরি আমার কিছু করার নেই। বাবা মা তোমার মত বেকার ছেলের হাতে আমাকে তুলে দিবে না। আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে। ছেলে একটা মাল্টিন্যাশনাল কম্পানিতে জব করে। বেতন ৭০ হাজার টাকা। তাই আমিও আর না করতে পারি নি। যদি চাও আমার বন্ধু হিসাবে আমার বিয়েতে আসতে পারো"
তখন সত্যিকারের প্রেমিকের বিষয়টা মেনে নেওয়া সত্যি খুব কষ্টকর। তাই আমিও মেনে নিতে পারি নি। রাতে দোকান থেকে ৫ টাকা দিয়ে একটা ব্লেড কিনে এনে নিজের হাতের রগ কেটে ফেললাম। আমার হাতের রক্তে বিছানার সাদা চাদরটা ক্রমশই লাল হয়ে যাচ্ছে। তারপর আমার আর কিছু মনে নেই। পরেরদিন যখন আমার জ্ঞান ফিরলো তখন দেখি আমি হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি। আমার জ্ঞান ফিরা দেখে আমার মা আমার ডানগালে সজোরে থাপ্পড় মেরে বললো,
কুত্তার বাচ্চা তকে ২৪ টা বছর নিঃস্বার্থভাবে ভালোবেসে আমি কি পেলাম? আর তুই কি না অল্প কয়েকদিনের ভালোবাসার জন্য নিজের জীবনটা দিয়ে দিচ্ছিলি..
আমার মা, খুব সাধারণ একজন মহিলা। কোনদিন আমাকে গালি দিবে দূরের কথা তুই করে পর্যন্ত বলে নি। সেই মা মনে কতটা কষ্ট পেলে সন্তানকে থাপ্পড় মারতে পারে তা আমার চিন্তার বাহিরে...
আমার পাশে আমার হাত ধরে বসে অনবরত কান্না করছে আমার ছোট বোনটা। বেশ কয়েকদিন ধরে আমার বোনটাকে পাড়ার কিছু বখাটে ছেলে বিরক্ত করছে। আমি আমার বোনকে নিজে কলেজে নিয়ে যায় আবার নিজে নিয়ে আসি। আজ আমি বোনের কথা চিন্তা না করে মরতে বসেছিলাম। আমি মরে গেলে আমার বোনটার কি হতো। হয়তো কোনদিন কোন একটা খবরের কাগজের প্রথম শিরোনাম হয়ে যেতো...
আমার বয়সের ছোট খালাতো ভাই আমার রিপোর্ট হাতে নিয়ে ডাক্তারের কাছে ছোটাছুটি করছে। অথচ এই ছোট ভাইয়ের কয়েকদিন আগে ক্যান্সার ধরা পড়েছে। কোথায় আমি ওর পাশে দাড়াবো। ওর ট্রিটমেন্ট করাবো, তা না করে উল্টো নিজে মরতে গিয়েছিলাম। আর ও আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে...
নিজেকে খুব স্বার্থপর মনে হচ্ছে। আমি আমার পরিবারের কথা চিন্তা না করে বোকার মত মরতে বসেছিলাম।
কেন জানি মনের ভিতর আমার গার্লফ্রেন্ডর জন্য ক্ষোভ সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিলো। নিজের সমস্ত আবেগকে মাটিচাপা দিয়ে নিজে কিছু করার চেষ্টা শুরু করলাম। গ্রামে গিয়ে ২ টা পুকুর আর ২ গাভী দিয়ে নিজের যাত্রা শুরু করলাম। আজ ৭ বছর পর আমার গাভীর সংখ্যা ১০৩টা। পুকুরের সংখ্যা ২৬ টা।তাছাড়া আমার মুরগী ছাগলের ফার্ম আছে। আমার এই খামার বাড়িতে কাজ করে ২১ জন লোক। আমার গার্লফ্রেন্ডর স্বামী প্রতি মাসে বেতন পায় ৭০ হাজার টাকা। আর আমার প্রতি মাসে খরচ হয় ৬ লক্ষ থেকে ৮ লক্ষ টাকা। লাভের কথাটা নাই বা বললাম।
কৃষি দিবানিশির উপস্থাপক শাইখ সিরাজ আমায় প্রশ্ন করেছিলো, আমার এই সফলতার পিছনে কার অবদান সবচেয়ে বেশি? আমি শুধু মুচকি হেসেছিলাম, যদি বলতাম আমার এক্সগার্লফ্রেন্ড তাহলে লোকে হাসতো...
সেদিন রেস্টুরেন্টে বসে আছি হঠাৎ খেয়াল করলাম আমার এক্সগার্লফ্রেন্ড শ্রাবণী এককোণে বসে আছে।আমি ওর পাশে বসতেই ও চমকে গেলো। কিন্তু শ্রাবণীর চেহারা দেখে আমি আরো বেশি চমকে গেলাম। চেহারার সেই লাবণ্যতা নেই। চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে।
আমি ওকে বললাম,
-- তোমার শরীর ভালো আছে তো?
ও মাথাটা নিচু করে বললো,
- সত্যি বলতে ভালো নেই। সাকিবের সাথে বিয়ে হবার পর আমি একটা দিনের জন্য সুখে থাকতে পারি নি। ও আমায় শারিরীক আর মানসিক ভাবে নির্যাতন করতো। তাই ওকে ডিভোর্স দিয়ে দিয়েছি। আমার ডিভোর্স দেওয়াটা আমার বাবা মা মেনে নিতে পারি নি। তাই বাবার বাড়িতেও আমার জায়গা হয় নি। তাই নিজে একটা প্রাইভেট ফার্মে জব করছি। তোমায় অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাই নি। পিয়াস চলো না তুমি আর আমি সব ভুলে আবার নতুন করে শুরু ক....
শ্রাবণী কথাটা শেষ করতে পারে নি এমন সময় আমার স্ত্রী সুপ্তি আমাদের পাশে বসতে বসতে বললো,
~ আরে আপনি সাকিব সাহেবের স্ত্রী শ্রাবণী না?
আমি অবাক হয়ে সুপ্তিকে বললাম,
-- তুমি উনাকে চিনো কি করে?
সুপ্তি আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
~ আরে আমি আর বাবা উনাদের বিয়েতে গিয়েছিলাম তো।
সুপ্তি শ্রাবণীকে বললো,
~ আপনি সাকিব ভাইকে বলেন যে উনার বস আসলাম সাহেবের মেয়ে সুপ্তি। তাহলেই উনি আমাকে চিনতে পারবেন কারণ উনি আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন আর আমি উনাকে রাগে থাপ্পড়... সরি সরি আমার এই কথাটা বলা উচিত হয় নি...
আমি শ্রাবণীকে তখন বললাম,
-- ও আমার স্ত্রী। আর আমরা একসাথে খুব সুখে আছি...
শ্রাবণী মাথাটা নত করে চুপ করে বসে আছে। আমি আর সুপ্তি চলে যাচ্ছি। আমি মনে মনে ভাবছি,
দুনিয়ার কি অদ্ভুত নিয়ম। যে ছেলেকে পাওয়ার জন্য আমার গার্লফ্রেন্ড আমায় ছেড়ে চলে গিয়েছিলো আমি আজ সেই ছেলের বসের মেয়েকে বিয়ে করেছি।
প্রেমে ব্যর্থ হওয়াটা খুব স্বাভাবিক। পৃথিবীতে ৯৫% মানুষ তার ভালোবাসার মানুষকে বিয়ে করতে পারে না। তাই বলে কিন্তু জীবন থেমে থাকে না। প্রেমে ব্যর্থ হলে কষ্ট হবে এটা ঠিক কিন্তু তুমি চাইলেই এই কষ্টটাকে তোমার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট ভাবতে পারো। নিজেকে সময় দাও।সময় সব বদলে দেয়। একটু অন্য রকম ভাবে চিন্তা করো। নিজেকে এমনভাবে গড়ে তুলো যেন একটা সময় তোমার এক্স তোমাকে হারানোর জন্য আপসোস করে।
একটা কথা মনে রেখো, কারো ভালোবাসা তোমার পরিবারের ভালোবাসা থেকে বড় না। তাই নিজের পরিবারকে ভালোবাসতে শিখো।আর পরিশ্রম করো দেখবে একটা সময় সফলতা তোমার দরজায় এসে কড়া নাড়বে..
.
গল্প : বাস্তবতা বড়ই নির্মম।

মোরালঃ- কাউকে অযোগ্য ভেবে তার ছেড়ে দেয়ার আগে একবার ভেবে নিবেন,আপনি যার হাত ধরতে যাচ্ছেন, সে আপনার যোগ্য কিনা।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে আগস্ট, ২০১৯ সকাল ৭:৩৯
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

সম্পর্ক

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২


আমারা সম্পর্কে বাঁচি সম্পর্কে জড়িয়ে জীবন কে সুখ বা দুঃখে বিলীন করি । সম্পর্ক আছে বলে জীবনে এত গল্প সৃষ্টি হয় । কিন্তু
কিছু সম্পর্কে আপনি থাকতে চাইলেও থাকতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×