somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুক্রবারের মেহমানদের খাবারের ব্যবস্থা করুন

২৮ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শুক্রবার আসলেই প্রায়ই আমাদের মেসে একজন দুজন মেহমান থাকবেই!!

ওনারা মিষ্টি আপেল নিয়ে বেড়াতে আসা কোনো দামি মেহমান নন। ওনারা ‘উইদাউট পরমালিটিজ’ মেহমান। তাহাদের কাছ থেকে মিষ্টি আপেল আশা করাটাও অমানবিক! তাদের সবসময়ের সঙ্গী একটা ব্যাগ, আর তাতে মূল্যবান(?) কিছু কাগজ পত্র এবং অবশ্যই একটি চাকরীর পত্রিকা।

দেশ জুড়িয়া প্রতিটি ঘরে ঘরেই তাহাদের বিচরণ!! সারা দেশে তাহাদের সংখ্যা কম করে হলেও প্রায় ৩০ লাখের(শিক্ষিত) মত!!

এতক্ষণে নিশ্চই আন্দাজ করে ফেলেছেন সেই মেহমানদের পরিচয়। হুম…. ওনাদের পরিচয় ‘শিক্ষিত বেকার’!!

ওনাদের নামে একটা পরিবহনের নামকরনও করতে দেখেছি। ‘বেকার’ পরিবহন। সায়দাবাদের ওদিকে গেলে এই পরিবহনের বাস চোখে পড়ে। কি জানি কয়েকজন বেকার হয়তো চাকরির পিছে দৌড়াইয়া চইদ্দ জোড়া জুতা ক্ষয় করিয়া অবশেষে পিতৃ সম্পত্তি বেচিয়া এই পরিবহন চালু করিয়াছে কিনা?

শুক্রবার হলেই কোথাও না কোথাও ওনাদের চাকরীর পরীক্ষা থাকে। সেই হিসেবে অবশ্য ওনাদেরকে মেহমান না বলে পরীক্ষার্থী বললেও খারাপ হয়না। পাশাপাশি শুক্রবারকে বেকার দিবসও ঘোষণা করা যায়!

পরীক্ষা দিতে প্রায় প্রতি শুক্রবারেই গ্রাম থেকে ঢাকায় আসতে হয়। হোটেলে থাকার পয়সা পাবে কোথায়? বাসের ভাড়াটাইতো বাপের কাছ থেকে আম্মুর মাধ্যমে চাহিয়া আনিয়াছে!! রাত্রিযাপনের জন্য আত্মীয়, দু:সম্পর্কের আত্মীয় কিংবা গ্রামের কোনো পরিচিতজনের বাসা বা মেসই খুঁজে বের করতে হয়।

ঢাকায় সাড়ে চার বছরের মেস জীবনে কত যে দেখিলাম তাহাদের করুন চেহারা আর করুন চাহনি!! পরীক্ষা দিতে দিতে আদু ভাই হয়ে গিয়েছেন। পরীক্ষা আর শেষ হয়না!! বেকার পরিচয়টাও গুছেনা!!

এমনিতেই এই অসহায় গোষ্ঠির সংখ্যাধিক্যের ঠেলা। তার উপর পরীক্ষার নামে তামাশা!! নির্মম তামাশা!! তাহারা যাবেটা কোথায়?

গত শুক্রবার সরকারি অডিট বিভাগে চাকুরীর পরীক্ষা ছিলো। প্রায় দেড় বছর আগের সার্কুলারের পরীক্ষা হলো গত পরশু!!

আমার পরিচিত এক ভাই পরীক্ষা দিয়েছেন। তিনি বললেন, পরীক্ষা হলে দেদারছে সবাই মোবাইলে কথা বলে এবং মেসেজের মাধ্যমে উত্তরের আদান প্রদান করে পরীক্ষা দিচ্ছেন। আরেক মেহমান(মেস মেম্বারের আত্মীয়) বললেন, তাকেও নাকি পরীক্ষার আগ মুহুর্তে অফার করা হয়েছে মোবাইলের মেসেজে উত্তর পাঠিযে দিবে। এক হাজার টাকা লাগবে। যদিও তিনি রাজি হননাই। পকেটে থাকলে তো??

এই হলো সরকারী চাকরীর পরীক্ষার নমুনা!! অথচ পরীক্ষার প্রবেশপত্রে লিখা রয়েছে, মোবাইল তো দূরের কথা হাতঘড়ি নিয়েও পরীক্ষার হলে ডুকা যাবে না!!

ভাইটি বললেন, এতদিন পর পরীক্ষা হয়েছে মানেই তো, এতদিনে কোন এমপির কোটা কত, মন্ত্রীর কোটা কত সব ঠিক করা হয়ে গেছে। পাঁচ ছয় লাখ টাকা করে নিয়ে চাকরীর লোকও ইতোমধ্যেই জোগাড় হয়ে গেছে!! পরীক্ষা তো একটা তামাশা মাত্র!!

এজন্যই তো উত্তরের জন্য মাত্র এক হাজার টাকার আবদার। লোকতো আগেই রেডি!! এখন যা কামাই করা যায় তাই তো লাভ। ১০০ ভাগ পাশ করুক সমস্যা কোথায়?

কিছুদিন আগে এক্সিম ব্যাংকের পরীক্ষা ছিলো। সেটাতেও দেখলাম আমার রুমমেটের ভাগনি একটি চক্রের সাথে যোগাযোগ করে ত্রিশ হাজার টাকার বিনিময়ে হেডফোনের মত একটি ক্ষুদ্র ডিভাইস কানে লাগিয়ে পরীক্ষা দিয়েছে। যেটাতে বাইরে থেকে সব উত্তর বলে দেয়া হয়েছে!!

শুধুমাত্র পরীক্ষায় পাশের জন্য ত্রিশ হাজার টাকা দিয়েছে। পাশের পর চাকরী নিশ্চিতের জন্য লাগবে পাঁচ লাখ!!

এই হলো বাংলাদেশের চাকরীর বাজারের মঘের মুল্লুক অবস্থা। টাকা আছে যার চাকরী আছে তার। মামু খালু আছে যার চাকরী তার। টাকা নাই, মামু খালু নাই চাকরীও নাই!!

পরীক্ষা দিতে দিতে পরীক্ষার উপর পিএইচডি করলেও কোনো লাভ নাই, চাকরি হবেনা গ্যারান্টেড!!

এটা এখন ওপেন সিক্রেট ব্যপার। এরপরও অভাগারা পরীক্ষা দিয়েই যায়... যদিনা ব্যতিক্রম কিছু ঘটে..!!!

কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন, চাকুরির পরীক্ষার নামে এসব তামাশা বন্ধ করুন, প্লীজ।

কারন এটা পরীক্ষা নয়, পরীক্ষার নামে গরিব মধ্যবিত্ত মামু খালু বিহীন সিংহভাগ অসহায় শিক্ষিত বেকারের সাথে এ এক নির্মম তামাশা!!
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৬
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×