somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুলিশ কোন চ্যাটের বাল?

০১ লা আগস্ট, ২০১৮ রাত ৮:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আর ৫-৭ টা দিনের মতোই কলেজ শেষে বাড়ি ফেরার জন্য অপেক্ষা করছিলো ছেলেমেয়েগুলো। কিন্তু তাদের জন্য দিনটি মোটেই বাকি দিনগুলোর মতো অনিন্দ্য সুন্দর ছিলোনা। প্রতিযোগিতা করতে থাকা ২ টি বাস রাস্তা পার হতে থাকা ছাত্রছাত্রীদের উপর তুলে দিয়েছিলো গাড়ির চাকা! ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস। মুহুর্তেই ঝরে গেলো আগামির ভবিষ্যৎ ২ টি তরতাজা প্রাণ! আচ্ছা, মৃত্যু কি ছেলেখেলা? ছাত্রছাত্রীরা কি খেলনা পুতুল? এখানেই কি শেষ হয়ে যায় ব্যাপারটা?



শেষটা হয়তো হয়েই যেত, যদি তাৎক্ষণিকভাবে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে বিষয়টা সুরাহা করার কোনো ঘোষণা আসতো। কিন্তু ব্যাপার দেখা গেলো ভিন্ন। নৌপরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খানকে প্রেস ব্রিফিংয়ে এবিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বিভৎস এক প্রাণীয় ন্যায় পাটির ৩২ টা দাত বের করে হাসলেন, বললেন- ইন্ডিয়াতে ইগুলা রোজই হয়; সেগুলো নিয়ে এতো হইচই হয়না। অথচ বাংলাদেশে হলেই নাকি এতো বাড়াবাড়ি করা হয়! মাননীয় মন্ত্রী, এটা বাংলাদেশ। যে ছেলে-মেয়ে দুটা মারা গেছে তারা আমার ভাই-বোন। তাদের মৃত্যুতে তাদের বাবা-মায়েরই কেবল অপূরণীয় ক্ষতি হয়নি; ক্ষতি হয়েছে গোটা দেশের ছাত্রছাত্রী সমাজের। আমার যে দুটা ভাই-বোন মারা গেছে, তারা আপনেও বেশি শিক্ষিত ছিলো মাননীয় মন্ত্রী। বঙ্গবন্ধুর ট্রেডমার্ক 'কালো কোট' পরে কথায় কথায় ভারতের দালালী করতে আসবেন না। মুজিব কোটে কেবল মুজিব'কেই মানায়; চামচাদের না।



ফেইসবুক ব্লগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে লেখালেখি হলে তাকে ২৪ ঘন্টার ভিতরেই জেলে পুরা হয়। আমার ভাইবোনের হত্যাকারী সেই দুই বাস চালককেও নাকি গ্রেফতার করা হয়েছে৷ ৭ দিনের রিমান্ড চেয়েছে পুলিশ। আসলে ওদের কোনো বা*টাই হবেনা। ২ মাস পর ঠিকই রাজপথে ভাঙ্গা স্ট্রিয়ারিংয়ের কোনো গাড়ির ড্রাইবিং করা শুরু করে দিবে৷ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, পারলে স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল ঘটন করুন৷ এদের জরুরী ভিত্তিতে বিচারের কাটগড়ায় দাড় করান। এমন কঠিন শাস্তি দিন যাতে কোনোদিন কোনো বাস ড্রাইবার আমার ভাইবোনের উপর চাকা তুলার সাহস না পায়।

সহপাঠী'দের হারিয়ে শোকের মাতমে ভাসছে শিক্ষার্থীরা। রাস্তায় নেমেছে তাদের নায্য দাবি আদায়ে। নিরাপদ সড়ক চাওয়ার দাবিটা কোনো সভ্য সমাজে অযৌক্তিক বলে গন্য হতে পারেনা। রাগে দুঃখে আর প্রতিবাদের ভাষায় কথা বলতে শিক্ষার্থীরা বেশ কয়েকটা বাস ভাংচুর করেছে; আগুন জ্বালিয়েছে৷ প্রতিবাদের ভাষা হবে রুঢ়; কঠিনতম! ছাত্রসমাজের সাথে অন্যায় করে পার পেয়ে যেতে পারেনা কেউ। গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ছাত্রসমাজের আন্দোলন বাধা দেয়ার অধীকার কারো নেই৷ ছাত্ররা আন্দোলন করছে তাদের নায্যে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে; চুরি বাটপারি, লুটপাট- রাহাজানি করতে নামেনি তারা। যুগে যুগে আন্দোলন করেছেন রফিক- জব্বার, সালাম, বরকত'রা। তাদের আন্দোলন বিফলে যায়নি; আমার ভাইবোনদের হত্যার বিচারের দাবিতে করা আন্দোলনও বিফলে যেতে পারেনা।

তবে ভালো খবর হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলন একটুও বৃথা যাচ্ছেনা। ঢাকা মেট্রো পুলিশের বড় বড় বাস তাদের আন্দোলনের থাবায় পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছে৷ আইন মন্ত্রনালয়ের এক বাস ড্রাইবারের কাছে লাইসেন্স দেখতে চেয়ে পায়নি তারা; ফলে বাসটি আটকে রাখা হয়। আন্দোলনে অংশ নেয়া হাজার হাজার শিক্ষার্থী একই সুরে সুর মিলাচ্ছে- পুলিশ কোন চ্যাটের বাল?



ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনে কেন পুলিশের বাধা পড়লো? পুলিশ হচ্ছে সরকারের গোলাম। তারা সরকারের নির্দেশ ছাড়া নিশ্চয়ই রাস্তায় নামেনি। তাহলে সরকার কি চায় না ছাত্রছাত্রীরা নিরাপদ সড়ক পাক? নাকি গাড়ি চাপায় শিক্ষার্থীদের কুত্তার মত মৃত্যুতেও সরকারের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই? সরকার কি চায়? তারা কেন কোনো ঘোষণা দিচ্ছেনা? কেন তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ দিয়ে পিঠাচ্ছে? সবুজ সোনার বাংলায় পুলিশ কোন চ্যাটের বাল?

ক্লাস সিক্সে পড়ুয়া এক ছেলের কথা শুনে অবাক হয়েছি! সে বলেছে- 'মা বলে দিয়েছেন, গায়ে গুলি লাগলেও ফিরে আসবিনা বাবা'। ওরা আন্দোলন চালিয়ে যাবে; সাথে থাকবে পুরো দেশের ছাত্রছাত্রী তথা আমজনতা। কিন্তু, আন্দোলনে ছাত্রছাত্রীদের উপর লাঠিপেটা করা পুলিশদের কিছুই হবেনা; নৌপরিবহন মন্ত্রীরও কিছু যাবে আসবেনা৷ সরকার সেইসব ড্রাইবারদের বিচারের ব্যবস্থাও করবেনা; করলেও সাময়িক শাস্তিতে পার পাবে। মোটিভেশন দিয়ে চুল ছেড়া পাতি সুশীলরা নিরব থাকবে। এভাবে কুকুরের মতো মরতে হবে আমাদের আরোও ভাই-বোনদের। মাঝখান থেকে সরকারের কোনো এক মন্ত্রী বলবেন- 'নির্বাচনের বছরে এগুলো বিএমপির পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছুনা।'



গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে মানুষ মরলেও যেন কারো কিছু যায় আসেনা! এমপি- মন্ত্রীরা হাসতেই পারেন। কোনো আইন প্রণয়ন এবং এর প্রয়োগ করাও হবেনা। আন্দোলন করলে পুলিশ দিয়ে লাঠিপেটা করা হবে। সরকারে বিরুদ্ধে লেখলে দেশদ্রোহী আখ্যা দিয়ে জেলে পুরা হবে- এটাই আমার সোনার বাংলা! এ দেশে পিএইচডি ডিগ্রিধারীর দু'পয়সার দাম নাই; কিন্তু মূর্খ্য অযোগ্য মানুষরা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আসনে বসে পা নাচায়; আর বলে- এগুলা হতেই পারে। তাদের উদ্দেশ্যে নিজেকে প্রেমসম্রাট দাবি করা কবি শেফাত উল্লাহর ভাষায় বলতে হয়- 'মদ খা, মদ না খেলে তোদের মাথা ঠিক থাকবেনা।'



আমরা শিকলে বন্ধী বাঙ্গালীরা কিছুই করতে পারবোনা। বন্ধুকের নলের কাছে যেন পরাজিত না হয় আন্দোলনরত একটা ছেলেমেয়েও! সময়ের দাবি- সড়ক নিরাপদ হবে; আমার ভাই-বোনদের হত্যার বিচার করতে হবে।

© আহমদ আতিকুজ্জামান
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০১৮ রাত ৮:১৮
১০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×