আড্ডার টেবিল থেকে সবাইকে উষ্ণ শুভেচ্ছা। তিন শতক পেড়িয়ে আরও পনের কদমে এসে থমকে দাঁড়িয়ে ভাবলাম, নানান ব্যস্ততার অজুহাত থেকে নিজেকে নিস্কৃতি দিয়ে তিন শতকের বৈঠকী বক্তৃতাটা না দিলে নিজের ও পাঠকদের প্রতি খুব অবিচার করা হবে। নিজের উপর তাই আলোকসম্পাত করতে চাই। অসমাপ্ত ও অর্ধসমাপ্ত কাজগুলো দ্রুত শেষ করতে চাই। আমার নিজস্ব ভাবনার স্পেক্ট্রাম দিয়ে সবার ভাবনার মাঝে আলোড়ন জাগাতে চাই। ভাবনার ক্ষেএে যে জড়ত্ব ও অন্ধত্ব আমাদের ব্যক্তিসওা ও জাতি সওাকে প্রতিনিয়ত কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে তা থেকে মুক্তির পথে অগ্রণীদের সারিতে নিজেকে উৎসর্গ করতে চাই।
নামের আড়ালে লুকিয়ে থাকা আমার ব্যক্তিগত কড়চা না টানলে একটু অন্যায় হবে। আমার লেখা নিয়ে বাবার সাথে খুব খোলামেলা আলাপ সমপ্রতি হয়েছে। অনেক আনন্দিত হয়েছেন বাবা আমার লেখাগুলো দেখে। সেই ছোটবেলার মতো উৎসাহ পেলাম। বাবার কাছে সন্তান কোনদিনও বড়ো হয় না। আমার সচেতনতা ও আপোষহীনতার অখন্ড প্রত্যয় আমি আমার বাবার কাছ থেকে উওরাধিকার সূএে পেয়েছি। তাই, শ্রদ্ধা জানাই বাবাকে। আমার চেতনা ও বিশ্বাসের প্রজ্জ্বলিত মশাল আমি দিয়ে যেতে চাই আমার পরবতর্ী প্রজন্মের কাছে। সেখানেও আমি আশার আলো দেখি। কারণ, নতুন প্রজন্মের মধ্যেও দেশ নিয়ে ভাবনার শেকড় গাঁথছে। আমাদের সময়কালের ব্যর্থতার গ্ল্লানি আর অপরাধবোধ লাঘবের জন্য সচেতন প্রজন্মের কোন বিকল্প কি আছে? তাদেরকে উৎসাহ ও সাহস জোগাবার জন্য চাই সমবেত উদ্যম-উদ্যোগ।
অনেক নেতিবাচকতা ও পশ্চাদপদ কূপমন্ডুকতার মধ্যেও যে একটি মেরুকরণ স্পস্ট হয়ে উঠছে তা আমাদের মাঝে পরিবর্তনের আশা জাগিয়ে তুলছে। এই আশাবাদ সচেতন প্রজন্মের মানবিক ও আত্মিক উওরনের পূর্বশর্ত। এদেশে পূনর্বাসিত বিজিত শক্তির মিথ্যে আস্ফালন ও অহমিকাবোধে যে বিশাল অন্ত:সারশূণ্যতা বসবাস করে তা দিনের আলোর মতো স্পস্ট হয়ে উঠছে। রাজনৈতিক পালাবদলের ক্রান্তিলগ্নে তাদের মুখোশ ও ছবি স্পস্ট হয়ে উঠছে এবং উঠবে। বাংলাদেশের মাটি গণঘাতক রাজাকার ও তাদের উওরসূরীদেরকে সাময়িক আশ্রয় ও পুনর্বাসন করলেও তারা যে সচেতন মননে শেকড় গাঁড়তে পারবে না - এই ঐতিহাসিক সত্য সময়ের আবর্তে খুব স্পস্ট হয়ে উঠছে।
আমি আশাবাদী। হতাশার আবাদ আমি কখনও করি না। অন্ধকারকে তাই খুব সাময়িক মনে হয়। আলোকিত সকাল শুধু সময়ের অপেক্ষায় অন্তরীণ। সেই আলোকিত আগামী দিনের জন্য চাই সচেতন জনতার সমবেত পথচলা। যারা আড্ডার পাতার একরৈখিক প্রকাশে ক্লান্ত তাদের আশ্বস্ত করতে চাই, এর বিকল্প কি আর কিছু আছে? এদেশের লাখো শহীদদের কাছে আমাদের বেড়ে উঠা খেলাপী ঋণ থেকে মুক্তি পাওয়ার আর কোন কৌশল আমার জানা নেই। তাই, আমি আমার সকল সহযোদ্ধাদের প্রতি জানাই আমার হূদয় নিংড়ানো অভিবাদন।
ভালো লাগার কোন নির্দিস্ট সংজ্ঞায় কাওকে আবদ্ধ করবো না। অনেকের সাথে আলাপ হয়েছে। দেখা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে হবে। সকল দূরত্ব ও ব্যবধান অতিক্রম করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমরা একএিত হতে পেরেছি আর আনন্দ বেদনার কাব্য একসাথে শেয়ার করেছি। এ এক বিশাল প্রাপ্তি, বিশাল অর্জন। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে তাদেরকে প্রতিনিয়ত স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আমাদের চলার পথের গন্তব্য আছে কিন্তু শেষ নেই। স্বাধীনতা মানে একখন্ড পতাকা, মানচিএ আর সীমান্ত নয়। স্বাধীনতা মানে ভাবনার জড়ত্ব ও পশ্চাদপদতা থেকে মুক্তি। গোষ্ঠীগত উন্নয়নের পরিবর্তে সামগ্রিক মানবিক উওরন। স্বাধীনতা মানে গণমানুষের মুক্তি। পরাজিত শক্তিকে পূনর্বাসনের অপরাধবোধ থেকে জাতিগত মুক্তি। সেজন্যই আমাদের সংগ্রাম কখনও শেষ হওয়ার নয়।
[রং=ইষঁব]"...নেবে স্বাধীনতা? _ নাও তোমাকে দিলাম
কক্সবাজারের দীর্ঘ সৈকত,
পর্যটন কেন্দ্রগুলো, বিমানের সকল আসন,
মিগের গর্জন, সামরিক কপ্টারের একটানা
অবিশ্রান্ত গতি, দূরপাল্লা বাসের ভ্রমণ, আর
একতা ও সমতার প্রতিটি আসন;
নেবে স্বাধীনতা? নাও তোমার দু'হাতে তুলে দিচ্ছি
ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের ভিতরে যা-কিছু-
জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে - সবকিছু তোমার, তোমার;
এই দেশ স্বাধীন করেছি আমি _ আমার দু'হাত _
এ আমার একমাএ অহংকার _ আর কিছু নাই;
আমার দেশটি আমি প্রিয়তম নারীর দু'হাতে
দ্রুত তুলে দিতে চাই _ নাও, তুমি নাও।
নেবে স্বাধীনতা? নাও, অবশেষে তোমাকে দিলাম
প্রগাঢ় বিষাদ, জীবনের স্পস্ট মানে, আধুনিক
মানুষের ব্যর্থতার বোধ, অন্ধকার, আর্তনাদ,
গভীর গহবর; চতুর্দিকে ভারী বুটের আওয়াজ;
অভু্যত্থান, রক্তপাত, যুদ্ধ মূল্যবোধের কবর;
সমস্ত পৃথিবীময় কুচকাওয়াজরত সেনাদল;
বার্বড-ওয়্যারঘেরা এই শতকের চক্রবূ্যহে
প্রবেশের অভিমনু্য-জ্ঞান তোমাকে দিলাম, প্রিয়তম নারী,
নিষ্ক্রমণের মন্ত্রটি জানা নেই ব'লে ওটি শুধু
তোমাকেই শিখে নিতে হবে..."
রফিক আজাদ[/রং]

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


