আজ ফাগুন মাস।
আজ কৃষ্ণচূড়ার রং লাল।
আজ ধূসর রাস্তায় প্রতিযোগিতা চলে একজন অন্যজনকে পাশ কাটানোর।
আজ কথায় কথায় কত শত ভাষার ব্যবহার!
তবু, সবকিছুর ভিড়ে সবচেয়ে মিষ্টি যে ডাক তা হলো বাংলা মা কে ডাকা!
আমি সেসময় উপস্থিত ছিলাম না।
আমি সেদিন দেখিনি।
আমি সেই তেজদীপ্ত স্লোগান সামনে থেকে শুনিনি,
যখন তরুণ-তরুণীরা রাস্তায় বলছিল-
"রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই,বাংলা চাই,বাংলা চাই!"
সেসব ফেস্টুন, ব্যানার ছুঁয়ে দেখার সৌভাগ্য আমার হয় নি।
শুধু সোনার বাংলার স্বর্ণালী ভাষার গৌরবের সেই দিনের কথা শুনেছি,
পুরো পৃথিবী শুনেছে সেসব কথা...
সেদিনও ফাগুন মাস ছিল।
সেদিনও কৃষ্ণচূড়া লাল ছিল।
তবে সেদিন রাস্তার রং ছিল ভিন্ন।
সেদিন রাস্তাও রাঙা হয়েছিল লাল রঙে।
সেদিন একঝাঁক তরুণপ্রাণ
বুকভরা সাহস নিয়ে,
দৃপ্ত বাহুতে স্লোগান নিয়ে
রাস্তায় নেমেছিল সব বাধাকে পা দিয়ে ঠেলে সরিয়ে।
শুধু প্রাণভরে মা-কে মা ডাকার জন্য!
বাংলা ভাষাকে বাঁচানোর জন্য।
গুলির শব্দ সেদিন তাঁদের দমাতে পারেনি।
তাঁদের কেউ শহিদ হয়েছে।
তাঁরা রাজপথ রক্তে লাল করেছে।
শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে তাঁরা করেছে ভাষার দাবী।
ক্ষতবিক্ষত হয়েছে তাঁরা।
কিন্তু তাদের মন লক্ষ্যে অবিচল ছিল।
আমাদের মাতৃভাষাকে অমর করেছে তাঁরা।
ফাগুন মাসকে করে দিয়েছে
ভাইয়ের শোকে ব্যাকুল।
আজ সেই গৌরবোজ্জ্বল দিন।
আজও যে কৃষ্ণচূড়া লাল!
আজও যে সেই ফাগুন!
আজও রাস্তায় সেদিনের ফেস্টুনের কাগজের গন্ধ!
আজ যে একুশ তারিখ!
আজ তো সেই রক্তে রাঙা ফেব্রুয়ারি...
যেই দিন আমি দেখিনি,
তবুও আমি বলতে পারি!
এ আমার পরিচয়
এ আমার প্রাণের ভাষা,
এঁরা আমার দেশের মানুষ।
যাঁরা কিনা রক্ত দিয়ে নিয়ে এসেছে
একটি ভাষা,একটি স্মৃতিময় তারিখ!
একুশ...
তাই ষোল কোটি স্মৃতির মিনার তৈরি হয়
ফুলে ফুলে ভরে যায় সেসব মিনার।
লাল লাল থোকা থোকা অজস্র ফুলে।
তাই আজও ফাগুন কাঁদে,
আজও কৃষ্ণচূড়া ফোটে।
আজও রাজপথ নির্বাক হয়ে অজানার পানে ছোটে!
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:১৯