somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

।। সিগারেট , চুমু , অতঃপর আমি ।।

১২ ই মে, ২০১২ রাত ১১:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বছর খানেক আগে ইলেক্ট্রিসিটি যাওয়া আমার কাছে একটা আনন্দের বিষয় ছিল । সন্ধ্যা হলেই অপেক্ষা করতাম কখন ইলেক্ট্রিসিটিটা যাবে ।

ইলেক্ট্রিসিটি টা গেলেই দৌড় লাগাতাম লোকনাথ দীঘির পাড়ে । একে ওকে ফোন করে আট দশ জনের একটা দল হয়ে যেতো । উত্তর দিকের বেঞ্চ ও উপর নিচ করে বসে শুরু করতাম আমাদের কাজ ।



কাজ টা হৈল সিগারেট টানা । তখন সবে সিগারেট খাওয়া ধরেছিলাম । এক বন্ধুর সাথে বাজি লেগে টানা তিন টা ‘মোর’ খেয়েছিলাম । এরপর থেকেই মজা লেগে গেলো । শুরু করলাম খাওয়া । প্রতিদিন ই সন্ধ্যা হলে বের হতাম । দীঘির উত্তর দিক টা তুলনামূলক ভাবে নির্জন হওয়ার কারণে তেমন সমস্যা হতো না । আড্ডা দিতাম , আর সিগারেট খেতাম আর সাথে থাকতো আবুল ভাই এর চা । আবুল ভাই এই দীঘির পাড়ে ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করতেন । আমরা ছিলাম তার রেগুলার কাস্টমার । আবুল ভাইয়ের সেই মশলা দেওয়া চা’র স্বাদ এখনো মনে পড়ে ।



চায়ে চুমুক দেওয়া আর এরপর সিগারেটে টান দেওয়া যে কত মজার একটা ফিলিংস এর ব্যাপার সেটা তখন বুঝতাম । আহা !!! অহো !!! ( নর্তন কুর্দন এর ইমো )



সিগারেট এর ক্ষেত্রে একটু আভিজাত্য দেখাইতাম । ‘মোর’ কিংবা বাজারে একদম নতুন আসা ‘ব্ল্যাক’ ছাড়া খেতাম না । টাকা পয়সার টান লাগলে বেনসন খেতাম ।



আমি সিগারেট খাই , সেটা আমাদের সাথের ৮ / ১০ জন বাদে কেউ ই জানতো না ।
হ্যাঁ , আরেকজন জানতো । আমাদের এরিয়া এর একটা ক্যাফের মালিক । আমরা যখন ই যেতাম , ওই লোক টা আমাদের ডেকে একটা মোর এর প্যাকেট ধরিয়ে দিতো ।ফ্রি মাল । লোকটার একটা উপকার করেছিলাম বলে উনি আমাদের এটা ফ্রি তে দিতেন । মাঝে মাঝে আড্ডা দিতে ওই ক্যাফে তে যেতাম , আর একটা করে ফ্রি মোর পেতাম ।



চা – সিগারেট খেয়ে বাড়িতে ফেরার আগে ভালো করে কুলি করে , সেন্টার ফ্রেশ খেয়ে মুখের গন্ধ দূর করতাম । ব্ল্যাক খেলে অবশ্য এটার প্রয়োজন পড়তো না ।



সিগারেট খাওয়ার ব্যাপার টা সবার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখতে পারলেও একজনের কাছে লুকিয়ে রাখতে পারি নি । অবশ্য তার কাছে কোন কিছু ই লুকিয়ে রাখতে পারতাম না ।

তিনি হৈলেন আমার হোম মিনিস্টার । হোম মিনিস্টারের সাথে একদিন সৌজন্য সাক্ষাৎকারে গিয়েছিলাম উনার গণভবনে । বসে বসে আলাপ করছি , তখন দেখি উনি আমার প্যান্ট এর উচু হয়ে থাকা একটা স্থানে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন ।

প্রথমে একটু থতমত খেলেও পড়ে বুঝতে পারি যে আমি ধরা খেয়েছি । উনি তাকিয়ে আছেন আমার প্যান্ট এর পকেটের দিকে । পকেটে রাখা সিগারেট এর প্যাকেট । প্যাকেট সাহেব উঁকি দিয়ে আছেন । হোম মিনিস্টার বললেন পকেট এর বস্তু টা বের করতে । প্রথমে আমি গাইগুই করলেও পড়ে বাধ্য হয়ে দেখালাম । উনি আমার হস্তের বস্তু টা দেখেই উনার হস্ত দিয়ে দরজার দিক টা নির্দেশ করলেন । আমি কোন কথা না বাড়িয়ে চলে এলাম । এই মুহূর্তে উনার সাথে কথা বলা মানে নিচের পায়ে কুড়াল মারা , ওয়েল , যেনতেন কুড়াল না । চাইনিজ টাইপ । যেটা কিনা আমাদের সোনার ছাত্রলীগের ছেলেরা ব্যবহার করে । যাই হোক ওই দিন রাতে উনাকে আর সাহস করে ফোন দেই নি । উনিও দেন নাই । যথেষ্ট রেগে আছেন বোঝা যাচ্ছিল । এরপর দিন ফোন দিলেন । নর্মাল কথা বার্তা । এভাবে চলেই যাচ্ছিল দিন । সিগারেট এর কথা কেউ ই তুলতাম না ।

অবশ্য আমিও সিগারেট খাওয়া একটু একটু করে কমিয়ে দিচ্ছিলাম । তবুও হোম মিনিস্টারের এতো বড় একটা ইস্যু তে চুপ করে থাকা টা একটা রহস্যজনক ব্যাপার ছিল । তবে এতে আমি তেমন অবাক হই নি । নারী মাত্রই রহস্যময়ী । উনি উনার নারী ধর্ম পালন করছেন । আমিও এতে ব্যাঘাত ঘটাই নি ।

উনি ক্যান চুপ ছিলেন সেটা বুঝতে পারি ভ্যালেন্টাইন ডে তে । উনি আমাকে শায়েস্তা করার জন্য ভালো একটা দিন খুঁজছিলেন । ভ্যালেন্টাইন ডে তে আমি ঢাকা ছিলাম । যার কারণে উনি আমাকে উত্তম মধ্যম দেন নি । কিন্তু ভার্চুয়ালি ভালোই পিটিয়েছেন ।

রাত ১২টায় ফোন দিয়ে কই আই লাভ ইউ বলবে , শুরু করলো গালি দেওয়া । আমার ভাগ্য ভালো , উনার গালি দুই একটাতে সীমাবদ্ধ ছিল । হারামি , ফাজিল । আর বেশি রেগে গেলে মাইরা পিট্টা ভর্তা বানাই দিমু । ব্যাস ।

যাই হোক , উনি ওই দিন আমাকে বিরাট বড় লেকচার দিলেন । সিগারেট এর কুফল বললেন , সিগারেট না খেলে আমি কি কি অ্যাডভান্টেজ পাবো সেটাও বললেন ।

আমি মন দিয়ে শুনলাম ।



এরপর তিনি মোটামুটি কঠিন এক কথা বললেন । তিনি বললেন ‘ যদি এই ঠোট দিয়ে তুমি সিগারেট খাও , তাহলে এই ঠোট দিয়ে আমাকে চুমু খেতে পারবে না । যে ঠোট সিগারেট খেতে অভ্যস্ত , সে ঠোট আমার ঠোট স্পর্শ করবে , এটা আমি কোন দিন ও হতে দেবো না ‘

এরপর আরেকটু কঠিন কথা ‘ তুমি আমার কসম খেয়ে বল , তুমি আর কোন দিন সিগারেট খাবে না । না না ওয়েট , আমার কসম দিলে তুমি এক মিনিটে ভেঙ্গে ফেলবা । তুমি রিমঝিম এর কসম খেয়ে বল তুমি আর সিগারেট খাবে না ‘



আমি ততক্ষণে মহা ফাঁপরে । মেয়েরা আর কিছু পারুক আর না পারুক , ছেলেদের ফাঁপরে ফেলতে পারে ।

দুইবার ভাবার সময় নেই নি । প্রথমবারেই বলে দিলাম ‘’ঠিক আছে , আমি আর সিগারেট খাবো না’’



উনি রীতিমত চিৎকার করে উঠলেন । আই লাভ ইউ বলে বলে হয়রান উনি ।

এটাই ছিল আমার দ্যাখা ( শোনা ) উনার সর্বশেষ উচ্ছ্বাস ।



আজ মাঝে মাঝে ভাবি আমি ক্যান সিগারেট ছেড়েছিলাম । চুমু খাওয়ার লোভে ? উম! হয়তো । অস্বীকার করবো না , হোম মিনিস্টারের ঠোঁটের প্রতি আমার একটা আকর্ষণ ছিল সর্বদা । উনাকে প্রায় ই বলতাম এটা । উনি শুধু হাসতেন ।

চুমু খাওয়া হয় নি কোন দিন । আগে হাত ধরা তারপর না চুমু খাওয়া :/



সিগারেট ছাড়াই হল সার ! এখন সিগারেটের গন্ধও অসহ্য লাগে ।



আরেকটা কারণ যেটা , সেটা হল ওই রিমঝিম এর কসম টা । এই কসম টা না থাকলে আমি আবারো সিগারেট খাওয়া ধরতাম । মেয়েরা কিছু হলেই কসম দেয় , আর ছেলেদের আঁটকে দেয় । ধুরররর !



তবে এখন ভাবছি আবারো সিগারেট খাওয়া ধরবো । ভার মে জায়ে ও সাব কাসমে । ও সাব ওয়াদে ।

পড়ে ওকে ভালো মতো সব বুঝিয়ে বলে দেবো ।

আশা করি সে আমার কথা বুঝবে ।

হোম মিনিস্টার বলে কথা ।

সব ই তো বুঝেন
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×