গল্পের নামটা দেখে একটু বিরক্ত হতে পারেন..!ভাবতে পারেন এটা আবার কেমন গল্প.?বিরক্ত হয়েন না...
এই মাত্র আবির সিয়াকে বিয়ে করে কাজি অফিস থেকে বের হয়েছে।চিন্তা একটাই সকালেও সব ঠিক ছিল।সকালেও সে ব্যাচেলর ছিল।এখন তার পাশে তার বউ।তাও আবার তার চেয়ে ৭ মাসের বড়।ভালোবাসা যে বয়স মানে না এই মেয়েকে না দেখলে কেউ বুঝবেনা।তার ডাক নাম সিয়া।পুরো নাম দিয়ে কোন কাজ নাই।
৮ মাস আগে....বাজি দিয়ে শুরু এক গল্প
আবিরের ঘুম খুব সকাল সকালই ভাঙে।এটা নিয়ে ওর নিজের সাথেই একটা গর্ব।আজও সকালে উঠে গেছে।ওঠেই একটা কাজ করে সে।ইয়ারফোন কানে দিয়ে গান শুনে।তারপর শুরু হয় অন্য কাজ গুলো।সাড়ে নয়টা বাজে।তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে সে ক্যাম্পাস এ দিল ছুট।তার অনেক দিনের শখ পাবলিক এ চান্স পাবে।পেয়েওছে কিন্তু অনেক কষ্টে।তার রেজাল্ট খুব ভাল ছিলনা।না সে খারাপ ছাত্র না।ইচ্ছে করেই পরিক্ষার খাতায় লেখত না।দশটায় সে ক্যাম্পাস এ ঢুকলো।এসেই চিরচেনা ক্যান্টিনে গিয়ে হাফিজকে দেখতে পায়।তার সামনে বসল।দিয়ে নানান কথায় মেতে উঠল।মিনিট পাঁচেক এর মধ্যেই আরও তিন জন তাদের সাথে যোগ দিল।তাদের কেন্দ্র বিন্দু ছিল আবির।কারনটা হল তার মাথায় বুদ্ধি,শয়তানি,রোমান্স,দিলখোলা ভাব সবই আছে।তাই তাকে সবাই ভালবাসে। ১০.৪৫ এ ক্লাস ছিল।সাড়ে এগারোটায় ক্লাস থেকে বেড়িয়ে তারা এবার ক্যাম্পাস এর সামনের মাঠে বসল।নানা কিছু নিয়ে গল্পের ফাকে হাফিজ আস্তে করে বলে উঠে অই দেখ ওখানে তিনটা মেয়ে আছে।ওদের মধ্যে মাঝখানের মেয়েটাকে আমি কাল বাসার পাশের বাসায় উঠতে দেখলাম।তারা কালই নতুন উঠেছে বাসাটায়।আবির ফিরে তাকালো মেয়েটার দিকে।এত সুন্দর মেয়ে..!সে আগে এমন মেয়ে দেখেনাই।মেয়েটার হাসিতে যেন কি একটা আছে..!আবির হা করে তাকিয়ে আছে মেয়েটার দিকে।তাও ভাল মেয়েটা এই ব্যাপার খেয়াল করে নাই।রাফি আবির কে হাল্কা ধাক্কা দিল।দিয়েই বলল ভাই ওই চিন্তাও করিস না।ওনি 'ল' ৩ম বর্ষ।ধরলে আমাদের ঘোল খাইয়ে ছাড়বে।আবির এর এই কথাটা যেন মনে লাগলো.!কি.!একটা মেয়ে তাদের ঘোল খাওয়াবে.?সে রাফিকে বলল আমি যদি মেয়েটার পাশে বসে গল্প করে আস্তে পারি তবে কি দিবি.?রাফি অনেকটা সিউর ছিল যে আবির পারবে না।কারনটা আবির কোনো রিলেশন এ নাই।তাই সে আবিরের চ্যালেঞ্জ নিয়ে ১০০০ টাকা বাজি ধরলো।মেয়েটা ততক্ষনে বসা থেকে উঠে ৩ নম্বর ভবনের দিকে যাচ্ছে।একাই যাচ্ছে।এই সুযোগ.. আবির ওঠেই তাড়াতাড়ি তার কাছে এগিয়ে পেছন থেকে ডাক দিল।হাফিজ, রাফি নিজের জায়গায় বসে সব দেখছিল।মেয়ে পেছনে ঘুরে দেখে একটা ছেলে তাকে ডাকছে।কিন্তু সে তাকে চিনে না।যাইহোক সিয়া বলল আমায় ডাকলেন.?আবির বিনয়ের সাথে বলল হুম।আমার নাম আবির।আমার নাম সিয়া।সুন্দর নাম তো..!চলুন একটু বসে কথা বলি।সিয়া প্রায় বুঝে গেছে যে আবির নিশ্চয় বাজি ধরে তার কাছে এসেছে।তাই তাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করেই বসল কত টাকার বাজি.?আবির খানিকটা চমকে উঠল.!সে কেমনে জানলো.?তারপর ও আস্তে করে বলল ১০০০ টাকা।চাইলে কম বলতে পারতো।কিন্তু আবির মিথ্যা কথা বলে না।সিয়া আবার তাকে চমকে দিয়ে বলে উঠলো হাফ-হাফ করে দেন।আবির সাথে সাথে রাজি।কারন টাকা না পেলেও তার কিছু যায় আসে না।সিয়া বলল চলুন ওই দিকটায় বসি।আবির তো মহাখুশি।সিয়া তার সাথে বসে টুকটাক কথা বলছিল।কিছুক্ষনেই সে বুঝে যায় আবির একটু অন্য রকম।হাল্কা পাগলাটে।ছেলেদের মাঝে হাল্কা পাগলামো না থাকলে ভাল লাগে না।প্রায় আধা ঘন্টা তাদের মাঝে গল্প হল।সিয়া বিদায় নিয়ে চলে যাবার পর সে রাফির কাছথেকে ১০০০ টাকা নিয়ে বাসায় চলে এলো।পরদিন ক্লাস বারোটায় কিন্তু সে দশটায় হাজির হল ক্যাম্পাসে।এসে সিয়াকে খুজল। ১৫ মিনিট ব্যয় করে তাকে খুঁজে পেল।তার সামনে গিয়ে তাকে একটা এগিয়ে দিল।সিয়া খামটা নিল।সে জানে ভিতরে টাকা আছে।সিয়া বুঝে নিল।আবির ছেলেটা সৎ।সেই থেকে শুরু হল।কেন জানি সিয়ার আবিরের সাথে গল্প করতে খারাপ লাগত না।দিন যায় মাস যায় তাদের বন্ধুত্ব আরও ভাল হলে থাকল।আবির অবশ্য এই বিষয়টা কে সাধারন ভাবেই নিল।সিয়াও ক্যাম্পাস এ এসে আবিরের সাথেই এদিক সেদিক যেত।ছয় মাস কেটে গেল সিয়া মনে মনে আবিরকে ভালবেসে ফেলেছে।কিন্তু বলতে পারছে না।কারনটা আবির তার চেয়ে ছোট।আর আবির তাকে আপু বলে ডাকে।তার মানে আবিরের মনে তাকে নিয়ে কিছুই নেই।এই ভেবেই চুপ থাকল।এদিকে আবির ও সিয়াকে ভালবেসে ফেলেছে।কিন্তু বলতে পারছেনা।এই ভাবেই আরও একমাস চলে গেল।সামনে ঈদ।তাই আজ ছুটি দিবে প্রায় একমাসের ছুটি।আবির আর সিয়া দুইজনেরই মন খারাপ কিন্তু কেউ কাওকে বুঝতে দিলনা।আজ আবির এসেই সিয়াকে বলে 'আপু সামনেতো ঈদ খুব মজা করবেন তাহলে..!'সিয়া বলে উঠল 'আমাকে আপু বলবা না।'আবির ভয় পেয়ে বলল কেন.?আমি কি কোন ভুল করে আপনাকে কষ্ট দিয়েছি.? সিয়া আবার বলল 'আমাকে আপনি করে বলার দরকার নাই..' আবির অবাক হয়ে বলে কেন.?সিয়া প্রতিউত্তরে বলে ''কেন বুঝনা..??"এই বলেই চলে গেলে।আবির হা করে দাঁড়িয়েই থাকল।সেদিন ই ক্যাম্পাস বন্ধ দিল।সিয়ার সাথে আর দেখা হল না।পুরো একমাসই আবির আর সিয়া কেউ কাউকে ফোন দিলনা।কিন্তু দুজনেই খুব কস্টে দিন পার করলো।মাস পার হলে পরে আবির বুঝতে পারে সিয়াকে ছাড়া সে কিছুই না।তাই মনে মনে ঠিক করে এবার সিয়াকে সব বলে দিবে।তাতে যাই হক।
সকাল বেলা...৮টায়।
আবির সিয়াকে ফোন দিল।সিয়া ফোন ধরতেই আবির তাকে বলে 'সিয়া.. আজ আমার সাথে দেখা করতে পারবে.?'সিয়া বেশ অবাক হয়।আবির তাকে নাম ধরে ডাকছে।আর তুমি করেও বলছে।সিয়া জবাবে বলে বিকেল ৩টায় টি.এস.সি এসো।বলে রেখে দিল।বিকাল তিনটায় সিয়া ওখানে গিয়ে দেখে আবির চুপ করে বসে আছে।সিয়া তার পাশে বসে বলল বল কি বলবা।আবির বলে 'আমার ঘুম একটু সকালেই ভাঙে।এতে তোমার ঘুমের সমস্যা হবেনা তো.?' এটা কি ধরনের প্রশ্ন.? তোমার ঘুম সকালে ভাঙে তো আমার সমস্যা হবে কেন.? এবার আবির সিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল 'না মানে তোমাকে বিয়ের পর আমরা একসাথেই থাকব।তাই বললাম।এবার সিয়া চমকে উঠে আবিরের দিকে তাকায়।আমি তোমায় ছাড়া থাকতে পারবনা সিয়া.! এবার সিয়া উঠে দাঁড়াল।তার পর বলল 'প্রমান করতে পারবে.?' কি প্রমান চাই.? সিয়া আবিরের হাত ধরে রিকশা ডাক দিল।রিকশা থামতেই তাকে নিয়ে রিকশায় উঠে রিকশাচালকে মগবাজার যেতে বলল।তারা মগবাজার পৌছে কাজিঅফিসের সামনে দাঁড়াল।সিয়া আবিরকে জিজ্ঞেস করল কি পারবে বিয়ে করতে.?আবির পকেট থেকে ফোন বের করে হাফিজ আর রাফিকে ডাকলো সেখানে।দিয়ে সিয়াকে বলল "আরে বিয়েতে সাক্ষী লাগবেতো তাই ডাকলাম।" তার ভাতেই কেমন লাগছে..! ৮ মাস আগে ধরা বাজি আজ তার জীবন পাল্টে দিচ্ছে..! ১ ঘন্টা পর তারা কাজিঅফিস থেকে বের হয়ে একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাশি দিল।তাদের জন্য অপেক্ষা করছে এক অজানা ভালো লাগা ভবিষ্যৎ।।।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১০:০৩