somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশ্বকাপটা হোক শুধুই ব্রাজিলের...

০১ লা জুন, ২০১৮ রাত ২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



শেষবার যখন আমরা বিশ্বকাপ জিতলাম; তখন সালটা ছিলো ২০০২। পুরো টুর্নামেন্টে অপ্রতিরোধ্য ছিলো টিম সেলেসাও। ফাইনালে প্রতিপক্ষ ছিলো জার্মান বাহিনী। ব্রাজিল কোচ স্কলারির তুরুপের তাস রোনাল্ডো, দিনহো, রিভালদো'রা তখন সময়ের সেরা ফর্মে। ফাইনালে রোনাল্ডোর আগুনঝরা পার্ফমেন্স আমাদের এনে দিয়েছিলো স্বপ্নের ৫ম শিরোপা। আহা, ৫ টা বিশ্বকাপ ট্রপি জয়ের সে বাঁধভাঙ্গা আনন্দ রুখে কে?

এরপরে কেটে গেছে বহু মেঘ রোদ্দুর দিন; বহু জোৎস্ন্যা বিদৌত রাত্রি! টেমস নদীর পানি বহুদূর গড়িয়েছে। বছর চারেক পর যখন ২০০৬ এর বিশ্বকাপ আসলো; তখন ব্রাজিল টিম পূর্বেকার বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দে উদ্বেলিত থাকার পাশাপাশি অনেকটা অনুপ্রানীত। অভিজ্ঞতা কিংবা পরিপক্ষতা- কিছুতেই কমতি নেই সে দলের। তবুও হোচট খেতে হলো আমাদের! বিশ্বকাপ থেকে ছিড়কে পড়লাম আমরা; বাজেভাবে।

২০১০ বিশ্বকাপ নিয়ে আমার নিজের এক্সপেক্টেশন খুব বেশি ছিলোনা। টিম ম্যানেজম্যান্ট এবং টিম সিলেকশন নিয়ে খুশি ছিলাম না। ফলস্বরুপ, ২০১০ বিশ্বকাপেও আমরা ফ্লপ!

২০১০ বিশ্বকাপ পরবর্তী সময়ে আমাদের সেরা পার্ফমেন্স ছিলো ২০১৩ সালের ফিফা কনফেডারেশন কাপে। তারুন্য নির্ভর দল নিয়ে আমরা কিভাবে কিভাবে যেন ফাইনালে চলে গেলাম। কিন্তু পুরো টুর্নামেন্টে আমাদের ছিলো অসম্ভব ভালো। নেইমার, পাউলিনহো, লুইজ গুস্তাবো, ডেভিড লুইজ'দের নিয়ে গড়া আমাদের দলটা চ্যাম্পিয়ন হলো। প্রতিপক্ষের ভূমিকায় ছিলো তৎকালীন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন স্পেন!

২০১৪ বিশ্বকাপ'টা আমাদের জন্য চ্যলেঞ্জস্বরুপ ই ছিলো। এক যুগেও বিশ্বকাপ না জেতা দল হিসেবে আমরা তৃষ্ণার্থ ছিলাম। আশা দেখিয়েছিলেন লুই ফেলিপে স্কলারি। যার অধীনেই আমরা ৫ম বিশ্বকাপটা জিতেছিলাম। কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত খুব একটা খারাপ না খেললেও, সেমিফাইনালে প্রতিপক্ষ জার্মানির বিপক্ষে ট্রাজেডির মুখোমুখি হতে হলো আমাদের! কে জানতো ব্রাজিলের মতো টিমেরও এমন অবস্থা হতে পারে কখনোও?

সে ক্ষতটা আমরা আবার ভুলে যেতে লাগলাম। এবং তা খুব ভালোভাবেই। কোচ দুঙ্গার অধীনে টানা ১১ টি ম্যাচও জিতেছিলাম। কিন্তু তার কোচিং দর্শন আবারও ব্যর্থ হলো। বিশ্বকাপ কোয়ালিফাইং রাউন্ডে আমাদের অবস্থান তখন খুব একটা ভালো ছিলোনা। স্যাক হলেন কোচ দুঙ্গা। সিবিএফ তখন কোচ বেছে ছিলো করিন্থিয়াসের মাষ্টারমাইন্ড কোচ 'তিতে' কে।

২৮ বছরের কোচিং ক্যারিয়ারের অভিজ্ঞতা আছে কোচ তিতের। তার অধীনেই করিন্থিয়ান্স ব্রাজিলিয়ান লীগের অন্যতম সেরা একটি ক্লাবে পরিনত হয়েছে। তিতে ব্রাজিল দলের দায়িত্ব নেয়ার পর ই বদলে যেতে লাগলো দলের চেহারা। আশ্চর্য হলেও সত্যিটা হলো- এই তিতের অধীনেই বিশ্বকাপ কোয়ালিফাইং স্টেজে সর্বপ্রথম দল হিসেবে ব্রাজিল কোয়ালিফাই করলো!

এখন পর্যন্ত আয়োজিত ২০ টা বিশ্বকাপের সবকটি'তেই খেলেছে ব্রাজিল। ১৯৫৮, ৬২, ৭০, ৯৪ এবং ২০০২ বিশ্বকাপ জয় করেছে সেলেসাও'রা। ছোট একটা পরিসংখ্যান যোগ করতে হয়- এই ২০ বিশ্বকাপ খেলে ১০৪ ম্যাচের ৭০ টিতেই জিতেছে ব্রাজিল। ১১৯ গোল ব্যবধানে তাদের মোট অর্জিত পয়েন্ট ২২৭! মাত্র ১৭ টা ম্যাচ হেরেছে ব্রাজিল।

২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপের আর মাত্র ১৬ দিন বাকি। কোচ তিতের অধীনে বর্তমান ব্রাজিল দল অনেক পরিপক্ষ এবং গোছানো। যেকোনো দলকেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারে তারা। এবং বলাই বাহুল্য, বর্তমান ব্রাজিল দল যেকোনো দলের জন্য হুমকিস্বরুপ।

→ ব্রাজিলের বিশ্বকাপ স্কোয়াডঃ

- গোলকিপারঃ এলিসন, এডারসন, ক্যাসিও।

- ডিফেন্ডারঃ দানিলো, ফাগনার, সিলভা, মিরান্ডা, মার্কুইনহোস, গেরোমেল, মার্সেলো, ফেলিপে লুইস।

- মিডফিল্ডারঃ ক্যাসেমিরো, ফার্নানদিহো, পাউলিনহো, কৌটিনহো, উইলিয়ান, ফ্রেড।

- এট্যাকারঃ নেইমার, গ্যাব্রিয়েল জেসুস, ফিরমিনো, ডগলাস কস্তা, তাইসন।

ইন্ডিভিজ্যুয়ালি প্লেয়ারদের পার্ফমেন্সের কথা যদি বলি-

এলিসন এবার রোমা'কে ইউসিএল সেমিফাইনালে নিয়ে গেছে। এডারসন, ফার্নানদিনহো এবং দানিলো ম্যাঞ্চেষ্টার সিটির হয়ে প্রিমিয়ারলীগ শিরোপা জিতেছে। ফ্রেড শাখতারের হয়ে লীগ শিরোপা জিতেছে। পাউলিনহো এবং কৌটিনহো বার্সার হয়ে লীগ শিরোপা জিতেছে। মার্সেলো- ক্যাসেমিরো রিয়ালের হয়ে ইউসিএল জিতেছে। নেইমার- সিলভা মার্কুইনহোস লীগ ওয়ান শিরোপা জিতেছে। ফেলিপে লুইজ ইউরোপা লীগ জিতেছে। সুতরাং এ থেকে স্পষ্ট বুঝা যায়; বর্তমান ব্রাজিল দলটা কতটুকু স্ট্রং।

নেইমার- জেসুস- কৌটিনহোদের কম্বিনেশন অসাধারন। এই ৩ জন জ্বলে উঠলেই প্রতিপক্ষ দল'কে ভয় পেতে হবে। নেইমার তো প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছে- এ বিশ্বকাপ তার চাই। এতো স্ট্যাটস, আলোচনা- পর্যালোচনার পরও বলতে হয় ফুটবল আন প্রেডিকটেবল। যেকোনো কিছুই ঘটতে পারে। যদিও ফ্রান্স, স্পেন, ইংল্যান্ড, জার্মানির মতো দল'রা স্ট্রং দল নিয়ে বিশ্বকাপে নামবে; তাও- একজন ফুটবল ফ্যান হিসেবে আমি মনে করি ২০১৮ ফুটবল বিশ্বকাপের যোগ্য দাবিদার ব্রাজিল। আমি চাই ব্রাজিলের ঘরেই শিরোপা উঠুক। জার্সিতে ৫ তারকার বদলে ৬টি তারকা গাঁথা হোক!

© আহমদ আতিকুজ্জামান।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০১৮ ভোর ৪:০৫
১৫টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×