somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আওয়ামী লীগ এর দুর্নীতি পর্ব : ২

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পদ্মা সেতুর দুর্নীতি

চোরের মার বড়ো গলা।। বেপারটা সেই রকমই হয়ে গেলো আর কি! অনুরোধ করে আবার অনুরোধ ফিরিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।

পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংককে অর্থায়নের জন্য করা অনুরোধ ফিরিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশ সরকারের এই অনুরোধ গ্রহণ করেছে বিশ্বব্যাংক। আর এর সাথে সাথে বিশ্বব্যাংকের এবং বাংলাদেশ সরকারের পদ্মা সেতু প্রকল্পের ঋণচুক্তি বাতিল হয়ে গেল। শুধু বিশ্বব্যাংক একা নয়, পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়িয়েছে আরো দুই উন্নয়ন সহযোগী এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং জাইকা।

গত ৩১ জানু্য়ারী বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্বব্যাংককে এ বিষয়ে একটি চিঠি দেওয়া হয়। আর ১ ফেব্রুয়ারী শুক্রবার বিশ্বব্যাংকের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয় যে বিশ্বব্যাংক 'বাংলাদেশ সরকারের এই অনুরোধ গ্রহণ করেছে '। একি ডিন

ওইদিন শুক্রবার রাতেই এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এর এক বিবৃতিতে আর পরদিন শনিবার জাইকার বাংলাদেশ কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে -তারা ও এই প্রকল্প থেকে সরে দাড়াচ্ছে।

গত বুধবার বিশ্বব্যাকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম ওয়াশিংটনে এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পের সব শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত বিশ্বব্যাংক অর্থায়নের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে না। একই সঙ্গে এ বিষয়ে চলমান ফৌজদারি তদন্ত পূর্ণাঙ্গ ও সুষ্ঠু হওয়ার নিশ্চয়তাও থাকতে হবে। এর পরপরই বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্ত বিশ্বব্যাংককে জানিয়ে দেওয়া হল।

বিশ্বব্যাংকের কাছে পাঠানো বাংলাদেশ সরকারের ওই চিঠিতে এও বলা হয় যে, এই প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ বিষয়ে বাংলাদেশ তদন্ত চালিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ সরকারের এই চিঠি বিশ্বব্যাংক গ্রহণ করেছে। একই সঙ্গে এ প্রকল্পে অভিযোগ ওঠা বিষয়ে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন পরিপূর্ণ ও স্বচ্ছ তদন্ত করবে বলে বিশ্বব্যাংক আশা প্রকাশ করছে।

পদ্মা সেতু প্রকল্পে স্বল্প সুদে বিশ্বব্যাংকের ১২০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে গত বছরের জুন মাসে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পের ঋণচুক্তি বাতিল করে। পরে সরকারের সঙ্গে আলোচনার পর গত সেপ্টেম্বর মাসে আবার ফিরে আসার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্বব্যাংক। তখন শর্ত দেওয়া হয়, তদন্তে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) সহায়তা করতে বিশেষজ্ঞ দল পাঠাবে বিশ্বব্যাংক। সেই স্বাধীন দলটির পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে অর্থায়নের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বিশ্বব্যাংক। ইতিমধ্যে পর্যবেক্ষণ দলটি দুবার বাংলাদেশ ঘুরে গেছে। দুদক পদ্মা সেতুর-দুর্নীতি নিয়ে মামলা করেছে। কিন্তু দুদকের প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন (এফআইআর) থেকে বিশ্বব্যাংকের মূল অভিযোগের আঙুল যাঁর দিকে, সেই সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ পর্যবেক্ষণ দলটি আবুল হোসেনকে বাদ দেওয়াসহ দুদকের কাছে আটটি প্রশ্নের জবাব চেয়েছে।

এমন প্রেক্ষাপটে কয়েক দিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ৩১ জানুয়ারির (গতকাল) মধ্যে বিশ্বব্যাংক সিদ্ধান্ত না জানালে বাংলাদেশ নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নেবে।

সরকার ইতিমধ্যে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু তৈরি করতে উদ্যোগ নিয়েছে। এ জন্য কোন অর্থবছরে কত টাকা দরকার হবে, তা জানাতে সেতু বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

অর্থমন্ত্রী গত ২৮ জানু্য়ারী সেতু বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এর আগে অর্থমন্ত্রী, যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও সেতু বিভাগের সচিব খোন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও বৈঠক করেন। প্রধানমন্ত্রী দেশীয় অর্থায়নের ওপর জোর দিয়ে বিশ্বব্যাংকের বাইরে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকা ও ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংককে (আইডিবি) অন্তর্ভুক্ত করা যায় কি না, সেটি বিবেচনার পরামর্শ দেন।

কিন্ত গত ৩১ জানু্য়ারী বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংককে অর্থায়নের জন্য করা অনুরোধ ফিরিয়ে নেয়ার পর পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়িয়েছে আরো দুই উন্নয়ন সহযোগী এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং জাইকা। গত শুক্রবার রাতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এর এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। আর শনিবার জাইকার বাংলাদেশ কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে -তারা ও এই প্রকল্প থেকে সরে দাড়াচ্ছে।

বিবৃতিতে এডিবি জানিয়েছে, অর্থায়নে বিশ্বব্যাংক না থাকায় প্রকল্পে থাকতে চায় না সংস্থাটি। তবে প্রকল্পের গুরুত্ব তুলে ধরে এটি বাস্তবায়নের আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে বিবৃতিতে। এ ছাড়া বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচন এবং দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার ঘোষণাও দিয়েছে সংস্থাটি।

জাইকার বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ''বিশ্বব্যাংককে পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়নের অনুরোধ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত জাইকাকে জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এটা খুবই দুঃখজনক যে বর্তমান অর্থনৈতিক কাঠামোর অধীনে তারা অগ্রসর হতে পারেনি এবং সংকট সমাধানে আমাদের পদক্ষেপ কাজে আসেনি। যদিও গত জুনে বিশ্বব্যাংক কর্তৃক ঋণ বাতিল করার পর আমরা বাংলাদেশ সরকার ও অন্যান্য সহ-অর্থায়নকারীদের সঙ্গে এ ব্যাপারে ঘনিষ্ঠভাবে আলোচনা করেছি। একটি সহ-অর্থায়নকারী হিসেবে বর্তমান কাঠামোয় আমাদের প্রতিশ্রুতি অব্যাহত রাখা সম্ভব নয়। আমাদের নীতিতে নৈতিকতার সর্বোচ্চ মানের দরকার হয়।''

পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাদের পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছ তদন্ত অব্যাহত রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেছে জাইকা।

২৯০ কোটি ডলারের পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্রধান অর্থদাতা প্রতিষ্ঠান ছিল বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী প্রকল্পে ১২০ কোটি ডলার দেওয়ার কথা ছিল বিশ্বব্যাংকের। এ ছাড়া এডিবির ৬১ কোটি, জাপানি উন্নয়ন সংস্থা জাইকার ৪০ কোটি এবং ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) ১৪ কোটি ডলার দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কানাডীয় কোম্পানি এসএনসি লাভালিনের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ ওঠায় ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে চুক্তি স্থগিত করে বিশ্বব্যাংক।

উল্লেখ্য গত বছরের (২০১২) জুলাই মাসেই নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের বিষয়টি মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদন করে। সে সময় মূল সেতুর দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছিল। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের ফিরে আসার সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় সেবার দরপত্র আহ্বান করা হয়নি।

সেতু বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, এখনো সরকারের পক্ষ থেকে দরপত্র আহ্বান কিংবা ঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগের সরাসরি নির্দেশনা সরকারের পক্ষ থেকে পাওয়া যায়নি।

সূত্র:
বিশ্বব্যাংকের ওয়েব সাইট
জাইকার ওয়েব সাইট
এডিবি ওয়েব সাইট
দৈনিক প্রথম আলো
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:১৩
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×