ধরুন, আমাদের কাউকে যদি কেউ খুব আন্তরিকতার সাথে দাওয়াত করে; সুন্দর ও সুস্বাদু করে শুকরের গোশত রান্না করে সামনে পরিবেশন করে।
সাথে সাথেই কিন্তু আমরা তার আন্তরিকতা, তার কস্ট করে রান্না সব ভুলে গিয়ে তাকে তিরস্কার করে বলবো,
আপনি মানুষটা কি পাগল?
জানেন না আল কুরআনে শুকর আল্লাহ হারাম করেছেন।
আপনি কেমন করে একজন মুসলমানকে শুকরের গোশত খেতে দিলেন।
কিন্তু এই মুসলিম দাবী করা মানুষটাই প্রতিদিন কারো না কারো গীবত বা বদনাম করেন, করতেই থাকেন।
এই মানুষটাই কোন একটা সম্পর্কে যদি একটু এদিক সেদিক হয় তাহলে,
সেই দশ বিশ বছরের পুরনো কথা মনে করে তার নামে সত্য মিথ্যা মিশিয়ে গীবত ও মিথ্যারোপ করেন।
মনের এই বিষ যতক্ষণ না তার (স্বামী/স্ত্রী, সন্তান, বন্ধু, পরিবার ইত্যাদি) কাউকে বলে তাদের অন্তরে সেই মানুষটার প্রতি বিষাক্ত মনোভাব তৈরি না করান ততোক্ষণ পর্যন্ত থামেন না।
এই সিলসিলা চলতে থাকে, চলতে থাকে যুগ যুগ, জন্ম জন্মান্তর ধরে।
এত বিষ, এত হিংসা, এত বিদ্বেষ, এত আক্রোশ দুনিয়াতে তাদের পরিজনদের দিয়ে একদিন সে দুনিয়া থেকে চলে যান।
এরপরে তার পরিজনেরা এটা ক্যারি (বহন করে), কিন্তু কোন দিন আসল সত্যটা জানার চেষ্টাটা পর্যন্ত করে না বা বহু পুরনো কথা ভুলে যাই! সেটা ও করেন না।
অথচ কুরআনে আল্লাহ শুকর হারাম করেছেন, যে শুকরের নাম শুনলে তার ঘৃণার উদ্রেক হয়
সেই কুরআনেই আল্লাহ বলেছেন গীবত মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার মত বীভৎস, ঘৃণ্য ও নোংরা কাজ।
কিন্তু সেটা আমাদের কারো মনে হয় না, উল্টো যুক্তি দেই সত্য বলছি বানিয়ে তো বলছি না।
আহম্মকের দল জানেন না যে সত্যি বলাটাই তো গীবত যা হারাম ও নিকৃষ্ট কাজ।
রসূল সঃ বলেছেন,
তোমরা কি জানো গিবত কাকে বলে?’ সাহাবিরা বললেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.) ভালো জানেন।’ তিনি বলেন, ‘তোমার কোনো ভাই সম্পর্কে এমন কথা বলা, যা সে অপছন্দ করে, তা-ই গিবত।’ সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আমি যে দোষের কথা বলি, সেটা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে, তাহলেও কি গিবত হবে?’ উত্তরে রাসুল (সা.) বলেন, ‘তুমি যে দোষের কথা বলো, তা যদি তোমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে, তবে তুমি অবশ্যই গিবত করলে আর তুমি যা বলছ, তা যদি তার মধ্যে না থাকে, তবে তুমি তার ওপর তুহমত ও বুহতান তথা মিথ্যা অপবাদ আরোপ করেছ।’ (মুসলিম)।
আরও ভয়াবহ বিষয় হচ্ছে, গিবত করা ও গিবত শোনা সমান অপরাধ। গিবত বা পরনিন্দা ইসলামি শরিয়তে সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নিষিদ্ধ। অনেকেই পরনিন্দাকে পাপ বা নিষিদ্ধ বলে মনেই করেন না।
সব থেকে ভয়ংকর বিষয় হচ্ছে,
মদ্যপান, চুরি, ডাকাতি, ব্যভিচার ইত্যাদি থেকেও মারাত্মক ও নিকৃষ্টতম পাপ ও কবিরা গুনাহ হলো গিবত। অন্যান্য পাপ তওবা দ্বারা মাফ হয়; গিবতকারীর পাপ শুধু তওবা দ্বারা মাফ হয় না, যার গিবত করা হয়েছে, সে ব্যক্তি যদি মাফ করে, তবেই আল্লাহর কাছে মাফ পাওয়া যেতে পারে। একটি কবিরা গুনাহ কাউকে জাহান্নামে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যখন আমাকে মিরাজে নিয়ে যাওয়া হলো, তখন আমাকে তামার নখবিশিষ্ট একদল লোকের পাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হলো। তারা তাদের নখগুলো দিয়ে স্বীয় মুখমণ্ডলে ও বক্ষদেশে আঘাত করে ক্ষতবিক্ষত করছিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে জিবরাইল! এরা কারা? জিবরাইল (আ.) বললেন, এরা দুনিয়াতে মানুষের গোশত ভক্ষণ করত এবং তাদের মানসম্মান নষ্ট করত। অর্থাৎ তারা মানুষের গিবত ও চোগলখোরি করত।’” (আবু দাউদ)।
রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে সাহাবিরা জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! গিবত কি জেনার চেয়েও মারাত্মক?’ জবাবে তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ। কারণ, কোনো ব্যক্তি জেনার পর তওবা করলে আল্লাহ ক্ষমা করেন। কিন্তু গিবতকারীকে যার গিবত করা হয়েছে, তিনি মাফ না করলে আল্লাহ মাফ করবেন না।’ (মুসলিম)। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, গিবতের কাফফারা হলো তুমি যার গিবত করেছ, তার জন্য মাগফিরাতের দোয়া করবে। তুমি এভাবে বলবে, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার ও তার গুনাহ মাফ করে দাও।’ (বায়হাকি)।
সংশোধনের জন্য বলতে চাইলে যার বিষয় শুধু তাকেই বলা যাবে, অন্যকে নয়। সমালোচনাকারীকে বিচারের দিনে নিজের নেক আমল দিয়ে এর বিনিময় পরিশোধ করতে হবে। যার সমালোচনা করেছে, তার গুনাহ নিয়ে সমালোচনাকারীকে জাহান্নামে যেতে হবে।
আব্দুল্লাহ ইথার।
আগস্ট ০২,২০২২
সম্মানিত দর্শক!
আমার নিজের চ্যনেলের কয়েকটা ভিডিও লিংক দিচ্ছি, দেখে ভালো লাগলে কমেন্ট করে জানাবেন।
সাফল্যের আরেক নাম ধৈর্য
মুসলিম ঐক্য ও ইসলামী শাসনতন্ত্রের বাস্তবায়ন কোন পর্যায়ে আছে
মিন বান্দারাও অনেক সময় নিজের অজান্তে বে-খেয়ালে
গায়ের জোরে আর নয় সংসার
আপনার সব ইনকাম যদি দুনিয়া চলার জন্য হয়
আমরা ধর্মীয় কাজে কতটা ধার্মিক
আল্লাহ আমাদের সকলকে সুন্দর ভাবে চলা ও বলার তাওফিক দান করুন। আমিন।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০২২ রাত ৮:১৫