somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্রেষ্ট ট্যাক্স এবং আমাদের বর্তমান সমাজ

২৬ শে অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ১:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ছবিঃ গুগুল মামা

#সামাজিক_ইতিহাসের_কালো_দিক-
মহিলাদের #স্তন_কর বা #Breast_Tax নিয়ে কিছুদিন হলো একটা শর্ট ফিল্ম সবচেয়ে দ্রুত ভাইরাল হচ্ছে। আমি যখন দেখেছি তখন ভয় পেয়েছি 3.5% উরেসিয়ান ব্রাহ্মণ্যবাদী সমাজ ব্যবস্থার অমানবিক, নোংরা সত্য জেনে, যেখানে স্তন ঢেকে রাখতেও দিতে হতো ট্যাক্স বা কর। আরোও আঁতকে উঠেছি এক নারীর প্রতিবাদের স্পর্ধা ও ধরণ দেখে।
এই শর্টফিল্মটির ইউটিউব লিংকঃ https://youtu.be/Bg0h7XM_7zA

স্তন কর বা ব্রেষ্ট ট্যাক্স কী?
মূলতঃ দক্ষিণ ভারতের নিম্ন-বর্ণের হিন্দু মহিলারা গায়ে বিশেষ করে বুকের ওপর কোন কাপড় পরিধান করতে পারতো না। তাদের স্তনকে উন্মূক্ত রাখতে হতো সবসময়। আর যদি তাদের বুকের ওপর কোন কাপড় পরিধান করতে ইচ্ছা পোষণ করতো তবে তাদেরকে স্তন কর বা ব্রেষ্ট ট্যাক্স প্রদান করতে হতো। এই রকম একটি আইন বা নিয়ম উনিশ শতকের প্রথম দিকে দক্ষিণ ভারতে চালু ছিল। আত্মমর্যাদা রক্ষার জন্য অনেক নিম্ন-বর্ণের হিন্দু মহিলা অনেকটা বাধ্য হয়েই এই বর্ণ ভিত্তিক স্তন কর বা ব্রেষ্ট ট্যাক্স প্রদান করতো।

স্তন কর বা ব্রেষ্ট ট্যাক্সের ধরণ কেমন ছিল?
যেসব নিম্ন-বর্ণের(বর্তমানে যারা তফসিলি জাতি নামে অভিহিত) হিন্দু মহিলার স্তন ছোট ছিল তাদেরকে অল্প কর বা অল্প ট্যাক্স প্রদান করতে হতো। কিন্তু সমস্যা ছিল ঐ সমস্ত মহিলাদের যাদের স্তনের আকার ছিল বড়। তাদের বড় আকারের স্তনের জন্য বেশি পরিমাণ কর বা ট্যাক্স প্রদান করতে বাধ্য করা হতো।
এই আইন কী সবার জন্য প্রযোজ্য ছিল?
এই আইন সব হিন্দু মহিলাদের জন্য প্রযোজ্য ছিল না। যারা উচ-বর্ণের ব্রাহ্মণ শ্রেণির মহিলা ছিল তাদের এই কর বা ট্যাক্স দিতে হতো না এবং তারা বুকের ওপর কাপড় পরিধান করার একচ্ছত্র অধিকার ভোগ করত। সমাজের উঁচু শ্রেণির কিছু ব্যক্তি ও তাদের সহযোগী বিশেষ সুবিধাভোগী কিছু অংশের লোকেরাই এই আইন প্রয়োগ করে মূলত মুলনিবাসী নিম্ন-বর্ণের মানুষদের শাসন ও শোষণ করতো।
এই কর বা ট্যাক্স কারা ভোগ করতো?
হিন্দু ব্রাহ্মণ সমাজের উঁচু শ্রেণির কিছু ব্যক্তি ও তাদের সহযোগী বিশেষ সুবিধাভোগী কিছু অংশের লোকেরাই আদায়কৃত এই স্তন কর বা ব্রেষ্ট ট্যাক্সের একটি অংশ ভোগ করতো। আর এর বড় অংশই চলে যেতো বিখ্যাত পদ্মনাভ মন্দিরের পুরোহিতদের কাছে। এই পদ্মনাভ মন্দিরটি পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী মন্দির হিসেবে বিবেচিত যা গিনেস বুকে উল্লেখ করা আছে।
কে সেই মহিলা যে প্রথম প্রতিবাদ করেছিলেন?
মহিলার নাম ছিল নাংগেলী। উনিশ শতকের প্রথম দিকে ভারতের ট্রাভানকোর রাজ্যের চেরথালায় বাস করতেন নাংগেলী নামের নিম্ন-হিন্দু বর্ণের এজহাভা গোত্রের এই মহিলাটি। তার স্বামীর নাম ছিল চিরুকান্দান। নাংগেলী ও চিরুকান্দান দম্পতি ছিল নিঃসন্তান। তারা ছিল অতি সাধারণ মানুষ। চাষাবাদ করে জীবন নির্বাহ করতো।
সেদিন কী ঘটেছিল?
অন্যান্য দিনের মতো সেদিনও ট্রাভানকোরের স্থানীয় শুল্ক কর্মকর্তা, যে কিনা স্তন কর বা ব্রেষ্ট ট্যাক্স সংগ্রহের দায়িত্ব পালন করতো, সে নাংগেলীর বাড়িতে এসেছিলো নিম্ন বর্ণের হিন্দু নারীদের বুকে কাপড় পরিধান করা বা না করা বিষয়টি জরিপ করতে এবং ব্রেষ্ট ট্যাক্স সংগ্রহ করতে। কর্মকর্তা দেখতে পেলো যে নাংগেলী তার বুকে স্তনের ওপর কাপড় পরিধান করে আছে। কর্মকর্তা নাংগেলী থেকে এজন্য কর দাবী করলো এবং তাকে বারবার কর পরিশোধের জন্য চাপ দিতে লাগলো। কিন্তু নাংগেলী স্তন কর দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এভাবে দিনের পর দিন শুল্ক সংগ্রাহক তার বাড়িতে এসে শুল্কের দাবী আদায়ে চাপ প্রয়োগ করতে লাগলো এবং বিষয়টি মন্দিরের পুরোহিতদের এবং স্থানীয় উচ্চ বর্ণের ব্রাক্ষণদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলো। শুল্ক কর্মকর্তা শুল্ক প্রদানের জন্য নাংগেলীকে আরো বেশী চাপ প্রয়োগ করতে থাকে এবং তাকে অতিষ্ট করে তুলে। এদিকে দিনের পর দিন করের বোঝাও বাড়তে থাকে।
অবশেষে একদিন নাংগেলী স্তন কর প্রদান করতে রাজি হয়। নির্দিষ্ট দিনে শুল্ক সংগ্রাহকেরা তার বাড়িতে শুল্ক সংগ্রাহ করতে এলে তিনি তাদেরকে অপেক্ষা করতে বলেন। এরপর নাংগেলী ঘরের ভিতর প্রবেশ করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার স্তন দুটি কেটে ফেলেন। তারপর রক্তেমাখা কলাপাতায় স্তন দুটি মুড়িয়ে স্তন শুল্ক বা ব্রেষ্ট ট্যাক্স হিসেবে তার কর্তিত ও রক্তাত্ত স্তন দুটি শুল্ক কর্মকর্তার হাতে তুলে দেন। স্তন কর্তনের ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে নাংগেলীর মৃত্যু হয়।
নাংগেলীর স্বামী চিরুকান্দান নাংগেলীর বিকৃত মৃতদেহ দেখে শোক সহ্য করতে পারলেন না। তিনি নাংগেলীর শেষকৃত্যে ঝাপিয়ে পড়ে চিতায় আত্মহুতি দিলেন। ভারতে সেটাই ছিল সম্ভবত পুরুষের প্রথম সতীদাহ।
এই বর্ণ বৈষম্যের ফলে ঐ অঞ্চলে কী ঘটেছিল?
ভারতে বিশেষ করে দক্ষিণ ভারতে নিম্ন বর্ণের নারীদের স্তন আবৃত করতে বা ঢেকে রাখতে অনেক কষ্ট ও অবর্ণনীয় দুঃখ সহ্য করতে হয়েছে এবং সন্মান ও আত্মমর্যাদা রক্ষার জন্য তাদের বহু সংগ্রাম করতে হয়েছে।
পদ্মনাভ মন্দিরের পুরোহিতরা দাবী করে এবং স্পষ্ট করে বলে যে,নিম্ন বর্ণের হিন্দু মহিলারা তাদের শরীরের উপরের অংশ বিশেষ করে বুক ঢেকে রাখতে পারবে না। তাদের মতে এটি ধর্ম বিরোধী কাজ।
কিন্তু নাংগেলীর মৃত্যুর পরে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে নিম্ন বর্ণের হিন্দুদের মধ্যে এর বিরুদ্ধে জোরালোভাবে আন্দোলন শুরু হয় এবং ট্রাভানকোরে স্তন কর বাতিলের বিরুদ্ধে তারা প্রতিবাদ জানাতে থাকে। ১৮৫৯ সালে ট্রাভানকোরে ব্যাপক দাঙ্গা সংঘটিত হয় এবং এতে বহু মানুষ নিহত হয়। এই দাঙ্গার মূল লক্ষ্য ছিল হিন্দু নিম্ন বর্ণের নারীদের বুকের উপর কাপড় পরিধান করার অধিকার ভোগ করা। এই দাঙ্গাটি কাপড়ের দাঙ্গা হিসেবে ব্যাপক পরিচিত লাভ করে।
অবশেষে জোরালো প্রতিবাদ ও আন্দোলনের মুখে ট্রাভানকোরের স্তন কর বা ব্রেষ্ট ট্যাক্স প্রদান আইন রহিত করা হয় এবং নাংগেলীর বসবাসের স্থানটি মুলাচিপারাম্বু বা স্ত্রীত্ব নারীর ভূমি হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
আক্ষরিক অর্থে এই ঘটনা নিম্ন বর্ণের হিন্দু সম্প্রদায়ের নারীর মর্যাদা রক্ষার জন্য প্রতিবাদ হিসাবে দেখা গেলেও আসলে এই লড়াইকে নিম্নবিত্ত সাধারণ মানুষের বিপক্ষে উচ্চ বর্ণের ব্রাক্ষণ সমাজ, জমিদার বা সামন্ত রাজাদের নিপীড়িত কর আরোপ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
(সংগ্রহ কৃত লেখা)

## বিঃদ্রঃ- এখন আসেন আমার কথায়। আমি এখানে এই পোষ্টটা দিয়েছি মূলত একটা কথা বলার জন্য। বর্তমান আমাদের সমাজে এক দল মেয়ে বা নারী আছে যারা বুকে উড়না দিতে চায় না। তারা মুক্ত বিহঙ্গ হতে চায়। এই সমাজ যত টুকু নষ্ট হয়েছে আর যা হবে তা সবটার জন্যই এই অর্ধ নগ্ন বা বুক খোলা স্তন দেখানো মেয়ে বা নারীদের জন্য।
উপড়ে যে আর্টিক্যলটা আমরা পড়াওলাম সেখানে বুকে কাপড় না রাখার জন্য হুকুম ছিল। রাখলেই কর দিতে হত।
বর্তমান আমাদের সমাজ ঠিক করতে চাইলে এই মেয়েরদের উপড়ও কর বসাতে হবে। তাদের উপরই কর থাকবে যাদের স্তন দেখা যাবে বা বের করে হাটবে।

একটু খানি বলেছি। কিন্তু আপনারা কথাটা একবার ভাল করে ভেবে দেখবেন।


সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ২:০৭
১৭টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অণু থ্রিলারঃ পরিচয়

লিখেছেন আমি তুমি আমরা, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


ছবিঃ Bing AI এর সাহায্যে প্রস্তুতকৃত

১৯৪৬ কিংবা ১৯৪৭ সাল।
দাবানলের মত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে।
যে যেভাবে পারছে, নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। একটাই লক্ষ্য সবার-যদি কোনভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পেইন্টেড লেডিস অফ সান ফ্রান্সিসকো - ছবি ব্লগ

লিখেছেন শোভন শামস, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৯

"পেইন্টেড লেডিস অফ সান ফ্রান্সিসকো", কিংবা "পোস্টকার্ড রো" বা "সেভেন সিস্টারস" নামে পরিচিত, বাড়িগুলো। এটা সান ফ্রান্সিসকোর আলামো স্কোয়ার, স্টেইনার স্ট্রিটে অবস্থিত রঙিন ভিক্টোরিয়ান বাড়ির একটি সারি। বহু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×