somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি অতি সাধারণ একজন, ধর্ম আমার কাছে কি ও কতটুকু?

১১ ই নভেম্বর, ২০০৯ রাত ২:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(আমার জীবনে ধর্মের ভূমিকা কতটুকু ? কতটুকু হওয়া উচিত?)


ধর্ম বাবদে যে আমি ব্যাপক জ্ঞানী, ব্যাপারটা সেরকম না । আমি সেই দলের মানুষ, যারা আস্তিক-নাস্তিক ক্যাচালের মাঝখানে পড়ে ভীষন বিব্রত হয়ে আছে । কারণ, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ধর্মকে টেনে আনাটা আমি সহ্যই করতে পারিনা, অথচ ঈশ্বর আছে বলে মানি । ধর্মের নামে যেসব অন্যায় অনাচার হয় সেগুলোকে ঘৃণা করি ,কিন্তু ধর্মকে তো ঘৃণা করিনা । যুক্তির ভক্ত আমি । কিন্তু কিছুকিছু ক্ষেত্রে আবেগকেও ভীষন যুক্তিসঙ্গত বলে মনে হয় ।

অনেক কথাই মনে আসে , সময়স্বল্পতার কারণে সেদিকে যাবনা । আমার বেসিক ধারণাটুকু বলি ।

ধর্ম কাকে কি দেবে তা আসলে নির্ভর করে - পরিস্থিতির ওপর, মানুষটার ওপর, তার চাহিদার ওপর । ধর্ম যদি চরিত্রবল দেয়, মানসিক দৃঢ়তা দেয়, বাস্তবকে গ্রহণ করার ও সহ্য করার শক্তি দেয়, তাহলে আমাদের সৌভাগ্য । কিন্তু ধর্মের আলোচনা যেখানে ক্যাচাল আনে, সন্দেহ/অবিশ্বাস আনে, তখন তাকে avoid করাই ভালো ।
কর্মফল তো নিয়তের ওপরই নির্ভরশীল । একটা particular knowledge কে মানুষ যে কোন কাজে লাগাতে পারে -- ভালো অথবা মন্দ । কেউ সেটা দিয়ে ব্যবসা করে, কেউ ব্যক্তিগত কাজে লাগায়। কেউ করে রাজনীতি, সেটাও একরকম ব্যবসা ।
মূল সমস্যাটা আসলে আমাদের মনে। আমি যখন নিজের স্বার্থের কথা ভাবছি, তখন যে রীতিটা আমার স্বার্থ পূরণ করে, সেটা আমার কাছে ভালো। যেটা তা করেনা -- তার বিরুদ্ধে একটা যুক্তি আমি বের করবই । তা না পারলে দেখবো যেন ওটা সহজে কারো নজরে না পড়ে । ধর্ম নিয়ে এত কথা এইজন্যই ওঠে, কারণ ঠিকমত ব্যবহার করা গেলে এটা একটা ভয়ংকর অস্ত্র । আর এইজন্যই যত্রতত্র যার তার হাতে এটা ছেড়ে না দেয়াই ভালো। ধর্মের ব্যবহার স্রেফ মানুষের ব্যক্তিগত জীবনেই সীমাবদ্ধ থাকা ভালো ।

ধর্ম তৈরীর পেছনে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য কি ছিলো, তার চাইতেও জরুরী আমার কাছে এটা জানা যে --- যে মানুষগুলো এটা ব্যবহার করছে তাদের উদ্দেশ্য কি ? ঈশ্বর আছেন কি নাই, সেটা নিয়ে গবেষণা করাটা আমার কাছে waste of time বলে মনে হয়। বিশেষত যখন তিনি আমার প্রতিদিনকার ঘুম হারাম করার কোনো শপথ নেন নাই । আমার কানের কাছে নানান সুরে, নামতা শোনায় যেই একশো 'উড়ে' --- তারা হইলো মানুষ ।
যদি আমি হৃদয় থেকে উপলব্ধি করি তিনি আছেন -- তবে লজিক তাকে প্রমাণ করুক বা না করুক, আমার দৈনন্দিন কাজে -- আমার জীবনে তার প্রতিফলন থাকবে -- আমি অন্যায় করবনা। এটাইতো ঈশ্বরের মূল ইচ্ছা, নাকি ? আর যদি অন্যায় করি, তাহলে মুখে যতই আল্লাহর নাম নেই না কেন , অন্তরে আমি নিশ্চয়ই অবিশ্বাসী । আর অন্তর যদি অবিশ্বাসী হয় --- তবে প্রমাণ হিসেবে ঈশ্বর আমার সামনে এসে দাড়াইলেও আমার কিছু যায় আসেনা । আমি মানবো না ।

আমি ধর্ম মানি । আমি আস্তিক । আমার ধর্ম আমাকে এটাই বলে, যেই কাজটা ভালো , যাতে প্রত্যক্ষ/পরোক্ষভাবে কারো ক্ষতি না হয় , যাতে কেউ কষ্ট না পায় -- এবং যে কাজটায় কারো উপকার হয়, তুমি সেই কাজটাই করো । সেটাই ইবাদত। সেটাই আল্লাহর ইচ্ছা । এর বাইরে বাড়তি যা কিছু মানুষ করে , সেগুলি শুধু বাহ্যিক আচার। সেটা যে যেভাবে খুশী পালন করুক। আমি কি উদ্দেশ্যে কাজটা করছি সেটাই বড় কথা। উদ্দেশ্যটা পূরণ হলেই হল। কিন্তু আমরা কি করি , নিয়মের খুঁটিনাটি নিয়ে লাফাই। উদ্দেশ্যটা ভূলে যাই । কোরাণের মূল বক্তব্য হল, মানুষ তুমি সরল পথে চল। সরল পথ আমাদের ভালো লাগে না। আমরা খালি ঘটনা প্যাঁচাইতে চাই । মানুষ রোজা রাখে । রোজার মূল উদ্দেশ্যটা হল সংযম -- শুধু খাবার নয়, প্রতিটা জিনিষেই । মানুষ নিজেকে সংযত করতে শিখবে। শিখবে কিভাবে কিছু কম দিয়েও চলা যায়, বাড়তি জিনিষের বিলাসিতা ত্যাগ করা যায় -- অন্তত বছরের কয়েকটা দিন। অন্তত একবেলা মানবজীবনের সবথেকে বড় দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি -- এইসময়টায় সে ভালো চিন্তায় কাটাক । আমরা করি কি -- রোজার দিনে ২৪ ঘন্টা শুধু চিন্তা করি -- কখন খাব , কেমনে খাব, কারটা খাব । রোজা আসলেই পার্টির ধূম পড়ে যায়। ইফতার পার্টি । ব্যবসায়ীরা সারা মাস মানুষের গলা কেটে ঈদের আগে সেই অবৈধ টাকার ন্যূনতম অংশ যাকাত দিয়ে ধর্মরক্ষা করে। কি দরকার এমন রোজার ?


কোরবানীর ঈদ আসলেই সবাই গবেষণা করতে শুরু করে -- এর legend টা কতখানি বাস্তবসম্মত ... অতএব ইসলাম ধর্ম কতটা বাস্তবসম্মত .... ইত্যাদি । হাজার দুয়েক বছর আগে কি ঘটেছিলো তার চাইতে ঢের জরুরী আমার কাছে এখন কি ঘটছে সেটা । ঘটনাটা কতটুকু সত্যি ছিলো তা বড় কথা না, আসলে আমরা এটা থেকে কোনো শিক্ষা পেয়েছি কিনা সেটাই বড় । মানুষের উদ্দেশ্য যদি সৎ হয় তবে সে রূপকথার গল্পের মোরাল থেকেও উপকৃত হয় । আল্লাহ বলেন, কুরবানী দাও । আমরা বেশী বেশী ধার্মিক হইতে গিয়ে লাখ টাকার গরু কোরবানী দিয়ে ফেলি । আসল জিনিষ কোরবানী দিতে আর মনে থাকেনা ।

আমরা যারা সাধারন মানুষ , যারা ঐতিহাসিক তথ্য আর ঘটনাবলী নিয়ে গবেষণার চাইতে নিজেদের দৈনন্দিন চালডালের হিসাব করতেই বেশী ব্যস্ত থাকি , ধর্ম যেন তাদেরকে শুধু এইটুকু পথ দেখায় , যে ওই হিসাবটুকুতে আমরা গোঁজামিল দেয়ার চেষ্টা না করি । শুধু মূল্যবোধটুকু -- শুধু মানবতাটুকু -- ভাল আর মন্দের মধ্যকার তফাৎটুকু চিনতে শেখায় । আমাদের জীবনে ধর্মের স্থান আপাতত এইটুক হলেই আমি খুশী ।

সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০১০ দুপুর ১২:৫৭
২৬টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×