somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাপ্তাহিক (অনিয়মিত) খাবার পত্র, সংখ্যা-৫

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্বাস্থ্যসচেতন একজন আমাকে সেদিন জানাইলেন যে, দ্বিপ্রহরে ভারী খাবার-দাবার খাইয়া ভাতঘুম দিবার চাইতে সকাল সকাল ভারী নাস্তা করা উত্তম। বয়সে বড় বিধায় তাহার কাছে সকালবেলার ঘুম সংক্রান্ত থিসিস ছাড়িবার লোভ অতি কষ্টে সম্বরণ করিলাম। এই সাফল্যের জন্য বাহবা পাইবার উদ্দেশ্যে বন্ধুর স্মরণাপন্ন হইলাম। লে হালুয়া, এ যে দেখিতেছি আরেক কাঠি সরেস। নানা আকারে-প্রকারে আমি যে দিন দিন প্রস্থে বাড়িতেছি তাহার জন্য দ্বিপ্রহরের ভাতঘুম কে দায়ী করিয়া একদিন ভোরবেলা তাহার সহিত মুরগীর ছুপ খাইতে যাইবার আহ্বান জানাইল। খাওয়াদাওয়া কে অবজ্ঞা করিব এমন বেকুব বে-আদব আমি কোন কালেই আছিলাম না তাহা সকলেই জানেন। তাই স্থির করা হইলো অমুক দিন সক্কাল সক্কাল আমি তমুক রেস্টুরেন্টের প্রতি অশেষ দয়াস্বরূপ স্বশরীরে হাজির হইব।

অমুক দিনের আগে ভোর রাত্রি অবধি মাসুদ রানাকে অথৈ দরিয়া থেকে উদ্ধার করিয়া ঘুমাইতে চলিলাম। বলা বাহুল্য, আমার পরদিন সক্কাল সক্কাল উঠিবার সম্ভাবনা তদ্দণ্ডেই মাঠে চিৎ হইয়া পড়িয়া মারা গেল। সকালে ৮টার সময় বন্ধু ফোন করিল। আমি তাহাকে নানাবিধ সান্ত্বনা দিয়া ঘন্টাখানেকের মধ্যে উপস্থিত হইবার নিশ্চয়তা দিয়া পুনরায় নিদ্রাচ্ছন্ন হইলাম। ঘন্টাখানেক পর আবার ফোন! ইহাদের যন্ত্রণায় টিকাই মুশকিল!! আমি পুনরায় তাহাকে সান্ত্বনার বাণী শুনাইলাম। ১০টার সময় আস্তে আস্তে ঘুম ভাঙিতেছে এমন সময় দেখি বন্ধু একখানা হৃদয়বিদারক বার্তা পাঠাইয়াছে। বার্তার মূল বক্তব্য- আমাকে বারংবার স্মরণ করাইয়া দেয়ার পরও আমি না যাওয়াতে সে যারপরনাই মনঃক্ষুণ্ণ হইয়াছে এবং আমাকে ছাড়াই মুরগীর ছুপ সাবাড় করিবার পরিকল্পনা গ্রহণ করিয়াছে। আমাকে ছাড়াই মুরগীর ছুপ সাবাড় করিবার পরিকল্পনা গ্রহণ করিয়াছে!!!!! এই বাক্য দেখিবার পরে আর কে ঘরে থাকিতে পারে! আমি তৎক্ষণাৎ স্প্রিং এর মত লাফাইয়া উঠিয়া রেস্টুরেন্টে যাইবার প্রস্তুতি নিয়া ফেলিলাম। বন্ধুকে মুঠোফোনে নানাবিধ হুমকি-ধামকি সহযোগে খাওয়া নিয়া অপেক্ষা করিতে বলিয়া শীতে হু হু করিয়া কাঁপিতে কাঁপিতে আর দাঁত কিড়মিড় করিতে করিতে রেস্টুরেন্টে উপস্থিত হইলাম। গিয়া দেখি মহান বন্ধু তখনো আসেনাই। বাবাজী এতক্ষণ লেপের নিচে শুইয়াই হাই-জাম্প, লং-জাম্প মারিতেছিল! যাক গে, খাওয়াদাওয়াকে উপাসনার পর্যায়ে বিবেচনা করিয়া নিজেকে শান্ত রাখিলাম। ঝোলা হইতে বাঙালীর হাসির গল্প বাহির করিয়া কঠিন মুখ করিয়া হাসির গল্প পড়িতে লাগিলাম।

বন্ধু আসিয়াই খাবারের অর্ডার দিল। তারপর আমাকে বারবার ফোন দিয়া জাগানোর ব্যর্থ চেষ্টার জন্যে আমার কাছ থেকে সমবেদনা আদায় করিয়া নিল। নানান বাক্যালাপের মধ্যে ধোঁয়া ওঠা নানরুটি হাজির হইলো। সাথে ২ বাটি মুরগীর ছুপ। গরম গরম মুচমুচে নানরুটি আমি বরাবরই ভালোবাসি (আহা এখনো যেন তাহার সুঘ্রাণ পাইতেছি)। কিছুটা রুটি ছিঁড়িয়া খাইয়া দেখিলাম। কথায় বলেনা, প্রভাতই দিনের প্রতিফলন! নানরুটি খাইয়াই সামনের খাওয়াদাওয়া কিরূপ সুস্বাদু হবে চিন্তা করিয়া আবেগে আপ্লুত হইয়া পড়িলাম। বন্ধু বহুদিন হইতে এইখানকার মুরগীর ছুপের প্রশংসা করিতেছিল। এখন আমার মত জ্ঞানী খাদক ইহা খাইয়া কি মন্তব্য করিবে তাহা জানিবার জন্য বন্ধুর চোখে স্পষ্ট আগ্রহ দেখিলাম। (পরে অবশ্য সে বলিয়াছে ঐখানা নাকি খাওয়া সম্মুখে দেখিয়া আমার চোখ কিরকম বৃত্তাকার হইয়া গিয়াছে তাহা অবলোকনের অভিব্যক্তি আছিল!) X((

যাক গে, বিখ্যাত মুরগীর ছুপে নানরুটি চুবাইয়া খাইতে শুরু করিলাম। এক বাটি ছুপের মধ্যে হেথা হোথা নরম মুরগীর মাংস লুকোচুরি খেলিতেছে! হায়! ছুপের স্বাদ ঠিক কিরকম তাহা ভাষায় বর্ণনা করার এলেম যদি আমার থাকিত! মুরগীর কোরমায় যেই ঝোল থাকে তাহা আরেকটু কম ঘন হইলে খাইতে যেইরকম হইবে অনেকটা সেরকমই লাগিল। কোরমার মত ভারী খাওয়া না। কেমন হালকা একটা ফুরফুরে ভাব আছে! সেই ফুরফুরে ছুপ খাইয়া আমার মনে হইলো ফেন্সি রেস্তোরাঁর ভাবওয়ালা শেফ কে ছুপ বানানি সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান দেয়ার ক্ষমতা এই বাবুর্চি মামার আছে। তমুক রেস্টুরেন্ট দীর্ঘজীবি হোক!

গোটা দুই-তিন নানরুটি আর মুরগীর ছুপ শেষ করিয়া থামিলাম (আমি যে কত কম খাই তাহা সম্পর্কে নিন্দুকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হইতেছে)! ওয়েটার মামা সাথে সাথে ২ কাপ চা রাখিয়া গেল (এইজন্যই আমি এইসব রেস্টুরেন্ট এত ভালোবাসি)। শীতার্ত হাতে চায়ের কাপ নিয়া আমি আর বন্ধু দেশের ভবিষ্যৎ নিয়া বিদগ্ধ আলোচনা শুরু করিলাম। আলোচনার ফলাফল এই যে, সরকার যদি প্রতিদিন সকালে দেশের সকল নাগরিকের হাতে এক কাপ চা তুলিয়া দিতে পারে তবেই দেশের নাগরিকদের(অন্তত অলস প্রকৃতির নাগরিকদের) উন্নতি সম্ভব। এই মহান বাণীতে খুশি হইয়া নিজের গুণগান গাইতে গাইতে তড়িঘড়ি করিয়া বাটীতে ফিরিলাম। দ্বিপ্রহরে আমার জন্য রান্না করা খাবার খাইবো না এমন অপচয়কারীও আমি কোনকালে আছিলাম না :D

১৪টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×