somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঐকের বদলে বিভক্তির রাজনীতি। এই খন্ড-বিখন্ডিত স্বার্থের উপস্থাপন কার কাজে লাগতেছে?

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :







দেশের সংখ্যালঘু হিন্দুভাইয়েরা দাবী জানাইতেছেন তাঁদের জানমালের নিরাপত্তার--

এই দাবী কার কাছে...? প্রথমতঃ অবশ্যই সরকারের কাছে, তবে ইদানীং উনারা ভারতীয় দুতাবাস চিইনা ফেলছেন। সেইখানেও উনারা যাওয়া আসা শুরু করছেন, উনাদের দাবী দাওয়া জানাইতে।

অথচ সবাই জানেন-- বাংলাদেশে এমন একটা সরকার ক্ষমতায় রইছে, যেই সরকার জনগনের কাছে কোন ধরণের জবাবদিহি করার-- কোন ধরনের বাধ্যবাধকতা ফিল করে না। কারণ এই সরকার বুইঝা ফালাইছে, যে-- জবাবদিহিতা দেওনের লগে ভোট পাওয়ার কোন সম্পর্ক নাই। ভোট ক্যামনে পাইতে হয়, আর না পাইলেও আমি জিতছি বইলা ঘোষণা দিয়া ক্যামনে ক্ষমতায় থাইকা যাওয়া যায়-- সেইটা এই সরকার সবার চাইতে ভাল জানে। ফলে শুধু সাধারন মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিয়া নয়-- নিজস্ব গোষ্ঠি স্বার্থের বাইরে দেশের কোন কিছু নিয়াই এই সরকার জনগনের কথা শুনতে নারাজ। জনগনের মতামতের তোয়াক্কা না কইরা, কোন ধরনের দৃশ্যমান বিরোধিতার মুখামুখি না থাকার অবস্থা তৈরি কইরা -- এই সরকার দিব্যি ক্ষমতায় রইছে, তার কাজ চালায়া যাইতেছে। একদিকে বিরুদ্ধবাদীদের জন্য দমন নীতির নির্মমতা, অন্যদিকে তোষামদকারী বিদুষক ভাঁড়দের জন্য পারিতোষিক ব্যবস্থা-- সরকারের দিক থিকা ক্ষমতার রাজত্ব চালায়া যাওয়ার এইটাই চমৎকার কার্যকরী প্রেসক্রিপশন।

দেশের এই ধরনের পরিস্থিতিতে হিন্দুভাইদের বেশি কোন দাবী দাওয়া নাই, শেখ হাসিনা নির্বাচিত না হইয়াও ক্ষমতায় রইছে ক্যান, এইটা তাদের কাছে কোন একটা প্রশ্নই নয়। বরং তাঁদের ভাবখানা হইলো-- ক্ষমতায় আছে তো অসুবিধা কী? হিন্দুভাইয়েরা শুধু নিজদের নিরাপত্তাটুকু পাইলেই খুশি। বাকি দ্যাশ জাহান্নামের শ্যাষ সীমানায় গিয়া পৌছাক, তাইতে উনাদের কোন আপত্তি নাই। উনাদের জন্য একটা নিশ্চিন্তের জীবন-- যদি কেউ আইনা দিতো... উনারা খুবই খুশি হইতো।

হিন্দুভাইয়েরা আবার এইটাও চান, এই সরকারই য্যান চিরকাল ক্ষমতায় থাইকা যাইতে পারে। ক্ষমতার এই জবর দখল থিকা এই সরকারকে য্যান বিদায় না হইতে হয়। এই ক্ষমতায় থাকার জন্য- মুল্য হিসাবে সরকার বিরোধী মতামতের মানুষদের যদি এই সরকারের যাবতীয় দানবীয় নখ,দাতের হিংস্রতা হজম কইরা নিতে হয়--- সাতক্ষীরা ঝিনাইদহ সহ দেশের নানা প্রান্তে বিরোধী দলের মানুষজনদের ঘর থিকা উঠায়া নিয়া যাওয়া চলতে থাকে-- এমন কি প্রিয়জনের লাশ ফিরা পাইবার সৌভাগ্য এইসব পরিবারগুলার কপালে যদি না'ও জুটে-- হিন্দুভাইদের তাতেও কোন আপত্তি নাই। এইগুলা উনাদের কাছে কখনই কোন সমস্যা নয়। একটা আপাদমস্তক গনবিরোধী দানব সরকার, যারা জনগনের কাছে জবাবদিহি করার কোন ধরনের বাধ্যবাধকতায় আবদ্ধ নয়-- এই ধরনের একটা সরকারকে ক্ষমতায় রাখার জন্য-- এই সব বেইনসাফ আর অবিচার আর গুম খুন-- মুল্য হিসাবে হিন্দুভাইদের কাছে খুবই তুচ্ছ। এবং সামান্য।

এই সরকারকেই ক্ষমতায় রাখার জন্য যদি বিরোধী মতের মানুষদের পরিবারের সামনে থিকা ছিনায়া নিয়া নিখোজ কইরা দেওয়া হয়, বাবার অপরাধে নাবালক শিশুদের ভিকটিম বানানি হয়, পরিবারের সদস্যদের উপর স্টিম রোলারের নির্যাতন চালানি হয়, নিরাপরাধ মানুষদের যে কোন অন্যায় আর ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার কইরা নিতে বাধ্য হইতে হয় -- সেই সব ঘটনা, আমাদের হিন্দুভাইদের চোখে খুবই ন্যয্য কাফফারা। ভেরি মাচ জাস্টিফায়েড...!!

বাংলাদেশে হিন্দুভাইদের মতো সংকীর্ন চিন্তার আরও এক প্রজাতির দেখা এই দেশে পাইবেন। বাংলাদেশে বিরাজমান সমাজ,রাষ্ট্র ব্যবস্থা নিয়া আমাদের নারীবাদি আপাদেরও সেই একই দৃষ্টিভঙ্গি। উনারা বিশ্বাস করেন এই দেশে নারীদের সমস্যার সাথে বিরাজমান অগনতান্ত্রিকতার আর ফ্যাসিজমের কোন সংযোগ নাই। বৃহত্তর সমাজের দুর্ভোগের সাথে নারীদের সমস্যার কোন যোগসুত্র নাই। শুধুমাত্র নারীদের নিয়া উনারা সিলেবাস বানায়া, উনাদের চ্যাপটারে শুধুই নারীদের রাইখাই উনারা নারীদের মুক্তি আনতে পারবেন। এই মহাজ্ঞানী নারীবাদী আপাগণ বিশ্বাস করেন, সমাজের অন্য সব অন্যায় অবিচার নিয়া চোখ বুইজা থাইকাও মহিলাদের সমস্যার সমাধান সম্ভব।

সমাজের অগনতান্ত্রিকতা নিয়া ভাইবা নারীবাদের কাম কী? সবকিছুর ভিতর নিজেদের বিশেষ এক স্বার্থ আছে যা নাকি “নারীস্বার্থ”-- সেই আলোকে নিজদের স্বার্থ উনারা কেবল বুঝিয়া লইবেন। যদিও প্রশ্ন জাগে মনে-- আচ্ছা, এই নারীবাদীগন কেমন নারী স্বার্থের নারী – এরা কী শুধুই নারী – ইনারা কোন মানুষ নন? সমাজের আর সবার মত একজন নন? তাই কী? ফলে সমাজ রাষ্ট্রের একজন সদস্য হিসাবে তার কোন স্বার্থ নাই। উনাদের খালি “নারীস্বার্থ” আছে। বিষয়টা এমন কী? তাইলে দেখা যাইতেছে-- এইটাও তো “হিন্দুস্বার্থ” এর মত আর এক সেক্টোরিয়ান স্বার্থের ভাগীদার। একটা গনবিরোধী সরকার মাথার উপর চাইপা বইসা দ্যাশটারে জাহান্নামে নিয়া যাউক, দ্যাশের বাকি সব মানুষের জীবনে গজব নাইমা আসুক, এই সব বিষয় পাশ কাটায়া গিয়াও এই দেশের মেয়েদের ভাল থাকা সম্ভব। তার কোন কিছুরই জরুরত নাই, কেবল তার নারীস্বার্থ নিশ্চিত হইলেই হয়!

বাংলাদেশের নারীবাদী আপারা, আমাদের হিন্দুভাইদের মতোই। এই সরকার, এই রাষ্ট্র ব্যবস্থা... কোন কিছু নিয়াই উনাদের কোন আপত্তি নাই। উনারা শুধু স্ব স্ব গোষ্ঠিতে নিরাপদে ভাল থাকতে চান।

আচ্ছা দাদা ও আপাগণ, একটা সরল প্রশ্নের উত্তর দ্যান। আপনারা কি খেয়াল করছেন আপনাদের 'নারীস্বার্থ' বা 'হিন্দুস্বার্থ'-- এইগুলাতে যে আপনারা সবাই আপনাদের রিডিউসড কইরা সংকীর্ণ কইরা ফেলছেন-- য্যান বুঝি বা আপনারা কেবলই একজন নারী অথবা একজন হিন্দু-– য্যান আপনারা আর পুরা মানুষ না। সবার মতই মানুষ না। রিডিউসড “স্বার্থ” বইলা একটা কিছুতে নিজেদের নামাইয়া আনছেন, আর একটা হিন্দুস্বার্থ, এবং একটা নারীস্বার্থ নিয়া খুশি থাকতে চাইতেছেন। অথচ সমাজে সব মানুষের ইনক্লুসিভ একটা কমন কোন স্বার্থ হওয়ার সম্ভাবনা আপনার নজরে পড়তেছে না, ক্যান...?? একটা পলিটিক্যাল কমিউনিটির গনতান্ত্রিক সমাজ কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা গেলে, হিন্দুদের উপর হামলাও বন্ধ করা যায়, বিরোধী মতের মানুষদের নিশ্চিহ্ন কইরা দেওয়ার অপচেষ্টাও রুইখা দেওয়া যায়। আর তাইতে হিন্দু মুসলমান পাহাড়ি, আমাদের সমাজের সবাই নির্বিশেষে নিরাপত্তা পাইতে পারে, সবার জন্য ইনসাফ নিশ্চিত করা যাইতে পারে। এইটা সেই অল ইনক্লুসিভ সমাজের কথা, যেইখানে আপনি একটা কমিউনিটির সবাইরে নিয়া ভাবতে পারলে, তবেই তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব।

ফলে, দ্যাখেন--হিন্দু দাদা ও নারীবাদী আপাগন-- সবাইরে নিয়া একটা ইনক্লুসিভ সমাজ গইড়া তুলা আপনাদের আদৌ লক্ষ্য নয়। সমাজের বাকি সবাই জাহান্নামে যাউক, আপনার আছেন, আপনাদের এই রিডিউসড হিন্দুস্বার্থ অথবা একটা নারীস্বার্থ নিয়া। এবং দেখা যাইতেছে একটা দাবী তুইলা, আপনাদের এই রিডিউসড সংকীর্ন স্বার্থ আপনি য্যান কারও কাছ থিকা বুইঝা নিতে চাইতেছেন। তার মানে কেউ একজন এই দেনে আলা আছেন বইলাই তো আপনি সমাজে নানান বিভক্তি স্বার্থের রাজনীতি করেন, সমাজের বাকি সবার লগে মিলা আপনার লড়াই লড়তে চান না-- বরং হাসিনার কাছ থিকা আপনার দাবি বুইঝা নিতে চান।

আর এর সোজা অর্থ একটাই-- হাসিনাকে খাড়া কইরা রাখার পিছনের পিলার তো আসলে আপনারাই? এই জন্যই আপনাদের বিভক্তির রাজনীতি। সেই কারনেই মুসলমানদের শত্রু বানায়া, তাঁদের বাদ দিয়া আপনাদের হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের রাজনীতি। এই সব খন্ড-বিখন্ডিত স্বার্থের উপস্থাপন।

সত্যই কী সৌন্দর্য্য!
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৫২
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×