somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রূপান্তর

১৮ ই এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অবনীদের বাড়িতে আজ উৎসব।

অবনীর বাবা হামিদুল কবীর সাহেব Hamburg Süd কোম্পানিতে কাজ করেন। এটা একটা জার্মান কন্টেইনার শিপিং কোম্পানি। কোম্পানির কন্টেইনারবাহী জাহাজ নিয়ে তিনি হামবুর্গ বন্দর থেকে পিকিং বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন। ভারতের পন্ডিচেরি বন্দরের কাছে এসে হঠাৎ করে জাহাজের প্রোপেলার নষ্ট হয়ে যায়। এখন ডেনমার্ক থেকে নতুন যন্ত্রপাতি কিনে এনে প্রোপেলার ঠিক করতে হবে, সেটা অনেক সময়ের ব্যাপার। জাহাজ আপাতত পন্ডিচেরি বন্দরে নোঙর করা আছে।

কন্টেইনার শিপিং কোম্পানিতে কাজ করার সুবাদে হামিদ সাহেবকে বছরের বেশিরভাগ সময় দেশের বাইরে অবস্থান করতে হয়। তিনি এই দফায় প্রায় আট মাস বিদেশে ছিলেন। এই আট মাসে তিনি ব্যাকুল হয়ে তাঁর একমাত্র মেয়ে অবনী ও তাঁর স্ত্রীর কথা মনে করেছেন। যদিও কর্ডলেস ফোনে তাদের সঙ্গে নিয়মিতই কথা হয় তাঁর, তবুও চোখে দেখার আক্ষেপটা কণ্ঠশ্রবণে পুরোপুরি ঘুচে যায় না। তাই, জাহাজ রিপেয়ারিংয়ের এই সুযোগে তিনি ঢাকায় চলে এসেছেন পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে। তাঁর এই অপ্রত্যাশিত আগমনে পরিবারের সবার মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। তৎক্ষণাৎ কাছের বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনদের খবর দেয়া হয়। এই উপলক্ষে রাতের বেলায় হামিদ সাহেবের বাড়িতে একটা গেট টুগেদার পার্টির আয়োজন করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে পার্টির এরেঞ্জমেন্ট শুরু হয়ে গেলো। বাড়িতে বাজার করে আনা হলো। ঢাকা ক্লাব থেকে অ্যালকোহলের বোতলও চলে এলো।

পার্টি জমে উঠেছে। আমন্ত্রিত সকল অতিথিই উপস্থিত। তাদের মধ্যে আছেন হামিদ সাহেবের বন্ধু ইশরাক আবেদীন। সদা হাস্যোজ্জ্বল, অমায়িক ও বাকপটু এই মানুষটিকে হামিদ সাহেবের পরিবারের সবাই পছন্দ করে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে কাজ করার সুবাদে তিনিও হামিদ সাহেবের মতো বহু দেশে ঘুরেছেন। সেই সব দেশের ইন্টারেস্টিং সব গল্প সবসময়ই তাঁর ঝুলিতে থাকে। অবনীরা সেসব গল্প শুনতে ভালোবাসে।

ইশরাক সাহেব শ্যাম্পেইনের গ্লাস হাতে ঘোরাঘুরি করছিলেন। হামিদ সাহেবের সঙ্গে আগেই কুশল বিনিময় হয়ে গেছে তাঁর, আবার দেখা হয়ে গেলো তাঁর সঙ্গে। হামিদ সাহেব তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, "কী ব্যাপার, ইশরাক? এমন ব্যস্তভাবে হাঁটাহাঁটি করছো যে? কাউকে খুঁজছো নাকি?"

ইশরাক সাহেব বললেন, "আরে না না, ওরকম কিছু না। অবনীকে একটু খুঁজছিলাম। ওর জন্য একটা গিফট এনেছি।"

"কী গিফট?"

"অবনী তো এবার সমাপনী পরীক্ষায় ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেলো। এজন্য ওর জন্য একটা পোলারয়েড ক্যামেরা এনেছি। শুনেছি, ওর নাকি ছবি তোলার অনেক শখ। এজন্যই ক্যামেরাটা আনা। ও কোথায়?"

"অবনী তো দোতলায়। ওর রুমেই আছে ও। যাও, ওর রুমে গিয়ে দেখা করে এসো"

অবনী রুমে বসে বসে ছবি আঁকছিলো। ইশরাক সাহেব দরজার কাছে থেকে বললেন, "মামণি, আসবো?"

ইশরাক সাহেবের গলা শুনেই অবনী চিনতে পারলো। সে আনন্দিত গলায় বললো, "অবশ্যই। ভেতরে আসুন, ইশরাক চাচা। কেমন আছেন, চাচা?"

"আমি অনেক ভালো আছি, মা। তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমিও অনেক ভালো আছো, ঠিক বলেছি না?"

অবনী হাসতে হাসতে বললো, "একদম ঠিক বলেছেন, চাচা। এতোদিন পর বাবা বাড়িতে এলো, তাও আবার আগে থেকে কিছু না জানিয়ে। বাবার মধ্যে এরকম সারপ্রাইজ দেয়ার ছেলেমানুষি আছে। কী খুশি হয়েছি বাবাকে দেখে! ভালো না থেকে উপায় আছে?"

ইশরাক সাহেব পরিতৃপ্ত গলায় বললেন, "খুশি হওয়াটাই স্বাভাবিক। তোমার বাবার পদচারণায় এই বাড়ি হেসে উঠেছে। যাই হোক, তোমার জন্য একটা জিনিস এনেছি, মা।"

অবনী উৎসাহি গলায় বললো, "কী জিনিস, চাচা?"

"জিনিসটা হলো একটা পোলারয়েড ক্যামেরা। এই ক্যামেরার বিশেষত্ব হলো, এটায় ফিল্ম ডেভেলপমেন্টের একটা চেম্বার আছে। তুমি ফিল্মের কাগজ ঢুকিয়ে কোনো অবজেক্টের ছবি তোলার জন্য শাটার ক্লিক করে পাঁচ সেকেন্ড অপেক্ষা করবে। পাঁচ সেকেন্ড পর ম্যাজিক দেখতে পারবে।"

"কী ম্যাজিক, চাচা?"

"পাঁচ সেকেন্ড পর ছাপানো ছবিসহ ফিল্মটা বেরিয়ে আসবে।"

অবনী আনন্দিত ও উত্তেজিত গলায় বললো, "চাচা, আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ এমন দারুণ একটা জিনিস আমাকে গিফট করার জন্য। আমি কী যে খুশি হয়েছি!"

ইশরাক সাহেব ক্যামেরার প্যাকেটটা অবনীর হাতে দিলেন। অবনী প্যাকেটটা হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখতে লাগলো। ক্যামেরার প্রতি অবনীর এরকম আগ্রহ দেখে ইশরাক সাহেব অত্যন্ত খুশি হলেন। তিনি পরম মমতায় অবনীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। সেই হাত একসময় অবনীর মাথা থেকে বুকে নেমে এলো। অবনীর হাতে তখনো ক্যামেরার প্যাকেট।

ডাইনিং টেবিলে ইশরাক সাহেব তাঁর বিচিত্র সব অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করে সবার মন জয় করলেন। নব্বইয়ের দশকে বসনিয়া যুদ্ধের সময় সার্বিয়ান সৈন্যরা কীভাবে পাখির মতো গুলি করে নিরীহ বসনিয়ানদের মারতো, দুঃখ ভারাক্রান্ত করে তার উপাখ্যান বর্ণনা করলেন। বাইরে তখন তুমুল বৃষ্টি। ঝড়ো হাওয়া ও হিমশীতল বৃষ্টিধারা নগরীর সমস্ত পঙ্কিলতাকে ধুয়েমুছে পরিষ্কার করে ফেলার দুর্বার সাধনায় নেমে পড়েছে যেন।

প্রাকৃতিক পঙ্কিলতাকে প্রকৃতি নিজেই পরিষ্কার করে ফেলে। মানুষের ভেতরকার পঙ্কিলতাকে পরিষ্কার করার জন্য দেয়া হয়েছে মানুষের বিবেক। কিছু কিছু মানুষ সেই বিবেকটাকে সুন্দর করে ঘুম পাড়িয়ে রাখে। তারা কি সেই বিবেক হতে হিমশীতল বারিধারার অপেক্ষায় থাকে? প্রকৃতি অপেক্ষা পছন্দ করে না। তার অস্তিত্ব শুধুই অগ্রসরের সান্নিধ্যে।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪২
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসরায়েল

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮

ইসরায়েল
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

এ মাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বাবাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
নিরীহ শিশুদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এই বৃ্দ্ধ-বৃদ্ধাদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ ভাইক হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বোনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
তারা মানুষ, এরাও মানুষ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গ্রামের রঙিন চাঁদ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১২


গ্রামের ছায়া মায়া আদর সোহাগ
এক কুয়া জল বির্সজন দিয়ে আবার
ফিরলাম ইট পাথর শহরে কিন্তু দূরত্বের
চাঁদটা সঙ্গেই রইল- যত স্মৃতি অমলিন;
সোনালি সূর্যের সাথে শুধু কথাকোপন
গ্রাম আর শহরের ধূলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১৭



পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষঃ
পালবংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপালদেব অষ্টম শতকের শেষের দিকে বা নবম শতকে এই বিহার তৈরি করছিলেন।১৮৭৯ সালে স্যার কানিংহাম এই বিশাল কীর্তি আবিষ্কার করেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরবাসী ঈদ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৩

আমার বাচ্চারা সকাল থেকেই আনন্দে আত্মহারা। আজ "ঈদ!" ঈদের আনন্দের চাইতে বড় আনন্দ হচ্ছে ওদেরকে স্কুলে যেতে হচ্ছে না। সপ্তাহের মাঝে ঈদ হলে এই একটা সুবিধা ওরা পায়, বাড়তি ছুটি!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×