somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্যা সিক্স ত্রিপল এইট

২৯ শে জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলাদেশে যে দুটি কমনওয়েলথ রণ সমাধিক্ষেত্র ওয়ার সিমেট্রি আছে, যার একটি কুমিল্লা ময়নামতি আর একটি চট্টগ্রামে। আপনারা যখন সেখানে ভ্রমণ করেন, কী ভাবেন মনে মনে! অথবা কোন ভাবনায় সেখানে দর্শন/ ভ্রমণ করতে যান ? এই যে ১৩/১৪ টি ভিন্ন দেশ বিভিন্ন জাতীর সৈনিকেরা নিজেদের জন্মভূমি আত্মীয় পরিজন প্রিয়জন চেনা আলো আঙিনার থেকে দূরে বহুদূরে সমাধিস্থ হলো। বিশ্ব যুদ্ধে নিজের দেশের পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করতে এগিয়ে আসার সময় কি এমন কিছু তাদের প্রত্যাশায় অথবা ভাবনায় ছিলো? আচ্ছা যুদ্ধে জীবন দান করা সৈনিকদের কথা বাদ দিলাম, উনারা মৃত সকল চাওয়া পাওয়ার ঊর্ধ্বে। বেঁচে থাকা সেসব যোদ্ধাদের পরিবার , মা বাবা সন্তান স্ত্রী অথবা প্রেয়সী, প্রিয়বন্ধু, ভাই বোন তাদের মনের অবস্থা বিবেচনায় আসে ? একটু যদি ভাবি পশ্চিমাদের মৃতদের সম্মান জানানোর প্রিয় রীতি সমাধিতে ফুল দেয়া, অথবা মন উদাসের বেলায় সমাধির পাশে বসে প্রার্থনা করা সেটুকু করবার ও উপায় নেই। হয়ত অনেক বছর পর চিঠিতে খবর এসেছে কোন দেশে কোথায় তাকে সমাধিস্থ করা হয়েছে কিন্তু সেখানে যাবার উপায় নেই। এসব ভেবে আমাদের মন বিষণ্ণ হয় না ! কেমন দম বন্ধ লাগে তাই না !


আমাদের মাধ্যামিক পর্যায়ে স্কুল পাঠ্য ছিল ​​প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় রচিত ফুলের মূল্য ছোট গল্পটি, সেখানে দারুণ মুন্সিয়ানায় লেখক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত এক পরিবারের সমাধি ভ্রমণ ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করার আকুতি তুলে এনেছেন। শৈশবের ওপেন্টি বায়স্কোপ খেলার যুদ্ধ আর সত্যিকারের যুদ্ধের মাঝের ফারাক বয়সের সাথে সাথে স্পষ্ট হয়ে চলছে। সত্যি বলছি স্পষ্ট না হলেই মনে হয় ভালো ছিল। সে যাই হোক যে জন্য এত গল্প কথার অবতারণা - দ্বিতীয়বারের মত নেটফ্লিক্স এ দেখা শেষ করলাম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে মনে ছুঁয়ে যাওয়া সত্যিকারের গল্প নিয়ে মুভি " সিক্স ট্রিপল এইট"। অস্কারের জন্য নমিনেশন পাওয়া এই সিনেমা মূলত যুদ্ধের গল্প - দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করা সাদা সৈনিক আর জন্মের পর থেকেই যুদ্ধ করতে থাকা কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের। সিক্স ট্রিপল এইট ১৭ বছরের লীনা আর পাইলট আব্রাহামের প্রেমের গল্প। আমেরিকার পক্ষ থেকে মিত্রবাহিনীর হয়ে যুদ্ধে করতে আসা দিন মাস বছর ধরে একটা খবর এক লাইনের চিঠির জন্য অপেক্ষা করতে সন্তানদের মায়ের গল্প।


“আই ইউল রাইট ঊ এভ্রি চান্স আই গেট “ বাল্য কালের সাথী কৃষ্ণাঙ্গ মেয়ে লীনা কে ছোট্ট এই এক কথার আশ্বাস দিয়ে হিটলারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিতে চলে যায় জিউ বয় আব্রাহাম। পলক পলক প্রতীক্ষা আর বিস্কুটের বাক্সে পাওয়া আংটি আঙুলে দিন কাটায় লীনা, কিন্তু চিঠি অথবা আব্রাহাম কেউ ফিরে আসে না। এদিকে সমস্ত দেশজুড়ে সৈনিকদের ক্যাম্প জুড়ে হাহাকার একটা খবরের জন্য, এক লাইনের তুমি কেমন আছো ? জানতে চাইবার অপেক্ষা। প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট কে জানানো হলো, পরিবারের সাথে যোগাযোগের অভাবে সৈন্যদের মনবল ভেঙে যাচ্ছে, যুদ্ধের গতি হচ্ছে ব্যাহত। আরও জানানো হলো পর্যাপ্ত যানবাহন এবং প্রশিক্ষিত লোকবলের ওভাবে প্রায় ২বছর থেকে জমতে থাকা ১ কোটি সত্তর লক্ষ চিঠি বিতরণ করা যায়নি। বহু নাটকীয়তার পর সেই দায়িত্ব দেয়া হয় সবচাইতে অবহেলিত দুর্বল এবং অসংগঠিত ভাবতে থাকা ইউ এস আর্মির নিগ্রো মহিলা দল কে যাদের অফিসিয়াল নাম সিক্স ট্রিপল এইট ব্যাটেলিয়ান। সেই দলে যোগ দেয় আব্রাহামের চিঠির অপেক্ষায় থাকা লীনা, এবং বহু ঝঞ্ঝার পর সে হাতে পায় তার কাঙ্ক্ষিত রক্তমাখা চিঠি।


সিক্স ট্রিপল এইট এমন একটি ব্যাটেলিয়ান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিশাল ভূমিকা রেখেছিলো।২৬ বছর বয়সী ক্যাপ্টেন চ্যারেটি অ্যাডামস এর নেতৃত্বে কৃষ্ণাঙ্গ নারী আর্মি ব্যাটেলিয়ান ও নানা অসঙ্গতি বৈরী পরিবেশে অক্লান্ত পরিশ্রম করা যুদ্ধ শেষে ১৯৪৬ সালে দেশে ফেরার পরও ব্যাটেলিয়ানের জন্য ছিল না কোন অভিনন্দন বার্তা সামাজিক স্বীকৃতি। ৯০ দিনে ১ কোটি সত্তর লাখ এর বেশি চিঠি তার প্রাপকের হাতে পৌঁছে দিয়ে অসাধ্য সাধন করার পর ও যথাযথ মুল্যায়ন ছিলো না, অনেকের পরিবার জানতেন ও না এমন দুঃসাহসিক ইতিহাস। প্রায় ৮০ বছর পর ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কানসাস এ ব্যাটেলিয়ানের সম্মানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। এবং প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ২০২১ সালে সিক্স ট্রিপল এইট কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল আক্ট স্বাক্ষর করেন যা যুক্তরাষ্ট্রের সবচাইতে বড় বেসামরিক পদক।

দারুণ সব কাস্টিং চমৎকার অভিনয় সহ রেটিং এ ৬.৭ পাওয়া দুর্দান্ত এই মুভিটি আপনারা দেখতে পারেন।

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:৩৯
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×