somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধারাবাহিক: শ্যামলা রংয়ের মেয়েটি - ২

৩১ শে অক্টোবর, ২০২৩ রাত ৯:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দিলাম চোখ টিপে।

যা হবার হবে, কি হবে? হয়তো পুলিশ ডাকবে!
থমকে গেল মেয়েটা। ঠোঁট দুটো সামান্য খুলে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে আমার দিকে। কয়েক মূহুর্ত, তারপর আমাকে শতভাগ বিস্মিত করে মুখটাতে রহস্যময় একটা ভাব এনে, খুব স্মার্টলি আমাকেও চোখ মেরে দিলো মেয়েটা। বুকটা ধ্বক্ করে উঠলো। যেন ক্যামেরা ক্লিক্। তারপর সাঁই করে হিন্দি সিনেমার নায়িকাদের মত উল্টো ঘুরলো। সেই সাথে খয়েরী রংয়ের জামা টা একবার ফুলে উঠে আবার গায়ের উপর বসে গেলো। তারপর ক্যাটওয়াক স্টাইলে হেঁটে ভেতরে চলে গেলো। আমার সারা গা কাঁপছে। মাথা রিমঝিম করছে। জীবনে প্রথম কোন নারীকে চোখ মারলাম। তা ও বিদেশে। ওয়ালাইকুম চোখমারাও পেলাম।

“মেরা কাম হো গিয়া। কনগ্র্যাচ্যূলেশানস্! মা’ লা' তেরা হো গ্যায়া ইয়ার। উসকা খেয়াল রাখনা ওকে? বহুত আচ্ছা লাড়কী হ্যায় ও।” উঠে দাঁড়িয়েছে হারামী আলতাফ। এ্যারেঞ্জেড ম্যারেজের মতো আমার প্রেম এ্যারেঞ্জ করেছে সে। যাই হোক, আমারও কিছু প্রশ্ন থাকতে পারে। মাতৃভাষার সাথে ‘হ্যায়’ লাগিয়ে আবার শুরু করলাম,

“হিতি কা নাম মালা, তুই কেন্নে জানছ হ্যায়?”

“মা’ লা’ উছকা শর্ট নেইম। পুরা নাম ওরমী মা’ লা’ রাই চোউধ্-রী। . . ও বোলা থা মুঝ্‌সে”

হিন্দীতে টেনে টেনে কি জঘন্য ভাবে সুন্দর নামটার ‘পি’ মেরে দিলো। শালারপুত শালা!

“উচ্চারণ ঠিকমত কর হ্যায়। ওরমী মা' লা, রাই চোউধ্-রী নেহি, ওইটা ‘উর্মিমালা রায় চৌধুরী’ হইতা হায়, চোউ – ধু – রী। বুইঝলি হায়?” আলতাফের চোখে মুখে এখন প্রশংসার হাসি।
“ওয়াহ্ মেরে দোস্ত, ওয়াহ্! নাম কে লিয়ে কিতনা পেরেশান হ্যায়? উছকে লিয়ে তো জান দে দেগা তু? হাম স্যাটিসফায়েড হ্যায়।”

হায় কপাল, প্রেমিকা আমার হাতে তুলে দিয়ে কি খুশী। পাক্কা দুইদিন ভয়ে ভয়ে ছিলাম। সকালবেলা চোরের মত কলেজে যেতাম, বিকেলে ফেরার সময়ও একই অবস্থা। বারান্দায় যাই না তাই মেয়েটাকে দেখিনি। দেখতেও চাই না। পথেও এদিক সেদিক তাকাতাম না। যদি দেখা হয়ে যায়? বন্ধুরা সবসময় সাথে থাকে, এতে করে খানিকটা সাহস পাই। তারপরও একদিন হয়ে গেলো। ইয়ে মানে দেখা হয়ে গেলো।

* * * * * * * * * * * * * * * * * * *


এক অলস দুপুরে খাওয়াদাওয়া সেরে সামনের রুমে টিভিতে এটিএন চ্যানেলে হাসানের গান দেখছি। তখনও কলকাতওয়ালারা বাংলাদেশী চ্যানেলগুলো ব্যান করেনি। হাসান তার লম্বা লম্বা চুল দুলিয়ে দুলিয়ে চীৎকার করে গাইছে,

“এ্যাঁ কাঁ কীঁ - আমি এ্যাঁ কাঁ কীঁ …..”

ঠাকুর এলো, কিছু একটা বলবে। কিন্তু এমন গোমড়া মুখ কেন? প্রতিদিনের মতো আজও ঠাকুরের সাথে মজা করতে মন চাইলো। ঠাকুরকে টিভি দেখিয়ে বললাম,
“এটা কোন দেশী চ্যানেল বলতে পারো? কোন ভাষায় গান গাচ্ছে?” ঠাকুর টিভির দিকে এগিয়ে গিয়ে একবার ডান দিকের স্পীকারের কাছে কান নিয়ে কিছুক্ষণ, আরেকবার বাঁ দিকের স্পীকারের কাছে কান নিয়ে হাসানের গান শুনছে। টিভিতে হাসান প্রানপনে গাইছে,
“রাত্-রি, ইয়োনেক হো লোও …
- চোওখে নেই কো নো ঘুম উম উম উম ম ম…
অপরূপ জোও ছো না. . . .
- অযাচিতো বে-দোও না . . .”


ভালোমত খানিক্ষন শুনে আমাদের সামনে এসে গম্ভীরভাবে বললো,
“দাদা এটা তেলেগু।
তেলেগু, তেলেগু।”

আমার পাশে সিকদার, হাসতে হাসতে ফেটে পড়লাম। হাসানের গানকে বলে তেলেগু। ঠাকুর তখনও আমাদের দিকে বেজার মুখে চেয়ে আছে। টিভির দিকে তাকাচ্ছেনা। সিকদার জিজ্ঞেস করলো,
“কিয়া ঠাকুর? আমাদের দিকে রেনি রইছো কেন? কিছু বইলবা?”
“আজ্ঞে আজ রান্না হবেনা।” চিন্তিত মুখে ঠাকুর বললো। আমি বললাম,
“রান্না না হলে বিরিয়ানী রাঁধো।” ঠাকুর বলে,
“কিস্‌সু হবেনা দাদা। স্টোভ পোম্পু নিচ্ছেনা।”
“কিয়া নিচ্ছেনা?” সিকদার এবার গলা উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলো।
“পোম্পু, পোম্পু। স্টোভে পোম্পু দিতে হয় না? পোম্পু ছাড়া স্টোভ চলে?” ঠাকুরের জবাব।

এখন বুঝলাম কোরোসিন স্টোভে পাম্প নিচ্ছেনা। এটা কলকাতা, বাংলাদেশের মত ঘরে ঘরে গ্যাসের লাইন লাগানো থাকেনা।
“ওয়াসার চেঞ্জ করলে ঠিক হয়ে যাবে। একটা ওয়াসার কিনে নিয়ে এসো আমি ঠিক করে দেবো।” ঠাকুরকে বললাম।
“আমি থাকি দমদম। গড়িয়ার কিছু চিনি নে। দিদিমণি আচে নিচে ওর থেকে ঠিকানা নিয়ে ওয়াসার ঠিক করে নিয়ে এসো।”


এর মধ্যে দিদিমণি এলো কোত্থেকে? তাছাড়া ক্যারোসিন স্টোভ কি মেয়েলি বিষয়? আজব? কিসের মধ্যে কি?
“দিদিমণি দেবে স্টোভের ওয়াসারের খবর? চল তো, কোন দিদিমণি দেখি!” ঠাকুরকে নিয়ে নিচে নেমে আমি বিমূঢ়। বাসার সামনে, গাড়ী বারান্দার নীচে দাঁড়িয়ে সেই শ্যামলা রংয়ের মেয়েটি। মেরুন রংয়ের সালোয়ার কামিজ পরা, ওড়নাও আছে তবে গলায় মাফলারের মত ঝুলে আছে। কিন্তু সে বাসার সামনে এরকম রেডি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে কেন? আমি ঘাবড়ে গেলাম তবে কিছু বুঝতে দিলাম না।

“দিদিমণি ওকে বলে দাও তো এটা কোথায় পাবে?” স্টোভ পাম্প করার পাম্পারের সাথে ক্ষয়ে যাওয়া ওয়াসার লেগে আছে। ওটা এগিয়ে দিলো মেয়েটির দিকে। নির্বিকার, খুব স্বাভাবিকভাবে ওটা আমার হাতে দিতে বললো। ঠিকানা চিনিয়ে দেবে যে কতো না, আবার কেরোসিন মাখানো ওটা ধরে হাত নোংরা করবে? ইংরেজীতে ‘ফলো মি’ বলে হন হন করে এগুতে থাকলো।

আমিও বাধ্য ভৃত্যের মত পিছু নিয়েছি, হাতে স্টোভ পোম্পু দেবার পিস্টন। কেরোসিন মাখানো। আমার হাত এর মধ্যে কেরোসিন লেগে গন্ধ হয়ে গেছে। পেছনে তাকিয়ে আলতাফের কথা জানতে চাইলো, হিন্দি বা উর্দুতে কথা বলছে। জবাবে বললাম,
“হি’জ লেফট। ইটস্ বিন ফোর ডেজ। সরি আই ক্যান্ট স্পীক উর্দু।” উর্দু বলতে পারিনা কথাটা ঠিক না, আমার মাতৃভাষার সাথে হ্যায় লাগালেই হয়।

“ইটস্ হিন্দি, নট উর্দু। হয়্যার আর ইউ ফ্রম?” পিউর ইন্ডয়ান একসেন্ট। এত স্বাভাবিকভাবে বলছে, যেন কিছুই হয় নি। অথচ বাংলাদেশে চোখ মারা চরম শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ভেতরে ভেতরে আমি ভয়ে অস্থির। কোন মতে বললাম, “বাংলাদেশ।”

এবার মেয়েটা অবাক হল, মিষ্টি হেসে বললো, “ওহ্ মাই গড! তুমি বাংলাদেশ থেকে এসচো? আমি ভাবলাম তুমি মরিশান।”

আমি হতবাক! এতই অবাক যে ভয় ডর সব কেটে গেলো। আমাকে মরিশাসের বাসিন্দার মতো লাগে এমনটি কেউ জীবনেও বলেনি।
“আলতাফ চারদিন আগে চলে গেলো, অথচ জানালোও না। কবে ফিরবে বলতে পারো?” এবার বিরক্ত হলাম, প্রথমতঃ আমাকে মরিশান ভেবেছে, আর কোন দেশ পাইলো না? মরিশান? দিত্বীয়তঃ তুমি তুমি করে বলছে। কত বড় বেয়াদপ। মাথা টং হয়ে গেছে। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম, এই মেয়ের সাথে আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলবো। ফেণী অরিজিন। সাউথ ক্যালকাটার আর্য, প্রমিত ভাষার ক্ষ্যাঁতা পুড়ি। (যদিও তুমি করে বলা কলকাতার কালচার, পরে জেনেছি।)

একটু ঝাঁঝ দেখিয়ে বললাম,
“ফিরবো কোন তুন? কোর্স শ্যাষ, গেছে গোই। আর আইসতো ন’।” অবাক চাহনী, সুন্দর গোটা গোটা দুটো চোখ দুটো বড় বড় করে আবার বলো,
“ওহ্ মাই গড! বাবা, ঠাকুর্দা আর ঠাম্মা এই ভাষাতেই কথা বলে।” চোখে মুখে আনন্দ ঠিক্‌রে পড়ছে, দেখতে আরো মিষ্টি লাগছে মেয়েটাকে।
“কোন ভাষাত কথা বলে?” টাশ্‌কি খেয়ে বেকুবের মত মেয়টার দিকে তাকালাম। আমার ঝাঁঝভাব উধাও।
“এই যে, যেভাবে তুমি বলছো?”
এবার আমি তোতলাচ্ছি, “তোঁ তোঁ তোঁয়ার ঠ্ ঠ্ ঠাম্মা আর ঠ্-ঠাব্বা কি ফেণীর তুন নি?”
“আমার বাবার ঠাকুরদার বাড়ী হচ্ছে পূর্ব বাংলায়, চাটগাঁর কাছে, মীরের সরাই।”
“ওরেহ্!” এবার আমি হেসে ফেললাম, “মীর-সরাইর মানুষ ত আন্ডা মত করি কথা বলে।” এখন পাশাপাশি হাঁটছি
“আন্ডা মত করে মানে?”
“আন্ডা মত মানে ‘আমাদের মত’ করি, হাঁস মুরগীর আন্ডার মত না। তোঁয়ার বাপ, ঠাদ্দার আর আঁর মাতৃভাষায় আন্ডা মানে 'আমরা', তোন্ডা মানে 'তোমরা', জানো না?”
“অফ কোর্স জানি, কিন্তু তুমি যেভাবে ফ্লুয়েন্টলি বলচিলে, আই গট পাজল্‌ড।”

পাড়ার ভেতর দিয়ে বেশ খানিকটা হেঁটে মেইন রোডে উঠতেই কর্নারে বেশ বড় হার্ডওয়্যার শপ, মেইন রোডেও প্রায় সব দোকানপাট বন্ধ। কলকাতার দিনের দুপুর আর রাত দুপুরের পার্থক্য শুধু রাত আর দিন। আলো-অন্ধকার ছাড়া আর কোন পার্থক্য নেই। এই সময়ে স্থানীয়ারা গভীর ঘুমে থাকে। দুপুরের ভাত ঘুম বাঙ্গালীদের হাজার বছরের ঐতিহ্য। সাইজে বড় বিধায় হার্ডওয়ার শপ টা খোলা, ওখান থেকে ওয়াসার কিনে একসাথে ফিরছি। কিন্তু বুঝতে পারছিলামনা দুঃশাসন ঠাকুর স্টোভের পোম্পু দেবার ওয়াসারের সাথে এই মেয়েকে কোত্থেকে জুড়লো? পরে শুনেছি দুঃশাসন গেছিলো মেয়েটার কাছে পোম্পু ওয়াসারের দোকানের খোঁজ নিতে আর তখন মেয়েটি আমার সম্পর্কে একে একে সব জেনে আমাকে ডাকিয়ে ওর সামনে আনিয়েছে, কৌশলে। হুমম, বুদ্ধি হ্যাজ!

“ওটা করতে আলতাফ বলেচিলো তোমায়?” নরম স্বরে সারসরি আক্রমনাত্মক প্রশ্ন মেয়েটার।
“কিয়া কইত্তে?”
“ইউ উইংকড্ মি।” চুপ হয়ে গেলাম। ইন্ডিয়ানদের এই সমস্যা, ঝর ঝর করে ইংরেজীতে কথা বলে। যদিও তাদের নিজস্ব একটা একসেন্ট আছে যেটা সারা বিশ্বের কাছে ইউনিক। অনেকে হাসে, তবে যা বলে নির্ভুল বলে। কিন্তু আলতাফই আমাকে চোখ মারতে বলেছিলো সেটা আমি বলতে যাবোনা, বন্ধুর সাথে বেঈমানী হয়ে যাবে।
“লেটস্ টক এবাউট সামথিং এলস্।” ভণিতা না করে সরাসরি প্রসঙ্গ পাল্টাতে বললাম। আবার নতুন দৃষ্টিতে তাকালো আমার দিকে, রেগে যাচ্ছে মনে হয়!
“ইউ হ্যাভ ভেরী স্ট্রং ইংলিশ এক্সেন্ট। অথচ তোমার লোকাল বাংলা শুনলে কেন জানি মনে হয় ইচ্ছে করে আমার সাথে এমন করচো।”
রাগ সামলাতে না পেরে একেবারে কেঁদে ফেলার উপক্রম।

নাহ্, চোখের পানি নাকের পানি দেখে গলে যাওয়া যাবেনা, স্ট্রং হতে হবে স্ট্রং।
“তোঁয়ার কতার হোন্-মাতা কিছু বুঝিয়ের না…”
“এসব কি হচ্চে?” আমার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বললো, “কি ভাষা এগুলো?” খুব অপমানিত বোধ করছে সে। সত্যি কেঁদে ফেললো নাকি? হেঁচকি আর ফোঁপানোর শব্দ একসাথে শুনলাম মনে হল! কলকাতার শুদ্ধ বাংলার এ্যাকসেন্টের সাথে আমি পরিচিত, কারন আমার দু, দুটো ভাবী পশ্চিমবঙ্গের। উর্মিমালা কথা বলছে সাউথ ক্যালকাটার স্ট্রং বাংলা এ্যাকসেন্টে। যাই হোক, আমি ফেণী ভাষাতেই চালিয়ে যাবো, যা হবার হবে।

বললাম,
“আইচ্ছা শুনো? আঁই আবার বইলতেছি। তোঁয়ার কথার আগা মাথা কিছু বুইজতে ফাইত্তেছি না। প্লিজ তুঁই বাসাত যাও, আঁইও যাইয়ের। আঁই ‘কি ভাষায়’ না, আঁর মাতৃভাষায় কথা বইলতেছিলাম। আর হ্যাঁ, দা-বটকির দোকান চিনাইয়া দিবার জইন্য, ধইন্যবাদ।” খুব সময় নিয়ে ধীরে ধীরে বললাম, বোঝালাম আমি শুদ্ধ বাংলায় কথা বলতে পারিনা, তবে চেষ্টায় আছি।

ওড়না দিয়ে চোখ মুছছে মেয়েটা। আমার মনটাও খারাপ হচ্ছে, কিন্তু আমার বাঁদরামী যে লেভেল পর্যন্ত গিয়েছে সেখান থেকে ফেরার উপায় নেই। প্রেম-ফেম আমার সিস্টেমে নেই। সরি। একটু ধাতস্থ হয়ে, মুখের সামনে চলে আসা চুলগুলো সরিয়ে বললো,
“বাসা না, ওটা আমাদের বাড়ী। আর, দা-বটকির দোকান না, ওটা হার্ডওয়্যার শপ।” কথাগুলো যখন বলছিলো কান্নার ভাব তখনও রয়ে গেছে তবে মুখে স্মীত হাসি। মোছার পর ভেজা চোখ আর মায়াভরা মুখখানা দেখতে খুব মিষ্টি লাগছিলো। বাসার সামনের রাস্তায় দাঁড়ানো আমরা, একদিকে আমার অন্যদিকে ওদের। পুরো এলাকা নিঝুম, জনশূন্য, খাঁ খাঁ করছে একেবারে। ভাতঘুমের সময় কলকাতার আবাসিক এলাকাগুলো এমনই হয়।

“আমি ঊর্মি। ঊর্মিমালা রায় চৌধুরী।” বলে স্মিত হাসি মুখে হাত বাড়িয়ে দিলো হ্যান্ডশেক করার জন্য। কান্নাভেজা কণ্ঠে যখন নিজের নাম বলছিলো, আমার কানে সুমধুর হয়ে বাজছিলো। এর মধ্যে নিজেকে পুরোপুরি সামলে নিয়েছে।
ওর বাড়ানো হাত ফিরিয়ে দিতে হল, “সো সরি। কি বলি দুঃখ্খ ফ্রকাশ করমু বুইঝ্‌তে ফাইত্তেছি না। আমার হাতে কেরাশি লাগি গিয়েছে। হেনশিক কইল্লে তোমার হাতে কেরাসি লেগে যাবে যে?” স্টোভের পিষ্টন ধরা ডান হাত দেখালাম। মুখে আমার হ্যাবলা হাসি।
“হেনশিক না, হ্যান্ড শেক। কেরাশি না, কেরোসিন। আচ্ছা ঠিইক আচে, আরেকদিন তাহলে। কিন্তু তোমার নাম বললে না যে?”
“ওহ্, আমি সাগর। সাগর চৌধুরী।” চোখ বড় বড় করে চেয়ে থাকলো কয়েক মূহুর্ত, তারপর ফিক করে হেসে দিলো,
“এতো সুন্দর নাম? তবে তোমার কথার স্টাইলের সাথে একদমই যায় না।”
“তোঁয়ার নামও সোন্দর। “উর্মি” “মালা”, মানে ঢেউ নেকলেস।” একটুও হাসিনি, মন থেকে নামের মানে বলেছি।

হাসতে হাসতে পড়ে যাচ্ছে যেন মেয়েটা। সাউথ ক্যালকাটার রেসিডেন্সিয়াল এলাকা দুপুরের ভাতঘুমে নিঝুম, হাসির শব্দ ধ্বণিত-প্রতিধ্বণিত হচ্ছে আশপাশের বাড়ীগুলোতে, দেয়ালে দেয়ালে। তারপর দুহাতে মুখ ঢেকে স্বাভাবিক হল,
“এতো চমৎকার ট্রান্সলেশান আগে শুনিনি। আচ্চা শোনো, একটা রিকোয়েস্ট করি, রাখবে?”
“অবশ্যই অবশ্যই। কিয়া বইলবা বল?”

প্রায় কাঁদিয়ে দেবার পর কিছু একটা করার সুযোগ পেয়ে ছ্যাবলা বনে যেতে আপাততঃ আপত্তি নেই।

(চলবে)

পর্ব - ১
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৪:১৬
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×