somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সন্দেহাতীত প্রমানিত অভিযোগ থেকে কি করে খালাশ পেলো মুজাহিদ?

১৬ ই জুন, ২০১৫ রাত ১০:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



‘সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত’ কথাটার মানে কি?

মানে তো এটাই যে, কাজটি যে তিনিই করেছেন সেটা এমনভাবে প্রমানিত যে এ ব্যপারে আর বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই। একেবারে চাক্ষুশ।

জনাব মুজাহিদ সাহেবের সাতটি অভিযোগের মধ্যে ১ ও ৬নং অভিযোগ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত হওয়ায় দুটি অভিযোগেই ফাঁসির রায় হয়েছিলো!!

অথচ আপিল বিভাগ এখন সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত সেই ১নং অভিযোগে ফাঁসি তো দূরের কথা, তাকে সেই অভিযোগ থেকেই সম্পূর্ন খালাশ দিয়ে দিয়েছেন!!

তাইলে এবার বলুন, ট্রাইব্যুনাল তখন সন্দেহাতীতভাবে কি প্রমান করেছিলো? কিংবা তাদের ‘সন্দেহাতীত প্রমানের’ সংজ্ঞা বা মিনিংটাই বা কি??

যেই অভিযোগের সাথে ব্যাক্তির বিন্দুমাত্র সম্পৃক্ততা নেই, সেই অভিযোগও আমাদের ট্রাইব্যুনালের বিজ্ঞ(?) বিচারকগন সন্দেহাতীতভাবে প্রমান করে ফেলেন!!

এই একটিমাত্র দৃষ্টান্ত থেকেই কি বুঝা যায়না যে, ট্রাইব্যুনালে আসলে বিচারের নামে হচ্ছেটা কি??

ওনাদের নিয়ে নাটক বা সিরিয়াল বানালে নিশ্চিত কেডি পাঠকের ‘আদালত’ও ফেল মারবে!!

এবার আসি ফাঁসির দন্ড বহাল রাখা ৬নং অভিযোগে। এই অভিযোগ আপিল বিভাগের কাছেও নাকি সন্দেহাতীত(?) প্রমানিত!!

মোহাম্মদপুর শারিরীক শিক্ষা কলেজ যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি আর্মিদের টর্চার ক্যাম্প ছিলো। মুজাহিদ সাহেব নিয়মিত সেখানে যেতেন এবং পাকিস্তানিদের সাথে সলাপরামর্শ করতেন। ঐ পরামর্শের ভিত্তিতেই অসংখ্য বুদ্ধিজীবি নিধন ও হত্যাজজ্ঞ চলে। এমনটাই বলা আছে ৬নং অভিযোগে।

কথা হলো মুজাহিদ সাহেব তখন কি ছিলেন বা কি হিসেবে সেই টর্চার ক্যাম্পে যেতেন?
- তিনি বদর প্রধান হিসেবে সেখানে যেতেন!!
- তিনি তখন বদর প্রধান ছিলেন এটা কোথায় পেলেন? বা এটার প্রমান কি??
- ‘যেহেতু’ তিনি ছাত্র সংঘের ঊর্ধ্বতন নেতা ছিলেন, ‘সেহেতু’ আলবদর ও ছাত্রসংঘ দুটি সংগঠনের ওপরই তাঁর কর্তৃত্ব ছিল। রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে তখন তিনি আলবদর বাহিনীকে দিক-নির্দেশনা দিতে পারতেন। তবে তিনিই এ বাহিনীর একমাত্র নেতা ছিলেন না।(ট্রাইব্যুনালের ভাষ্য)
- এসব যেহেতু সেহেতু দিয়ে কি আর বিচার চলে? আল বদরের কোনো নথিপত্রে তো মুজাহিদের নাম নেই!!
- এ জন্য আলবদরের কোনো আনুষ্ঠানিক নথিতে মুজাহিদের নাম থাকা জরুরি নয়। সব কিছু মূল্যায়ন করে বুঝা যায়, মুজাহিদ আলবদর বাহিনীর সব ধরনের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখতেন।(ট্রাইব্যুনালের ভাষ্য)

আমার প্রশ্ন, এসব ‘যেহেতু’ ‘সেহেতু’ ‘সুতরাং’ ‘পারতেন’ ‘রাখতেন’ জাতীয় শব্দের উপর ভিত্তি করে কি কাউকে সন্দেহাতীতভাবে দোষী সাভ্যস্ত করা যায়? ফাঁসি দেয়া যায়? এটা কি কস্ষিনকালেও সম্ভব??

১৯৪৬ সালের ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালের কথা উল্লেখ করে বলা হলো, নাৎসীদের কুখ্যাত গেষ্টাপো বাহিনী অপরাধী সংগঠন প্রমানিত হওয়ায় বাহিনী প্রধান আইকম্যানকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছিলো!!

ভালো কথা, কিন্তু এক্ষেত্রে মুজাহিদ সাহেব বদর বাহিনীর প্রধান ছিলেন সেটা প্রমান হলো কোথায়? তিনি তো আদৌ এই বাহিনীর প্রধানই ছিলেন না!! প্রমান না থাকায় প্রথম আলোতে পর্যন্ত তাকে সরাসরি বদর প্রধান না বলে আল-বদর বাহিনীর প্রধান বলে ট্রাইব্যুনালে ‘দাবী করা’ হয় বলা হয়েছে।

মোহাম্মদপুর শারিরীক শিক্ষা কলেজের তখনকার সিকিউরিটি গার্ড রহম আলী মোল্লা এবং প্রিন্সিপাল এখনো বেঁচে আছেন।

অথচ তাদের কাউকে সাক্ষী না করে করা হলো রহম আলীর ছেলে তখনকার ১৪ বছরের নাবালক রুস্তম আলী মোল্লাকে!! যে কিনা নিজেই আদালতে বলেছে, সে নাকি তার বাপের চাইতেও বেশি জানে!!

সে এমনই চতুর ও বেশি জান্তা যে, তার বাবা তখন কোন পোষ্টে চাকরী করতো সেটাও জানেনা। তখনকার নির্যাতিত কোনো বুদ্ধিজীবির নামও তিনি বলতে পারেননা!!

মুজাহিদ সাহেব এত বুদ্ধিজিবীকে মারলো, অথচ সে একজন বুদ্ধিজীবির নামও বলতে পারলোনা!! এ কেমন চাক্ষুস সাক্ষী??

বাদিপক্ষ(সরকার) কোনো সাক্ষী না পেয়ে টাকার বিনিময়ে যে এমন চতুর আর ধুরন্ধর(লেখাপড়া না করলেও চাকরীর জন্য পঞ্চম শ্রেনীর সার্টিফিকেট ঠিকই জোগাড় করে ফেলেছে!) সাক্ষীকে হাজির করেছে, সেটা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে?

এটা বিচার নয়, এটা স্পষ্ট রাষ্ট্রীয় হত্যাকান্ড।

আমিও ভয়ে আছি, এই লেখার উপর ভিত্তি করে না আমাকেও ফাঁসি দিয়ে দেয়!!

কারন ‘যেহেতু’ ‘সেহেতু’ তত্তের মাধ্যমে অসম্ভবকে সম্ভব করাই যে ট্রাইব্যুনালের কাজ!!!

তবে এসব বিচারকদের উদ্দেশ্যে বলে রাখি-

“বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা, শীগ্রই জাগবে সেই জনতা”
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০১৫ রাত ১১:০১
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×