অধমের নাম অনির্বাণ চট্টোপধ্যায়।
মার্কিন মুলুকে এক বেয়াড়া বিমানবন্দরের ডিপারচার লাউঞ্জে ত্রিভঙ্গ মূরারী হয়ে বসে আছি্ এখন আমার মুখের দিকে তাকালে লোকে একটা শান্ত শান্ত ভাব লক্ষ্য করবে। কেউ বুঝতে পারবে না আমার ভিতরে কীসব ঘটে গিযেছে এবং এখনও ঘটছে।
সাহেবী এয়ারপোর্টের সোফাটা বেশ নরম, যুবতী-অঙ্গের মতো সুখদায়ক-ওই সোফার ওপরেই বহু-ভ্রমনে ক্লান্ত শরীরটা স্থাপন করেছি। শ্রীঅঙ্গকে টিক বাংলা ‘দ’ এর মত দেখাচ্ছে। মেঝে থেকে উঠে সোজা হাঁটুর কাছে একটা ভাঁজ পড়েছে। ‘দ’ এর দ্বিতীয় ভাজ পড়েছে ফিমার বোনের কাছে।
অস্থি পেশীর নাম ঠিকানা আমার জানবার কথা নয়। কিন্তু দেশে থাকতে একবার বাথরুমে পা পিছলে পড়ে বাম অঙ্গের ফিমার বোনের নেকটা ভেঙেছিল। তা ভোরবেলায় খালি পেটে হাড় ভাঙলুম আর লোকে বললো কিনা মদের নেশায় পদস্খলন হয়েছিল! মদ আমি একটু আধটু খেয়ে আনন্দ পেয়ে থাকি, কিন্তু তা বলে ভোর সওয়াসাতটার মধ্যে কতটুকু হুইস্কি টানা যায় যাতে আক্কেল হারিয়ে পা ভাঙতে পারে? তাছাড়া আমি লেট লতিফ মানুষ। বিশ্ব-সংসারে এমন কোনো আকর্ষণ নেই যার লোভে আমি সাতটার আগে শয্যাত্যাগ করতে পারি। সকাল সকাল ওঠা অভ্যাস করাবার জন্য আমার পিতৃদেব কি কম চেষ্টা করেছিলেন।
এই দেশে বসে বসে শুধু শুধু কেন পিতৃদেবের পবিত্র স্মৃতি ধরে টানা টানি করছি! দেখুন একটা কথা থেকে কেমন অন্য পাঁচটা কথা এসে যায়। কোথায় নিজের উরুভঙ্গ আর কোথায় পিতৃদেবের উপদেশাবলী। যা বলছিলাম, সেই ভাঙা ফিমারের মধ্যে কতকাতা মিডেকেল কলেজ হাসপাতালের হাউস সার্জেন মস্ত এক গজাল পুরে দিয়েছিল। এখন সেই মেরামত করা পায়ে ভর দিয়ে কেমন দুনিয়া চষে বেড়াচ্ছি। এইরকম আরও কয়েকটা গজাল আমার মনের মধ্যে গেঁথে রয়েছে। মাঝে মাঝে যন্ত্রনাও হয়, কিন্তু সেসব কথা কাকে বলি?
আমার দুখানা ব্যাগ বিমান কোম্পানির কাউন্টারে জমা দিয়েছি। পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা অভিজ্ঞ এয়ারলাইনের মেয়েটাও বেশ অভিজ্ঞ মনে হলো। আমার মাল নির্ধারিত কুড়ি কিলোগ্রামের একটু বেশি হয়েছে বলে বাড়তি ভাড়ার কথা তুলতে যাচ্ছিল। আমি শ্রীমতীর রঙকরা চোখের দিকে আমার চোখের তীর ছাড়লাম। যুবতী সুরসিকা । মুচকি হেসে প্রত্যুত্তর দিলো। দেখলাম বুকের কাছে সাদা জামাটার ওপর সেফটিপিন দিয়ে নাম আটকানো-এলিজাবেথ। মার্কিনতনয়াকে জানালাম, ‘‘হে সুন্দরী, পরীরাও তোমার নখের যোগ্য নয়।’’
প্রশংসায় মন কার না গলে? খুব বেশি হয়ে মেয়েটা আমার দিকে একটা ইংরেজী ধন্যবান দিলো। বাড়তি ভাড়ার কথা তুললোই না। এই যে ভ্রুধনু ভঙ্গ করে সুন্দরীর উদ্দেশে শর নিক্ষেপ করলাম, তার মধ্যে মিনতি ছাড়াও বালিকা বশীকরণের ক্লোরোফরম মেশানো ছিল। অনেক সাধ্যসাধনা করে, অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে এই বিদ্যাটি আমাকে রপ্ত করতে হয়েছে।
বিড়ালাক্ষী এবার গসগস করে বোর্ডিং কার্ড লিখে ফেললো। লাগেজের টিকিট দুটো আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে ফিক্ করে হাসলো। আমাকেও চোখের মণি নাচিয়ে প্রত্যুত্তর দিতে হলো। কুড়ি কিলোর শাসন যতদিন আকাশপথের যাত্রীদের সহ্য করতে হবে ততদিন দেঁতো হাসি না দিয়ে উপায় কী?
মেজাজটা ভালো নেই - তাই সময় সম্বন্ধে হিসেবী না হয়ে নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই এয়ারপোর্টে হাজির হয়েছি। আর এসে যখন পড়েছি তখন দুচোখ খুলে কাছাকাছি যেসব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রয়েছে তা নিরীক্ষণ করে চক্ষু নামক ইন্দ্রিয়ের পরিতৃপ্তি করা যাক। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বলতে আমি অবলা অবলোকন বুঝে থাকি। এতে চরিত্রবানদের বিরক্ত হবার কিছু নেই। পুলিশে খবর দিয়েও কেউ কিছু করতে পারবে না। মেয়েদের তাকানোটা কোনো দেশে বেআইনী নয়। বহু মেহনত করে সৃষ্টিকর্তা যেসব সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছেন মানুষ তা না দেখলে শিল্পী হিসেবে তার আফসোসের শেষ থাকতো না।
দুর ছাই, ইন্দ্রিয়ের কথা কেন তুললাম। আবার আমার বাবার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। তিনি বলতেন পঞ্চেন্দ্রিয়কে সর্বদা শাসনে রাখতে হবে। যারা ইন্দ্রিয়ের দাস তারা পৃথিবীর কোনো উপকারে লাগবে না।
আর মনে পড়ছে বোধোদয়ের কথা - পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত বিদ্যাসাগরের সহি ও বিদ্যাসাগরবাটী অঙ্কিত খোদ রিসিভার এর সংস্করণ বোধোদয়, যার কোথাও একফোটা ভেজার নেই। লাল রঙের মলাট বইটার, পাঁজির কাগজে ছাপা, আর যতসব গোলমেলে উপদেশে ভরতি। এই ইন্দ্রিয় কথাটা কেমন একটু অশ্লীল মনে হয়। দয়ার সাগর বিদ্যাসাগর, শৈশবকালে এই শর্মাকে আপনি তো যথেষ্ট জ্বলিয়েছেন। এখন হাজার হাজার মাইল দুরে বিদেশী এয়ারপোর্টে বসে যখন নিরামিষভাবে দুএকটি বক্ষবতী বালিকা নিরীক্ষণ করছি, সেই সময় এই নির্বোধের মনের মধ্যে উপস্থিত হয়ে তার বোধোদয়ের চেষ্টা করছেন কেন? এত কোনো লাভ হবে না, মাঝখান থেকে শুধু রসভঙ্গ হচ্ছে।
বিদ্যাসাগরের নীতিমালা ডোন্ট-কেয়ার করে আমি সামনের টেবিলের যুবতী মেয়েটিকে দেখছি। আমার দৃষ্টি শ্রীমতীর চুল চোখ নাক কান ঠোঁট ঘাড় এবং হাত থেকে হড়কে এবার স্বাস্থ-দুটিতে নিবদ্ধ হয়েছে। নিটোল স্বাস্থ। এবার অবরোহণ! আহা, হাঁটু থেকে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত দেখবার জিনিস। পাতলা নাইলনের হোস্ পরে মেয়েটা সৃষ্টিকর্তার দেওয়া পা দুটোর বারটা বাজায়নি। কতবার তো আর্টের লোকরা, আদালতের জজরা, পন্ডিতরা, মুনিঋষিরা ঘোষণা করেছেন, কোনো জিনিস থাকলেই অশ্লীল হয় না, অশ্লীল হয় নিষিদ্ধবস্ত্ত অযথা ঘাটাঘাটি করলে অথবা এই ক্ষেত্রে ন্যাকামো করে শাক দিয়ে মাছ ঢাকলে। এই যুবতীর পায়ের আকার চমৎকার, নরম সাদা পাথর থেকে যেন অতি যত্নে কেটে বার করা হয়েছে। শাড়ির জয়গানে পশ্চিমী মূর্খরা যতই মুখর হোন, রসিকজনরা জানেন স্কার্টের তুলনা নেই।
আমি শ্রীমতীর পায়ের ডিম দুটোর দিকে নজর রাখছি। মহিলার সমস্ত আত্মবিশ্বাসের কেন্দ্রস্থল যেন ওই দুটি মাংসের টেনিস বল। কিন্তু ভালো করে দেখা হলো না। কেমন করে হবে? মহিলা আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছেন এবং বারের দিকে যাচ্ছেন।
চলবে.......
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৫:২৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




