somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রত্যাবর্তন!

০২ রা এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




এই গল্পটা শেষ করা মাত্রই হয়ত আপনি অনুমান করতে পারবেন সেই চরম সত্যিটা, যা আবিষ্কার করতে রায়হানের বহু বছর লেগে যাবে। বহু-বহু বছর পরে হয়ত কোনো এক একাকী মুহূর্তে তার মনে পড়ে যাবে সেই আশ্চর্য গোধূলিবেলার কথা, ঝলসে উঠবে একটা সম্ভাবনার কথা আর সাথেসাথেই তার আফসোস হবে – কেন সে সেদিন সেটা বুঝতে পারেনি। এই আফসোসটুকুই মাত্র। আর কিছু নয়। কেননা বহু বছর পরে সেটা অন্য সময়। ততদিনে শিকড় ছড়িয়ে যাবে ব্যাপক বিস্তৃতি নিয়ে। হেঁচকা টানেও আর শিকড়-বাকড় উপড়াবে না। তাছাড়া সেই অন্যসময়ে বদলে যায় সবকিছুই। মনটাকে কেউ আর খুঁজে পায় না। সেই অন্যসময়ে – গোধূলি আসে, আরেক গোধূলি। তখন সকলেরই মনেহয় – এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাওয়ার তার শ্রেষ্ঠ সময়...
তারপর রাত নামে চরাচর জুড়ে। সকলেই ফিরে যায় শিকড়ের কাছে।


শেকড়ের টানে বহু বছর পর দেশে এসেছে রায়হান। কীযে জাদু বাংলার এই পল্লীগ্রামে কে জানে? খুব বেশি মায়া এখানকার আকাশে-বাতাসে। যতদূরেই যাওয়া হোক মায়ার বন্ধন থেকে কিছুতেই মুক্তি মেলে না। আমৃত্যু এই মায়ার টান টানতেই থাকবে। আমৃত্যু এই মায়ার বন্ধন ছেঁড়ে না। এদেশের মেঠোপথের ভোরের শিশির, ময়দার মতো মিহিন ধূলে ধূসরিত কাঁচা রাস্তা, নদীর বুকে ভেসে চলা কচুরিপানা, পাটক্ষেতের গভীর থেকে ডেকে ওঠা কানিবক, সন্ধ্যার বাঁশঝাড়ে হাজার পাখির কিচিরমিচির, দুর্গাসাগর দীঘির কালো জল, কালোজলে শিশু আর আকাশমনির কিম্ভূত ছায়া, কৃষ্ণচূড়ার আগুনে রঙ, বাঁশমতি ধানখেতের আল ধরে হেঁটে যাওয়া আর বুক ভরে সুবাস নেওয়া এবং আরও কত পল্লিমাধুর্য তাকে প্রতিনিয়ত ডেকেছে, বিদেশ বিভুঁইয়ে মাঝেমাঝেই উতলা করেছে তার হিসাব নেই। এবং কতবার সেসব আহ্বান আর আকুলতা সে উপেক্ষা করেছে তারও হিসাব নেই।

স্মৃতির মধ্যে ভাসতে ভাসতে রায়হান হাঁটতে থাকে উদ্দেশ্যবিহীন। এই প্রকৃতি তাকে আজ যেদিকে নিয়ে যায় যাক। পরম নির্ভরতায় সে তার দায়িত্ব আজ ডেফুলিয়ার কাছেই অর্পণ করে। আর হাঁটতে হাঁটতে পথের একটি বাঁক পেরিয়েই চমকে ওঠে। হায় হায় শৈশবের সেই ভয়জাগানীয়া তিনমাথা খেঁজুর গাছটি কোথায় গেল। তার মন হাহাকার করে ওঠে। ছোটবেলায় এদিকটাতে আসত না ভয়ে। গাছটার তিনমাথায় নাকি তিনটা শয়তান থাকত। একাকী কাউকে পেলে তিন শয়তান তিনমাথায় বসে তাকে নিয়ে বোম্বাস্টিং খেলত। ভয়ংকর সেই গাছটির জন্যই আজ রায়হানের মন ডুকরে ওঠে।

গ্রামে আসার পর থেকে সারাদিন টোটো করে বেড়াচ্ছে রায়হান। অসংখ্য স্মৃতি তাকে কোথায় কোথায় ডাক দিয়ে নিয়ে যায় - মোংলার ঝোর, দাসের টালি, বাওনের কান্দা, তালতলা আরও কত স্মৃতিবিজড়িত স্থান – পা পড়লেই মনে কেমন শান্তি-শান্তি ভাব হয়। যা দেখে তাই ভাল লাগে। তাই বড় আপন মনেহয়। একটা গুবরে শালিক কিংবা দাঁড়কাক দেখেও সে থমকে দাঁড়ায়। গুলতি ছুঁড়ে মারা একটা গুবরে শালিক কিংবা দাঁড়কাক স্মৃতির অলিন্দে এসে টোকা মারে। চোখ সজল হয়ে যায়। শেষ বিকেলের মলিন আলোয় কোথা থেকে এক মন উদাস করা বাতাস এসে দোলা দিয়ে যায়। যেন শৈশব-কৈশোরের হাজার স্মৃতি বয়ে আনে এই বাতাস। গোধূলির মলিন আলোর মতো বিষাদ-করুণ কোনো সুর অজান্তেই যেন উঠে আসে। রায়হান গুনগুনিয়ে ওঠে। গাল ভিজে যায়।

হয়ত কোথাও কোথাও গিয়ে স্মৃতির মিনারটি আর খুঁজে পাওয়া যায় না। মনটা দমে যায়। দীর্ঘশ্বাসে বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। আবার কোথাও গিয়ে মিনারটি খুঁজে পেলে মন ভরে যায় ভাললাগায়। সে ভাললাগার কোনো তুলনা হয় না। আবার কখনো কখনো বুক চিরে বেরিয়ে আসেঃ আহারে! – যখন শোনা যায় – আদু চাচা নেই, বিবেক দা’রা ওপারে গেছে, রানু আপা বিধবা, লিটন পাগল হয়ে গেছে। হয়ত কোনো স্মৃতি মেঘের মতো বৃষ্টি আনে, সে বৃষ্টিতে ভিজতেও ভাল লাগে। ভাল লাগে স্মৃতিতে ভাস্বর কোনো মুখ সামনে এসে দাঁড়ালে। কিশোর বেলার বন্ধুদের অনেকের সাথেই দেখা হয়েছে কিন্তু পরিচিত কিশোরীরা যারা এখন প্রত্যেকেই নিশ্চিত নতুন কিশোর-কিশোরীর মা হয়ে গেছে; অনেকের সাথেই দেখা হয়নি, জীবনে হয়ত আর দেখা হবে না কোনোদিনই। রায়হানের মন দেখা না হওয়া সেই সব কিশোরীর জন্য আকুলি-বিকুলি করতে থাকে।

হায় সে যদি আজীবন সেই বালক থাকতে পারত – খিরাই, শসা, তরমুজ, ফুটি, আর ডাব চুরির সেই স্বর্ণসময় – যখন যে কোনো উৎসব-পার্বণে দলবেঁধে বালকেরা, কিশোরেরা রাত জাগত আর দুষ্টু বুদ্ধিতে শান দিত। দলবেঁধে তারা নারিকেল গাছে উঠত। গাছের মাথা থেকে একজন নারিকেল পেরে নিচের জনকে দিত, সে দিত তার নিচের জনকে, নিচের জন তার নিচের জনকে; এভাবে চার-পাঁচ হাত ঘুরে শব্দহীন নেমে আসত সব ডাব-নারিকেল। কিন্তু একবার যখন সবাই দরিদ্র মরিয়ামদের ডাব চুরির সিদ্ধান্ত নিল, সে রুখে দাঁড়িয়েছিল – গরিবদের কিছু চুরি করা ঠিক না। কিন্তু তার বারণ মানার কার কি ঠেকা পড়েছে। সুতরাং বাধ্য হয়ে সে হুমকি দিয়েছিল, দিনের বেলা সব ফাঁস করে দেবে। হায় সে যদি এমনি করে আজীবন মরিয়ামদের সকল ক্ষতি ঠেকাতে পারত।

সামনের মোড়টা পার হলেই নাকি একটা ছাড়াবাড়ি পড়ে। ভুলেও সে কোনোদিন ঐদিকটায় যায়নি। কত গল্প শুনেছে ঐ বাড়িটাকে নিয়ে! কত কিংবদন্তি! হাঁটতে হাঁটতে ঐ বাড়িটার কাছেই যখন সে পৌঁছে যায়, জঙ্গলে ঘেরা উঁচু জায়গাটা দেখে বুঝতে পারে এটাই সেই ছাড়াবাড়ি। বিকাল গড়াচ্ছে সন্ধ্যার দিকে। কী এক দুর্নিবার আকর্ষণে সে ঢুকে পড়ে জঙ্গলে ঘেরা ছাড়াবাড়িটায়। ঝিঁঝিঁর ঝিঁকঝিঁকানিতে কান ফাটার উপক্রম হলে সে বেশ অবাক হয়। এত জোরালো ঝিঁকঝিঁক সে কখনো শোনেনি। ঝিঁঝিঁদের এই ঝাঁজালো সংগীতে তার বুকের ধুকপুকানি ঢাকা পড়ে যায়।

গাছ আর গাছ। মানুষজন এদিকটাতে আসে না বলে পায়ে চলা পথেরও কোনো চিহ্ন নেই। দুয়েকটা বেজি একটু দূরে সরে গিয়ে রায়হানকে দেখতে থাকে কৌতূহলী চোখ মেলে। একটা গুইল মহাবিরক্তি নিয়ে শুকনা পাতার উপর দিয়ে সরসর করে ছুটে যায়। ওপাশে বড়বড় কয়েকটি গাছের আড়ালে গুল্মঝাড়টি নড়ে ওঠে। হয়ত কোনো শিয়াল, খাটাস দৌড়ে পালায়। কিন্তু রায়হান চমকে ওঠে। তার ভয়ভয় লাগে। আর সামনে এগোবে কিনা ভাবতে ভাবতেই কিসের টানে সে সামনেই এগোয়।

এই বাড়িটা এখন ছাড়া মানে পরিত্যক্ত কিন্তু একদিন গমগম করত মানবিক গুঞ্জনে। হয়ত অনেকগুলি ঘর ছিল, ঘরভর্তি মানুষ ছিল। হাসি-আনন্দে মাখামাখি জীবন ছিল। আজ তার কিছুই নেই। প্রচলিত কিছু কিংবদন্তি ছাড়া গ্রামের কেউ তেমন কিছু জানেও না এই বাড়িটা সম্পর্কে। ছোটবেলায় দাদাভাইয়ের কাছে রায়হান একবার শুনেছিল, এই বাড়ির লোকজন সবাই নাকি কলেরায় মারা গিয়েছিল কয়েকশো বছর আগে। কেউ বাঁচেনি। নির্বংশ হয়ে গিয়েছিল বাড়িটা। লোকজন মনেকরে এই বাড়ি অভিশপ্ত বাড়ি। ভুল করেও কেউ এ দিকটাতে আসে না। কিন্তু রায়হান কিসের টানে আজ এ বাড়িটাতেই নোঙ্গর ফেলে। তিনমাথা খেঁজুর গাছ যেখানটাতে থাকার কথা সেই জায়গাটা পার হওয়া মাত্রই সে যেন অবশ্যম্ভাবী স্রোতের টানে ভেসে চলা কচুরিপানার মতো, ইচ্ছাহীন এগোতে থাকে এই বাড়িটার দিকেই। তার সংস্কারহীন মনের ভিতরে লুকিয়ে থাকা কী এক সংশয় তাকে গ্রামে ফিরে যেতে বলে। কিন্তু অজানা সেই অমোঘ আকর্ষণ তাকে টেনে এনেছে গ্রাম থেকে বহুদূরে এই জনমানবহীন জঙ্গলের জগতে। তার কেবলি মনে হতে থাকে এই জগৎ তাকে কিছু জানাতে চায়, কী যেন দেখাতে চায়। অধীর আগ্রহ নিয়ে সেও অপেক্ষা করে। কৌতূহলী চোখ মেলে ঘুরেঘুরে তাকায় সে সবদিকে।

একটি বড়ই গাছে চোখ পড়ে তার। অবাক বিস্ময়ে সে লক্ষ্য করে গাছটিতে কোনো পাতা নেই। শুধু হলুদ-হলুদ পাকা বড়ই। অস্ফুটে রায়হানের মুখ থেকে বেরোয়, “এত বড়ই!” তলায় গিয়ে ঝাঁকি দেয় সে গাছ ধরে। হাজার হাজার বড়ই পড়তে থাকে নিচে, তার গায়ে-পায়ে-হাতে-মাথায়। হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সে। কিন্তু এত বড়ই দিয়ে সে কী করবে? মনেপড়ে ছোটবেলায় বাড়ির সামনের জামতলা দিয়ে খালিপায়ে যাওয়ার সময় তাদেরকে জামের দরিয়া পাড়ি দিতে হত। আর সেই দরিয়া পাড়ি দিতে গিয়ে অবধারিত ঢেউয়ে তাদের পায়ের পাতা ভিজে যেত আর নিশ্চিতভাবেই প্রত্যেকের পায়ের তলা নীল হয়ে যেত। বাড়ির সামনের ব্যাপক সেই জামগাছটি আজ আর নেই। গ্রামের চিরপরিচিত অনেক কিছুই আর নেই। পরিচিত কোনো কোনো মানুষ, পরিচিত বাঁকা তালগাছটি, পুকুর পাড়ে পানির সমান্তরালে শুয়ে থাকা নারিকেল গাছটি, বিশাল কালো সেই ষাঁড়টি নেই আর। স্মৃতিতে অমলিন হয়ে থাকা কত কিছুই ক্রমশ মলিন হতে হতে গ্রাম থেকে হারিয়ে গেছে।

তার শৈশবজুড়ে ছিল একটা হলুদ হেলিকপ্টারের আনাগোনা। প্রায়ই ভটভট শব্দ করে ডেফুলিয়ার আকাশ পাড়ি দিত। আর সে শব্দ পেলেই দৌড়ে ঘরের ভিতর থেকে বের হয়ে আসত, যেন সেই বিশাল হলদে পাখিটা ইষ্টিকুটুম-ইষ্টিকুটুম করে তাকেই ডাক দিয়ে যেত। কিংবা সেই কুয়াশার মতো শুভ্র রঙের বিমানটি – ভ্রমরের মতো ভূ-উ-উ-ম-ম-ম গুঞ্জন তুলে শরতের আকাশ পাড়ি দিত ডেফুলিয়াকে ছুঁয়ে দিয়ে। সাদা মেঘ আর সাদা বিমানটি লুকোচুরি খেলতে খেলতে উড়ে যেত তার ছোট্ট মনটাকে কেমন উদাস করে দিয়ে। আকাশের অনেক উঁচু দিয়ে উড়ে যাওয়া সেই বিমানটি কেন যেন বিষাদ ছড়িয়ে যেত প্রতিবার। সেই অদ্ভুত বিষাদের হেতু সে কোনোদিনই আবিষ্কার করতে পারেনি। বিদেশ-বিভুঁইয়ে সে হলুদ হেলিকপ্টার আর শুভ্র বিমানটিকে মিস করে। আজ আর হয়ত ডেফুলিয়ার আকাশ পাড়ি দেয় না সেই হলুদ হেলিকপ্টারটি, ডানা মেলে দেয়া সেই শুভ্র বিমানটি। কিন্তু রায়হানের মন বড়ই অবুঝ হয়ে ওঠে। আশা করতে থাকে ওরা আজ আবার ডেফুলিয়ার আকাশ পাড়ি দিক। ভটভট শব্দে হলদে পাখির ইষ্টিকুটুম সুর তুলুক। ভ্রমরের গুঞ্জন তুলে গাঙচিলের মতো ডানা মেলে দিক। এ জীবনে এটাই হয়ত ডেফুলিয়ায় তার শেষ আগমন। হে হলুদ হেলিকপ্টার, ছোটবেলার কুটুম পাখি, উড়ে আয় ভটর ভটর মধুর শব্দ তুলে আরেকবার, শেষবার। আর মাত্র একবার আমার আকাশ পাড়ি দিয়ে যা ভোমরার গুঞ্জন তুলে হে রূপালি বিমান। আমি তোদের পেছন পেছন আর একবার কিছুটা সময় দৌড়ে যাই।

ঝাপসা চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে রায়হান। আজ সব স্মৃতিই যেন অশ্রুর ভাণ্ডার। কোলাডুবানো প্রথম বর্ষার মাছের ঝাঁকের মতো হুড়মুড় করে বহু বছরের উজান ঠেলে স্মৃতিরা আসতেই থাকে। কত হাসি, ঝগড়াঝাঁটি, খেলাধুলা! আহারে সেই দাঁড়িয়াবান্ধা, গোল্লাছুটের দিনগুলি আবার যদি ফিরে আসত! লোহাগাড়া, টাকটুক, জাম খেয়ে জিভ নীল করার সেই আনন্দের দিনগুলি। কিংবা দলবেঁধে হাঁসের বাচ্চার জন্য শামুক খুঁড়ে আনার সেই আনন্দময় দিনগুলি! প্রত্যেকের হাতে থাকত কাঁচি। জমির আইল, রাস্তার ঢাল, ছোপার গোড়া কাঁচি দিয়ে খুঁচেখুঁচে তারা শামুক খুঁজত। মাটির নিচে শামুকের শক্ত খোলে কাঁচির আঘাত লাগলেই ব্যাতিক্রমী এক শব্দে তারা বুঝতে পারত, শামুক আছে। বৃষ্টির দিনে ডোঙ্গায় করেও শামুক টোকাতে যাওয়া হত। আর টোকানো হত শাপলা। পাল্লা দিয়ে তারা ডোঙ্গা বাইত। কে কত বেশি টোকাতে পারে চলত তার প্রতিযোগিতা। রায়হান বরাবর মরিয়ামকে তার ডোংগায় নিতে চাইত। মরিয়াম সামনে বসে শামুক কিংবা শাপলা টোকাত আর সে লগি ঠেলত। আশ্চর্য মরিয়াম তার ডোংগায় উঠলেই সে রাজপুত্র হয়ে যেত আর তার তালের ডোংগাটা হয়ে যেত পংখিরাজ ঘোড়া! কানের ফাঁকে শাপলা ফুল গুঁজে ঘাড় ঘুরিয়ে যখন সে তাকাত, আহ মরিয়ামকে মনে হত অহংকারী রাজকন্যা, বালকবেলার বুকটাতে পাড় মারত যেন। বহুবছর পর আবার রায়হান টের পায় বুকের গভীরে আজও মরিয়াম রাজকন্যাই।

রায়হান বড়ইয়ের হলুদ সমুদ্র পাড়ি দিয়ে আরেকটু সামনে এগোয়। একটা পেয়ারা গাছে অনেক পেয়ারা ধরে আছে। কোনো কোনোটি ইঁদুরে খাওয়া, কোনোটি বাদুড়ে। অক্ষত, ডাঁসাডাঁসাও রয়েছে কতগুলি। একটা ছিঁড়ে দ্বিতীয়টির জন্য হাত বাড়াতে গিয়ে ছিটকে দুই হাত পিছনে সরে আসে সে। একটা সাপ! পাতার ফাঁকে পেয়ারার কাছে ভয়াল মাথাটি, তীব্র চোখে ফেনা ধরে তার দিকে তাকিয়ে আছে। মুখ দিয়ে ভয় ধরানো হিসহিস শব্দ করছে। তার গা ছমছম করে ওঠে। বুকে থুতু ছিটায়। বড় বাঁচা বেঁচে গেছে। সে নিচের দিকে ভাল করে তাকিয়ে হাঁটতে থাকে পাছে কোনো সাপের গায়ে পা না দিয়ে ফেলে। এই সব ছাড়াবাড়ি সাপের আস্তানায় পরিণত হয় কালেকালে। আর যক্ষের ধন পাহারা দেয় সেই সব সাপেরা।

হাঁটতে হাঁটতে একটা বড় পুকুরের ধারে পৌঁছে যায় সে। শানবাঁধানো ঘাট। শত বছরের শ্যাওলা ধরা সবুজে যেন গালিচার পেলবতা। মাকড়সার জাল সরিয়ে সে সবুজ গালিচায় আরাম করে বসে। কয়েকশ বছরের পাতার পঁচানি জমতে জমতে পুকুরের পানি কুচকুচে কালো দেখায়। এদিক সেদিক চ্যালা মাছ, কর্কিনা মাছ ছুটাছুটি করে, বড়বড় পায়ে কিছু নাম না জানা পোকা পানির উপর দিয়ে দিব্যি দাবড়ে বেড়ায়। চঞ্চল খলসে মাছ ছলাৎ ছলাৎ ঘাউ মারে ঘাটের আশেপাশে। এইসব সে মনোযোগের সাথে দেখে। ভাবে সাথে একটি বড়সি থাকলে টপাটপ খলসে মাছ ধরা যেত। বড়সি দিয়ে মাছ ধরায় ওস্তাদ ছিল রানু আপা। আদার দিয়ে পানিতে ফেলতে পারলেই হল। যেন তার গায়ের ঘ্রাণেই একের পর এক মাছ উঠে আসত। শুনেছে একবার নাকি তার বড়সিতে দুটি মাছ একত্রে উঠে এসেছিল – একটি বড়সিতে গাঁথা, আরেকটি গাঁথা-মাছটির লেজ কামড়ে ধরে। সকলে বলাবলি করছিল সেই মাছদুটি ছিল এক সুখী দম্পতি। একজনকে শিকার হতে দেখে অন্যজন তাকে রক্ষা করতে চেয়েছিল। হায় সেই মাছ-দম্পতির অভিশাপ লেগেছিল কি রানু আপার জীবনে?

শানবাঁধানো ঘাটের সবুজ গালিচায় বসে স্মৃতির জাবর কাটতে কাটতে হঠাৎ চমকে ওঠে রায়হান। কে যেন জাল মেরেছে ঐ পাড়ে, একটা নুয়ে পড়া আম গাছের আড়ালে। কে আসবে এখানে এই অসময়ে? অথচ কোনো একদিন এই পুকুরে নিশ্চয়ই লোকেরা আসত নিয়মিত – বৌঝিরা গোসল করত; ছেলেপুলেরা নৈল খেলত; পুরুষেরা কখনো কখনো জাল মারত। প্রতিদিন এই পুকুর অপেক্ষা করত মানুষ-মানুষী আর তাদের বাচ্চাদের জন্য। আহা কত-শত বছর ধরে অপেক্ষায় আছে এই পুকুর, নিঃসঙ্গতার কত বছর পরে সে আজ এসেছে এখানে!
আবার চমকে ওঠে রায়হান, আরও জোরাল জাল মারার শব্দে। কে যেন বলে ওঠে – বাজান, বাজান এত্ত মাছ! রায়হান পুকুরের পাড়ে-পাড়ে তাকিয়ে ছোট্ট ছেলেটিকে খোঁজে, তার বাপজানকে খোঁজে। কিন্তু কোথাও কেউ নেই। অথচ সে স্পষ্ট শুনতে পেয়েছে – বাজান, বাজান এত্ত মাছ! নুয়ে পড়া ঝাঁকড়া আমগাছটি থেকে মুকুলের ঘ্রাণ নিয়ে আসা বাতাসের সাথে মাছের গন্ধও কি একটু ছিল না! রায়হানের মেরুদণ্ড বেয়ে একটা শিহরণ নেমে যায়। এই বাড়ির মুখরিত জীবনের না-লেখা ইতিহাস আজ বুঝি মূর্ত হয়ে উঠতে চায় তাকে পেয়ে। রায়হানের এমনই মনে হতে থাকে। তবে কি সেই ইতিহাসই তাকে ডেকে এনেছে আজ এই বাড়িতে? তার কেবলি মনে হতে থাকে এখানে সে মোটেই নিঃসঙ্গ নয়। আরও অনেকেই আছে, তাকে দেখছে গাঢ় মনোযোগের সাথে। বসন্তের বাতাস পুকুরের পানিতে ঢেউ তুলে গেলে তার মনে হয়, বৌঝিরা কলসি ভরে পানি নিতে এসে পানিতে দোল দিচ্ছে কলসি দিয়ে। সেই ঢেউ এসে তার পা ভিজিয়ে দিচ্ছে। ভেজা পায়ে রায়হান উঠে দাঁড়ায়। ফেরা দরকার। মনের গহীনে তার বেজে ওঠে সতর্কতার ঘণ্টাধ্বনি। অনুভব করে এক মায়ার জগৎ তাকে টেনে নিচ্ছে, একেকটি হেঁচকা টানে গভীর থেকে আরও গভীরে।

তাদের বাড়িতে প্রথমবার যখন গভীর নলকূপ বসানো হয়েছিল, একরাতে সব নলগুলি আটকা পড়ে গিয়েছিল মাটির গভীরে। বাড়ির সব মানুষকে ডেকে তোলা হয়েছিল ঘুম থেকে। সব পুরুষ যোগ দিয়েছিল নলকূপ বসানোর লোকগুলির সাথে। তারপর সবাই মিলে আপ্রাণ চেষ্টায়, জোরে টানো – হেইয়োর হেঁচকা শক্তিতে টেনে তোলা হয়েছিল সেই নলগুলি। সেবার অদ্ভুত সব গালাগাল সে শিখেছিল লোকগুলির মুখে শুনতে শুনতে। আর শিখেছিল অপূর্ব এক গান – “মাইয়ার বালে ঝুনঝুনি বাজে, বাজে নানান তালে, মাইয়ার বালে ঝুনঝুনি বাজে” – যদিও অশ্লীল কিন্তু তার অদ্ভুত সুরোন্মাদনা লোকগুলিকে অমানুষিক পরিশ্রমের প্রণোদনা জোগাত; সারারাত জেগে জেগে কাজ করার একঘেয়েমি দূর করে দিত। আর যারা শুনত সেই গান, সারাদিন তার রেশ রয়ে যেত। যত দিন ছিল সেই লোকগুলো তারও বহুদিন পর পর্যন্ত ঘুমের মধ্যে লোকেরা শুনতে পেত সেই গান। কৃষকেরা কাজ করতে করতে হঠাৎ হঠাৎ শুনতে পেত সেই গান। এই হট-হট গরুকে তাড়া দিয়ে গেয়ে উঠতঃ “মাইয়ার বালে ঝুনঝুনি বাজে”---। এমন কি বৌঝিরা ঢেঁকিতে পাড় দিতে গিয়েও গুনগুনিয়ে উঠত সেই সুর। তাদের পুরো এলাকাটাই বহু-বহু দিন পর্যন্ত যেন ঘিরে ছিল সেই আশ্চর্য সুরের উন্মাদনায়।

আর দেরি করা ঠিক নয়। ফিরে যাওয়া দরকার। সিঁড়ির এক ধাপ উপরে উঠে দাঁড়ায় রায়হান। কিন্তু পিছনে পানিতে কিসের আলোড়ন? ঘুরে তাকায় সে। কে ও ডুবসাঁতারে এগিয়ে আসছে ঘাটে? এক ধাপ নেমে সে পানির কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়ায়। কে মেয়েটা, মন্দালস গতিতে এগিয়ে আসছে? মরিয়াম কি? কিন্তু মরিয়াম এই অসময়ে এখানে কিকরে হবে? তাছাড়া সেতো কবেই হারিয়ে গেছে। গ্রামের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েটি। কেউ কোনোদিন তার খোঁজ আর পায়নি। সবাই বলাবলি করত, অনুমান করত - নিশ্চই কোনো নাগরের হাত ধইরা ভাইগা গেছে। খুব কষ্ট পেয়েছিল সে। অব্যক্ত সে কষ্টের কথা কোনোদিন কাউকে জানানো যায়নি। আজও সেই বিরহী অনুভূতি তাকে সিক্ত করে তোলে। গাল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে জলে। মৃদু ঢেউ তুলে টলে ওঠে জল। কী আশ্চর্য জলের জাদুতে, মরিয়াম বদলে যায় বিশাল এক গজার মাছে; ভেসে ওঠে সাবমেরিনের মতো। দুটি সিঁদুরে লাল চক্ষু তীব্র জিঘাংসা নিয়ে তার দিকে অবিরাম চেয়ে থাকে। খলসে মাছের ঘাউয়ানি আর নেই। চ্যালা, কর্কিনা আর বড়বড় পায়ের পানিপোকাগুলিও দেখা যায় না কোথাও। মহাদানবের আতংক ছড়িয়ে পড়েছে গোটা পুকুরেই। রায়হানের ঘোর লেগে যায়। মানুষের চেয়েও বড় বিশাল আকৃতির গজার মাছটির চোখের দিকে তাকিয়ে সে সম্মোহিত হয়ে পড়ে। এগোতে থাকে লালদুটি চক্ষুর দিকে। টকটকে লাল চোখ তাকে মরিয়ামের গাঢ় লিপস্টিক মাখা ঠোঁটের কথা মনেকরিয়ে দেয়। মরিয়াম যখন কাঁচপোকা-রঙ সবুজ সালোয়ার কামিজ পরে, ঠোঁটে গাঢ় লিপস্টিক মেখে হেঁটে যেত তার মনে হত একটা দুরন্ত টিয়া পাখি – এক্ষুনি উড়াল দেবে আকাশে। সেই পাখিটা সে পুষতে চেয়েছিল, একান্ত আপনার করে পেতে চেয়েছিল কিন্তু কোনোদিন তাকে ধরবার সাহস সে পায়নি। আজ কিন্তু সে নির্ভিক এগোতে থাকে টিয়া পাখিটা ধরার জন্য। আরও এক ধাপ নামে পানির কাছাকাছি। আশ্চর্য গজার মাছটি ঠিক ততটুকুই পানির গভীরে চলে যায়। রায়হানের মনে হয় টিয়া পাখিটা আর একটু হলেই ধরা যেত। আর একটু হাত বাড়ালেই। সুতরাং সে আবার চেষ্টা করে, আবার চেষ্টা করে। কিন্তু গজার মাছটি ঠিক ততটুকুই পানির গভীরে চলে যায় যতটুকু রায়হান পানিতে নামে। ভীষণ চালাক টিয়া পাখিটা ধরার জন্য রায়হান নামতে থাকে সিঁড়ি বেয়ে। এই সময় কার না-না চিৎকারে সে চমকে ওঠে। তার ঘোর কেটে যায়। হাঁটুপানি থেকে লাফিয়ে সে উপরে উঠে আসে। মেছোপেত্নির গ্রাস থেকে রক্ষা পাওয়ার স্বস্তি ছাপিয়ে তার রক্তের ভিতরে আবেগ উছলে ওঠে বহু-বহু বছরের অবদমন ভেঙে। শরীরের প্রতিটি পশম দাঁড়িয়ে যায় সজারুর কাঁটার মতো। এই স্বর তার বড় চেনা। মায়াবী এই স্বরে ছিল কিন্নরীদের যাদুমন্ত্র। একটু হাসির শব্দ, একটু কাশি কিংবা একটু অস্ফুট ধ্বনিতেও সে রোমাঞ্চিত হয়ে উঠত। রায়হান চারদিকে তাকায়। নাহ কোথাও কেউ নেই। সে কি তবে ভুল শুনেছে। তাই বা কী করে হয়। স্পষ্ট সে শুনল না-না চিৎকার। যেন তাকে আর সামনে এগোতে বারণ করা হলো। সতর্ক করা হলো সমূহ বিপদ থেকে। কিন্তু কোথায় সেই শুভাকাঙ্ক্ষী। রায়হানের সমস্ত অস্তিত্বজুড়ে হাহাকার ওঠে তাকে দেখার জন্য। তার দৃঢ়বিশ্বাস জন্মায় মরিয়াম এখানেই আছে কোথাও। খুঁজলেই হয়ত পাওয়া যাবে। সুতরাং সে আশেপাশে সবদিকে তাকায়। কোথাও কেউ নেই। বসন্তের বাতাস কানেকানে কার দীর্ঘশ্বাস শুনিয়ে যায়। মরিয়ামের কি? সমগ্র শক্তি দিয়ে রায়হান চিৎকার করে, মরিয়াম ------। একটা বিরহী কোকিল কাছেই কোথাও ডেকে ওঠে। কিন্তু মরিয়াম আর কোথাও নেই। কোথাও নেই। আবেগের পাহাড় সামনে এসে দাঁড়ালে যুক্তির ছুরি কী আর করতে পারে। তবু সেই ছোট্ট ছুরিটাই অভিমানী রায়হানকে ফিরে যেতে বলে। রায়হান এক পা বাড়ায় স্থির হয়ে দাঁড়ায় আর ডানে-বামে-পিছনে তাকায়। মনের ভিতরে তার তখনও বিশ্বাস, মরিয়াম তার সাথে লুকোচুরি খেলছে। যুক্তির ছোট্ট ছুরিটা তবু তাকে ক্ষীণ শক্তিতেই ঠেলতে থাকে। সে ফিরতে শুরু করে। হঠাৎ এক কিশোরীর ক্রন্দন তাকে বিচলিত করে তোলে - আমি কোথাও যাইনিরে! এই খানেই আছি! এই খানেই! অন্ধকারে কাউকেই তার চোখে পড়ে না। শুধু অনুভূত হয় কাছাকাছিই আছে কেউ। খুব কাছে। ঘাড়ের উপর তার দীর্ঘশ্বাস সে টের পায়; যে টানছে তাকে সর্বস্ব শক্তি দিয়ে। রায়হান বুঝতে পারে, এই মায়ার জগতে সে আটকা পড়ে যাচ্ছে এক গভীর রাতে মাটির গভীরে আটকা পড়ে যাওয়া নলগুলির মতো। নলগুলি টেনে তোলা দরকার। সে চেষ্টা করে সবাইকে জাগানোর, যুক্তির ছোট্ট ছুরিটা ধারানোর। তার মনে পড়ে প্রিয় সন্তানের লাবণ্যময় মুখ। অপেক্ষায় আছে তার ফিরে যাওয়ার। তার মনে পড়ে দৈনন্দিন জীবনের নানান সব প্রয়োজন। সবাইকে নিয়ে সে কাছি ধরে টান মারে –
জোরসে টান – হেইয়ো!
আরো জোরে – হেইয়ো!
মারো টান – হেইয়ো!
আ-রো জোরে – হেইয়ো!




দৌড়াতে শুরু করে রায়হান। আর পিছনে পড়ে থাকে ইতিহাস – বৌঝিদের কলহাস্য, গোসলের শব্দ; কারা যেন নৈল খেলছে; কে যেন জাল মারল মাত্র; বাজান-বাজান এত্ত মাছ! শিশুদের কলরব – এই পুকুরে কুমির নাই, হাপুস-হুপুস নাইয়া যাই! এই পুকুরে কুমির নাই, হাপুস-হুপুস নাইয়া যাই! ছাগল কুড়কুড়ি ভাই! কিরে ভাই? তোমার ছাগলে ধান খাইছে ক্যা? ধান খাইবে না তো পাতাটি খাবে? একটা ছাগল বান্ধা যাবে। পিছনে ঝগড়ার শব্দ। গালাগালি! কান্নাকাটি! কে যেন চিৎকার করে কাকে ডাকছে। ভাইজান! ভাইজান! গোলবানু! গোলবানু! মা! মা! বহু মানুষের কাতরোক্তি – পানি! একটু পানি! ঘরে ঘরে মরাকান্না! ঘরে ঘরে তীব্র শোক! তারপর কান্নারও কেউ নেই। আছে শুধু বাড়িভর্তি লাশ! লাশের পঁচা গন্ধ নাকে এসে ধাক্কা মারে কয়েকশ বছরের ওপার থেকে।

রায়হানের গতি আরও বেড়ে যায়। মায়ার জগৎ থেকে বেরোতেই হবে। প্রাণপণে সে ছুটতে থাকে। কিন্তু হঠাৎ এক কিন্নরী কণ্ঠের তীব্র আর্তস্বর তার কানে এসে ধাক্কা মারে খুব কাছ থেকে। বাঁচাও! বাঁচাও! তবে কি মরিয়াম ---? রায়হানের চলার গতি শ্লথ হয়ে পড়ে। মরিয়াম তার বুকের গহীনে কুলুকুলু বয়ে চলা চিরকালীন আবেগ। তাকে সে কিকরে ফেলে যায় এই মায়ার জগতে? মায়ার জগৎ রায়হানকে আবার তীব্রভাবে টেনে ধরে। কানে আসে মরিয়ামের আর্তকণ্ঠস্বর! তার প্রাণপণ লড়াইয়ের শব্দ। লড়ে যাচ্ছে মরিয়াম! গ্রামের সবচেয়ে ডাকাবুকো, তেজী মেয়ে মরিয়াম! শুকনা পাতার উপরে জাপটাজাপটির শব্দ ভেসে আসে! প্রাণপণ লড়াই লড়ে যাচ্ছে মরিয়াম! গোঙাচ্ছে মরিয়াম! কে যেন গলা টিপে ধরেছে তার। হেরে যাচ্ছে মরিয়াম! মরিয়াম হেরে যাসনে! হেরে যাসনে! লড়ে যা! লড়ে যা! মরিয়াম, আমাদের সাহসী মরিয়াম! আমাদের অহংকার! আমাদের গর্ব! আমাদের বালকবেলার গোপন প্রেম! আমাদের স্বপ্ন তুই! হেরে যাসনে! হেরে যাসনে! ফিরে আয়! ফিরে আয় মরিয়াম!

থেমে যাওয়ার ঠিক আগমুহুর্তে কে যেন বুকের গহীনে বলে ওঠে – বাবা, বাবা, কবে আসবে? যুক্তির ছুরিটা ডিনামাইট হয়ে উঠলে আবেগের পাহাড়ের শক্তি কি পথ আগলে দাঁড়ায়? রায়হান জোরালো এক হেঁচকা টানে নিজেকে ছুটিয়ে নিয়ে ছুট লাগায় সামনের দিকে।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৫:৫২
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×