‘জনগণ-ই সকল ক্ষমতার উৎস’
এই কথা যে বা যারা বলে; সে হোক কোন প্রতিষ্ঠান, সিস্টেম বা সরকার। তাদের এই আক্বিদার (বিশ্বাসের) বিরুদ্ধে আমার স্পষ্ট অবস্থান। একজন মুসলমান হিসাবে এটা আমার মৌলিক ঈমান যে ‘সকল ক্ষমতার মালিক একমাত্র আল্লাহ সুবহান ওয়া তায়ালা’।
সুতরাং,
যে প্রতিষ্ঠান, সিস্টেম বা সরকার এই আকিদ্বা লালন করে বা প্রচার করে এবং এদের-কে জনগণ যদি ভোট দিয়ে বা যে কোন নির্বাচন পদ্ধতি প্রয়োগ করে এই সমাজের নেতা বা নীতিনির্ধারক হিসাবে বেছে নেয় সেক্ষেত্রে একজন মুসলিম ভাই হিসাবে তাদের ঈমানের এই দুর্বলতার জন্য তাদের প্রতি আমার দুয়া ও সমবেদনা।
আমি নির্বাচন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে নই, এটা ইসলাম স্বীকৃত একটি ব্যবস্থা।
কেননা রসূল সাঃ এর ওফাতের আগে তিনি খলিফা হিসাবে কাউকে নির্বাচিত করে যাননি না গেলেও পরবর্তীতে কিন্তু খেলাফত যুগে ‘কে খলিফা হবেন’ সেটা নির্ধারণের জন্য জনমত জরিপ করা ও বিশেষ যোগ্য ব্যক্তিদের দ্বারা সিলেকশন পদ্ধতির মাধ্যমে খলিফা নির্বাচিত করা হত।
আফসোস!
আজ আমি সেই খিলাফত যুগের নির্বাচন এর মূল উদ্দেশ্য ‘আল্লাহর বিধি-বিধান বাস্তবায়ন ও সকলের জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার’ মাধ্যমে সমাজের সকল স্তরে শান্তি ও নিরাপত্তা বাস্তবায়নের কোন ছিটে-ফোঁটা দেখছি না।
বরং,
দেখছি এই প্রতিষ্ঠান, সিস্টেম বা সরকার যারা-ই ক্ষমতায় এসেছে তারাই কম-বেশী ‘আল্লাহর আইনের ও কুরান-সুন্নাহ বিরোধী নানা কাজ ও আইন পাশ করে সমাজের সকল শান্তি বিনষ্ট করে চলেছে।
আমার সবিনয় অনুরোধ;
যার আজকের নির্বাচন বা যে কোন নির্বাচনে অংশ নিয়ে সমাজের নেতা ও নীতিনির্ধারক নির্বাচিত এর জন্য ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন তারা একবার ভেবে দেখবেন যে আপনি যে প্রতিষ্ঠান, সিস্টেম বা সরকার নির্বাচিত করতে চাচ্ছেন সেটা কি, ……… নিচের এই দোষগুলো থেকে মুক্ত কিনা। যদি মুক্ত থাকে আলহামদুলিল্লাহ্ আর যদি যুক্ত থাকে তাহলে অবশ্যই আপনি আপনার বিবেক অনুযায়ী কাজ করবেন। কেননা ইসলাম ধর্মে একটা বিষয় খুব-ই পরিষ্কার। সেটা হচ্ছে অন্যায়ের পক্ষ নিলে আপনাকে আল্লাহর দরবারে এই কাজের জন্য অবশ্যই একদিন জবারদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে এবং সেদিন বুঝবেন অন্যায় না করেও শুধুমাত্র অন্যায়ের পক্ষ নেওয়ার জন্য আপনাকে ও সেই অন্যায়ের জন্য কম বা বেশী শাস্তি পেতে হবে।
কেন এই প্রতিষ্ঠান, সিস্টেম বা সরকার এর এই বিষয়গুলোর বিরুদ্ধে আমার অবস্থানঃ
# কারণ এরা সংসদে বসে আল্লাহর আইনের বিরুদ্ধ আইন পাশ করেন।
# এরা অশ্লীলতা ও জেনা-ব্যাভিচারকে বড় কোন অন্যায় মনে করে না এগুলো করার ওপেন লাইসেন্স দেয় এমন কি
# দেশী বিদেশী ডিশ চ্যানেল, সিনেমা হলের অনুমোদন দিয়ে এসবের এক রকম প্রমোশন চালায়,
# নাইট ক্লাব, পতিতালয়, সহ নগ্ন অনুষ্ঠানের অনুমোদন দেয় - আয়োজন করে - কখনো বা নিজেরা-ই এসবের মালিক থাকেন।
# মদ গাজা, বিড়ি সিগারেট ইত্যাদি ব্যবসার লাইসেন্স বিক্রি করে এসব হারাম কাজকে বৈধতা দেয় দেশের ট্যক্স বাড়াবার নামে।
# সুদকে খারাপ কিছু মনে করে না, নিজেই সুদী ব্যাংকের মালিক বৈধতা প্রদানকারী।
# ওদিকে জনগণের টাকায় নানা মহা মহা দুর্নীতি করে; অনাগত কয়েক প্রজন্মকে জন্মগত ভাবে ঋণী করে তোলে।
# চাঁদাবাজি বা ক্ষমতার অপপ্রয়োগ, মাস্তান পালন ও নানা চুরি-জোচ্চুরির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়া।
# নির্লজ্জ মিথ্যাবাদীতা, ওয়াদার বরখেলাপী, দলকানা ও নানা অনিয়ম করে হলেও ক্ষমতায় আজীবন থাকার লিপ্সা।
# কোন সরকারী প্রতিষ্ঠানে ঘুষ ছাড়া কোন কাজ হয়না এবং সরকারী সকল প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম-দুর্নীতিতে নীরব ভূমিকা পালন করা।
# ইচ্ছামত সুদে বৈদেশিক ঋণ করা ও দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করা।
# কখনো ধর্মকে বা পাবলিক সেন্টিমেন্টকজে পুঁজি করে দাঙ্গা হাঙ্গামা সৃষ্টি করে ভোট ব্যাংক বৃদ্ধি।
# সর্বোপরি; দ্বীন ইসলাম এর বিধান দূরে থাক যে প্রতিষ্ঠান, সিস্টেম বা সরকার জনগণের জন্য নুন্যতম মানবিক সেবা দিতে ব্যর্থ অর্থাৎ খাদ্য-বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও সুশিক্ষার সর্ব ক্ষেত্রে ব্যর্থ। দরিদ্ররা যেখানে নিপীড়িত-নির্যাতিত, ক্ষুধার তাড়নায় অনাহারে অর্ধাহারে যাদের প্রতিদিন কাটে, যে সমাজে ন্যায় বিচার এর বানী নীরবে নিভৃতে কাঁদে। তাদের পক্ষে আমি কিভাবে অবথান নিতে পারি।
সুতরাং,
সমাজের এত এত অন্যায় অবিচার দেখে অন্তত কিছু করতে না পারি অন্তত এর পক্ষ নেব না বা আমি এই অন্যায়ের পক্ষের শক্তিকে সাপোর্ট করবো না। যেদিন দ্বীনের ও দশের কল্যাণে নির্বাচন হবে সেদিন অবশ্যই আমি আমার মত ন্যায়ের পক্ষে প্রয়োগ করে সমাজ গঠনে অবদান রাখবো।
বিঃদ্রঃ – আলেম সমাজের এক পক্ষ মনে করেন; এদেশে নির্বাচন যেহেতু ‘মন্দের ভালো’ একটি স্বীকৃত পদ্ধতি সুতরাং একেবারে নির্বাচন বর্জন না করে বরং মন্দের ভালো যে পক্ষ আছে তাকে নির্বাচিত করা। যাতে করে বেশী অযোগ্য ব্যাক্তিরা অন্তত ক্ষমতায় না আসতে পারে। তবে আমি এই মতের ভিন্নমতকে বেশী শক্তিশালী ও নিরাপদ মনে করি।
- আব্দুল্লাহ ইথার।
- ৭ই জানুয়ারি ২০২৪।
- দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এর দিন।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ৭:৪২