যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই সব জানে। এজন্য আলাদাভাবে প্রকৌশল ইউনিভার্সিটি কিংবা মেডিক্যাল কলেজ থেকে বিশেষায়িত ডিগ্রি নেয়ার দরকার পড়ে না।
যাহোক, যা বলছিলাম। যখন সিভিলে পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম তখন কেউ কেউ বললেন, 'মেয়েরা কি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে নাকি? ছেলেদের সাথে হাটে মাঠে ঘাটে কাজ করতে পারবা? উঁহু! মনে হয় না এই পেশায় সারভাইভ করতে পারবা!'
কিছু বিশেষ জ্ঞানী বললেন, 'মালপানি না নিলে কিন্তু কাজ করতে পারবা না! সৎ থাকা বড়ই কঠিন! ঐ রাস্তা ভুলে যাও!'
একজন পরিচিত বড় ভাই বললেন, 'চাকরি করতে গিয়ে তিন সি এক হয়ে যাবে!'
বললাম, 'কোন তিন সি ভাই?'
'আরে বুঝলা না? তিন সি হচ্ছে কমিশন করাপশন আর কনস্ট্রাকশন (হাহাহাহা-- অট্টহাসি)!'
আমি ভয়ই পেলাম। সিভিল পড়তে এসে ভুল করলাম না তো? সিএসই পেতাম না। ইইই অল্পের জন্য মিস হয়েছে। কেমিক্যাল মেকানিকালে পড়তে চাই না। সিভিলে কীসের অসুবিধা?
জিদ নিয়েই পড়লাম। দেশে একবার, দেশের বাইরে থেকে আরেকবার মাস্টার্স করে এলাম। তারপর যোগ দিলাম চাকরিতে। কিছুদিন বেসরকারি একটা কন্সালটিং ফার্মে ছিলাম। পরে সরকারি চাকরিতে নাম লেখালাম।
ভালোই লাগছিল। এতদিন অনেক কিছু শুনে এসেছি। কাজ করতে এসে দেখলাম এখানে ফিল্ড ওয়ার্কের পাশাপাশি ডেস্ক ওয়ার্কের অনেক অপশন। সৎ থাকা না থাকা নিজের ওপরে। কেউ সৎ থাকতে চাইলে আরেকজন ঘাড়ে ধরে তাকে অসৎ বানাতে পারে না। জি না, সরাসরি সরকারি চাকরিতে যুক্ত থেকেও এটাই আমার অভিমত।
আমাদের দেশের একটা বড় অংশ মানুষই অসৎ। শুনতে কষ্ট লাগলেও কথা সত্য। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে শ্রমিক কাজ করে, সামান্যতম সুযোগ পেলে সেও কাজে ফাঁকি দেয়। ইঞ্জিনিয়াররা ডিজাইনিং এর পাশাপাশি টেন্ডার প্রক্রিয়াতে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকে। যে ইঞ্জিনিয়ার নিজে এক টাকা কমিশন নেয় না, তাকেও কাজ বের করতে 'স্পিড মানি'র সংজ্ঞা শিখতে হয়।
অনেক কথা লিখতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু সব কথা বলা সম্ভব নয়। তাহলে কার কার কাছা খুলে যাবে বলা মুশকিল।
সামুতে চরম জঘন্য একজন বাজে লোক আমার পেছনে লেগেছে। সে আমাকে তাবলিগি অসৎ ইঞ্জিনিয়ার বলে গালি দিয়ে নিজের বংশের পরিচয় দিচ্ছে। আমি জানতে চাই, মানুষ এত খারাপ কীভাবে হয়? এই লোক আমার সম্পর্কে জানে? আমি কী করি, কাজের ব্যাপারে কতটুকু সৎ/অসৎ কিছুমাত্র ধারণা রাখে? শুধু অনুমান থেকে একজন মানুষের সম্মানে হাত দেওয়ার মতো ধৃষ্টতা দেখানোর পরেও তাকে সামু ব্লগ কীভাবে জায়গা দেয়? ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে পারে না?
আগেও বলেছি, আবারও বলছি। খুব বেশি কারেন্ট থাকলে আমার সম্পর্কে খোঁজ নিন। তারপর কথা বলুন। আমি এখানে লেখালেখি করতে এসেছি। নিজের পেশা নিয়ে একটা বাক্য বলারও ইচ্ছা আমার কোনোদিন ছিল না। ওটা আমার রুটিরুজি। ওটা আমি সবার সামনে প্রদর্শন করে বেড়াই না।
যেটা প্রদর্শন করছি, সেটা হচ্ছে লেখালেখি। আমি জানি লেখালেখি কিংবা সাহিত্য নিয়ে কথা বলার যোগ্যতা সকলের থাকে না। রাজনীতির বুলি কপচাচ্ছেন। সেটাই কপচান। সাহিত্যের পেছনে নিজের নোংরা নাকটাকে না ঢুকালেই ভালো করবেন।
ভীষণ বিরক্ত লাগছে। সম্ভবত এই অবস্থা চলতে থাকলে আমি সামুতে আমার একাউন্ট একেবারেই ডিএক্টিভেট করে দিব। একজন ফালতু মানুষ এখানে তা ধিন ধিন তা করে প্রত্যেকের মাথা নষ্ট করে দিচ্ছে। অথচ কেউ তাকে মাথা থেকে নামাতে পারছে না। আজ এই নাম কাল সেই নাম ধারণ করে সকলের পোস্ট কমেন্ট করে বেড়াচ্ছে। কী অদ্ভুত!

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


