somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হারিয়ে যাওয়া দিনগুলি

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৯ দুপুর ১:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



তখন ১ টাকায় ৪টা চকলেট পাওয়া যেতো। হসপিটালে গেলে ফ্রি ফ্রি চুলকানির ওষুধ পাওয়া যেত। ব্রিজের উপর থেকে ঝাপ দিলে ঘন্টা দুয়েক পর নাকের নিচে কাদার গোফ পাওয়া যেত। কিন্তু হাজার খুঁজলেও এখনকার মত পকেট ভর্তি ইয়াবা আর ফোন ভর্তি পর্ণ পাওয়া যেত না। ও হ্যা, আমরা মাছ ধরতাম। ঠ্যালা জাল চেনো? তিনকোণা নীল রঙা জাল। তখন পুটি মাছ পেয়ে যেন ইলিশের আনন্দ নিতাম।

সন্ধ্যে হওয়ার আগেই বাসাই ফিরতে হত রোজ হারিকেন টা মুছে তৈল দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়ার দ্বায়িত্ব টা আমার উপর ছিল,একসাথে চাটায়ে বসে পড়তে বসতাম ভাই বোন মিলে, , আর সন্ধ্যায় যখন আশেপাশে কেউ থাকতো না, তখন বইয়ের ভেতরের ময়ূর বের করে মাপতাম। এরপর তাকে চকের গুঁড়ো খেতে দিয়ে আবার যথাস্থানে রেখে দিতাম। আমরা ভাবতাম ময়ূর বড় হয়। যার কাছে যত ময়ূর তাকে ততো সমীহ করে চলতাম যদি সে দয়া করে একটা ময়ূরের বাচ্চক দেয়! এভাবেই আমাদের গল্পে ময়ূর আর চকের গুঁড়ো মিশে আছে যার গন্ধ আমরা এখনো পাই প্রতিটা বইয়ের পাতায়। তোমরা যখন চিনি দেখলে কোকেন বলে মনে কর, আমরা ৯০ এর দশকের ছেলেরা প্রথমে তাকে চকের গুঁড়ো ভাবি। এটাই আমাদের সরলতা। রাত পেরিয়ে সকাল হলে দল বেধে যাইতাম মক্তবে কোরআন শিক্ষা টা যতাযত ভাবে নিতে ,,, দিন হলে বা দিন পেরিয়ে সন্ধ্যা হলে আমরা পলিথিন জোগাড় করতাম। আগুন জ্বালাবার জন্য। মা বলতো উলের সোয়েটারে নাকি আগুন লাগে তাই সোয়েটার খুলে আমরা আগুনের কাছে যেতাম। আগুনের ভেতর থেকে হাত পা ঘুরিয়ে আনা আর সুচ দিয়ে আঙুল এর চামড়া ফুটো করে গেথে রাখা ছিল তৎকালীন সময়ে স্মার্টনেসের সর্বোচ্চ নিদর্শন। আগুন জ্বালালে তাতে নষ্ট কলম পোড়ানো ছিল ট্রেন্ড। এই জেনারেশন কখনওই জানবে না পলিথিন আর কলম পোড়ার গন্ধ, কিভাবে চামড়ায় সুচ আটকে রাখা যায় তা তারা শিখে নিতে পারবে কিন্তু রোমাঞ্চকর কোন অনুভূতি পাবেনা। কারণ তারা এখন রোমাঞ্চ পায় ইরোটিক ক্লিপ আর সবজী লাল পানি খাওয়াতেই।

আমরা দেখেছি কিভাবে কেরোসিন আনার জন্য কাচের স্প্রাইটের বোতলের মাথায় দড়ি বাধা হতো। আস্তে আস্তে কিভাবে দড়ি কালো হয়ে যেত আর বোতলের গায়ে ময়লার আবরণ পড়তো।ডাংগুলি খেলা তো এখনকার জেনারেশন চিনে কিনা সন্দেহ আছে,, কত যে রোমাঞ্চকর ছিল পরিবেশ টা জায়গাই জায়গাই, মারবেল খেলা,সিগারেটের পেকেট এর নকল টাকা দিয়ে কত রকম যে খেলা ছিল,,, ২০০০ সাল কখনওই জানবে না ষ্টোভ নেভানোর পর কেরোসিন পুড়ে কেমন সুঘ্রাণ বের হয়, সন্ধ্যাবেলায় প্রতিটা বাড়ি থেকে কিভাবে এক এক্কে এক, দুই এক্কে দুই পড়ার আওয়াজ ব্যাঙ এর ঘেঙর ঘেঙরকে হার মানায়, এরা কখনওই ধারাপাত বই চিনবে না। এরা জানে ইউটিউবের টিউটোরিয়াল, সারাদিনের স্কুলে পরে থাকা মোজার গন্ধ আর বিদেশী রাইটারের বই।

.

সময় পাল্টেছে, আমি যুগের দোষ দেবোনা, সময়ের দোষ দেব না, এই জেনারেশনের দোষ দেব না। দোষ দেব আমাদের, দোষ দেব এই ৯০ এর দশককে। কেন তারা এত সুন্দর ছিল যে পরবর্তী দিনগুলোকে তাদের ধারে কাছেও আসতে দিল না? সেই দিনগুলো ফেসবুক ইউটিউবে বন্দী ছিল না তাই আমাদের শৈশব কেটেছে মাঠেঘাটে, হাওড় বাওড়ে, আগুনে পানিতে, জলাজঙ্গলে।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৯ দুপুর ২:১১
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×