somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাইটার

০২ রা জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

##
- অভ্র কে?
- জ্বী আমি ।
- যান, আপনাকে ডাকছে ।
যাক শেষ পর্যন্ত ডাক দিল । ও তো ভেবেছিল আজকে আর ডাকবেই না । এইখান থেকেই ফিরে যেতে হবে ।
- আসতে পারি স্যার?
- আসুন আসুন । বসুন । তা কি খবর আপনার?
- জ্বী স্যার ভালো । স্যার একটা লেখা এনেছিলাম ।
- জই দেখি । এতক্ষণ বলছেন না কেন? এটা ঠিক করেন নি । আরও আগে বলা উচিৎ ছিল আপনার । আপনার লেখা বলে কথা ।
- স্যার কেন শুধু শুধু লজ্জা দিচ্ছেন?
- আপনার লজ্জা লাগছে, কিন্তু সত্যি কথা বলতে আমার খুব ভালো লাগে । কাউকে তার প্রাপ্য সম্মানটা দেওয়া উচিৎ ।
বেশ মনোযোগ দিয়ে লেখাটা পড়লেন সাহিত্য সম্পাদক । তাঁর সম্পাদনায় সাহিত্য নিয়ে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশিত হয় । বেশ ভালো জনপ্রিয়তা রয়েছে । তিনি অভ্র এর পরিচিত ।
- আমি চিন্তা করছি আপনার গল্পগুলো নিয়ে এবারের বইমেলায় একটা গল্পগ্রন্থ প্রকাশ করব । নিজের টাকায় । আপনার আগের গল্পগুলোও আছে আমার কাছে, যত্ন করে রেখে দিয়েছি ।
- জ্বী স্যার আপনাদের দোয়া থাকলে সব হবে । কিন্তু স্যার, আমার আগের লেখাগুলো যে প্রকাশ হল না?
- ওইতো বিভিন্ন ঝামেলায় হয়নি । আর আমি তো ওগুলো জমা করে রেখেছি । এখনই প্রকাশ করে দিতে চাইনা । বইমেলায় সবার জন্য একটা সারপ্রাইজ হিসেবে থাকবে ।
- জ্বী স্যার । স্যার এটা কি প্রকাশ হবে?
- হবে না মানে? আমি কালই জানাবো আপনাকে ফোন করে ।
- ধন্যবাদ স্যার ।

##
সময়টা এখন মধ্যদুপুর । মাথার উপর যেন আগুন ঢালছে সূর্য । পুরো শরীর ঘামে ভিজে আছে । অস্বস্তিকর ব্যাপার । কিন্তু এখন তেমনটা খারাপ লাগছে না অভ্রর । খুশি ও । প্যান্টের পকেটে দুই হাত গুঁজে হাঁটছে । গুণগুণ করে একটা পরিচিত গান গাইছে । সম্পাদকের কথাগুলো এখনো ওর কানে বাজছে । ওর গল্প নিয়ে বই । ওয়াও, জটিল । তার উপর খরচও ওনার । আর ভাবতে পারছে না ও ।
ওর আগের গল্পগুলো যদিও ছাপা হয়নি আজ পর্যন্ত । তাতে কি? উনি তো বলেছেনই ওইগুলা হবে সবার জন্য সারপ্রাইজ ।

##
- থাপড়াই গালের দাঁত সব ফেলাই দেব বেয়াদব । মুখে মুখে কথা বলস । রাইটার হবি? রাইটার? গাঁজাখুরি কি সব লেখস, আর নিজেরে রাইটার মনে করস? কোনো রাইটার-ফাইটার না, ইঞ্জিনিয়ার হবি তুই ।
- কিন্তু ভাইয়া, আমার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার কোনো ইচ্ছা নাই । আর এখন খারাপ লেখি তো কি হইছে, সামনে আস্তে আস্তে ভালো লিখব । তবে অতটা খারাপও যে লেখি তা কিন্তু না ।
রাইটার হওয়ার বিপক্ষে যিনি কথা বলছেন, তিনি অভ্রর বড় ভাই । একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করেন । অবস্থা খুব ভালো । পরিবারের দেখাশোনা করেন ।
তিনি চান না অভ্র রাইটার হয়ে নিজের ফিউচার ধ্বংস করুক । এরচেয়ে ইঞ্জিনিয়ার হলে সব দিক দিয়েই সুখে থাকবে ।
আর অভ্রর শুধু একটাই স্বপ্ন, রাইটার হওয়া । সবাই বলে ও ভালো লেখে । যা কারণে স্বপ্নটা আরও গভীর হয়, আশা বাড়তে থাকে । সম্পাদক তো বলেছেই, ওর বই বের হবে সামনে । আর কি চাই? ওইটার ফলে মনে জোর পাচ্ছে একটু ।
- আর কয়েকদিন অপেক্ষা কর । আমার বই বের হবে । তখন সব বুঝবা ।
- তোর বই বের হবে? কোন বেকুবে তোর বই বের করবে?
- আছে । দেশে ভালো বেকুবের সংখ্যাও কম না ।

##
- জানো, গতকাল আপুর শ্বশুরবাড়ি গিয়েছিলাম । আমাকে সবার সে কি আদর । কেমন আছি, কি করছি, কি খাব । মানে আমি বসতে না বসতেই সবার দৌড়াদৌড়ি শুরু । এরপর...
মেয়েটা যে কত কথা বলতে পারে, না দেখলে বোঝা যাবে না । দিন শেষ হয়ে রাত হই যাবে, কিন্তু ওর কথা শেষ হবে না । তার উপর বেশিরভাগ কথাই অভ্রর শুনতে ইচ্ছা করে না ।
এই যে এখন, মেয়েটার গতকাল তার আপুর শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা শুনতে মোটেই আগ্রহবোধ করছে না অভ্র । কিন্তু ওরে বলবে কে?
যদিও আগে একবার বলে ফেলেছিল, নিষেধ করেছিল । তারপর আর কি? শুরু হয়ে গেল কান্না । সাথে একগাদা অভিযোগ । ‘তুমি আমার কথা শুনতে পছন্দ কর না, আমাকে সহ্য করতে পার না, আমাকে পছন্দ কর না ।’ আরও অনেক...
তাই আর কখনও ওকে নিষেধ করেনি অভ্র । ভালোবাসার মানুষটাকে হাসিমুখে দেখতে ভালো লাগে অনেক ।
- জানো পূণ্য, আজকে গিয়েছিলাম পত্রিকা অফিসে । সম্পাদকের সাথেও কথা হয়েছে ।
- কি বলল? কখন ছাপাচ্ছে লেখা?
- আরে ওইটা তো কিছুই না । আসল কথা হল, তিনি আমার সব লেখা নিয়ে একটা বই বের করতে যাচ্ছেন আগামী বইমেলায় । তাও নিজের খরচায় ।
- সত্যি?
- হুম । আচ্ছা আমি কেমন লিখি আসলে?
- এটা আবার নতুন করে বলতে হবে? অনেক ভালো লিখ ।
- জানো, নিজেকে অন্য কেউ মনে হয় । যখন শুনি আমি আসলেই ভালো লিখি । রাইটার হবার খুব ইচ্ছা...

##
- কিরে নতুন কোন লেখা পাঠাস নাই?
- হুম, গত পরশু কল করার কথা ছিল আমাকে । করেনাই । চিন্তা করতেছি আজকে আমি করে জিজ্ঞেস করব । তবে জিজ্ঞেস না করলেও চলবে । উনি বলছেন, সব গল্প দিয়ে বই বের করবেন বইমেলায় । এখন না ছাপিয়ে তখনের জন্য সারপ্রাইজ রেখে দিয়েছেন । আশা করি, এই লেখাটাও বইয়ের জন্য জমা পড়ে গেছে ।
- বলিস কি? সত্যি?
- তো আমি কি মিথ্যা বলছি?
- ওরে ওরে, আমরা তাইলে রাইটার অভ্রর বন্ধু?
- ধুর, ফাইজলামি করিস না ।
- আমি কিন্তু সিরিয়াস । দোস্ত, যখন সবাই তোর অটোগ্রাফ নেবে, তখন আমারেও একটা দিস । তবে একটু অন্যভাবে ।
- কিভাবে?
- মানে, তোর ওইসব ভক্তদের মধ্যে সুন্দরী মেয়ে কি কম থাকবে? আমি ভিড়ের মধ্যে অটোগ্রাফ নিতে গেলে তুই ডেকে তোর কাছে নিয়ে সবার সাথে তোর বেস্ট ফ্রেন্ড হিসেবে পরিচয় করাই দিবি । মনে কর, প্রায় সব মেয়ে তোরে পছন্দ করে বসে থাকলেও দুই-একটা তো আমার ভাগ্যেও আসতে পারে ।
- ওওও, আইচ্ছা ঠিক আছে ।
- দিবি তো? ওয়াদা?
- হ, ওয়াদা ।
- থ্যাংকস দোস্ত । তুই যত ভালো লেখস, তাতে ঐ দিন আর বেশী দূরে নাই । ভাবতেই খুশি খুশি লাগতেছে ।

##
- হ্যালো, আমি অভ্র । সম্পাদক সাহেব আছেন?
- না নেই । আমি সহকারী সম্পাদক বলছি ।
- ও । আচ্ছা আমার লেখাটা ছাপা হবে কি না বলতে পারেন?
- ভাই আপনে কি কিছুই বুঝেন না?
- কি বুঝব?
- শুনেন, আপনাকে সোজাসুজি বলতেছি, ফ্রেশ মাইন্ডে, আপনার লেখাগুলো বলার মত, প্রশংসা করার মত তেমন কোন লেখা না । যেই কারণে আপনার কোন লেখা ছাপা হয়নি আজ পর্যন্ত । আপনার মন রক্ষার্থে হয়ত সম্পাদক সাহেব বলছেন, ছাপা হবে পরে । কিন্তু সেই ‘পরে’টা যে কখন আসবে, আদৌ আসবে কি না, নিশ্চিত হয়ে বলা যাচ্ছে না । আপনি শুধু শুধু অপেক্ষা করছেন । একটা ফ্রিতে এডভাইস দিই, এসব লেখালেখি বাদ দেন ।
- কিন্তু উনি যে বললেন, বই...
- এতক্ষণ কি বুঝাইলাম ভাই? ওসব বই-টই কিচ্ছু না । আর আপনার কোন লেখাও জমা নেই । কোথায় গেছে ওইসব কাগজ কে জানে?
- ওওওওওওওও...
ফোন রেখে দিলেন সহকারী সম্পাদক । পাশেই দাঁড়িয়ে আছেন সম্পাদক সাহেব । বুঝতে পারছেন না, এভাবে বলে দেওয়াতে কি হবে এখন?

##
কি হল এইটা? আমি আসলেই কিচ্ছু লিখি না? এক্কেবারে না? আমাকে এতদিন কেউ বললও না । কেন? আমাকে অনেক পছন্দ করে, ভালোবাসে, তাই হয়ত । কিন্তু বললে তো আমি আরও ভালো কিছু করতে চেষ্টা করতে পারতাম । হঠাত করেই সবকিছু কেমন জানি অন্যরকম লাগছে । মনে হচ্ছে আমি অনেক নিচে পড়ে যাচ্ছি । খুবই অদ্ভুত...
রাস্তার একপাশ দিয়ে হাঁটছে অভ্র । নিজেকে খুব ছোট কিছু মনে হচ্ছে ।
আমার বই বের হবে না? সুন্দর একটা প্রচ্ছদে বইয়ের নামের নিচে লেখা থাকবে না আমার নাম, অভ্র? কেন?
আমি আসলেই খুব খারাপ লেখি । আমার লেখালেখি বাদ দেওয়াই উচিৎ । এইসব আলতু-ফালতু লেখা লেখার চেয়ে না লেখাই ভালো ।
কিন্তু আমার যে রাইটার হওয়ার খুব ইচ্ছা । আমার একমাত্র স্বপ্ন...।

##
আরও দুইদিন পর...
দুপুর ২টা । অন্য একটা পত্রিকা অফিসে বসে আছে অভ্র । হাতে একটা নতুন গল্পের পান্ডুলিপি । তবে এবারের লেখাটা গল্প নয় ।
নিজেকে নিয়ে লিখেছে অভ্র । নিজের স্বপ্ন নিয়ে, রাইটার হবার স্বপ্ন নিয়ে, কষ্ট পেয়ে ভেঙ্গে পড়ার পরও নিজেকে সামলে নেওয়া নিয়ে, স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য চেষ্টা করে যাওয়া নিয়ে ।
অভ্র হাল ছাড়ছে না । রাইটার ওকে হতেই হবে । এবারও হয়ত ওকে মিথ্যে স্বান্তনা শুনতে হবে । হোক, শুনবে ও । কিন্তু তারপরও ওর চেষ্টা চালিয়ে যাবে । গিয়ে দাঁড়াবে অন্য কোন পত্রিকা অফিসের সামনে । হাতে অন্য কোন লেখা গল্প নিয়ে । বুক ভরা আশা নিয়ে ।
কে জানে, হয়ত একদিন সব স্বপ্ন অনুযায়ী হবে ।

- অভ্র কে?
- জ্বী আমি ।
- যান, আপনাকে ডাকছে ।

উঠে দাঁড়াল অভ্র । একজন মানুষ, যে মনের মধ্যে রাইটার হবার স্বপ্নকে পুষে রেখেছে অনেক যত্নে ।
এগিয়ে যাচ্ছে ও । পান্ডুলিপিটা ধরে আছে হাতে, খুব শক্ত করে ।।

##the end##
১০টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×