ধর্ম নিয়ে গল্প ফাঁদার বা তামাশা করার কোন ইচ্ছে আমার নেই। তবে অনেক দিন আগের কথা। এক বন্ধু নারায়নগঞ্জে এক গ্রামের টীমে খেলতে গিয়ে গোল খাওয়ার কথা না বললেই নয়। খেলার পাঁচ মিনিটের মধ্যে গোল খেয়ে শহুরে বন্ধুর আত্মসম্মানে খুব লাগল। তাই, বন্ধু মাঠের দর্শক সারিতে বসা চেয়ারম্যানের কাছে গিয়ে বলে, "চেয়ারম্যান সাহেব, আমার একটা কথা আছে"। মেট্রিকের পাঠ্য গ্যাটীসবার্গ অ্যাড্রেস ইংরেজীতে অনর্গল বক্তৃতার সুরে বলে বন্ধু চেয়ারম্যানকে বলে, "এইটা গোল হয় নাই"। চেয়ারম্যান তার সাঙ্গোপাঙ্গোদের নিয়ে বলে, "হ' শহরের পোলা ইংরেজীতে কইছে গোল হয় নাই, এডা গোল না, তোরা আবার নতুন কইরা শুরু কর্"। আজ নতুন করে ধর্মীয় আন্দোলন নিয়ে তোলপাড় দেখে মনে পড়ল সেই পুরনো কথা।
আসেন ভাই দলে দলে, ইসলামী আন্দোলনে যোগ দেই। ধর্ম বিষয়টি এখানে সবচেয়ে জনপ্রিয় বিষয়। ধর্ম নিয়ে আলোচনা শেষ পর্যন্ত ধমর্ীয় আন্দোলনে গিয়ে শেষ হয়। এসব ধমর্ীয় আন্দোলনের আসল নেকাব জনসমক্ষে উন্মোচন না হলেও এটা জেহাদী সেনশেসন আর দৈহিক উওেজনা তৈরীর জন্য খুব টনিকের মতো কাজ করে। ধর্ম নিয়ে এই অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি ও কামড়াকামড়ি শেষ পর্যন্ত খুলে দেয় ধর্মহীনতার দুয়ার।
আমরা বড্ডো হুযুগে পার্টি। না হলে সাঈদীর মতো আধা মূর্খের সুরেলা কন্ঠের জেহাদী জোশে দেশব্যাপী ইসলামী আন্দোলনের জোয়ার বয়ে যেত না। সাঈদীর অশালীন সুরেলা বক্তৃতা ক্যাসেটের ফিতা বেয়ে ইন্টারনেটে শোনার পর জেহাদী ভাইদের বুজুগর্ী হাসির চেহারাটা ভুলি কিভাবে? সহজ ধর্মবোধ যখন ভিনদেশী ভাষার বুজুগর্ী ব্যাখ্যা দিয়ে আন্দোলনের ভাষায় বোঝানোর শুরু করে তখন বেচারী ধর্ম ধর্মান্ধদের হাতিয়ার হয়ে উঠে। মানুষের ধমীয় স্বাধীনতা আর মুক্তবুদ্ধির স্বাধীনতা এসব ধান্ধাবাজরা দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করার শুরু করে। পবিএ কোরআন শরীফে বলা হচ্ছে: "এবং যদি তোমার প্রতিপালক ইচ্ছে করতেন তাহলে নিশ্চয়ই পৃথিবীর সবাই একযোগে বিশ্বাস স্থাপন করতে। তা সত্ত্বে কি সবাই মুমীন না হওয়া পর্যন্ত তুমি লোকদের উপর বলপ্রয়োগ করবে?" (10:99)। আরও স্পস্ট ভাবে বলা হয়, "ধর্ম সম্পর্কে কোন কোন প্রকার বলপ্রয়োগ নেই" (2:256)।
তাই ধর্ম যখন বিশ্বাস আর সমর্পনের গন্ডি থেকে বেরিয়ে আন্দোলনের রূপক ও ভিওি হিসেবে চিএিত হতে থাকে তখন তার থেকে ধর্মবোধ স্বভাবত:ই বিশ্বাসের খিড়কী খুলে পালিয়ে যায়। তখন তা হয় কেবল দাঁড়ি পাল্ল্লার প্রতীক। যে ধর্মের ছুতা ধরে এতো অপকর্ম হয়, সেখানে ধর্মের উপযোগিতা নিয়ে প্রশ্নটা বেশ জোরালো হয়ে উঠে। ধর্ম যদি সকল কালে অত্যাচার, অবিচার আর নাফরমানীর বিরুদ্ধে হাতিয়ার হয়ে থাকে, তাহলে সেই ধর্মের জোব্বা পড়ে কিভাবে মানুষ মানুষের উপর অত্যাচার করতে পারে? এই প্রশ্ন উওরের অপেক্ষায় বসে থাকে।
দু:খজনক বাস্তবতা হচ্ছে, ধর্ম যখন শোষন, নির্যাতন ও বৈষম্যের হাতিয়ার সেখানে ধর্মবোধ রাজনীতির আস্তিনের ভেতরে নতুন ফজিলতের সন্ধান করে। আর মূর্খরা ভাবে ধর্মের নতুন আস্তিন মুক্তি দিবে। সকল অনাচার আর অবিচারের অবসান হবে। ধর্মের আস্তিনে সকল সরল বিশ্বাস প্রতারিত হতে থাকে। জেহাদী মাঠে পড়ে থাকা লাশের বেচাকেনা চলে রাজনীতির সরল সমীকরণ মেলানোর জন্য। আর কতোকাল ধমার্ন্ধদের হাতে অন্তরীণ হয়ে থাকবে ধর্মবোধ? প্রতারিত হতে থাকবে সাধারণ মানুষ। ইসলামের নামে আন্দোলন না থাকলেও ইসলাম ঠিকই টিকে থাকবে, কিন্তু ধর্মের মুখোশধারী ফেরীওয়ালারা টিকবে কি করে?

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


