somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প : বৃষ্টি এবং একটি এক্সিডেন্ট অতঃপর..

০৬ ই মে, ২০১৭ রাত ১১:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মে মাসের শুরু থেকেই একটু-আকটু বৃষ্টি হয়।বৃষ্টি আবিরের বেশ লাগে।তিন তলার বেলকোনিতে দাঁড়িয়ে সে ভালই বৃষ্টি উপভোগ করে।বৃষ্টি যেন তার মন রিফ্রেশ করেদেয়।বৃষ্টি দেখা ছাড়াও আরও একটা কারনে আবির বৃষ্টির সময় এখানে দাঁড়ায়।
সেটা হল পাশের বিল্ডিং এর ছাদে বৃষ্টির সময় দোলনায় বসে থাকা মেয়েটি.!দেখতে বেশ সুন্দর।তবে আবিরের মাথায় একটা প্রশ্ন বেশ ঘুরপাক খায়।মেয়েটা বৃষ্টির সময় ছাদে উঠে দোলনায় এইভাবে বসে থাকে কেন.?দেখলে মনে হয় তার কোনো কষ্ট তাকে কুড়েঁ কুড়েঁ খাচ্ছে.!বৃষ্টির সময় ছাড়া তাকে এখানে খুব একটা পাওয়া যায় না।তার কি কোনো সমস্যা.?আবির মনে মনে খুব কষ্ট পায় তার কষ্ট দেখে.! মনে হয় আবির যদি জাদু জানতো তাহলে তার মনের কষ্টটা খুঁজে বের করত।যাইহোক
আবির ইতোমধ্যে মেয়েটার সাথে আকার ইংগিতে কথা বলার চেষ্টায় আছে।কিন্তু মেয়েটা যেন দেখেইনা.!আবির হাল ছাড়েনা।সুযোগ হল আরো এক মাস পরে।
ভার্সিটি থেকে বাইকে করে ফেরার সময় বাসায় সামনে আবির থেমে গেলো।দেখে সেই মেয়েটির সাথে রিকশাআলা ক্যাচাল করছে।আবির বাইক রেখে সামনে গেল।সমস্যা হচ্ছে মেয়েটি নিজের পার্স হারিয়েছে রাস্তায়।তো বাসায় এসে রিকশা ভাড়া দিতে হলে তাকে আগে তিন তালায় গিয়ে টাকা এনে দিতে হবে।কিন্তু রিকশাআলা তাকে সেই সময় দিবে না।তার নাকি তাড়া আছে।দারোয়ান কেও দেখা যাচ্ছে না।আবির রিকশা ভারা দিয়ে দিল।মেয়েটা নিতে চাইছিল না।কিন্তু আবির শুনে নাই।দিয়ে পরে ফেরত নেবে বলে বাসায় চলে আসে।বিকেলে কলিংবেলের আওয়াজ পেয়ে দরজা খুলে আবির।দেখে মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে।তাকে দেখে আবিরতো পুরাই শক।সব কিছু সামলে মেয়েটিকে ভিতরে আসতে বলে কিন্তু মেয়েটা আসে না।মেয়েটা তাকে সকালের টাকা গুলো দিয়ে চলে যাবে তখনি আবির বলে "আমি আবির।ঢাকার একটি ভার্সিটি তে MBA করছি।"মেয়েটাও প্রতিউত্তরে বলে "আমি বৃষ্টি।" এই বলেই চলে গেল।আবির আবার শক..! বৃষ্টি নামের মেয়েটা বৃষ্টির সময় মন খারাপ করে বসে থাকে..!এর পরথেকেই মাঝে মাঝে তাদের দেখা হত।আবির কথা বলতে চাইতো কিন্তু বৃষ্টি তেমন আগ্রহ দেখাতো না।এই অবহেলা আবিরের পছন্দ না।কি নেই তার.? দেখতেও ভাল।কিন্তু বৃষ্টি তাকে অবহেলা করে।আবির হাল ছাড়ে না।শেষে না পেরে একটি চিরকুটে অবহেলার কারন জানতে চায়।চিরকুটটি সাবধানে বৃষ্টিদের বিল্ডিং এ গিয়ে তাদের দরজার নিচ দিয়ে ঢুকিয়ে দিয়ে এলো।সেদিন বিকেলেই আবার কলিংবেল এর আওয়াজে দরজা খুলে আবির।দেখে একজন মহিলা দাঁড়িয়ে আছে।বলে সে নাকি বৃষ্টির মা।আবির যেন আকাশ থেকে পরে।সে মনে করেছিল চিরকুটটা বৃষ্টিই পাবে।বৃষ্টির মাকে ভিতরে বসতে দিল।তার মা বসেই বলতে শুরু করে "বাবা তুমি যা চাও তা সম্ভব না।আর কোন দিন হবেও না।বলেই কাঁদতে থাকে।আবির ভালোই বুঝে যায় এখানে কোনো রহস্য আছে।মহিলা নিজেকে সামলিয়ে আবার বলে "ছেলেটার নাম ছিল হাসান।খুব ভাল ছেলে ছিল।বৃষ্টির সাথে ভার্সিটি তে দেখা হয়।একটা সময় জানতে পারি হাসান বৃষ্টিকে ভালবাসে।আমরা কেউ অমত করিনি।ছেলে ভাল, তার পরিবারও ভালো।সবচেয়ে ভালোকথা বৃষ্টিও তাকে ভালবাসতো।হাসানের একটা পাগলামি ছিল বৃষ্টি হলেই সে ভিজতো।এই কাজটা সে প্রায়ই করত।কারো মানা শুনতো না।বৃষ্টি বেশ রাগ করতো।সেদিন ছিল সোমবার সকাল থেকেই বৃষ্টি হচ্ছিল।আমার মেয়েটাও বাসায়ই ছিল।১০টার দিকে হাসানের ফোন পায় বৃষ্টি।হাসান বলে সে নিচে বাইক নিয়ে বসে বসে বৃষ্টিতে ভিজছে।তাকেও ভিজতে ডাকছে।কিন্তু সে জায়নি।হাসান অনেক দেকেও তাকে নিচে নামাতে পারেনি।আমিও যেতে বলেছিলাম কিন্তু জেদ ধরে যায়নি।পরে হাসান মন খারাপ করে চলে যায়।৩-৪ ঘন্টা পর হাসানের বাসা থেকে ফোন আসে।তারা জানায় হাসান বাইক এক্সিডেন্ট করেছে।হাসপাতালে আছে এখন।আমরা সবাই গেলাম।ওখানে পুরোটা সময় বৃষ্টি আমায় ধরে কাঁদছিল।হাসান তার কান্না শুনতে পেলোনা।সেই দিনই সে মারা যায়।তারপর থেকেই বৃষ্টি এমন ভাবেই আছে।বৃষ্টি হলেই ছাদে গিয়ে বসে থাকে। অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি কিন্তু কাজ হয়নি।" আবির মনে মনে কষ্ট পেলেও প্রকাশ করতে পারছিল না।আরও কিছুক্ষণ থেকে বৃষ্টির মা চলে গেলো।আবির দমে গেলো না।সে ঠিক করে বৃষ্টির মুখে আবার আগের হাসি ফিরিয়ে আনবে।...!!!

পরিশিষ্ট :-- আমার পাসের বিল্ডিং এ একটা মেয়ে বৃষ্টি হলেই ছাদের দোলানায় চুপ করে বসে থাকে।আমার অবশ্য চিরকুট দেওয়ার সহস হয়নি।
ছবি ----Google
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মে, ২০১৭ দুপুর ২:৩৬
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে না পারার কষ্টটা সমালোচনার কোন বিষয়বস্তু নয়

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৬

গতকালের একটি ভাইরাল খবর হচ্ছে কয়েক মিনিটের জন্য বিসিএস পরীক্ষা দেয়া হলো না ২০ প্রার্থীর !! অনেক প্রার্থীর কান্নাকাটির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান এর নিয়ামানুবর্তিতার জ্ঞান বিতরনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×