(আমার জীবনে ধর্মের ভূমিকা কতটুকু ? কতটুকু হওয়া উচিত?)
ধর্ম বাবদে যে আমি ব্যাপক জ্ঞানী, ব্যাপারটা সেরকম না । আমি সেই দলের মানুষ, যারা আস্তিক-নাস্তিক ক্যাচালের মাঝখানে পড়ে ভীষন বিব্রত হয়ে আছে । কারণ, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ধর্মকে টেনে আনাটা আমি সহ্যই করতে পারিনা, অথচ ঈশ্বর আছে বলে মানি । ধর্মের নামে যেসব অন্যায় অনাচার হয় সেগুলোকে ঘৃণা করি ,কিন্তু ধর্মকে তো ঘৃণা করিনা । যুক্তির ভক্ত আমি । কিন্তু কিছুকিছু ক্ষেত্রে আবেগকেও ভীষন যুক্তিসঙ্গত বলে মনে হয় ।
অনেক কথাই মনে আসে , সময়স্বল্পতার কারণে সেদিকে যাবনা । আমার বেসিক ধারণাটুকু বলি ।
ধর্ম কাকে কি দেবে তা আসলে নির্ভর করে - পরিস্থিতির ওপর, মানুষটার ওপর, তার চাহিদার ওপর । ধর্ম যদি চরিত্রবল দেয়, মানসিক দৃঢ়তা দেয়, বাস্তবকে গ্রহণ করার ও সহ্য করার শক্তি দেয়, তাহলে আমাদের সৌভাগ্য । কিন্তু ধর্মের আলোচনা যেখানে ক্যাচাল আনে, সন্দেহ/অবিশ্বাস আনে, তখন তাকে avoid করাই ভালো ।
কর্মফল তো নিয়তের ওপরই নির্ভরশীল । একটা particular knowledge কে মানুষ যে কোন কাজে লাগাতে পারে -- ভালো অথবা মন্দ । কেউ সেটা দিয়ে ব্যবসা করে, কেউ ব্যক্তিগত কাজে লাগায়। কেউ করে রাজনীতি, সেটাও একরকম ব্যবসা ।
মূল সমস্যাটা আসলে আমাদের মনে। আমি যখন নিজের স্বার্থের কথা ভাবছি, তখন যে রীতিটা আমার স্বার্থ পূরণ করে, সেটা আমার কাছে ভালো। যেটা তা করেনা -- তার বিরুদ্ধে একটা যুক্তি আমি বের করবই । তা না পারলে দেখবো যেন ওটা সহজে কারো নজরে না পড়ে । ধর্ম নিয়ে এত কথা এইজন্যই ওঠে, কারণ ঠিকমত ব্যবহার করা গেলে এটা একটা ভয়ংকর অস্ত্র । আর এইজন্যই যত্রতত্র যার তার হাতে এটা ছেড়ে না দেয়াই ভালো। ধর্মের ব্যবহার স্রেফ মানুষের ব্যক্তিগত জীবনেই সীমাবদ্ধ থাকা ভালো ।
ধর্ম তৈরীর পেছনে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য কি ছিলো, তার চাইতেও জরুরী আমার কাছে এটা জানা যে --- যে মানুষগুলো এটা ব্যবহার করছে তাদের উদ্দেশ্য কি ? ঈশ্বর আছেন কি নাই, সেটা নিয়ে গবেষণা করাটা আমার কাছে waste of time বলে মনে হয়। বিশেষত যখন তিনি আমার প্রতিদিনকার ঘুম হারাম করার কোনো শপথ নেন নাই । আমার কানের কাছে নানান সুরে, নামতা শোনায় যেই একশো 'উড়ে' --- তারা হইলো মানুষ ।
যদি আমি হৃদয় থেকে উপলব্ধি করি তিনি আছেন -- তবে লজিক তাকে প্রমাণ করুক বা না করুক, আমার দৈনন্দিন কাজে -- আমার জীবনে তার প্রতিফলন থাকবে -- আমি অন্যায় করবনা। এটাইতো ঈশ্বরের মূল ইচ্ছা, নাকি ? আর যদি অন্যায় করি, তাহলে মুখে যতই আল্লাহর নাম নেই না কেন , অন্তরে আমি নিশ্চয়ই অবিশ্বাসী । আর অন্তর যদি অবিশ্বাসী হয় --- তবে প্রমাণ হিসেবে ঈশ্বর আমার সামনে এসে দাড়াইলেও আমার কিছু যায় আসেনা । আমি মানবো না ।
আমি ধর্ম মানি । আমি আস্তিক । আমার ধর্ম আমাকে এটাই বলে, যেই কাজটা ভালো , যাতে প্রত্যক্ষ/পরোক্ষভাবে কারো ক্ষতি না হয় , যাতে কেউ কষ্ট না পায় -- এবং যে কাজটায় কারো উপকার হয়, তুমি সেই কাজটাই করো । সেটাই ইবাদত। সেটাই আল্লাহর ইচ্ছা । এর বাইরে বাড়তি যা কিছু মানুষ করে , সেগুলি শুধু বাহ্যিক আচার। সেটা যে যেভাবে খুশী পালন করুক। আমি কি উদ্দেশ্যে কাজটা করছি সেটাই বড় কথা। উদ্দেশ্যটা পূরণ হলেই হল। কিন্তু আমরা কি করি , নিয়মের খুঁটিনাটি নিয়ে লাফাই। উদ্দেশ্যটা ভূলে যাই । কোরাণের মূল বক্তব্য হল, মানুষ তুমি সরল পথে চল। সরল পথ আমাদের ভালো লাগে না। আমরা খালি ঘটনা প্যাঁচাইতে চাই । মানুষ রোজা রাখে । রোজার মূল উদ্দেশ্যটা হল সংযম -- শুধু খাবার নয়, প্রতিটা জিনিষেই । মানুষ নিজেকে সংযত করতে শিখবে। শিখবে কিভাবে কিছু কম দিয়েও চলা যায়, বাড়তি জিনিষের বিলাসিতা ত্যাগ করা যায় -- অন্তত বছরের কয়েকটা দিন। অন্তত একবেলা মানবজীবনের সবথেকে বড় দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি -- এইসময়টায় সে ভালো চিন্তায় কাটাক । আমরা করি কি -- রোজার দিনে ২৪ ঘন্টা শুধু চিন্তা করি -- কখন খাব , কেমনে খাব, কারটা খাব । রোজা আসলেই পার্টির ধূম পড়ে যায়। ইফতার পার্টি । ব্যবসায়ীরা সারা মাস মানুষের গলা কেটে ঈদের আগে সেই অবৈধ টাকার ন্যূনতম অংশ যাকাত দিয়ে ধর্মরক্ষা করে। কি দরকার এমন রোজার ?
কোরবানীর ঈদ আসলেই সবাই গবেষণা করতে শুরু করে -- এর legend টা কতখানি বাস্তবসম্মত ... অতএব ইসলাম ধর্ম কতটা বাস্তবসম্মত .... ইত্যাদি । হাজার দুয়েক বছর আগে কি ঘটেছিলো তার চাইতে ঢের জরুরী আমার কাছে এখন কি ঘটছে সেটা । ঘটনাটা কতটুকু সত্যি ছিলো তা বড় কথা না, আসলে আমরা এটা থেকে কোনো শিক্ষা পেয়েছি কিনা সেটাই বড় । মানুষের উদ্দেশ্য যদি সৎ হয় তবে সে রূপকথার গল্পের মোরাল থেকেও উপকৃত হয় । আল্লাহ বলেন, কুরবানী দাও । আমরা বেশী বেশী ধার্মিক হইতে গিয়ে লাখ টাকার গরু কোরবানী দিয়ে ফেলি । আসল জিনিষ কোরবানী দিতে আর মনে থাকেনা ।
আমরা যারা সাধারন মানুষ , যারা ঐতিহাসিক তথ্য আর ঘটনাবলী নিয়ে গবেষণার চাইতে নিজেদের দৈনন্দিন চালডালের হিসাব করতেই বেশী ব্যস্ত থাকি , ধর্ম যেন তাদেরকে শুধু এইটুকু পথ দেখায় , যে ওই হিসাবটুকুতে আমরা গোঁজামিল দেয়ার চেষ্টা না করি । শুধু মূল্যবোধটুকু -- শুধু মানবতাটুকু -- ভাল আর মন্দের মধ্যকার তফাৎটুকু চিনতে শেখায় । আমাদের জীবনে ধর্মের স্থান আপাতত এইটুক হলেই আমি খুশী ।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০১০ দুপুর ১২:৫৭