গত ৩ ডিসেম্বর কলকাতার দৈনিক টেলিগ্রাফ পত্রিকায় ভারতীয় ঐতিহাসিক রামচন্দ্র গুহ বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট ও ভবিষ্যত নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ন নিবন্ধ লিখেছেন। যার শিরোনাম ছিলো Too quiet for comfort - The looming political crisis in Bangladesh
গুরুত্বপূর্ন নিবন্ধটি পরবর্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি ও সরকার বিভাগের চেয়ারম্যান ডক্টর আলী রিয়াজ ও যুক্তরাষ্ট্রের পিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার বিষয়ক ডক্টর তাজ হাশমীকে তাদের ব্যাক্তিগত ফেসবুক একাউন্টে শেয়ার দিতে দেখা গেছে।
আসুন দেখে নেই সেই গুরুত্বপূর্ন নিবন্ধটির চুম্বক অংশ >>>>
..... গৃহযুদ্ধ, সাইক্লোন ও উপদলীয় রাজনীতির প্রকোপ থেকে বিকশিত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি সে কারণে গুরুত্ববহ। তা সত্ত্বেও যা উদ্বেগের তা হচ্ছে রাজনৈতিক ফ্রন্টে অনগ্রসরতা। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের একমাত্র কারণটি হচ্ছে পূর্ব পাকিস্তানের আওয়ামী লীগকে পশ্চিম পাকিস্তানীরা কোনো জায়গা দিতে চায়নি। এখন নিয়তির পরিহাসটি হচ্ছে বাংলাদেশের বহুদলীয় গণতন্ত্রে আওয়ামী লীগই সেই অবস্থানে উপনীত।
..... বলার অপেক্ষা রাখে না ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী আর্মি ভয়ঙ্কর অপরাধ সাধন করেছে, যাতে স্থানীয় দালালেরা সহযোগিতা জুগিয়েছে। তা সত্বেও এই বিচার পরিচালনা এবং পরিণতিতে মৃত্যুদণ্ডের বিষয়ে মারাত্মক আপত্তি রয়েছে। এমনকি দুর্ভাবনাটি হচ্ছে এই বিচার পরিচালনায় রাষ্ট্র ও সমাজ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে যেভাবে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ তার রাজনীতি ও মতবাদকে একীভূত করেছে। সেগুলো প্রণোদিত করছে বটে, কেননা পার্লামেন্টে কোনো বিরোধিতা নেই। আর সাংবাদিকেরা যারা যৌক্তিক সমালোচনা করছেন, তারাও জায়গামত নিগৃহীত হচ্ছেন। শিক্ষাবিদ যারা বাংলাদেশের বৃহত্তর গণতান্ত্রায়নের কথা ভাবেন, তারাও গালি খাচ্ছেন।
..... আজকের বাংলাদেশে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ‘হেলো’ বা চন্দ্রবলয় রয়েছে। অনেক ভারতীয় গান্ধীকে গান্ধী বলতে পারলেও মুজিবকে মুজিব বলতে পারার দৃষ্টান্ত সেখানে দুর্লভ। তিনি এককভাবে ‘বঙ্গবন্ধু’, বাঙ্গালীর বন্ধু। সেই মুজিব দীর্ঘকাল পাকিস্তানের কারাগারে ছিলেন এবং ক্ষমতায় থাকাকালীন মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন। শেখ হাসিনার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার পরিচালনা আংশিক, এমনকি পরিপূর্ণভাবেই তার পিতার প্রতি ভালবাসা ও শ্রদ্ধা থেকে উৎসারিত। তারপরও বলা প্রয়োজন যেভাবে তার প্রশাসন কাজ করছে তাতে তার পিতার ‘ইগনোবল’ বা কদর্য সময়কালের ভয়ঙ্কর পরিণতির পানে ধাবিত হচ্ছে, আপাতদৃষ্টিতে যেখানে তিনি ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে ১৯৭৫ সালের সূচনায় বিরোধিতাকে আইন বহির্ভূত করতে সংবিধান সংশোধন করেছিলেন।
..... আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বি বিএনপি ও জামায়াত পরাস্ত ও মনোবলহীন। ইতিমধ্যে দ্বিপাক্ষিক সুবিধার্থে আর্মির সঙ্গে প্রশাসন জোট বেঁধেছে। গুরুত্বপূর্ণ ক্রীড়নক হিসেবে আর্মিকে রাস্তা নির্মাণের চুক্তি দিয়েছে। এতে আর্মির শক্তিমত্তা বিপদ পরিসীমায় বিস্তৃত, যেমন- তা মতের অবাধ্য জনপ্রিয় পত্রিকাগুলোকে টেলিকম কোম্পানির বিজ্ঞাপন দেওয়া বন্ধ করেছে।
..... ইতিহাসে শেখ হাসিনা এবং তার পরামর্শদাতারা এক-দলীয় সরকার হিসেবে যথাযথ স্থান করে নিতে পারবেন বটে, কেননা ব্যালট-বাক্সের মাধ্যমে তাদের উত্থান। নাৎসীরা ১২ বছরেরও কম সময় ক্ষমতায় ছিল, অথচ তাদের সমর্থকদের হাজার বছরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতীয় ন্যাশনাল কংগ্রেস, পাকিস্তানের পিপলস পার্টি এবং শ্রীলংকায় ফ্রিডম পার্টি, সবাই এক-পার্টির রাষ্ট্র গড়তে চেয়েছে, কিন্তু কেউই কয়েক বছরের বেশি টেকেনি।
..... বাংলাদেশের ক্ষেত্রে একটি ভবিষ্যতবাণী নিশ্চিত, তাতে শেখ হাসিনা ও তার দলের কর্তৃত্বের অবসান ঘটবে এবং সেটা তাদের প্রত্যাশারও কম সময়ে ঘটবে। সেটা হতে পারে বিরুদ্ধ মতবাদের দরজা বন্ধ থেকে ইসলামী গ্রুপের উত্থান থেকে। অথবা আর্মি নতুন করে ক্ষমতা দখল করে নিতে পারে। এগুলো বহুদলীয় গণতন্ত্রের বিকাশকে বিলম্বিত করবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:১২