somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমাজে প্রচলিত কিছু কুসংস্কার

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চালনী হতে খেলে বিয়ে ঘুরেঃ
অনেক সময় দেখা যায়, কারো জন্য বধু নির্ধারণে বিলম্ব হলে ছেলেকে এ বলে দোষারোপ করা হয়, “মনে হয় চালনী হতে কিছু খেয়েছে, না হয় তোমার বিয়ে ঠিক হচ্ছে না কেন”। আবার অনেকে সন্তানদেরকে চালনী হতে কিছু খেতে দেখলে বলে “ওখান থেকে কিছু খেওনা বিয়ে ঘুরবে”। আসলে চালনী হতে কিছু খেলে বা আহার করলে বিয়ে ঘুরার বা বিলম্ব হওয়ার কারণ হতে পারে না। ইসলামে উক্তিটির কোন যুক্তি বা দলিল নেই। তবে যত্রতত্র হতে আহার না করে নিয়ম মত আহার করা ভাল তাতে সন্ধেহ নেয়।

চুল কাটার পর গোসল না সেরে ঘরে ঢুকলে ইদুর বেড়ে যায়ঃ
এ প্রবাদটি মহিলাদের আমদানীকৃত হলেও একেবারে অমূলক নয়। পুরুষরা অনেকটা বিশ্বাস করে না। এতে পুরুষ-মহিলার বাক বিতন্ডা খুব জমে। আসলে চুল কাটলে বা মাথা মুন্ডালে নাপাক হয় না বা অজুও ভাঙ্গেনা। তবে আত্মতৃপ্তির জন্য গোসল করা ভাল। কিন্তু তাই বলে চুল কাটার পর গোসল না সেরে ঘরে ঢুকলে ইদুর বেড়ে যাওয়ার কথা ভিত্তিহীন যার কোন যুক্তিই হয় না।

দরজায় বসে কিছু খেলে ঋণী হয়ঃ
এই কথাটিও আমাদের মা-বোনদের মধ্যে ব্যাপকহারে প্রচলিত যার কোন ভিত্তি নেয়। মানুষ তখনি ঋণী হয় যখন তার প্রয়োজনে অন্যের কাছে কিছু ধার নেয়, দরজায় বসে খেলে নয়। তবে হ্যা খাবার যত্রতত্র না খেয়ে খাওয়ার স্থানে খাবার খাওয়া আদর্শের পরিচায়নক।

চন্দ্র বা সুর্য গ্রহনে কিছু না খাওয়াঃ
চন্দ্র বা সূর্য গ্রহণে কিছু খাওয়া হারামের চেয়েও বেশি মনে করে অনেকেই। বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের জন্য কড়া নিষেধ। খেলে নাকি অন্তঃসত্তা পঙ্গু হয়ে যাবে। অথচ মানুষ ঐ সময়েও কত অনাচার ও ব্যভিচার মূলক কাজে লিপ্ত হচ্ছে। তখন পঙ্গু বা ক্ষতি হবার ফতোয়া মোটেই কেউ দেয় না। আসলে এসব কথার কোন দলীল বা যুক্তি নেই।এসব অন্ধ বিশ্বাস পরিহার করাই শ্রেয়।

বাম চোখ কাঁপলে মুছিবত আসেঃ

অধিকাংশ সময় দেখা যায় কারো বাম চোখ কাঁপলে মহিলারা বলে যে তোর সামনে বিপদ সাবধানে থাকিস।এই অন্ধ বিশ্বাসটাও সমাজে ব্যপক প্রচারিত যার কোন যুক্তিই নেই।বাম চোখ কেঁপে উঠা দুর্বলতা বা অন্য কোন রোগের উপসর্গ বলে বুঝতে হবে যা চিকিৎসা বিজ্ঞানে প্রমাণ্য। রোগ জাতীয় কোন মুছিবত ধরা যেতে পারে। তবে প্রাকৃতিক কোন মুছিবত আসার ধারণা করা সম্পুর্ণ অমূলক ও ভিত্তিহীন।

হাতের পাত চুলকালে টাকা আসেঃ
এটিও সে ধরনের একটি অর্থহীন প্রবাদ মাত্র। যা দুই চার জন বসে ফালতু আড্ডাবাজী করার সময় এগুলো বলা হয়। ধর্ম বা জ্ঞান-বিজ্ঞানে এর কোন ভিত্তি নেই। খেয়াল কুরন এভাবে যদি হত তাহলে যাদের হাতে খস পাচড়া চুলকানী রোগ আছে তাদের আজ সম্পদের পাহাড় হয়ে থাকতো নয় কি?

দোলনায় বাচ্চা উঠানোর সময় সবার মাথায় তৈল দেয়াঃ

কোন কোন এলাকায় দেখা যায় বাচ্চাকে দোলনায় উঠানোর সময় উপস্থিত সকলেরই মাথায় তেল দেওয়া হয়। প্রশ্ন করা হয় কেন দেওয়া হচ্ছে উত্তার পাওয়া যায় সেই বাপ দাদার আমল থেকে চলে আসছে। এখন বলেন এর কোন যৌক্তিকতা আছে? তবে হ্যা মাথায় তেল দেওয়া ভাল। তবে বাচ্চাকে দোলনায় উঠাতে বিশেষ করে তেল দেওয়া একটি কুসংস্কার মাত্র। এগুলো অপসংস্কৃতি যা বর্জন করা উচিৎ।

তিন পুত্রের জননী দেখে কোন কাজে গেলে অমঙ্গল হয়ঃ
এটা নারী জাতির উপর একটি কলঙ্কলেপন করার ন্যায় নামান্তর। তিন ছেলের মাকে দেখে কেউ কাজে গেলে এবং সেখানে কোন সমস্যা হলে তার জন্য তিন ছেলের মাকে দায়ী করে। এতে নারী বা মায়ের কি দোষ? আছে কি এর কোন যুক্তি? এসব কুসংস্কার অপসংস্কৃতিকে হিমাগারে পাঠানো উচিত।

খালি কলসী দেখলে অমঙ্গল হয়ঃ

ঘর থেকে বের হতে খালি কলসী দেখলে অনেকেই আর কাজে যায় না। কারণ, এতে নাকি অমঙ্গল হয়। আমাদের সমাজে হিন্দুদের মধ্যে এর প্রচলণ বেশি প্রলক্ষিত হয়। এটাও একটি কুসংস্কার যার কোন ভিত্তি নেই।

রাত্রে আঙ্গুল ফুটালে গরীব হয়ঃ
কথাটি আজও আমাদের সমাজে ব্যাপকহারে প্রচলিত আছে। ব্যথা বেদনা ও অলসতা দুরী করণের মানসে অনেকেই আঙ্গুল ফুটায় তবে যত্রতত্র আঙ্গুল ফুটানো সাধারণত অভদ্রতারই নামান্তর। কিন্তু তাই বলে বিনা যুক্তি আর বিনা প্রমানে গরীব হয়ে যাওয়ার কথাটি যে সম্পুর্ণ ভিত্তিহীন তাতে কোন সন্ধেহ নেই।

মাটিতে আঁকা আঁকি করলে কর্জ বাড়েঃ
মাটিতে শিশুদের আঁকা আঁকি করতে দেখে অনেকে এই বলে শাসন করে যে ওঠ কর্জ বাড়াবী নাকি। আজব কথা আমার জানা মতে কর্জ বাড়ে নিজের প্রয়োজনে অন্যের কাছ থেকে কিছু নিলে যা পড়ে শোধ করতে বিলম্ব হয় এভাবে কর্জ বাড়তে থাকে। তাই বলে মাটিতে আঁকা আঁকি করলে কর্জ বাড়ে কথাটি বলা কুসংস্কার মাত্র। তবে হ্যা অযথা মাটিতে আঁকা আঁকি করা ভাল নয়।

গর্ভধারণকারী নারী মৃত. বাপকে দেখতে পারবে নাঃ
এটাও নারীর উপর চাপিয়ে দেওয়া একটি অন্যায়। মেয়ে যদি গর্ভবতী হয় এমন সময় মেয়ের বাপ মারা গেলে তাকে বাপের মুখ দেখতে দেওয়া হয় না এই বলে যে গর্ভে থাকা বাচ্চাও নাকি মৃত জন্ম হবে। এটা নিছক কুসংস্কার যার কোন ধর্মীয় কিংবা যৌক্তিক ভিত্তি হতেই পারে না।

এরুপ আরও অনেক অনেক কুসংস্কার আজও আমাদের গ্রাম বাংলায় দেখা যায় যার কোন ভিত্তি নেই। এসবের উপর বিশ্বাস বা পালনে কষ্ট আর কষ্ট ছাড়া আর কিছু আশা করা যায় না। তাই গ্রাম বাংলার মা-বোন সহ সবাইকে এসব কুসংস্কার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:১০
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×