somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আল-কায়েদার উত্থান মুসলিম উম্মাহকে কী দিয়েছে?? ( ১)

২৮ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ১০:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আল-কা/য়ে-দার উত্থান মুসলিম উম্মাহকে কী দিয়েছে?? - এক
.
স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র হাতে আল্লাহ তা'আলা মুসলিম উম্মাহকে দান করেছেন ইসলামি খিলাফাহর মহান নেয়ামত। এ নেয়ামত কতটা দামি ও গুরুত্বপূর্ণ তার পূর্ণ উপলব্ধি ছিল সাহাবায়ে কেরাম রাযিয়াল্লাহু আনহুমের। তাই তারা এর সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণে নিজেদের অকাতরে জান-মাল বিসর্জন দিয়েছেন৷
.
যুগ পরম্পরায় এভাবেই চলতে থাকে ইসলামি খিলাফাহর সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণের মুবারক প্রয়াস। উম্মাহর কত সিংহ-শার্দূল যে এজন্য জীবন বিলিয়েছেন তার হিসাব রাখেনি কেউ। ইতিহাস ঘাঁটলে এমন অনেক তুখোড় মেধাবী, প্রচণ্ড ধীসম্পন্ন বীর-বাহাদুরের সন্ধান মিলবে, যারা খিলাফাহ রক্ষার সংগ্রামে শহীদ হয়েছেন। অথচ নিজ যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ ফকীহ ও মুহাদ্দিস হওয়ার যোগ্যতা তারা রাখতেন।
.
খিলাফাহ রক্ষার এ যু*দ্ধে বিজয়ের পালাবদল হতো। কোনো একটা ভূখণ্ড একসময় হাতছাড়া হয়ে যেত। পরবর্তী সময়ে তারচেয়ে কয়েক গুণ বেশি ভূখণ্ড ইসলামি খিলাফাহর অধীন হতো। সম্প্রসারণ ও সংকোচনের এ-ধারা চলেছে যুগযুগান্তর ধরে। কিন্তু কখনোই মুসলিম উম্মাহ খিলাফাহর নেয়ামত থেকে সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত হয়নি।
.
মুসলিম উম্মাহর সর্বশেষ খিলাফাহ ব্যবস্থা, উসমানী সালতানাত প্রতিষ্ঠিত হয় ১২৯৯ খৃষ্ঠাব্দে। ভাঙাগড়ার ভেতর দিয়ে উসমানী সালতানাতও মুসলিম উম্মাহর জান-মালের নিরাপত্তা দিয়ে আসে শতাব্দীর পর শতাব্দী। দীর্ঘ ৬২৪ বছর। কালের ঘূর্ণনে একসময় তাতেও বাসা বাঁধে ভোগ-বিলাসিতার মরণব্যধি। সুযোগের সন্ধানে ওত পেতে থাকা কাফেরের দল সুযোগ লুটে নেয়। নড়বড়ে করে দেয় খিলাফাহর ভিত্তিমূল। সর্বশেষ ১৯২৪ খৃষ্টাব্দে উসমানী খিলাফাহর আনুষ্ঠানিক বিলুপ্তি ঘটে।
.
উসমানী সালতানাতের বিলুপ্তির পর মুসলিম উম্মাহর উপর দিয়ে বয়ে যায় নির্যাতন ও নীপিড়নের ভয়াবহ ঝড়, রচিত হয় এক লোমহর্ষক ইতিহাস। অবর্ণনীয় জুলুম-নির্যাতনের সে ধারা এখনও বয়ে চলেছে। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে এসে ঘটে যায় দ্বিতীয় বিশ্বযু*দ্ধের ঘটনা। পৃথিবীর দৃশ্যপটে দৃশ্যমান হয় দুটি পরাশক্তি: সোভিয়েত ইউনিয়ন আর আ-মে/রিকা। দুই পরাশক্তির গ্রাসে পরিণত হয় মুসলিম উম্মাহ। পৃথিবীর প্রতি ইঞ্চি মাটি থেকে বিলুপ্ত হয় ইসলামি শাসন। প্রায় সারা পৃথিবী জুড়ে চালু হয় গণতন্ত্র, সেক্যুলারিজম, পুঁজিবাদ, সুদভিত্তিক অর্থনীতিসহ ইসলাম বিরোধী শতশত ইজম বা মতবাদ। সভ্যতার মোড়ক লাগিয়ে বাজারজাত করা হয় মদ, জুয়া, অশ্লীলতা আর বেহায়াপনার মতো মারাত্মক ধরনের অসভ্যতাগুলোও৷ কিন্তু কোথাও বৈধতা পায়নি ইসলামি সভ্যতার একটি ধারাও৷ বিশ্বব্যবস্থা থেকে ছুঁড়ে ফেলা হয় ইসলামকে, ইসলামি অনুশাসনকে। ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থার বিরুদ্ধে তারা "সেকেলে" হিসেবে অপপ্রচার চালাতে শুরু করে।
.
পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে চলতে থাকে মুসলিমদের রক্তপাত। পানির চেয়েও সস্তা হয়ে যায় মুসলিমের রক্ত। পাখির মতো গুলি করে হত্যা করা হতে থাকে মুসলিমদের। বিচ্ছিন্ন হত্যাকাণ্ড ছাড়াও দেশে দেশে চলেছে জেনোসাইড-গণহত্যা-জাতিগত নিধন। বসনিয়ার একদিনের গণহত্যাতেই হত্যা করা হয়েছে অন্যূন আট হাজার মুসলিমকে। ঘরবাড়ি ছাড়া হয়েছে কমপক্ষে ৩০ হাজার মুসলিম। ১৯৯৫ এর সেই গণহত্যাকে জাতিসঙ্ঘ অভিহিত করেছে "জাতিগত শুদ্ধি অভিযান" নামে। তিনবছরের গণহত্যায় নিহতের সংখ্যা পৌঁছেছে লক্ষাধিকে। (১) গণহত্যা চলেছে সিরিয়ায়, ইয়েমেনে। চলেছে চেচনিয়ায়। আরও চলেছে কাশ্মিরে, গুজরাটে, দিল্লিতে। আমাদের চোখের সামনেই চলেছে বার্মায়। এসব গণহত্যায় নীরব বৈধতা বরং বলা যায় সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়ে গেছে বিশ্বমোড়লরা৷ পর্দার আড়াল থেকে তারাই বরং কলকাঠি নেড়েছে এসব গণহত্যায়। খেলাফত হারানোর পর থেকে গত প্রায় একশ বছরে এত অধিক পরিমাণ মুসলিমকে হত্যা করা হয়েছে, যা হয়তো বিগত ১৩ শত বছরেও করা হয়নি। কিন্তু কোনো প্রতিবাদ নেই। মুসলিমপ্রধান দেশগুলোর শাসকেরা এসব দেখেও হয় নীরবতা পালন করেছে, না হয় নিজেরাও কাফেরেদের সহচর হয়ে মুসলিম গণহত্যায় শরীক হয়েছে। অথচ একজন কাফেরও যদি কোথাও হত্যার শিকার হয়েছে তাহলে স্বজাতীয় অন্য দেশগুলো ফুঁসে উঠেছে মুহূর্তেই। কারণ, তাদের শাসনক্ষমতার এখনো পতন ঘটেনি, ফলে তাদের রক্তও পানির মতো সস্তা হয়ে যায়নি। এজন্যই তো রাশিয়া-ইউক্রেন যু*দ্ধের সূচনাকালে অনেক সাংবাদিককে বলতে শোনা গেছে: এটা তো সিরিয়া বা ইরাক নয়। ওদের মানসিকতাটাই এমন হয়ে গেছে যে, সিরিয়া, ইরাক, ইয়েমেন বা আফগানিস্তানের অধিবাসীদের রক্ত বৈধ, কিন্তু ইউক্রেনীয়দের রক্ত বৈধ না। মুসলমানরা আজ বাস্তুহারা, শরনার্থী। নিজেদের বাড়ি-ঘর থেকেই তারা বিতাড়িত হয়েছে। বর্তমান বিশ্বে যতগুলো শরনার্থী শিবির আছে, সেগুলোর কয়টাতে কতজন অমুসলিম আছে?। শরনার্থী শিবিরগুলো যেন কেবল মুসলিমদের জন্যই৷
.
এখানে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল, সময়ে সময়ে মুসলিমদের দেহ থেকে যে রক্ত তারা ঝরিয়েছে সেগুলোর কড়ায়-গণ্ডায় হিসাব চুকিয়ে দেওয়া। বিশ্বকে এটা বুঝিয়ে দেওয়া যে, মুসলিমদের রক্ত পৃথিবীর সবচেয়ে সস্তা সম্পদ নয়। রাখালহীন ভেড়ার পাল নয় মুসলিম জাতি। মুসলিমদেরও শেকড় আছে এবং তা পৃথিবীর সবচেয়ে মজবুত ও সুদৃঢ় শেকড়। নিজেদের স্বাভাবিক জীবন-যাপনকে বিপন্ন করে যখন তাদের আর্তনাদ আহাজারি শোনার জন্য কেউ এগিয়ে আসেনি; তখন এগিয়ে এসেছেন উম্মাহর শ্রেষ্ঠ সন্তান মু/জ|হিদগণ, বিশেষত তানজিমু কা-য়ে-দাতিল জি/হ|দের বীর মু/জ|হিদগণ।
.
যেখানেই মুসলিমদের উপর আ"ঘাত এসেছে সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেছে আল-কা/য়ে-দা। সরাসরি আমেরিকার বুকে গিয়ে আঘাত করে এসেছে আল-কা/য়ে-দা। বিশ্বের ইতিহাসে প্রথমবারের মত আমেরিকার প্রতিরক্ষা সদর দফতর পেন্টাগণে সফল হামলা চালিয়েছে আল কায়েদা। আ/মে-রিকার গর্বের টু"ইন*টাওয়ার মিশিয়ে দিয়েছে মাটির সঙ্গে। আমেরিকা ও তার দোসরদের খোঁজে খোঁজে তাড়িয়েছে মুসলিম ভূখণ্ড থেকে। ইরাক, সোমালিয়া, মালিসহ আমেরিকা ও পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর আগ্রাসনের শিকার দেশগুলোতে জোরদার সশস্ত্র আ*ক্রমণের ভিত্তি স্থাপন করেছে। সর্বোপরি তাগুতি বিশ্বের বুকে কাঁপন ধরিয়েছে। তাদেরকে এটা বুঝিয়েছে, আমাদের ভূখণ্ডগুলোতে যখন তোমরা আক্রমণ করো তখন আমাদেরও অনুরূপ কষ্ট লাগে। আমাদের বুক থেকেও অনবরত রক্তক্ষরণ হয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ১০:৫০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজার শিশুদের উদ্দেশ্যে - আমরা তোমাদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছি

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৫


তোমরা এসেছিলে মাথার উপর বোমা পড়ার ভয়ার্ত গল্প নিয়ে। যে বোমা তোমাদের ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছে, লোকালয় ধ্বংস করেছে। আমরা কান বন্ধ করে উদাসীন হয়ে বসে ছিলাম। তোমরা এসেছিলে ছররা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৪৯

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

সবাই যখন ওসমান হাদিকে নিয়ে রিকশাওয়ালাদের মহাকাব্য শেয়ার করছে, তখন ভাবলাম—আমার অভিজ্ঞতাটাও দলিল হিসেবে রেখে যাই। ভবিষ্যতে কেউ যদি জানতে চায়, এই দেশটা কীভাবে চলে—তখন কাজে লাগবে।

রিকশায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবিতে গণতন্ত্রের নামে মবতন্ত্র

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১০



তথাকথিত গণতন্ত্রকামীদের পীর আল্লামা পিনাকী এবং ছোট হুজুর ইলিয়াস মোল্লার উস্কানীতে দেশজুড়ে চলছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে মবতন্ত্র। আল্লামা পিংকুর যুক্তি হচ্ছে- যে বা যারাই তাদের (গণতন্ত্রকামীদের) সূরে কথা না... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×