মা-বাবাদের যুগে অকালপক্কতার সীমানা ছিল মা, চাচীর আচারের বয়াম, মুড়ি মুড়কির কৌটা বা পড়শীর আম, কাঁঠালের গাছ আবধি।আমাদের কালে এসে ঠেকেছিল বাজারের টাকা মেরে চুরি করে সিনেমা হল পর্যন্ত।
আর এখন !!
কয়েক বছর আগে ফার্মগেট থেকে হলিক্রস কলেজের রাস্তা দিয়ে হাটছিলাম। আমার কিছুটা সামনে ১০-১৪ বৎেসরের একদল কিশোর রাস্তায় উশৃঙ্খল আচরণ করতে করতে কোথাও চলল। দলের পাশ দিয়ে এক রিক্সায় যাচ্ছিল এক যুগল। কিশোরদের কেউ একজন মেয়েটির ওড়না ধরে টান দেয়ায় সাথে থাকা ছেলেটি প্রতিবাদ করে কিছু একটা বলল। সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন দিক থেকে কিশোরগুলো ছেলেটিকে শারিরীক ভাবে লান্ছিত করা শুরু করলো। একবার মনে করলাম প্রতিবাদ করি, কিন্তু বুঝলাম এখানে প্রতিবাদ করা মানে শুধু নিজের লাঞ্ছনা ডেকে আনা। বাধ্য হয়ে চুপ করে থাকলাম। সে সময় প্রায় দুই যুগ আগে ইত্তেফাক পত্রিকায় পড়া একটা উপসম্পাদকীয় এর কথা মনে পড়লো। এত দিন পরে উপসম্পাদকীয়টি কে লিখেছিলেন মনে নেই। তবে লেখাটির মর্মার্থ আজ মর্মে মর্মে উপলদ্ধি করলাম।
উপসম্পদকীয় এর মূল বিষয়টি ছিল বুড়িগঙ্গার তীরে একটি মরা ডলফিন ভেসে উঠা নিয়ে। সংবাদ পেয়ে লেখক গেছিলেন ডলফিনটি দেখতে। যাওয়ার পর দেখা গেল মৃত ডলফিনের উপর ১০-১২ বছরের একটি ছেলে উঠে ছুরি দিয়ে পেট ফাড়ছে। কৌতুহল বশতঃ লেখক ছেলেটিকে মৃত ডলফিনের পেট ফাড়ার কারণ জিজ্ঞাসা করায় ছেলেটি উত্তরে জানায় , সে শুনেছে ডলফিনের পেটে তেল পা্ওয়া যায় এবং সেই তেল অনেক দামে বিক্রী হয়।
এ বিষয়টি শোনার পর লেখক কিছুটা বিস্মিত হয়ে তাঁর উপসম্পাদকীয়তে বলেন- ”বোধ করি আমাদের কিশোর বেলায় এ রকম একটি মরা ডলফিন নিকটে কোথা্ও ভাসিয়া উঠিলে আমাদের মাতারা উহার ভয় দেখাইয়া আমাদের ঘুম পাড়াইতে পারিতেন। কিন্ত বর্তমান যুগের কিশোররা ইহাকে যে শুধু ভয় পায় না তাহা নহে ইহার মধ্যে যে অর্থকরী দিক রহিয়াছে তাহাও বুঝিয়া গিয়াছে। এর পরিণাম যে কি হইবে বলা মুশকিল।”
সেই সব কিশোরদের অকালপক্কতা কালে কালে কৃতি নেতাদের পরচর্যায় আজ কিশোর গ্যাং এ রূপান্তরিত হয়েছে। এখন এলাকার আধিপত্য বিস্তার, মাদক ব্যাবসা, চাঁদাবাজী বা খুনের মতো কাজে নেতাদের অন্যতম ভরসা কিশোর গ্যাং।
*** ছবিসুত্রঃ Shutterstock + Photoshop
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মার্চ, ২০২৩ বিকাল ৩:২২