somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ...৩

২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯) রবীন্দ্রনাথ তোমার কবিতা উয়িদড্র করো

রবীন্দ্রনাথ তোমার কবিতা তুমি
ফিরিয়ে নাও।
বড্ড বেশি মিথ্যে কথা ফেলেছো লিখে
তোমার কবিতা তুমি ফিরিয়ে নাও।

মানস সুন্দরী বলে কাউকে তো
দেখি না কোথাও কোনো খানে…
ওরা মানস সুন্দরী নয়-ওরা ফানুস
ভালবাসা নয় ওরা কসমেটিকসের
জঘন্যতম পুজারী
ও কবিতা ফিরিয়ে নাও রবীন্দ্রনাথ।

যেতে নাহি দেবো বলে না তো কেউ
ঘৃণার নৃশংস কন্ঠে বলছে সবাই
যেথা পারো চলে যাও যেথা খুশি।
সোনার খাটে ঘুমাচ্ছে রাজারকুমার ঘুমোক-
তুমি তোমার কবিতা ফিরিয়ে নাও।

কাকে তুমি বলেছো সন্ধ্যার মেঘমালা
ও তো সাপ উদ্যত বিষাক্ত ফণা,
কোন বিশ্বাসে ওকে ছোঁবো
কি বিশ্বাসে রাখবো ওকে বুকের সিন্দুকে
কোন অপভ্রমে চোখে ওর রাখবো চোখ
ও তো চোখ নয় ওটা এক সুরম্য ফাঁদ।
কবিতাগুলো ফিরিয়ে নাও রবীন্দ্রনাথ
যন্ত্রনার নরকে হচ্ছি নিঃশেষ
ক্ষুধার্ত মাটিতে তোমার কবিতাগুলো
বড়ো অবাস্তব।

আজ থেকে ওসব বাতিল- সব বাতিল
এই তুমুল ঘোষনা ঘোষিত হলো।

চেয়ে দ্যাখো এ চোখে স্বপ্ন নেই
কোন কল্পনার শিশুগাছ হচ্ছে না বড়ো
দেখো কোন প্রেম নেই হতাশা ছাড়া
এ দুটি চোখ শুধু সাক্ষী হয়ে আছে।

রবীন্দ্রনাথ তোমার কবিতা ফিরিয়ে নাও
নয়তো গাঁজার আসরে তোমাকে সহ
তোমার সমগ্র রচনাবলীকে
জঘন্যভাবে হত্যা করবো।



২০)ফুলের কৃষ্ণপক্ষ

আমি যার হাতে ফুল তুলে দেই
সে-ই প্রথম ভুল বোঝে আমাকে ।

আমি যাকে বিশ্বাসযোগ্য ভেবে
মনে মনে এক নির্জন স্বপ্নকে স্বাস্থ্যবান কোরে তুলি ,
আমার বিশ্বাস নিয়ে সুবর্ণ চোর
শুধু সেই পালিয়ে যায় ।

আমি যাকে ফুল দিই সে-ই ভুল বোঝে ,
চিরদিন এরকম বিপরীত হয় ।

আমি যার শিয়রে রোদ্দুর এনে দেব বোলে
কথা দিয়েছিলাম
সে আঁধার ভালবেসে রাত্রি হয়েছে ।
এখন তার কৃষ্ণপক্ষে ইচ্ছের মেঘ
জোনাকির আলোতে স্নান করে ,
অথচ আমি তাকে তাজা রোদ্দুর দিতে চেয়েছিলাম ।

বয়সে মাথা রেখে জেগে আছে একজন
তাকে ত দি ই নি কিছুই -
অথবা যে ফুলের মৌলিক অর্থ কখনো শেখেনি
ভালবেসে রাত্রি জাগরণ ,
চোখের নিচে অনিদ্রার শোকচিহ্ন রাখেনি সাজিয়ে

আমি যার হাতে ফুল তুলে দিই
সে-ই প্রথম ভুল উঝে আমাকে ।
আমি ভুল বুঝলে কে আমার হাতে তুলে দেবে ফুলের স্বপ্ন ?




২১)মানুষের মানচিত্র ১৩

কলার ভেলায় লাশ, সাথে ভেসে চলে এক স্বপ্নবান বধূ।
হাঙর কুমির আসে, আসে ঝড়, অন্ধকার দরিয়ার বান,
লাশের শরীর থেকে মাংশ খসে, বেহুলার অসীম পরান,
কিছুতে টলে না স্বপ্ন, আকাংখার শক্ত হাত মেলে রাখে বঁধূ…

ওলো ও বেদেনি শোন, ছোবল দিয়েছে বুকে জাত কালসাপ,
নীলবর্ন হয়ে আসে সোনার গতরখানা অঙ্গ জ্বলে বিষে,
কী সাপে দংশিলো লখা? ঘোরবর্ন সাপ ছিলো অন্ধকারে মিশে।
উদোম নাচন দিয়ে দুই কানে শোনা তুই মন্ত্রের আলাপ
কী সাপে দংশিলো লখা? জীবন আন্ধার হলো, অঙ্গ হলো কালি,
এ-কোন সাপের বিষ জীবন নেয় না শুধু শরীর জ্বালায়,
পরান পোড়ায় নামে নিষের নহর যেন রক্তের নালায়-
দোহাই বেদেনি তোর, বিষের বাগানে তুই বিষহরা মালি

মন্ত্র দে, মন্ত্র দে তুই, ছোবলের ক্ষতে রাখো বিষমাখা ঠোঁট।
বিষে নীল লখিন্দর ভাসে দ্যাখ পৃথিবীর কীর্তনখোলায়,
জলের উপরে ভাসে বিষাহত আকাংখারা, জলের ঘোলায়-
কী সাপে দংশিলো লখা, জীবনের নাড়ি কাটে বিষের কামোট?

ওড়ে আকাশে শকুন। উত্তর দিগন্ত ঘিরে কালো মেঘ আসে।
কেউ কি বেহুলা নেই স্বপ্নবান কোনো এক তরুন বেদিনি?
স্বজন-রক্তের কাছে, স্বজন-হাড়ের কাছে দায়বদ্ধ, ঋণী?
কেউ কি বেহুলা নেই হাড়ের খোয়াব নিয়ে বৈরী জলে ভাসে?




২২)কথা ছিলো সুবিনয়

কথা ছিলো রক্ত-প্লাবনের পর মুক্ত হবে শস্যক্ষেত,
রাখালেরা পুনর্বার বাশিঁতে আঙুল রেখে
রাখালিয়া বাজাবে বিশদ।
কথা ছিলো বৃক্ষের সমাজে কেউ কাঠের বিপনি খুলে বোসবে না,
চিত্রর তরুন হরিনেরা সহসাই হয়ে উঠবে না
রপ্তানিযোগ্য চামড়ার প্যাকেট।

কথা ছিলো , শিশু হবে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম সম্পদের নাম।
নদীর চুলের রেখা ধ‌‌রে হেঁটে হেঁটে যাবে এক মগ্ন ভগীরথ,
কথা ছিলো, কথা ছিলো আঙুর ছোঁবো না কোনোদিন।

অথচ দ্রাক্ষার রসে নিমজ্জিত আজ দেখি আরশিমহল,
রাখালের হাত দুটি বড় বেশি শীর্ণ আর ক্ষীণ,
বাঁশি কেনা জানি তার কখনোই হয়ে উঠে নাই-

কথা ছিলো, চিল-ডাকা নদীর কিনারে একদিন ফিরে যাবো।
একদিন বট বিরিক্ষির ছায়ার নিচে জড়ো হবে
সহজিয়া বাউলেরা,
তাদের মায়াবী আঙুরের টোকা ঢেউ তুলবে একতারায়-
একদিন সুবিনয় এসে জড়িয়ে ধরে বোলবেঃ উদ্ধার পেয়েছি।

কথা ছিলো, ভাষার কসম খেয়ে আমরা দাঁড়াবো ঘিরে
আমাদের মাতৃভূমি, জল, অরন্য, জমিন, আমাদের
পাহাড় ও সমুদ্রের আদিগন্ত উপকূল-
আজন্ম এ-জলাভূমি খঁজে পাবে প্রকৃত সীমানা তার।

কথা ছিলো, আর্য বা মোঘল নয়, এ-জমিন অনার্যের হবে।
অথচ এখনো আদিবাসী পিতাদের শৃঙ্খলিত জীবনের
ধারাবাহিকতা
কৃষকের রন্ধ্রে রক্তে বুনে যায় বন্দিত্বের বীজ।

মাতৃভূমি-খন্ডিত দেহের পরে তার থাবা বসিয়েছে
আর্য বণিকের হাত।

আর কী অবাক! ইতিহাসে দেখি সব
লুটেরা দস্যুর জয়গানে ঠাঁসা,
প্রশস্তি, বহিরাগত তস্করের নামে নানারঙা পতাকা ওড়ায়।

কথা ছিলো ‌’আমাদের ধর্ম হবে ফসলের সুষম বন্টন’,
আমাদের তীর্থ হবে শস্যপূর্ণ ফসলের মাঠ।
অথচ পান্ডুর নগরের অপচ্ছায়া ক্রমশ বাড়ায় বাহু
অমলিন সবুজের দিকে, তরুদের সংসারের দিকে।
জলোচ্ছাসে ভেসে যায় আমাদের ধর্ম আর তীর্থভূমি,
আমাদের বেঁচে থাকা, ক্লান্তিকর আমাদের দৈনন্দিন দিন।



সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×