somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবন কত সুন্দর হতো যদি না পরীক্ষা থাকতো

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বার্ষিক পরীক্ষা শেষ, সহপাঠী নাদিয়ার জানালায় উঁকি দিয়ে দেখলাম সে রিলাক্সে পরের ক্লাশের পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে অগ্রীম ব্যতিব্যস্ত,
.
ভাগ্যিস রবী ঠাকুর বেঁচে নেই, থাকলে সেদিন বলতো, 'ওরে নাদিয়া, আবারও শেষ হইয়া হইলো না শেষ ৷'
.
স্কুলের শরীরচর্চা বিভাগের স্যার প্রায় সময় বলতো, আরামে দাঁড়াও, সোজা হও! তারপর একদিন কাছে এসে বললেন, এটা কি আরামে দাঁড়ানো হলো ৷ বললাম, স্যার আমি এভাবে কাঁধ বাঁকা হয়ে না দাঁড়াইলেতো আরাম পাইনা!
.
জানিনা বার্ষিক পরীক্ষার শেষ, অনেকের কাছে সেই রকম আরামে দাঁড়ানোর মতো কোন বেপার কি না,
.
তবে আমার মতো অনেকের কাছে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ মানে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটি! আরেকটা বার্ষিক পরীক্ষা না এলে ভুলে যেতাম, এককালে আমিও ছাত্র ছিলাম না কি?
.
নানীর দীর্ঘ বিশ্বাস মতে বার্ষিক পরীক্ষা শেষে কারাবন্দী শয়তানগুলোর নাকি কারামুক্তি হয় ৷ বুঝতেই পারছেন জ্বালাময়ী ছিলো সে সব দিনগুলো,
.
গত রাতগুলোতে দশটার আগে ঘুমে নুয়ে যেতে থাকা ছেলেটিরও পরীক্ষার পর আনন্দে ঘুম ই আসতো না ৷ ছাত্র জীবনে রমজানের ঈদ, কোরবানের ঈদের পর আরেকটি ঈদ ছিলো তা হলো বার্ষিক পরীক্ষা শেষের আনন্দ ৷
.
যদিও বার্ষিক পরীক্ষা শেষে এলাকার ছোট ভাইদের প্রতি কিছু গুরু দায়িত্ব পালন করতে হতো, এই যেমনঃ লম্বা করে সালাম দিয়ে বড় ভাই ডাকা ছেলেটির হাতে চারশ টাকা দামের পাঞ্জেরি গাইডটি তুলে দিয়ে প্রতিদান দেওয়া ৷
.
প্রতি বার্ষিক পরীক্ষার পর একটা ভাব আসতো, দিনকে দিন এলাকার বড় ভাই হওয়ার যে একটা যাত্রা তার শেষ নিদর্শন স্বরূপ এমন একটা শার্টের খোঁজ করতাম যার কলার সর্বদা উঁচা থাকবে ৷
.
কি এক যুগে আছি যেখানে মান্না দে ও নেই, থাকলে নিশ্চিত সুর তাল লয় দিয়ে গেয়ে উঠতো, 'বার্ষিক পরীক্ষা শেষের সেই আনন্দগুলো আজ আর নেই, আজ আর নাই, কোথায় হারিয়ে গেলো সোনালী দিনগুলো সেইই, আজ আর নেই.....!'
.
লাল্লাল্লা টাইপের সেই দিনগুলোতে লাল নীল স্বপ্নের মধ্যে কেবলি ছিলো একদিন পরীক্ষা শেষ হবে, সেদিন অনেক মজা হবে!!!
.
কথিত পরীক্ষার জনক হেনরি এ ফিশেলকে মনে মনে উচ্চবাক্য করতে করতে কখন যে জীবন থেকে বার্ষিক পরীক্ষা নামক অধ্যায়টি পরিসমাপ্তি হয়েছে মনেও নেই,
.
তবুও স্মৃতির পাতা খুলে দেখতে পেলাম, বার্ষিক পরীক্ষা শেষে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী ছাত্রগুলো মামার বাড়ি যাচ্ছে, আজ আমাদের ছুটিও ভাই! আজ আমাদের ছুটি ৷
.
বইয়ের ভারে হেলে যাওয়া কিছু কাঁধ টান টান করে আবারো বুক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে, এদিক ওদিক ছুটোছুটি করছে,
.
এ যেনো দীর্ঘ নয় দশ মাস রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর খুব অল্প সময়ের জন্য পাওয়া স্বাধীনতা ৷ স্বাধীনতার এক্সপায়ার ডেট্ শেষ হওয়ার পর যখন গ্রাম ছেড়ে শহরে ঢুকতাম, নিশ্চিত শুনতে পেতুম, কিরে তুই এতো কালো হয়ে গেছিস কেনো ৷ সহজ স্বীকারোক্তি করে বলতে ইচ্ছে হতো, 'আমাদের রৌদ্রস্নান ভালো লাগে!'
.
তখন বার্ষিক পরীক্ষার প্রস্তুতি জানিয়ে বাবাকে পত্র লিখতে হতো, কিন্তু বার্ষিক পরীক্ষা শেষ, এখন কি করবো জানিয়ে যদি পত্র লিখতে হতো তাহলে সেটা নিশ্চিত কোন ডানপিটে বন্ধুকে উল্লেখ করে লেখা লাগতো,
.
একদিন বার্ষিক পরীক্ষাগুলোর নাম পাল্টে ইংরেজি হয়ে গেলো, কখনো বোর্ড পরীক্ষা, লাস্ট সেমিস্টার, ফাইনাল পরীক্ষা, মাস্টার্স পরীক্ষা অবশেষে একদিন বুঝতে পারলাম জীবন মানেই পরীক্ষা ৷
.
প্রতিটি দিন ই পরীক্ষার দিন, জীবনের বার্ষিক পরীক্ষায় শুধু ইকোনো ডি এক্স কলম, খাতা, কাগজ, স্কেল, টেবিল, টুল কিংবা সেই স্কুল নেই ৷
.
বার্ষিক পরীক্ষা শেষে লিখতে গিয়ে আবারো বুঝতে পারলুম, 'বাস্তবতা সেই নাদিয়ার মতো কিয়েক্টাবস্থা, শেষ হইয়াও হইলো না শেষ!'
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:৩৫
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×