এ কথা নির্দ্বিধায় বলতে পারি, আমাদের সাহিত্য-আড্ডা বেশ কতগুলি আড্ডাদিবস অতিক্রম করে আজ আমাদের অনেকেরই প্রাণের আড্ডা হয়ে উঠেছে।
গত শুক্রবার যথারীতি, প্রতি মাসের শেষ শুক্রবারে যেভাবে নিয়মিত আড্ডা দিচ্ছি আমরা, আমাদের আড্ডাটা জমে গেল। এই শীতে খেঁজুরের গুড়ের মতোই জমে গিয়ে জমজমাট। ছোটবেলায় খেঁজুরের গাঢ় ঘন গুড় এবং কনডেন্সড মিল্কের লোভ কিছুতেই সামলাতে পারতাম না। কত যে চুরি করে খেয়েছি! শুধু ছোটবেলায় কেন এই বড়বেলায়ও এই চুরির রেকর্ড আছে। তো যা হোক এখন যদিওবা গুড় কিংবা দুধের লোভ সামলাতে পারি কিন্তু জমাট আড্ডার লোভ কিছুতেই সামলাতে পারি না। তাই প্রতি মাসের শেষ শুক্রবারে অনেক প্রতিকূলতা পেরিয়ে হলেও সাহিত্য-আড্ডার আড্ডায় আমাকে এবং আমার মতো কয়েকজন আড্ডাপ্রেমী, আড্ডালোভী, আড্ডাঅন্তঃপ্রাণকে সামিল হতেই হয়। আমি তো নতুন বৌয়ের কাছে যাওয়ার লোভও সামলে নেই এই আড্ডার প্রেমে। বৌ এখনও জানে না আগে থেকেই তার একটা সতীন রয়েছে।
আমাদের আড্ডার মূল বক্তা, অভিভাবক, বড়ভাই যাই বলি না কেন; তিনি হলেন ব্লগার এ টি এম মোস্তফা কামাল। তিনি বলেন আর আমরা শুনি, বরং বলা ভাল গিলি। কত কিছু যে তার কাছে জানার আছে। বলা যায় তিনি হচ্ছেন একটা জীবন্ত এনসাইক্লোপেডিয়া। প্রতি আড্ডায় আমরা পরবর্তি আড্ডার বিষয়বস্তু ঠিক করে কিছু লিখে আনার ভার তার উপরে দিয়ে আমরা অন্যরা নিশ্চিন্ত থাকি। ফলে এ যাবত বেশ কয়েকটি উৎকৃষ্ট প্রবন্ধ আমরা তার কাছ থেকে পেয়েছি। যেমন এবারের আড্ডায় আমরা তার কাছ থেকে পেয়েছি “গল্পের ভিতর বাহির” প্রবন্ধটি। যারা গল্প লিখতে চান তাদের জন্য প্রবন্ধটি হতে পারে একটি কার্যকর পথপ্রদর্শক।
কবি দুর্জয় একটি চমৎকার প্রস্তাব দিয়েছেন আমাদের আড্ডায়। প্রতি মাসে সাহিত্য-আড্ডার পক্ষ থেকে যেন একটি বই সাজেস্ট করা হয় পড়ার জন্য। এতে কিছুটা হলেও আমরা নির্দিষ্ট সেই বইটি পড়তে উদ্বুদ্ধ হব। নিবিড় পাঠে আমাদের যে আলসেমি তা দূর হলেও হতে পারে এই উসিলায়। জানুয়ারি মাসের জন্য সাহিত্য-আড্ডার পক্ষ থেকে সাজেস্ট করা হয়েছে সৈয়দ শামসুল হকের “মার্জিনে মন্তব্যঃ গল্পের কলকব্জা ও কবিতার কিমিয়া” বইটি। যারা গল্প কবিতা লিখতে চান তাদের জন্য কোনো বই পড়া যদি ফরজ হয় তাহলে আমরা বলব, সেটি এই বইটি। কিভাবে একটা গল্প বা কবিতা লিখতে হয়, গল্প-কবিতা লেখাও যে একটা গুরুমুখী বিদ্যা, এটাও যে শিখতে হয়, শেখাও যায় তা এই বইটি না পড়লে অজানাই থেকে যাবে।
আমরা এই আড্ডায় একটি চমৎকার, একটি অনন্যসাধারণ আইডিয়া নিয়ে আলোচনা করেছি। আইডিয়াটা ঘুড্ডির পাইলটের। একটা প্রিন্টার কিনব সবাই মিলে। কাগজ কিনব, কালি কিনব। নিজেরা কম্পোজ করব, প্রুফ দেখব। প্রচ্ছদ নিজেরাই হাতে এঁকে নেব। বড় একটা স্টাপলার কিনব। তারপর বুঝতেই পারছেন, সব কাজ নিজেরাই করার পণ নিয়ে নিয়মিত কোনো একটি পত্রিকা, সংকলন; এবং বই বের করার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ব।
একজন লেখক তার বই নিজ হাতে প্রিন্ট করেছেন, প্রুফ দেখেছেন, স্টাপল করেছেন, বই বের হওয়ার প্রতিটি ধাপে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন – এর সাথে যে আবেগ থাকবে, ভালবাসা থাকবে; এর যে আবেদন তা কি অন্য কোনো বইয়ে পাওয়া যাবে?