ওয়াহাবীদের সঙ্গে সাধারণ মুসলমানদের গুরুত্বপূর্ণ মতপার্থক্যের একটি বিষয় হলো বারজাখ বা মৃত্যু পরবর্তী কবরের জীবন। আল্লাহর আউলিয়ার (ওলীদের) রুহ হতে সাহায্য চাওয়া,তাঁদের মৃত্যুর পর তাঁদের উসিলা দিয়ে আল্লাহর নিকট চাওয়া (তাওয়াসসুল) ইত্যাদি বিষয়ে অন্যান্য মুসলমানের সাথে ওয়াহাবীদের মতপার্থক্য উপরিউক্ত মতভিন্নতারই ফলশ্রুতিতেই ঘটেছে। অন্যান্য সকল মুসলমানই বিশ্বাস রাখেন দুনিয়া ও আখেরাতের মধ্যবর্তী সময়ে অর্থাৎ বারজাখে মানুষের,বিশেষত আল্লাহর ওলীদের বিশেষ জীবন রয়েছে। কিন্তু ওহাবিগণ মানুষের মৃত্যু পরবর্তী জীবনে,এমনকি আল্লাহর ওলীদের ক্ষেত্রেও বিশ্বাসী নয়। এ কারণেই তাঁদের নিকট সাহায্য চাওয়া,তাঁদেরকে মাধ্যম বা উসিলা হিসেবে গ্রহণকে জায়েয মনে করে না,বরং এক প্রকার শিরক বলে বিশ্বাস করে। প্রকৃতপক্ষে তারা আল্লাহর ওলীদের প্রতি (মৃত্যুর পরে) আহ্বানকে পাথরের ন্যায় প্রাণহীন বস্তুর প্রতি আহ্বান মনে করে। কারণ তারা বিশ্বাস করে আল্লাহর ওলিগণ মৃত্যুর পর অদৃশ্যের জ্ঞান রাখেন না এবং পৃথিবীর উপর তাঁদের কোন প্রভবই নেই। আমরা এখন এ বিশ্বাস নিয়ে মৌলিক আলোচনা করব।
ওয়াহাবীদের ফতোয়াসমূহ
১। বিন বায বলেছেন,‘দ্বীনের অপরিহার্য ও স্বীকৃত বিশ্বাসসমূহ এবং শরীয়তী দলিলের ভিত্তিতে প্রমাণিত যে,আল্লাহর রাসূল (সা.) সকল স্থানে বিদ্যমান নন বরং তাঁর দেহ (মোবারক) মদীনায় রয়েছে তবে তাঁর রুহ বেহেশ্তে মর্যাদাপূর্ণ স্থানে রয়েছে। ৩১
তিনি অন্যত্র বলেছেন,‘আহলে সুন্নাতের এক বৃহৎ অংশ মৃত্যুর পর কবরের জীবনে (বারজাখী জীবনে) বিশ্বাসী । কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে,কবরে শায়িতরা ‘গাইব’বা অদৃশ্যের জ্ঞান রাখেন অথবা পৃথিবীর ঘটনা প্রবাহ সম্পর্কে খবর পান বরং এ বিষয়গুলো হতে তাঁরা মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছেন।
একই গ্রন্থে অন্য স্থানে তিনি বলেছেন,‘মহানবী (সা.) তাঁকে সালামকারী ব্যক্তিকে দেখতে পান- এ কথাটির আদৌ কোন ভিত্তি নেই। কোরআন ও হাদীসে এর সপক্ষে কোন দলিল নেই। রাসূল (সা.) দুনিয়াবাসীর এবং পৃথিবীর উপর যা কিছু ঘটছে সে সম্পর্কে কোন কিছুই জানেন না। কারণ মৃত ব্যক্তির সাথে এ পৃথিবীর সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। ৩২
২। বিশিষ্ট ওহাবী হাদীসবিদ নাসিরউদ্দিন আলবানী তাঁর ‘আল আয়াতুল বাইয়্যেনাহ্ আলা আদামে সিমায়েল আসওয়াত’গ্রন্থের ভূমিকায় বলেছেন,‘আলোচ্য বিষয়টির গুরুত্ব এবং এ সম্পর্কে সাধারণ মানুষদের জানানোর প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি আশা করি কিছু জ্ঞানী ব্যক্তির নিকট স্পষ্ট হয়েছে,বিশেষত যারা সবসময় অজ্ঞতার অন্ধকারে বাস করে তাদের জন্য নিমোক্ত বিষয়সমূহ,যেমন আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নিকট সাহায্য প্রার্থনা,নবিগণ,আল্লাহর ওলী ও সৎকর্মশীল বান্দাদের রুহের নিকট মুক্তি কামনা করা,এরূপ ধারণা ও বিশ্বাস রাখা যে,তাঁরা তাদের কথা শুনতে পারছেন ইত্যাদি বিষয় আলোচনার প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট হবে।
মানুষ রুহ ও দেহের সমন্বয়ে সৃষ্ট
কালামবিদগণ মানুষকে দুই সত্তার সমন্বয় বলে বিশ্বাস করেন,যথা রুহ (আত্মা) ও দেহ। এই দুইয়ের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে তাঁরা বেশ কিছু প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন। এখানে আমরা তার কয়েকটি উল্লেখ করছি :
১। প্রত্যেক মানুষই নিজ কর্মকে এক বাস্তব অস্তিত্বসম্পন্ন সত্তার সাথে সম্পর্কিত করে যাকে ‘আমি’বলে অভিহিত করে থাকে এবং দাবী করে ‘আমি অমুক কাজটি করেছি,‘আমি অমুককে মেরেছি’ইত্যাদি। এই ‘আমি’সত্তাটি কি? এটি কি মানবের সেই সত্তা নয় যাকে ‘রুহ’বা ‘আত্মা’নামে অভিহিত করা হয়,অনুরূপ প্রত্যেক ব্যক্তিই তার দৈহিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোকে এক বাস্তব সত্তার সাথে সম্পকির্ত করে বলে,আমার হৃদয়,আমার উদর,আমার পদযুগল ইত্যাদি। এই ‘আমি’সত্তাটি কি রুহ বা নাফ্স ব্যতীত অন্য কিছু?
২। প্রত্যেক মানুষ এই অনুভূতিটি ধারণ করে যে,তার ব্যক্তিত্ব ও সত্তা সময়ের পরিবর্তনে অপরিবর্তিত রয়েছে যাতে কোনরূপ পরিবর্তন ও পরিবর্ধন সাধিত হয় না,অথচ তার দেহে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে। এই অপরিবর্তিত সত্তাই কি তার আত্মা বা নাফ্স নয়?
৩। কখনো কখনো মানুষ সবকিছু,এমনকি তার দেহ ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সম্পর্কেও অসচেতন হয়ে যায়;কিন্তু সে মুহূর্তেও সে তার ‘আমি’ সত্তা সম্পর্কে অসচেতন নয়। এটি কি তার আত্মা বা নাফ্স নয়? ফখরুদ্দীন রাজী বলেছেন,‘কখনো কখনো আমি নিজের অস্তিত্ব সম্পর্কে সচেতন,অথচ আমার দৈহিক সত্তা সম্পর্কে অবচেতন থাকি। আমার ঐ আত্মসচেতনতাই আমার আত্মা ও নাফ্স।’৩৩
পবিত্র কোরআনও এই সত্যের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছে :
(يَا أَيَّتُهَا النَّفْسُ الْمُطْمَئِنَّةُ ارْجِعِي إِلَىٰ رَبِّكِ رَاضِيَةً مَّرْضِيَّةً فَادْخُلِي فِي عِبَادِي وَادْخُلِي جَنَّتِي )
‘হে প্রশান্ত আত্মা! তুমি তোমার প্রভুর দিকে প্রত্যাবর্তন কর এমন অবস্থায় যে,তুমি তোমার প্রতিপালকের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তিনিও তোমার প্রতি সন্তুষ্ট;আমার বিশেষ বান্দাদের (নৈকট্যপ্রাপ্ত) অন্তর্ভুক্ত হও এবং আমার বেহেশ্তে প্রবেশ কর।’ ৩৪
অন্যত্র বলেছেন :
(فَلَوْلَا إِذَا بَلَغَتِ الْحُلْقُومَ وَأَنتُمْ حِينَئِذٍ تَنظُرُونَ)
‘অতঃপর যখন তার প্রাণ ওষ্ঠাগত হয় তোমরা (তার শিয়রে দাঁড়িয়ে) তা প্রত্যক্ষ কর।’ (সূরা ওয়াকেয়া :৮৩-৮৪)
পৃথিবী হতে বিদায় নেয়ার পরও জীবনের অব্যাহত থাকা
পবিত্র কোরআনের আয়াত হতে সুস্পষ্ট বোঝা যায় যে,মানুষের মৃত্যু তার জীবনের শেষ নয়,বরং সে অন্য এক জীবনে প্রবেশ করে ও স্থানান্তরিত হয়। মানুষ মৃত্যুর পর বস্তুগত জগতের ঊর্ধ্বে এক নতুন জগতে অধিকতর বিস্তৃত জীবন লাভ করে। যেমন :
১। মহান আল্লাহ বলেছেন :
(اللَّـهُ يَتَوَفَّى الْأَنفُسَ حِينَ مَوْتِهَا وَالَّتِي لَمْ تَمُتْ فِي مَنَامِهَا فَيُمْسِكُ الَّتِي قَضَىٰ عَلَيْهَا الْمَوْتَ وَيُرْسِلُ الْأُخْرَىٰ إِلَىٰ أَجَلٍ مُّسَمًّى إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ)
‘আল্লাহ মৃত্যুর সময় প্রাণকে পূর্ণরূপে হরণ করেন এবং (তার প্রাণকে)যে ঘুমন্ত অবস্থায় রয়েছে ও মৃত্যুবরণ করে নি। অতঃপর যার মৃত্যু অবধারিত হয়েছে তার প্রাণকে আবদ্ধ রাখেন এবং অন্যান্যদেরকে (প্রাণ)নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ফিরিয়ে দেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্য নিদর্শনাবলী (আল্লাহর ক্ষমতার) রয়েছে।’৩৫
২। অন্যত্র বলা হয়েছে :
(وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّـهِ أَمْوَاتًا بَلْ أَحْيَاءٌ عِندَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُونَ)
‘যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়েছে তাদের তোমরা মৃত ভেবো না,বরং তারা জীবিত এবং তাদের প্রতিপালকের নিকট হতে জীবিকাপ্রাপ্ত।’৩৬
অন্য একটি আয়াত হতে জানা যায় এই বিশেষ জীবন (বারজাখের জীবন) শুধু শহীদদের জন্যই নয়,বরং আল্লাহর সকল অনুগত ও সৎকর্মশীল বান্দার জন্য নির্ধারিত।
মহান আল্লাহ বলেছেন :
(وَمَن يُطِعِ اللَّـهَ وَالرَّسُولَ فَأُولَـٰئِكَ مَعَ الَّذِينَ أَنْعَمَ اللَّـهُ عَلَيْهِم مِّنَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِينَ وَحَسُنَ أُولَـٰئِكَ رَفِيقًا)
‘যারা আল্লাহ ও তাঁর প্রেরিত পুরুষের আনুগত্য করবে তারা সেই সকল ব্যক্তির সঙ্গে থাকবে নবিগণ,সত্যবাদিগণ,শহীদগণ ও সৎকর্মশীলদের মধ্য হতে যাদের তিনি নিয়ামত দিয়েছেন। তারা কতই না উত্তম সঙ্গী!’ ৩৭
যদি শহীদগণ আল্লাহর নিকট জীবিত থাকেন ও জীবিকা লাভ করেন তবে যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অনুগত হবে-যেহেতু রাসূল নিজেও তাঁর আনীত নির্দেশের আনুগত্যকারী,সেহেতু তিনিও এর অন্তর্ভুক্ত-সেও শহীদদের সাথে থাকবে,কারণ উপরিউক্ত আয়াতে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যকারী শহীদদের সঙ্গে থাকবে বলা হয়েছে। যদি শহীদরা মৃত্যুর পর আল্লাহর নিকট জীবিত থাকে তবে তারাও আল্লাহর নিকট জীবিত রয়েছে ও বারজাখী জীবনের অধিকারী। যদি বিন বাযের মতো কেউ বলেন,‘তাঁরা আল্লাহর নিকট বেহেশ্তে রয়েছেন এবং এই পৃথিবীর কোন খবর রাখেন না’,এর জবাবে বলব,‘আল্লাহ নিজের সম্পর্কে বলেছেন :
(وَهُوَ مَعَكُمْ أَيْنَ مَا كُنتُمْ)
‘তোমরা যেখানেই থাক না কেন,তিনি তোমাদের সঙ্গে রয়েছেন।’৩৮
(فَأَيْنَمَا تُوَلُّوا فَثَمَّ وَجْهُ اللَّـهِ )
‘তোমরা যেদিকেই মুখ ফিরাও না কেন,সেদিকেই তিনি আছেন।’৩৯
(نَحْنُ أَقْرَبُ إِلَيْهِ مِنْ حَبْلِ الْوَرِيدِ)
‘আমরা তার শাহরগ হতেও তার নিকটবর্তী।’৪০
যদি আল্লাহ সকল স্থানে সকলের সাথে থাকেন তবে যেহেতু শহীদগণ তাঁর নিকটে অবস্থান করছেন তাঁরাও তাঁর নৈকট্যপ্রাপ্ত হিসেবে সকল স্থানের উপর পূর্ণ দৃষ্টি লাভ করেছেন এবং অদৃশ্যের জ্ঞান রাখেন। আল্লাহর অলী ও অনুগত সৎকর্মশীল বান্দারাও তদ্রুপ। কোরআন বলছে :
(يَعْلَمُ خَائِنَةَ الْأَعْيُنِ وَمَا تُخْفِي الصُّدُورُ)
‘তিনি (আল্লাহ)চক্ষুসমূহের বিশ্বাসঘাতকতা ও অন্তরসমূহ যা গোপন করে সে সম্পর্কে অবহিত।’৪১
যে সর্বজ্ঞ আল্লাহ সবকিছু জানেন তিনিই তাদেরকে অদৃশ্য সম্পর্কে অবগত করেন। তিনিই তাঁর রাসূলকে অদৃশ্য সম্পর্কে অবহিত করেন।
(عَالِمُ الْغَيْبِ فَلَا يُظْهِرُ عَلَىٰ غَيْبِهِ أَحَدًا إِلَّا مَنِ ارْتَضَىٰ مِن رَّسُولٍ فَإِنَّهُ يَسْلُكُ مِن بَيْنِ يَدَيْهِ وَمِنْ خَلْفِهِ رَصَدًا)
‘তিনি অদৃশ্যের জ্ঞানী এবং তিনি অদৃশ্য বিষয় কারো কাছে প্রকাশ করেন না। তাঁর মনোনীত রাসূল ব্যতীত। তখন তিনি তার অগ্রপশ্চাতে প্রহরী নিযুক্ত করেন।’৪২
বিভিন্ন হাদীসেও এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে। বদর যুদ্ধের পর মহানবী (সা.) যখন মুশরিকদের মৃতদেহগুলো একটি গর্তে নিক্ষেপ করলেন তখন সেই মৃত মুশরিকদের প্রতি লক্ষ্য করে বললেন,‘নিশ্চয়ই তোমরা আল্লাহর রাসূলের মন্দ প্রতিবেশী ছিলে,তাকে তোমরা তার গৃহ হতে বহিষ্কার ও তাকে প্রত্যাখ্যান করেই ক্ষান্ত হও নি বরং তার বিরুদ্ধে সমবেতভাবে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলে। আমাকে আমার প্রতিপালক যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা সত্য পেয়েছি।’এক ব্যক্তি মহানবীকে উদ্দেশ্য করে বলল,‘হে আল্লাহর নবী! আপনি কিরূপে দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন মাথাগুলোর সাথে কথা বলছেন?’মহানবী তাকে বললেন,‘তুমি তাদের হতে অধিক শুনতে পাও না।’৪৩
আনাস ইবনে মালিক মহানবী (সা.) হতে বর্ণনা করেছেন,‘যখন কোন ব্যক্তিকে মৃত্যুর পর কবরে শুইয়ে তার সঙ্গীরা তাকে ত্যাগ করে চলে যায়,তখন সে তাদের পদধ্বনি শুনতে পায়।’৪৪
মুত্তাকী হিন্দী স্বীয় সূত্রে নবী করিম (সা.) হতে বর্ণনা করেছেন,যে ব্যক্তি মৃত্যুর পূর্বে অসিয়ত না করে যায়,তাকে মৃতদের সাথে কথা বলার অনুমতি দেয়া হবে না।’বলা হলো : ‘হে আল্লাহর রাসূল! মৃতরা কি কথা বলে?’তিনি বললেন,‘হ্যাঁ,তারা পরস্পরের সাথে সাক্ষাৎ করে।’৪৫
পৃথিবীর জীবন ও মৃত্যু পরবর্তী কবরের জীবনের মধ্যে সংযোগ
পবিত্র কোরআনের আয়াতসমূহ ও হাদীস হতে জানা যায় যে,পৃথিবীর অধিবাসী জীবিত মানুষ ও কবরবাসী মৃত মানুষের মধ্যে যোগাযোগ রয়েছে এ অর্থে যে,যখন জীবিত কোন মানুষ তাদেরকে ডাকে ও সম্বোধন করে কিছু বলে অথবা চায় তারা আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে তার উত্তর দিয়ে থাকে। এখানে আমরা এ সম্পর্কিত কিছু আয়াত ও হাদীসের প্রতি ইশারা করছি।
ক) আয়াতসমূহ :
মহান আল্লাহ হযরত সালিহ (আ.)-এর জাতি সম্পর্কে বলেছেন,
(فَأَخَذَتْهُمُ الرَّجْفَةُ فَأَصْبَحُوا فِي دَارِهِمْ جَاثِمِينَ ۞ فَتَوَلَّىٰ عَنْهُمْ وَقَالَ يَا قَوْمِ لَقَدْ أَبْلَغْتُكُمْ رِسَالَةَ رَبِّي وَنَصَحْتُ لَكُمْ وَلَـٰكِن لَّا تُحِبُّونَ النَّاصِحِينَ)
অতঃপর ভূমিকম্প তাদের পাকড়াও করল। ফলে তারা তাদের গৃহে উপুড় হয়ে পড়ে রইল। (হযরত সালেহ) তাদের (মৃতদেহগুলো) হতে মুখ ফিরিয়ে নিলেন ও বললেন : হে আমার সম্প্রদায়! আমি তোমাদের কাছে আমার প্রতিপালকের নির্দেশ ও বাণী পৌঁছিয়েছি এবং তোমাদের মঙ্গল কামনা করেছি,কিন্তু তোমরা মঙ্গলাকাঙ্ক্ষীদের ভালোবাস না।’ ৪৬
২। হযরত শুয়াইব (আ.)-এর উম্মত সম্পর্কেও অনুরূপ বর্ণনা এসেছে।
৩। অন্যত্র বলা হয়েছে :
( وَاسْأَلْ مَنْ أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ مِن رُّسُلِنَا أَجَعَلْنَا مِن دُونِ الرَّحْمَـٰنِ آلِهَةً يُعْبَدُونَ)
‘আপনার পূর্বে যে সকল রাসূল প্রেরণ করেছি তাদের জিজ্ঞাসা করুন,পরম করুণাময় (আল্লাহ) ছাড়া কি অন্য কোন উপাস্য আমি ইবাদতের জন্য নির্ধারণ করেছিলাম।’ ৪৭
৪। অন্যত্র কয়েকটি আয়াতে বিভিন্ন নবীর উপর দরুদ ও সালাম প্রেরণ করে বলেছেন :
(سَلَامٌ عَلَىٰ نُوحٍ فِي الْعَالَمِينَ )
‘বিশ্ববাসীদের মধ্যে নূহের উপর সালাম।’৪৮
(سَلَامٌ عَلَىٰ إِبْرَاهِيمَ)
‘ইবরাহিমের উপর শান্তি বর্ষিত হোক।’৪৯
(سَلَامٌ عَلَىٰ مُوسَىٰ وَهَارُونَ)
‘মূসা ও হারুনের উপর শান্তি বর্ষিত হোক।’৫০
(سَلَامٌ عَلَىٰ إِلْ يَاسِينَ)
‘ইল ইয়াসিনের উপর শান্তি বর্ষিত হোক।’৫১
(سَلَامٌ عَلَى الْمُرْسَلِينَ )
নবিগণের উপর শান্তি বর্ষিত হোক।৫২
উপরিউক্ত আয়াতসমূহ হতে বোঝা যায় পৃথিবীর জীবন ও মৃত্যু পরবর্তী জীবনের মধ্যে যোগাযোগ রয়েছে এবং কবরে মানুষ ভূপৃষ্ঠের অধিবাসীদের কথোপকথন শুনতে পায় ও তাদের সালামের জবাব দান করে ।
শেখ মাহমুদ শালতুত বলেছেন,‘কোরআন ও হাদীস হতে জানা যায় যখন মানুষের দেহ হতে আত্মা বিচিছন্ন হয় তখন সে মৃত্যুবরণ করে,কিন্তু তখনও তার অনুধাবন ক্ষমতা থাকে (ও অন্যরূপ জীবন নিয়ে সে বেঁচে থাকে) এবং তাকে কেউ সালাম দিলে সে তা শুনতে পায়,তার কবর জিয়ারতকারীকে চিনতে পারে ও কবরে বেহেশ্তী নিয়ামত ও দোযখের আজাবকে অনুভব করে।৫৩
শাইখুল ইসলাম ইজ্জুদ্দীন ইবনে আবদুস সালাম তাঁর ফতোয়া গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন,‘বাহ্যিকভাবে বোঝা যায় মৃত ব্যক্তি তার জিয়ারতকারীকে (সাক্ষাৎকারী জীবিত ব্যক্তিকে) চিনতে পারে । কারণ শরীয়ত আমাদের নির্দেশ দিয়েছে মৃত ব্যক্তিকে সালাম দেয়ার এবং শরীয়তের প্রবক্তা কখনোই এমন ব্যক্তিকে সম্বোধন করার নির্দেশ দেন নি যে শুনতে পায় না।’৫৪
খ) হাদীসসমূহ :
১। মহানবী বলেছেন,‘যদি কোন ব্যক্তি মুমিন ভাইয়ের কবরের পাশ দিয়ে যায় এবং সে ব্যক্তি পৃথিবীতে ঐ মৃত ব্যক্তির পরিচিতদের অন্তর্ভুক্ত হয়,তবে মহান আল্লাহ মৃত ব্যক্তির আত্মাকে তার সালাম ও কাঙ্ক্ষিত বিষয়ের জবাব দানের জন্য সজাগ করেন।’৫৫
২। মহানবী হতে বর্ণিত হয়েছে যে,মৃত ব্যক্তি তার জানাযায় অংশগ্রহণকারীদের পদধ্বনি শুনতে পায়। ৫৬
৩। ইবনে কাইয়্যেম জাওযীয়া তাঁর আররুহ গ্রন্থে বলেছেন,‘সাহাবিগণ ও প্রাচীন আলেমদের মধ্যে এ বিষয়ে ঐকমত্য রয়েছে যে,মৃত ব্যক্তি তার জিয়ারতকারী ব্যক্তিকে চিনতে পারে এবং তার আগমনে আনন্দিত হয়। ৫৭
৪। ইবনে আবিদ দুনিয়া তাঁর ‘আল কুবুর’ গ্রন্থে হযরত আয়েশা হতে বর্ণনা করেছেন,মহানবী বলেছেন,‘যদি কোন ব্যক্তি তার মুমিন ভ্রাতাকে জিয়ারত করে অর্থাৎ তার কররের নিকটে যায় ও সেখানে বসে,তবে মৃত ব্যক্তি তার সাহচর্যে আনন্দিত হয় ও তার সালামের উত্তর দেয়,ততক্ষণ তার সাহচর্য অনুভব করে যতক্ষণ না সে সেখান হতে উঠে চলে যায়।৫৮
৫। আবু হুরাইরা মহানবী (সা.) হতে বর্ণনা করেছেন,যখন কোন ব্যক্তি মৃতের কবরের পাশ দিয়ে যায় ও তাকে সালাম দেয় তখন মৃত ব্যক্তি তাকে চিনতে পারে ও তার সালামের জবাব দান করে। ৫৯
৬। বায়হাকী সাঈদ ইবনে মুসাইয়ের হতে বর্ণনা করেছেন,তিনি বলেছেন,আমরা আলী ইবনে আবি তালিব (আ.)-এর সঙ্গে মদীনায় কবরস্থানে পৌঁছলে তিনি উচ্চৈঃস্বরে বললেন,‘হে কবরবাসী! তোমাদের উপর আল্লাহর রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক। তোমাদের সংবাদ আমাদের জানাও নতুবা আমাদের খবর শোন।’সাঈদ বলেন,‘তখন তাদের কণ্ঠ শুনতে পেলাম : ওয়া আলাইকুমুস্ সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু ইয়া আমীরাল মুমিনীন! আমাদেরকে আপনাদের সংবাদ জানান। হযরত আলী (আ.) বললেন,‘তোমাদের স্ত্রীরা অন্য স্বামী গ্রহণ করেছে,তোমাদের সম্পদ উত্তরসূরিদের মধ্যে বণ্টিত হয়েছে। তোমাদের সন্তানরা ইয়াতীমদের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তোমাদের নির্মিত গৃহগুলোতে তোমাদের শত্রুরা বাস করছে। আমাদের নিকট এই হলো খবর। তোমাদের কী খবর?’সাঈদ বলেন,‘এক মৃত ব্যক্তি বলল যে,তার কাফনের কাপড় ছিন্নভিন্ন হয়েছে,তার চুলগুলো ঝরে পড়েছে,চর্ম দেহ হতে বিচ্ছিন্ন হয়েছে,চক্ষু অক্ষিকোটর হতে বেরিয়ে মুখের উপর ঝুলে পড়েছে,নাকের ছিদ্র হতে গলিত রস বেরিয়ে আসছে। যা এখানকার জন্য প্রেরণ করেছিলাম তা পেয়েছি এবং করণীয় যা করি নি তার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি।৬০
ইবনে কাইয়্যেম জাওযিয়া মৃত ব্যক্তিরা জীবিত ব্যক্তি কর্তৃক তার কবর জিয়ারতকে অনুভব করতে পারে কিনা প্রসঙ্গে বলেন,‘মৃত ব্যক্তির কবর জিয়ারতকারীকে ‘জায়ের’(সাক্ষাৎকারী) বলা হয়,এর অর্থ মৃত ব্যক্তি তার সাক্ষাৎকারীকে চিনে নতুবা তাকে ‘জায়ের’ বলা হতো না।৬১
৭। বুখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত হয়েছে,‘যখন মৃত ব্যক্তিকে কবরের ভিতর শোয়ানো হয়,তখন সে তাকে দাফন করতে আসা ব্যক্তিদের পদধ্বনি শুনতে পায়।’৬২
৮। আবু হুরাইরা বলেছেন,‘মহানবী (সা.) যখনই কবর জিয়ারতে যেতেন এরূপে কবরবাসীদের সম্বোধন করতেন ,৬৩
السلام علیکم اهل الدیار من المومنین و المسلمین و انا ان شاءالله بکم لاحقون اسال الله لنا ولکم العافية
৯। ইবনে আব্বাস বলেছেন,‘এক সাহাবী একটি কবরের নিকট তাঁবু পাতলেন,কিন্তু জানতেন না সেটি একটি মৃত ব্যক্তির কবর। হঠাৎ করে তাঁর কানে ‘সূরা মুল্ক’ তেলাওয়াতের শব্দ আসল। সূরা পাঠ শেষ হওয়া পর্যন্ত তা তাঁর কানে ভেসে আসছিল। পরবর্তীতে তিনি রাসূল (সা.)-এর নিকট পৌঁছে ঘটনাটি খুলে বললেন। মহানবী বললেন,‘সূরা মুল্ক কবরের আজাবের প্রতিরোধক এবং মানুষকে কবরের আজাব হতে মুক্তি দেয়।৬৪
কবরে বা বারজাখে নবিগণের জীবন
নবিগণের বারজাখী জীবন সম্পর্কে আহলে সুন্নাতের হাদীস গ্রন্থসমূহে বর্ণিত কয়েকটি হাদীস :
১. আনাস ইবনে মালিক মহানবী (সা.) হতে বর্ণনা করেছেন,‘নবিগণ তাঁদের কবরে জীবিত রয়েছেন এবং নামায পড়েন।’এই হাদীসটি হাফিজ হাইসামী তাঁর ‘মাজমায়ুজ জাওয়ায়িদ’৬৫ গ্রন্থে এবং আল্লামা মানাভী তাঁর ‘ফাইজুল ক্বাদীর’৬৬ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। মুহাদ্দিস আলবানী৬৭ হাদীসটির বিশুদ্ধতার স্বীকৃতি দিয়েছেন।
২. মহানবী (সা.) বলেছেন : ‘মৃত্যুর পর আমার অবগতি আমার জীবিতাবস্থার ন্যায়।’৬৮
৩. হযরত আলী (আ.) বর্ণনা করেছেন : ‘এক বছর এক আরব বেদুইন রাসূলের কবরের নিকট এসে বলল : হে আল্লাহর রাসূল! আমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। কবরের ভিতর হতে জবাব এল : আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করেছেন।’৬৯
৪. দারেমী তাঁর সুনান গ্রন্থে সাঈদ ইবনে আবদুল আজিজ সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে,তিনি রাসূল (সা.)-এর কবরের মধ্যে হতে জিকরের শব্দ শুনে নামাজের ওয়াক্ত হয়েছে বুঝতে পারতেন।৭০
দারেমী সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যেব হতে বর্ণনা করেছেন যে,ইয়াযীদের সৈন্যবাহিনী কর্তৃক মদীনার হত্যা ও লুণ্ঠনের দিনগুলোতে তিনি মহানবীর কবর হতে আজান শুনেছেন,আর মসজিদ তখন লোকশূন্য ছিল।৭১
৫। হাফিজ হাইসামী সহীহ সূত্রে আবূ হুরাইরা হতে বর্ণনা করেছেন যে,মহানবী (সা.) বলেছেন : ‘সেই সত্তার কসম আবুল কাসেম মুহাম্মদের জীবন যাঁর হাতে নিবদ্ধ,ঈসা ইবনে মারিয়াম ন্যায়বিচারক ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠাকারী হিসেবে আবির্ভূত হবেন। তিনি ক্রুশসমূহ নিশ্চিহ্ন করবেন,শুকরসমূহ হত্যা করবেন,সকল কিছুর সংস্কার সাধন করবেন,মানুষের মধ্যে বিদ্যমান শত্রুতার অবসান ঘটাবেন,প্রচুর সম্পদ দান করবেন,কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি আমার কবরে এসে আমাকে সম্বোধন করে জবাব না পাবেন,ততক্ষণ তাঁকে কেউ গ্রহণ করবে না।’৭২
৬. হাফিজ হাইসামী সহীহ হাদীস সূত্রে আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ হতে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূল (সা.) বলেছেন : ‘আমার জীবিতাবস্থা তোমাদের জন্য কল্যাণকর এ জন্য যে,আমার হতে হাদীস শোন ও বর্ণনা কর। আমার মৃত্যু তোমাদের জন্য কল্যাণকর এ কারণে যে,তোমাদের কর্মসমূহ (আমলনামা) আমার কাছে উপস্থাপন করা হবে এবং আমি তোমাদের সৎকর্ম দেখে আল্লাহর শোকর আদায় করব এবং তোমাদের মন্দ কর্মের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করব।’৭৩
ইউসুফ ইবনে আলী জানানী মদীনাবাসী হাশেমী বংশের এক নারী হতে বর্ণনা করেছেন যে,মসজিদের কোন কোন খাদেম তাকে জ্বালাতন করত। তিনি মহানবীর সাহায্য প্রার্থনা করলে তাঁর পবিত্র কবর হতে শুনতে পেলেন : ‘আমি ধৈর্যের ক্ষেত্রে তোমার আদর্শ। তাই ধৈর্যধারণ কর।’ কয়েকদিন পর আপনা আপনিই সমস্যাটির সমাধান হয়ে গেল এভাবে যে,তারা সকলেই মারা গেল।৭৪
বারজাখী জীবনে আল্লাহর ওলীদের মর্যাদা
হাকিম নিশাবুরী ইবনে আব্বাস হতে বর্ণনা করেছেন: একদিন মহানবী (সা.) বসেছিলেন এবং আসমা বিনতে উমাইস তখন তাঁর নিকটেই ছিলেন। হঠাৎ করে মহানবী (সা.) কারো সালামের জবাব দিলেন। (আসমা আশ্চর্যান্বিত হলে) তিনি বললেন : ‘হে আসমা! জাফর,জীবরাঈল ও মিকাঈলের সাথে আমাদের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় সালাম দিয়েছিলেন।’৭৫
কাজী সুবুকী বলেছেন : ‘আল্লাহর ওলিগণ তাঁদের জীবদ্দশায় ও মৃত্যুর পর আল্লাহর ইচ্ছায় ও শক্তিতে কোন কিছুর উপর প্রভাব রাখেন। মহান আল্লাহ তাঁদেরকে এ মর্যাদা দিয়েছেন ও তাঁদের হাত ও মুখের মাধ্যমে বিভিন্ন (অলৌকিক) কর্ম সম্পাদন করান।’৭৬
মৃতদের জন্য কোরআন পাঠ করা
ইবনে কাইয়্যেম জাওযিয়া বলেছেন : ‘পূর্ববর্তীদের (সাহাবী,তাবেয়ীন ও অগ্রবর্তী আলেমদের) হতে বর্ণিত হয়েছে যে,তাঁরা মৃত্যুর পূর্বে তাঁদের কবরের পাশে কোরআন তেলাওয়াতের অসিয়ত করতেন।’৭৭
বর্ণিত হয়েছে আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর অসিয়ত করে যান তাঁর কবরের পাশে সূরা বাকারা পাঠ করার। আহমাদ ইবনে হাম্বাল প্রথমদিকে এ কর্মকে বৈধ মনে করতেন না,পরবর্তীকালে তিনি তাঁর মত পরিবর্তন করেন।
খাল্লাল তাঁর ‘আল ক্বিরাআত ইনদাল কুবুর’ গ্রন্থে স্বীয় সূত্রে আলা ইবনে লাহলাজ হতে বর্ণনা করেছেন,তাঁর পিতা অসিয়ত করে যান : ‘যখন আমাকে কবরে রাখবে তখন বলবে
بسم الله وعلي سنّة رسول الله
অতঃপর যখন আমাকে মাটি দ্বারা আবৃত করবে তখন আমার শিয়রে বসে সূরা বাকারা পাঠ কর,যেমনটি আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর বলেছেন।’৭৮
হাসান ইবেন সাব্বাহ জাফারানী বলেছেন : ‘জনাব শাফেয়ীর কাছে মৃত ব্যক্তির কবরের নিকট কোরআন তেলাওয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন যে,এতে কোন সমস্যা নেই।’৭৯
খাল্লাল শা’বী হতে বর্ণনা করেছেন: ‘যখন আনসারদের কেউ মৃত্যুবরণ করত তারা তার কবরের নিকটে যেতেন ও কোরআন পাঠ করতেন।’৮০
হাসান ইবনে জারভী বলেছেন : ‘আমার ভগ্নীর কবরের নিকটে গিয়ে সূরা মুল্ক পড়েছিলাম। কয়েকদিন পর এক ব্যক্তি এসে আমাকে বলল যে,আমার ভগ্নীকে স্বপ্নে দেখেছে,সে বলছে,‘আমার ভ্রাতাকে আল্লাহ উত্তম বিনিময় দান করুন। সে আমার কবরের নিকটে কোরআন পাঠ করেছে,তা হতে আমি লাভবান হয়েছি।’৮১
এক ব্যক্তি জুমুআর দিন তার মাতার কবরের নিকট সূরা ইয়াসীন পাঠ করত। একদিন সূরা পাঠ ইয়াসীন পাঠ করে সকল কবরবাসীর রুহের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করল। কয়েকদিন পর এক ব্যক্তি তার নিকট এসে বলল: ‘তুমি কি অমুক ব্যক্তি?’সে বলল : ‘হ্যাঁ’। তখন ঐ ব্যক্তি বলল : ‘আমার এক কন্যা মৃত্যুবরণ করেছে। তাকে স্বপ্নে দেখলাম সে তার কবরে অত্যন্ত আনন্দিত অবস্থায় বসে আছে। আমি তাকে তার আনন্দের কারণ জিজ্ঞাসা করলে সে বলল যে,অমুক ব্যক্তি সকল কবরবাসীর উদ্দেশে সূরা ইয়াসীন পাঠ করার কারণে আমরা আল্লাহর শাস্তি হতে মুক্তি লাভ করেছি।’৮২
ইয়াসায়ী বর্ণনা করেছেন রাসূল (সা.) বলেছেন,‘তোমাদের মৃতদের উপর সূরা ইয়াসীন পাঠ কর।’৮৩
মুফাজ্জাল ইবনে মুয়াফ্ফাক বলেছেন : ‘আমি প্রতিদিন আমার পিতার কবর জিয়ারত করতাম। একদিন বিশেষ ব্যস্ততার কারণে তাঁর কবর জিয়ারতে যেতে পারি নি। ঐদিন রাতে তাঁকে স্বপ্নে দেখলাম যে,তিনি আমাকে বলছেন : হে পুত্র! কেন আমার জিয়ারতে আস নি? আমি বললাম : আপনি কি আপনার কবর জিয়ারতে আসলে বুঝতে পারেন? তিনি বললেন : আল্লাহর শপথ! যখন তুমি আমার কবরের উদ্দেশে ঘর থেকে বের হও তখন হতে ফিরে যাওয়া পর্যন্ত আমি তোমাকে পর্যবেক্ষণ করি।’৮৪
মুজাহিদ সহীহ সূত্রে বর্ণনা করেছেন,‘মৃত ব্যক্তিকে কবরে তার সন্তানের সৎকর্ম সম্পর্কে জানানো হয়।’৮৫
ইবনে কাইয়েম জাওযিয়া বলেছেন,‘উপরিউক্ত বিষয়ের সপক্ষে একটি উত্তম দলিল হলো প্রাচীনকাল হতেই মানুষ মৃতদের কবরে শয়ন করানোর পর তালক্বীন (ঈমানের বিষয়সমূহ আবৃত্তির মাধ্যমে স্মরণ করিয়ে দেয়া) করে আসছে। যদি মৃতরা শুনতে না পেত ও এর মাধ্যমে লাভবান না হতো তবে তালক্বীন অনর্থক পরিগণিত হতো।৮৬
আহমাদ ইবনে হাম্বালকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি তা করার নির্দেশ দেন ও এটি উত্তম বলে উল্লেখ করেন।
সুয়ূতী তাঁর ‘শিফাউস্ সুদুর’ গ্রন্থে বলেন : ‘কোরআন তেলাওয়াতের সওয়াব মৃত ব্যক্তির নিকট পৌঁছে কিনা এ বিষয়ে মতদ্বৈততা রয়েছে। পূর্বেকার আলেমগণের অধিকাংশ এবং চার মাযহাবের প্রবক্তাদের হতে তিনজন এ বিষয়ে একমত যে,সেই সওয়াব তাদের নিকট পৌঁছে। কেবল ইমাম শাফেয়ী এ ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ করেছেন এ যুক্তিতে যে,পবিত্র কোরআন বলছে :
(وَأَن لَّيْسَ لِلْإِنسَانِ إِلَّا مَا سَعَىٰ )
“মানুষ তাই পায় যা সে করে।” ৮৭ কিন্তু অন্যরা এর জবাবে নিম্নোক্ত দলিলসমূহ উপস্থাপন করেন :
প্রথমত উপরিউক্ত আয়াত নিম্নোক্ত এ আয়াতের
(وَالَّذِينَ آمَنُوا وَاتَّبَعَتْهُمْ ذُرِّيَّتُهُم بِإِيمَانٍ)
“এবং যারা ঈমান এনেছে ও তাদের সন্তানদের মধ্যে যারা ঈমানে তাদের অনুগামী-মাধ্যমে রহিত হয়ে গিয়েছে।” ৮৮
দ্বিতীয়ত পূর্বোক্ত আয়াতটিতে হযরত ইবরাহীম (আ.) ও হযরত মূসা (আ.)-এর জাতি সম্পর্কে বলা হয়েছে ও তাদের মধ্যেই নির্দিষ্ট।
তৃতীয়ত আয়াতটিতে انسان বলতে শুধু কাফেরকে বুঝানো হয়েছে। কিন্তু মুমিনগণ নিজেদের সৎকর্ম ছাড়াও তার জন্য প্রেরিত দোয়ার দ্বারা লাভবান হয়ে থাকে।
চতুর্থত আয়াতটির উদ্দেশ্য হল মানুষকে তার প্রচেষ্টা ও কর্ম অনুযায়ী ফলদান যা ন্যায় বিচারের দাবী। কিন্তু মহান আল্লাহ তাঁর অসীম অনুগ্রহের কারণে অন্যভাবেও মৃতব্যক্তির প্রতি সওয়াব পৌঁছিয়ে দিয়ে থাকেন।
পঞ্চমত للانسان শব্দটিতে ‘لام ‘ ‘علی ‘ অর্থে এসেছে অর্থাৎ অসৎকর্মের ক্ষেত্রে একের শাস্তি অপর কেউ পাবে না কিন্তু সৎকর্মের ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়ে আল্লাহর অনুমতিক্রমে নিয়তের অনুবর্তী। ৮৯
মৃতের উপকৃত হওয়া
পবিত্র কোরআনের আয়াত ও হাদীসসমূহ হতে বোঝা যায় মৃত ব্যক্তির জন্য কোরআন তেলাওয়াত ও ক্ষমা প্রার্থনা করলে তা হতে তারা লাভবান হয়।
১। আয়াতসমূহ
মহান আল্লাহ বলেছেন :
(الَّذِينَ يَحْمِلُونَ الْعَرْشَ وَمَنْ حَوْلَهُ يُسَبِّحُونَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَيُؤْمِنُونَ بِهِ وَيَسْتَغْفِرُونَ لِلَّذِينَ آمَنُوا رَبَّنَا وَسِعْتَ كُلَّ شَيْءٍ رَحْمَةً وَعِلْمًا فَاغْفِرْ لِلَّذِينَ تَابُوا وَاتَّبَعُوا سَبِيلَكَ وَقِهِمْ عَذَابَ الْجَحِيمِ)
“যারা আরশ বহন করে এবং যারা তার চারপাশে আছে তারা তাঁদের পালনকর্তার সপ্রশংস পবিত্রতা বর্ণনা করে তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং মুমিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে বলে,হে আমাদের পালনকর্তা!আপনার রহমত ও জ্ঞান সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে আছে। অতএব,যারা তওবা করে এবং আপনার পথ অনুসরণ করে তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং জাহান্নামের শাস্তি হতে রক্ষা করুন।” ৯০
অন্যত্র বলেছেন :
(تَكَادُ السَّمَاوَاتُ يَتَفَطَّرْنَ مِنْ فَوْقِهِنَّ وَالْمَلَائِكَةُ يُسَبِّحُونَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَيَسْتَغْفِرُونَ لِمَنْ فِي اللْأَرْضِ)
“যখন নিকট আকাশ উপর হতে ফেটে পড়ার উপক্রম হয় তখন ফেরেশতাগণ তাদের পালনকর্তার সপ্রশংস পবিত্রতা বর্ণনা করে এবং পৃথিবীবাসীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে।” ৯১
মহান আল্লাহ আরো বলেন :
(وَالَّذِينَ جَاءُوا مِنْ بَعْدِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ)
“যারা তাদের পরে আগমন করেছে তাদের জন্য দোয়া করে তারা (আনসাররা) বলে : হে আমাদের পালনকর্তা!,আমাদেরকে এবং ঈমানে অগ্রণী আমাদের ভ্রাতাদেরকে ক্ষমা করুন।” ৯২
২। হাদীসসমূহ
বিভিন্ন হাদীস হতেও জানা যায় মৃতগণ জীবিতদের সৎকর্মের প্রেরিত সওয়াব হতে লাভবান হয়ে থাকে। সহীহ বুখারী ও মুসলিম হযরত আয়েশা হতে বর্ণনা করেছে রাসূল (সা.) বলেছেন : ‘যদি কোন মৃত ব্যক্তির রোজা কাযা থাকে তবে তার পক্ষে তার ওয়ালী (সন্তান বা এরূপ অন্য কেউ) কাযা আদায় করবে।’৯৩
ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত হয়েছে যে,তিনি বলেছেন,‘এক ব্যক্তি মহানবী (সা.)-এর নিকট এসে বলল : হে আল্লাহর রাসূল! আমার মাতা মৃত্যুবরণ করেছেন এবং তার উপর এক মাসের কাযা রোজা ফরজ ছিল। আমি কি তার পক্ষে তা আদায় করতে পারব? মহানবী (সা.) বললেন,‘হ্যাঁ,দ্বীনের বিধান আদায় করাটাই বাঞ্ছিত।’৯৪
অন্য এক হাদীসে এসেছে এক নারী মহানবীর নিকট প্রশ্ন করল : আমার মাতা হজ্জ্ব না করেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। আমি কি তার পক্ষে তা আদায় করতে পারব? তিনি বললেন : ‘হ্যাঁ,তার পক্ষে তা আদায় কর।’৯৫
আতা ইবনে রিবাহ বর্ণনা করেছেন : এক ব্যক্তি মহানবীকে জিজ্ঞেস করল,‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি আমার মৃত মাতার পক্ষে দাস মুক্ত করতে পারব? মহানবী (সা.) বললেন : ‘হ্যাঁ,পুনরায় সে বলল,‘এই দাস মুক্তির সওয়াব হতে সে কি লাভবান হবে?’তিনি বললেন,‘হ্যাঁ’।
সাদ ইবনে উবাদা রাসূলকে প্রশ্ন করলেন,‘আমার মাতা জীবিতাবস্থায় মানত করেছিলেন কিন্তু পালন করতে পারেন নি। আমি কি তার মানতটি পালন করব? তিনি বললেন,‘হ্যাঁ’। সাদ পুনরায় বললেন,‘এর মাধ্যমে তিনি কি লাভবান হবেন? তিনি বললেন,‘হ্যাঁ’।
আবু হুরাইরা বর্ণনা করেছেন যে,এক ব্যক্তি রাসুলের নিকট এসে বলল,‘আমার পিতা মৃত্যুবরণ করেছেন। কিন্তু তার সম্পদের জন্য কোন ওসিয়ত করে যাননি। আমি যদি তার পক্ষে সাদকা দান করি তবে তা কি তার গুনাহের কাফ্ফারা হিসেবে পরিগণিত হবে? তিনি বললেন : ‘হ্যাঁ।’মহানবী আরো বললেন : ‘তোমাদের মৃতদের জন্য সূরা ইয়াসীন পাঠ কর।’৯৬
ওয়াহাবীদের উপস্থাপিত দলিলের পর্যালোচনা
প্রথম দলিল
পূর্বে আমরা উল্লেখ করেছি ওয়াহাবীরা তাদের মতের সপক্ষে নিম্নোক্ত হাদীসটি উপস্থাপন করে থাকে যে,মহানবী (সা.) বলেছেন : ‘যখন কোন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করে তখন তার সকল সৎকর্ম বন্ধ হয়ে যায় তিনটি ব্যতীত যথা সাদকায়ে জারীয়া (মসজিদ,মাদ্রাসা,স্কুল,হাসপাতাল,ইয়াতিম খানা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা),তার রেখে যাওয়া যে জ্ঞান হতে অন্যান্যরা লাভবান হয় এবং সৎকর্মশীল (নেক) সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে।
তারা উপরিউক্ত হাদীসের মাধ্যমে প্রমাণ করতে চায় মৃত্যুর মাধ্যমে এ পৃথিবীর সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। এর ফলে তারা এ পৃথিবী হতে কোন কল্যাণ প্রাপ্ত হয় না এবং এ পৃথিবীতে তারা কোন প্রভাবও রাখতে সক্ষম নন।
আমাদের উত্তর
উপরিউক্ত হাদীসটিতে তিনটি কর্ম ব্যতীত মৃতব্যক্তি নিজের জন্য অন্য কোন কর্ম করতে পারে না বলা হয়েছে অর্থাৎ যে কর্মসমূহ মৃতব্যক্তি তার জীবদ্দশায় পরবর্তী জীবনের জন্য করতে পারত তা উল্লেখ করে বলা হয়েছে ঐ তিনটি ব্যতীত অন্য কোন কর্মের সওয়াব সে অনবরত লাভ করতে পারবে না। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে,অন্য কোন ব্যক্তি তার পক্ষে কোন কাজ করলে তা হতে সে লাভবান হবে না বরং অন্য কোন ব্যক্তি তার মৃত্যুর পর তার নিয়তে কোন সৎকর্ম করলে সে সওয়াব পেতে পারে। কারণ তা তার নিজ কর্মের উপর নির্ভরশীল নয়।৯৭
দ্বিতীয় দলিল
পবিত্র কোরআনের কোন কোন আয়াত হতে বাহ্যিকভাবে বোঝা যায় মৃতরা শুনতে পায় না। যেমন মহান আল্লাহ বলেছেন :
(فَإِنَّكَ لَا تُسْمِعُ الْمَوْتَى وَلَا تُسْمِعُ الصُّمَّ الدُّعَاءَ إِذَا وَلَّوْا مُدْبِرِينَ)
“সুতরাং নিশ্চয়ই (হে নবী!) তুমি মৃতদের (যাদের অন্তর মৃত) শোনাতে সক্ষম নও এবং বধিরদের কর্ণেও তা পৌঁছাতে সক্ষম নও যখন তারা( নিজেরাই) পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে।” ৯৮
অন্য আয়াতে এসেছে :
(وَمَا يَسْتَوِي الْأَحْيَاءُ وَلَا الْأَمْوَاتُ إِنَّ اللَّهَ يُسْمِعُ مَنْ يَشَاءُ وَمَا أَنْتَ بِمُسْمِعٍ مَنْ فِي الْقُبُورِ)
“অবশ্যই জীবিত ও মৃত সমান নয়। নিশ্চয়ই আল্লাহ যাকে চান শোনান। তুমি যে ব্যক্তি কবরে আছে তাকে শোনাতে সক্ষম নও।” ৯৯
আমাদের উত্তর
প্রথমত উপরিউক্ত আয়াতের লক্ষ্য কবরে শায়িত প্রাণহীন দেহ হতে পারে যা মাটিতে পরিণত হয়েছে ফলে কোন কিছু বুঝতে সক্ষম নয়।
দ্বিতীয়ত শুনতে সক্ষম নয় অর্থ কোন কল্যাণ অর্জনে সক্ষম নয় হতে পারে যা বধিরতার সমার্থক বলা হয়েছে। ফলে আয়াতের অর্থ দাঁড়ায় এই মুশরিক পৌত্তলিকরা কোরআনের আয়াত শোনে কিন্তু তা হতে কোন কল্যাণ লাভ করে না যেমন কবরে শায়িতরা তোমার কথা শুনে কিন্তু কোন কল্যাণ প্রাপ্ত হয় না। কারণ তাদের সময় (কল্যাণ লাভের সুযোগ) শেষ হয়ে গেছে।
ইবনে কাইয়্যেম জাওযিয়া وما أنتَ بِمُسمعٍ من فی القبور আয়াতটির তাফসীরে বলেছেন : আয়াতটির লক্ষ্য সে সকল কাফের যাদের অন্তর মৃত,ফলে (হে নবী!) তুমি তাদের কর্ণে সত্যকে পৌঁছাতে সক্ষম নও যা হতে তারা লাভবান হতে পারে। যেমন কবরে শায়িতদের এমনভাবে শোনাতে সক্ষম নও যা হতে কল্যাণ লাভ করতে পারে।
(فَإِنَّكَ لَا تُسْمِعُ الْمَوْتَى وَلَا تُسْمِعُ الصُّمَّ الدُّعَاءَ إِذَا وَلَّوْا مُدْبِرِينَ)
ইবনে কাইয়্যেম এ আয়াতের তাফসীরে বলেছেন : তাদের শ্রবণের অক্ষমতা এ অর্থে যে,যেহেতু মুশরিকদের অন্তর মৃত সেহেতু তুমি সত্যকে তাদের নিকট পৌঁছাতে সক্ষম নও যেমনটি মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে হয়ে থাকে।’১০০
হাসান ইবনে আলী সাক্কাফ আশশাফেয়ী و ما أنت بمسمعٍ من فی القبور আয়াতটির তাফসীরে বলেছেন : ‘আয়াতটির লক্ষ্য সে সকল কাফের যারা বাতিলের পথে একগুয়েমি প্রদর্শন করে। ফলে তোমার উপদেশ হতে লাভবান হয় না যেমন কবরে শায়িতরা তোমার উপদেশ হতে কল্যাণ পায় না। অতঃপর তিনি তাফসীরে সাবুনী থেকে বর্ণনা করেছেন যে,আয়াতটির অর্থ হল যেমনভাবে মৃত কাফিররা তোমার হেদায়েত ও আহ্বান হতে কল্যাণ প্রাপ্ত হয় না দূর্ভাগা মুশরিকরাও তেমনি তোমার সৎপথ প্রদর্শন হতে লাভবান হয় না।১০১
(إنک لا تسمع الموتی ولا تسمع الصم الدعاء)
আয়াতটির তাফসীরে তিনি বলেছেন : ‘এর অর্থ হে নবী! যার অন্তরে বাতিলের মোহর অঙ্কিত হয়েছে তার নিকট তুমি সত্য পৌঁছাতে সক্ষম নও,কারণ তারা নিজেরাই সত্য হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।১০২
------------------------------------------------------------------------------
৩১। বিন বায,ফতোয়াসমগ্র,১ম খণ্ড,পৃ. ৪০৮।
৩২। বিন বায,ফতোয়াসমগ্র,পৃ. ৪১৭।
৩৩। মাফাতিহুল গাইব,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ১৪৯।
৩৪। সূরা ফাজর : ২৭
৩৫। সূরা যুমার : ৪২।
৩৬। সূরা আলে ইমরান : ১৬৯।
৩৭। সূরা নিসা : ৬৯।
৩৮। সূরা হাদীদ : ৪।
৩৯। সূরা বাকারা : ১১৫।
৪০। সূরা কাফ : ১৬।
৪১। সূরা মুমিন : ১৬। অন্যত্র সূরা তওবার ১০৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে,‘তোমরা তোমাদের কর্ম কর। অতঃপর আল্লাহ্,তাঁর রাসূল ও মুমিনগণ তোমাদের কর্মকে দেখবেন।’ এ আয়াতে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের পাশাপাশি মুমিনদের কথা বলা হয়েছে অর্থাৎ তাঁরাও মুনাফিক ও কাফেরদের কর্ম দেখেন। নিঃসন্দেহে এ আয়াত শুধু কিয়ামত দিবস সংশ্লিষ্ট নয়,কারণ সেদিন সকল মানুষই,এমনকি মন্দ ব্যক্তিরাও মুনাফিক ও কাফেরদের আমলনামা দেখবে।
৪২। সূরা জ্বীন : ২৬-২৭।
৪৩। সহীহ বুখারী,৫ম খণ্ড,পৃ. ৭৬-৭৭,‘আবু জাহলের হত্যা’ অধ্যায় ।
৪৪। সহীহ বুখারী,২য় খণ্ড,পৃ. ১২৩,‘মৃত ব্যক্তি জিয়ারতকারীর জুতার শব্দ শুনতে পায়’ অধ্যায় দ্রষ্টব্য ।
৪৫। কানজুল উম্মাল,১৬তম খণ্ড,পৃ. ৬১৯-৬২০,হাদীস নং ৪৬০৮০।
৪৬। সূরা আরাফ : ৭৮-৭৯।
৪৭। সূরা যুখরুফ : ৪৫।
৪৮। সূরা সাফফাত : ৭৯।
৪৯। সূরা সাফফাত : ১০৯।
৫০। সূরা সাফফাত : ১২০।
৫১। সূরা সাফফাত : ১৩০।
৫২। সূরা সাফফাত : ১৮১।
৫৩। শালাতুত,আল ফাতাওয়া,পৃ. ১৯।
৫৪। শাইখুল ইসলাম ইজ্জুদ্দীন ইবনে আবদুস সালামের ফতোয়া সমগ্র,পৃ. ৩১
৫৫। ইবনে কাইয়্যেম জাওযীয়া,আররুহ,পৃ. ৯।
৫৬। ইবনে কাইয়্যেম জাওযীয়া,আররুহ,পৃ. ৯।
৫৭। আররুহ,পৃ. ৯।
৫৮। প্রাগুক্ত।
৫৯। ফাইজুল ক্বাদীর,৫ম খণ্ড,পৃ. ৪৮৭।
৬০। মূসা মুহাম্মদ আলী,হাকীকাতু তাওয়াসসুল ওয়াল ওয়াসিলাহ,পৃ. ২৪২
৬১। আররুহ,পৃ. ৮।
৬২। ফাতহুল বারী,৩য় খণ্ড,পৃ. ২০৫।
৬৩। তালখিসুল হাবির,২য় খণ্ড,পৃ. ১৩৭।
৬৪। সহীহ তিরমিযী,‘কিতাবে ফাজায়িলুল কুরআন।
৬৫। মাজমাউজ জাওয়ায়িদ,৮ম খণ্ড,পৃ. ২১১।
৬৬। ফাইজুল ক্বাদীর,৩য় খণ্ড,পৃ. ১৮৪।
৬৭। সিলসিলাতুল আহাদীসুস সাহীহাহ,হাদীস নং ৬২১।
৬৮। কানজুল উম্মাল,১ম খণ্ড,পৃ. ৫০৭,হাদীস নং ২২৪২।
৬৯। প্রাগুক্ত।
৭০। সুনানে দারেমী,১ম খণ্ড,পৃ. ৫৬-৫৭,হাদীস নং ৯৩।
৭১। মুসা,মুহাম্মাদ আলী,হাকীকাতুত তাওয়াসসুল ওয়াল ওয়াসিলাহ,পৃ. ২৭১।
৭২। মাজমাউজ জাওয়ায়িদ,৮ম খণ্ড,পৃ. ২১১।
৭৩। প্রাগুক্ত,৯ম খণ্ড,পৃ. ২৪;সুয়ূতী,আল খাসাইসুল কুবরা,২য় খণ্ড,পৃ. ২৮১।
৭৪। সুয়ূতী,আলহাভী লিল ফাতওয়া।
৭৫। হাকিকাতুত তাওয়াসসুল ওয়াল ওয়াসিলাহ্,পৃ. ২৬৫। (হাকিম নিশাবুরী হতে বর্ণিত)
৭৬। প্রাগুক্ত,পৃ. ২৫৭।
৭৭। আর রুহ,পৃ: ১৬-১৮।
৭৮। প্রাগুক্ত।
৭৯। প্রাগুক্ত।
৮০। প্রাগুক্ত।
৮১। প্রাগুক্ত।
৮২। প্রাগুক্ত।
৮৩। প্রাগুক্ত।
৮৪। আর রুহ,পৃ. ১৮-১৯।
৮৫। প্রাগুক্ত।
৮৬। প্রাগুক্ত।
৮৭। সূরা নাজম : ৩৯।
৮৮। সুরা তুর,২১।
৮৯। শিফাউস সুদুর বিশারহি হালিল মাওতা ওয়াল কুবুর।
৯০। সূরা মুমিন : ৭।
৯১। সূরা শুরা : ৫।
৯২। সূরা হাশর : ১০।
৯৩। সহীহ মুসলিম,৩য় খণ্ড,পৃ. ১৫৫-১৫৬,মৃতের পক্ষে রোজার কাযা আদায় অধ্যায়।
৯৪। প্রাগুক্ত।
৯৫। প্রাগুক্ত।
৯৬। সহীহ মুসলিম,৫ম খণ্ড,পৃ. ৭৩-৭৮;কানযুল উম্মাল,৮ম খণ্ড,পৃ. ৫৯৮-৬০২,হাদীস নং ১৭০৫০-১৭০৭১;আররুহ,পৃ. ১১৮-১২১।
৯৭। শেখ আবদুল্লাহ্ হাবাশী,সারিহুল বায়ান,পৃ. ১৭৬।
৯৮। সূরা রুম : ৫২।
৯৯। সূরা ফাতির : ২২।
১০০। আর রুহ,পৃ. ৪৫-৪৬।
১০১। মুখতাছারু তাফসীরে ইবনে কাছির,৩য় খণ্ড,পৃ. ১৪৫।
১০২। আল ইস্তিগাসা।