সবকিছুর নাকি সিজিল মিশিল লাগে। এইকথা বিয়ের পর থেকে শুনে গোলাপির মুখস্ত হয়ে গেছে। এখন কোন কথা বলা বা করার আগে গোলাপি সিজিলমিশিল ঠিক আছে কিনা বুঝার চেষ্টা করে। তার ১৭ বছর বয়সী মাথায় সিজিলমিশিল কে সিলিজমিশিল করতে করতে এত সময় লেগে যায় যে না পারে কথা ঠিক মত বলতে না পারে কাজটা গুছিয়ে করতে। তারপরপর আবার শুনতে হয় বেডির গরে বেডির কুন কামের সিজিল নাই।
গোলাপি তার সমাজ বিচারে অনেক জোরকপালী আবু । গোলাপির জন্মের পরপর ই তার মা আরব দেশে কাজ পায় ( ভিসা )। ছয় মাস বয়সী গোলাপি দাদির কাছে বড় হতে থাকে। দাদি তারে কোল ছাড়া করে না খাওয়া রান্নার সময় ব্যতিত। জ্বর হলে বিছানার পাশে হরলিকস বেদানা আঙুর আপেল রাখে, শরবত থাকে গ্লাসে ঢাকন দেয়া। মাঝ রাতে উঠে দাদি জিজ্ঞেস করে ও দাদন কিছু কাইবা ?
ঈদে সুন্দর জামা আসে আর নোকিয়া ফোন। সেই ফোন বাজলে গোলাপির কান্নার আওয়াজ হাসির শব্দ অন্য প্রান্তে তার মায়ের বুক জুড়ায়। দিনদিন বড় হয় সে ১৫ বছর বয়সে শহরে চাকরী করা ছেলের সাথে বিয়ে হয়। স্বামীর নাম জয়নাল শিক্ষিত ছেলে এস এস সি পাস কুরিয়ার কোম্পানির ডেলিভারি ম্যান বয়স ২৫। বিয়ের পর ঢাকা শহরে চলে আসে গোলাপি। জন্ম বিয়ে মিলিয়ে ১৫ বছরের জীবনে গোলাপি মোট দুইবার মায়ের দেখা পেয়েছে। না না তিন বার জন্মের সময় ও দেখেছিলো তো।
বিয়ের দুই বছরের মাথায় এক রোজার ঈদে সে মা হয়, একটা ছেলে সন্তানের জন্মদেয়। নাতী জন্মাবার পর থেকে গোলাপির মায়ের তর আর সইছিল না নাতী কে কোলে নেবার। অনেক চেষ্টা চরিত্রের পর কোরবানী ঈদের সময় ছুটি পেয়েছে। গোলাপির মা বারবার বলে রেখেছে এয়ারপোর্টে নাতীর মুখ দেখতে চায়। সবাই মিলে যেন তাকে নিতে আসে নাতী সহ যেহেতু মেয়ে জামাই নাতী সবাই ঢাকা থাকে।
ঈদের দুইদিন আগে থেকে গোলাপির স্বামী বারবার তাড়া দেয় বাড়ি যাবার জন্যে সব গুছিয়ে নিতে। বাচ্চার জামা কাপড় দুধের কৌটা মশারী। ক্ষীণ স্বরে গোলাপি মনে করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে একদিন পর তার মা আরব থেকে দেশে আসবে, নাতী কে দেখতে চায়। জয়নালের প্রচন্ড ধমকে তার গলার স্বর ডুবে যায় স্তব্ধ হয় সে। মুখে থুথু জমে যাওয়া রাগ নিয়ে জয়নাল বলতে থাকে। তাইনের মা আসতাছে অখন আমরার সব ফালাইয়া এয়ারফরটও যাওন লাগব। আমরা কি গুফাইজ্জা নি ? আমরার সমাজ নাই সাংসারের সিজিল মিশিল নাই ? এরলিগাই কয় আকাইঠারে বালা কতা কইয়া লাভ নাই। আল্লায় আমারারে অইগ্য অকইতা মিলায়ে দিছে। আমার বড় বাই ট্রেনত টিহেট রাকছে।
ঈদের আগে টিকেট পাওয়া কি যা তা মুখের কথা ? সমাজে তেমন ক্ষমতা না থাকলে কি এই ঈদ মৌসুমে কেউ টিকেট পায় ? যেখানে জয়নালের বড় ভাই ট্রেনের টিকেট করে ফেলেছে সেখানে কোন সাহসে গোলাপি মায়ের সাথে দেখা করাবার জন্যে ঢাকা থাকতে চায় ? গোলাপির মা তো মরে ও যায় নাই , বিদেশ চলে ও যায় নাই। চারদিন পর ঈদ করে দেখা করলেই হবে। জয়নালের ছেলের জীবনের প্রথম ঈদ বলে কথা বাড়ি যেতেই হবে।
টঙ্গী ষ্টেশনে ট্রেন থামলে দুই বগির মাঝের লোহার রডে সিজিলমিশিল ভাবেই বসিয়ে দেয়া হয় গোলাপিকে কোলের ছেলে সহ। সেখানেই সিট মিলেছে ২ ঘণ্টার রাস্তা দেখতে দেখতে শেষ হয়ে যাবে।
কপিরাইট - অঙ্গনা।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১০:৩১