বর্ষা না আসতেই বর্ষার শুরু, মুষলধারে বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। বর্ষা আসলে আমার প্রিয় সময়, কত স্মৃতি মিশে আছে এই বর্ষায়। একদিন একবর্ষায় আমি ছাতামাথায় বাবাকে হাট থেকে এগিয়ে আনতে যাচ্ছিলাম, হঠাৎ তুমি না বলেই আমার ছাতার নিচে এসে দাঁড়ালে। বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়ে গিয়েছিলে তুমি। আমি তোমার ভেজা চুল, চোখ বেয়ে পড়া বৃষ্টি পানি আর তোমাকে দেখছিলাম। জানিনা, কতক্ষণ যাবৎ তোমাকে দেখছিলাম? তুমি চোখের সামনে হাত নেড়ে আমায় জাগালে। জিজ্ঞেস করার মানসিকতা হারিয়ে গেল, কে তুমি? তুমি নিজেই বললে- দুঃখিত, প্রাইভেট থেকে বাসায় ফিরছিলাম, পথে বৃষ্টি নেমেছে। আমি কিছু বললাম না তোমাকে। কিছু না বলেই দু'জন হাঁটছিলাম। কখন যে আমি আমার বাসা অতিক্রম করে চলে এসেছি বলতেই পারিনি। তুমি তোমার বাসার সামনে এসে বললে- এটা তোমাদের বাসা, ভেতরে যেতে বললে। আমি বললাম- নাহ, অন্যদিন আসবো। তুমি বাসায় চলে গেলো। আমি অনেক্ষণ যাবৎ তোমার চলে যাওয়া পথে তাঁকিয়ে রইলাম। তুমি জানালা দিয়ে আমাকে দেখছিলে। আমি তোমাকে ভাবতে ভাবতেই আবার বাসার দিকে চললাম। ভূলে গিয়েছিলাম আমি বাবাকে হাট থেকে এগিয়ে আনতে যাচ্ছিলাম। কেন যেন সব অতীত ভূলে গিয়েছিলাম তোমাকে দেখার পর। শুধু তোমাকেই ভাবতে ভাবতে বাসায় ফিরলাম। এসে দেখি বৃষ্টিতে ভিজে বাবা বাসায় ফিরেছে। মা- আমাকে অনেক বকাঝকা করলো!! কিছুই যেন শুনতে পাচ্ছি না। সত্যিই ঐমূহূর্তটা খুবই অদ্ভূত ছিল। কানে, মনে, প্রানে শুধু তুমি ছিলে। তারপর.. আর তোমাকে পেলাম না! খোজ নিয়ে শুনলাম তোমারা এই শহর ছেড়ে অন্য কোথায় চলে গেছো। কেউ তোমাদের খবর জানে না। মাঝে মাঝে ধরে নেই, তুমি আমার স্বপ্নে ছিলে!!
হুমায়ুন আহমেদের একটি বইটি হাতে নিয়ে ভাবতে ভাবতে বারান্দায় আসলেন ফয়সাল সাহেব। চোঁখে বড় ফ্রেমের একটা পুরোনো চশমা, চুলগুলোও সাদা হয়ে আসছে, মুখ ভর্তি গোফ, গায়ে চাদর। বয়সটা চল্লিশ বা তার কাছাকাছি। এখনো নিঃসঙ্গ জীবন কাটাচ্ছে এই মানুষটি। বই হাতে বারান্দার চেয়ারে বসলেন ফয়সাল সাহেব। বইটা টেবিলে রেখে নিজ হাতেই এককাপ চা বানিয়ে আনলো। চায়ের কাপে চুমুক দিতেই চোখে পড়লো গ্রিলের দিকে। বারান্দার গ্রিলেও বৃষ্টি ফোঁটা লেগে আছে। স্বচ্ছ কাচের ন্যায় স্পষ্ট ছবিও দেখা যাচ্ছে। অদ্ভূত এক হাঁসির সন্ধান মিললো। হাঁসিটা কেন যেন মনে হলো খুব পরিচিত। একটু ভাবতেই স্পষ্ট তোমাকে দেখতে পেলাম। আমি অবাক হয়ে এগিয়ে গেলাম। তোমাকে স্পর্শ করতেই তুমি মিলিয়ে গেলে। পেছন ফিরে তাঁকাতেই তুমি!
তুমি, আমাকে চিনতে পারোনি। তুমি কিন্তু ঠিক আগের মতোই আছো। তুমি বললে- বাসায় ফিরছিলাম পথে বৃষ্টি নামলো। দুঃখিত, না বলে ভেতরে ঢুকে গেলাম। আমি চুপচুপ, কিছু বলছি না। আজও তুমি বৃষ্টিতে কাক ভেজা হয়ে আছো। আমি আজও তোমার ভেজা চুল, চোঁখ, কানের দোল বেয়ে পড়া বৃষ্টির পানি এবং তোমাকে দেখছি। আজও জানিনা কতক্ষণ তোমাকে দেখছি। তুমি, হাত নেড়ে আমাকে বাস্তবতায় ফেরালে। আমি তোমার হাতে হাত রাখে, অতীত উপস্থাপন করলাম। তুমিও নির্দ্বীধায় আমার হাতে হাত রেখে আমাদের ভালবাসার পরিপূর্ণ প্রকাশ করলে.....