somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রথম প্রেম

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোট্ট মেয়ে লিসা খেলা করছিল নিউইয়র্কের সেন্ট্রাল পার্কে। খেলতে খেলতে হঠাৎই ওর চোখে পরলো সামনের ঝোপঝোড়ে পরে থাকা একটা ছবির দিকে। তারই প্রায় সমবয়সী সোনালী কোঁকড়া চুল আর বুদ্ধিদীপ্ত দুটো চোখের এক ছেলের ছবি এটি। খেলতে খেলতে সে ছবির ছেলেটাকে অনেকক্ষণ ধরে দেখলো তারপর সারা পার্কের এদিক সেদিক অনেকই খুজলো। খুজে না পেয়ে শেষে সে ছবিটা তার বাসায় নিয়ে গেল। ছবিটা সে তুলে রাখলো তার প্রিয় জিনিসে ঠাসা এক স্যুটকেসের পকেটে।

কেটে গেল অনেকগুলো বছর। লিসা এখন হান্টার বেলভ্যু স্কুল অব নার্সিং-এর মাস্টার্স অব নার্সিং প্রাকটিস প্রোগ্রামের গ্রাজুয়েট। কর্মজীবন শুরু করেছে বিশ্বখ্যাত এমএসকে ক্যান্সার হাসপাতালে। অত্যন্ত দায়িত্বশীল, কর্মঠ, মেধাবি, বিনয়ী ও উচ্চশিক্ষিতা হওয়ায় হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তাসহ সকলেই সমিহ করে চলেন লিসা’কে।

হাসপাতালের চিকিৎসক শিল্ড চমৎকার লোক। অনকোলজিষ্ট শিল্ড হিসেবে পরিচিত। হাসিখুশী আর আড্ডাবাজ। যখন তাকে কেউ ডক্টর শিল্ড বলে ডাকেন তখন হেসে বলে ওঠেন ‘ আমি চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাধারন গ্রাজুয়েট এখনো পিএইচডি শেষ করিনি, তাছাড়া আমি ভারতীয় নই আর আমার হাসপাতাল থেকে আমি মোটা অংকের পারিশ্রমিক নেই।’
[ভারতীয় উপমহাদেশের লোকজন চিকিৎসকদের বা ফিজিশিয়ানদের ডক্টর বলতেই অভ্যস্হ। শোনা যায় বৃটিশ শাসনামলের প্রারম্ভে চিকিৎসাকে যারা পণ্য বা ব্যবসা হিসাবে গ্রহন না করে শুধুমাত্র জনসেবার ব্রত গ্রহন করবে, মানুষের স্বাস্হ্য সেবায় যারা নিজেদের উৎসর্গ করবে তারা এলোপ্যাথিক হোক আর হোমিওপ্যাথিক হোক এমনকি তারা গ্রাজুয়েটও না হয়ে ডিপ্লোমাধারী হলেও তাদের পিএইচডি অর্জন করার মত সন্মানসূচক ডক্টর বলে সম্বোধন করা যেত।]

লিসা এক সময় টের পেল অজান্তেই কখন যেন শিল্ড নামের লোকটার প্রেমে পরে গেছে। কিন্তু শিল্ডতো একজন ইহুদী। ইহুদী বিয়ে করা খৃষ্টানদের জন্য অতি জঘণ্য মহাপাপ।

কফির টেবিলে একদিন শিল্ড যখন লিসার কাছে জানতে চাইলো তার কোন প্রেমিক আছে কিনা লিসা বিনয়ের সাথে জানালো তার কোন প্রেমিক নেই, তবে ভীষণ ভালো লাগা একজন মানুষ আছেন যদিও সে মানুষটি জানেনা সে কথা। লিসাও শিল্ডের কাছে জানতে চাইলো তার কোন প্রেমিকা আছে কিনা; শিল্ড জানালো তার কোন প্রেমিকা নেই, তবে ভীষণ ভীষণতর ভালো লাগা এক নারী আছেন যদিও সে নারী জানেনা এ-কথা।

লিসার ভালোলাগা মানুষটির নাম জানতে চাইলে আগে শিল্ডের ভীষণ ভালোলাগা নারীর নাম বলতে হবে লিসা আর শিল্ডের এই দরকষাকষিতে শেষে নিষ্পত্তি হলো সান্ধ্য কফি পর্বে দুজনে দুজনার ভালোলাগা মানুষের নাম একটা কাগজের ভাজে লিখে নিয়ে আসবে।
যথাসময়ে দুজনেই উপস্হিত টেবিলে। শিল্ড ভাবলো ইহুদী হওয়ার অপরাধে হয়তো লিসা কক্ষনো তার নাম লিখবে না হয়তো অন্য কারো নাম লিখে এনেছে, এর চেয়ে বরং তার ভালোলাগা নারীটি যে লিসা সেটা তাকে জানিয়ে বিদায় নেয়াই শ্রেয়। লিসাও ভাবছিলো এতবড় স্বনামধন্য অনকোলজিষ্ট কি আর তার মত………….
যথারীতি কফি এলো। কফি খেতে খেতে দুজনেই জটিল এক রোগীর রোগজটিলতা বিষয়ের আলাপচারিতায় জড়িয়ে পরলো। লিসা এক সময় লক্ষ্য করলো, শিল্ড তার হাতের মুঠোয় রাখা ভাজ করা কাগজটা দলামুচরা করে পাশে ডাস্টবিনে ছুরে ফেলে দিলো। এই প্রথম বিরক্তিভরে লিসা শিল্ডকে দেখিয়ে নিজ হাতে থাকা কাগজটা দলেমুচরে সেই একই ডাষ্টবিনে ফেললো।

-লিসা, আমার ভালো লাগা নারীটি হলে তুমি।
-শিল্ড, আমার ভালো লাগা মানুষটি যে গো তুমি।

লিসা আর শিল্ডের মধুযামিনীর ছুটি শেষ হতে আর দুদিন বাকী। শিল্ড লিসার ছোট্ট বেলার খেলনাগুলো নিয়ে রসিকতা করছিল। স্যুটকেসের পকেট থেকে বেরিয়ে এলো সোনালী কোঁকড়া চুল আর বুদ্ধিদীপ্ত আট নয় বছরের এক ছেলের ছবি। যে ছবিটার কথা লিসা ভুলেই গিয়েছিল।

-এ ছবিটা কার লিসা?
-ও আমার প্রথম ভালোলাগা প্রথম প্রেম।

মৃদু হেসে শিল্ড বললো:” এই ছবিটা আমি নয় বছর বয়সে হারিয়ে ফেলেছিলাম।”
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৩৯
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজকের ব্লগার ভাবনা: ব্লগাররা বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪১


ছবি- আমার তুলা।
বেলা ১২ টার দিকে ঘর থেক বের হলাম। রাস্তায় খুব বেশি যে জ্যাম তা নয়। যে রোডে ড্রাইভ করছিলাম সেটি অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা খুব কম।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাপ, ইদুর ও প্রণোদনার গল্প

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪

বৃটিশ আমলের ঘটনা। দিল্লীতে একবার ব্যাপকভাবে গোখরা সাপের উৎপাত বেড়ে যায়। বৃটিশরা বিষধর এই সাপকে খুব ভয় পেতো। তখনকার দিনে চিকিৎসা ছিলনা। কামড়ালেই নির্ঘাৎ মৃত্যূ। বৃটিশ সরকার এই বিষধর সাপ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের সংগ্রামী জনতার স্লুইস গেট আক্রমণ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২১


(ছবির লাল দাগ দেয়া জায়গাটিতে গর্ত করা হয়েছিল)

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

২৩শে এপ্রিল পাক সেনারা ফুলছড়ি থানা দখল করে। পাক সেনা এলাকায় প্রবেশ করায় মানুষের মধ্যে ভীতিভাব চলে আসে। কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×