আমার জন্ম হয়েছিলো খুবই আল্লাদী টাইপের একটা মেয়ে হিসেবে । বাবা-মার একমাত্র মেয়ে, নানা-নানুর একমাত্র নাতনী, মামা-খালাদের একমাত্র ভাগনি...আমার আল্লাদের কোনো সীমা ছিল না । কখনো কোনোকিছু চাওয়ার প্রয়োজন বোধ করিনাই, কারণ চাওয়ার আগেই পেয়ে গেছি সবকিছুই । বাড়াবাড়ি চঞ্চলতা আর অতিরিক্ত লাফ-ঝাঁপ দেয়ার স্বভাবের কারণে আম্মু সবসময় থাকতো ভয়ে ভয়ে । ভয়টা অবশ্য যথার্থ ছিলো । কাঁটাছেড়া , পোড়া , আঘাত লাগা ...এই সব ছাড়া স্বাভাবিক অবস্থায় আমার জীবনের খুব কম দিনই কাটসে । এক জায়গায় চুপচাপ বসে সময় কাটানো ছিলো আমার জন্য অসম্ভব, যদি না আমাকে বইপত্র দেয়া হতো ।
একটা জিনিষ কখনো আমার ভালো লাগেনাই, তা হলো সমবয়সী বন্ধুদের সাথে খেলা । কোনো একটা অদ্ভূত কারণে আমি এটা পছন্দ করতাম না । সবাই প্রতিদিন বিকালে কলোনীর মাঠে খেলতে নামে । আমিও নামি, কিন্তু খেলতে না । একা একা হেঁটে হেঁটে চলে যেতাম অনেক দূর । নতুন সব বাড়ি, নতুন ফুলের গাছ , নতুন সব রাজ্য আবিস্কার করতাম । নিজেকে মনে হত গুপ্তধনের মালিক । একঘেঁয়ে , চুপচাপ জীবন আমি কোনোদিনও চাইনাই ।
জীবন কাকে কোনদিকে ঘা দিয়ে শেখায় কে বলতে পারে ? মানুষ ভাবে এক, আর হয় আরেক । কোনো একটা সময়ে এসে মানুষকে সিদ্ধান্ত নামের ওই কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয় । একদিকে আছে একঘেঁয়ে নিরুপদ্রব জীবন, অন্যদিকে চির-অনিশ্চয়তা । নিরুপদ্রব সুখের সেই জীবন বেছে নেয়া আমার পোষায়না । সমস্ত জীবন নিয়ে ধরা এই বাজিতে নির্দ্বিধায় বিসর্জন দেই কৈশোরের রোমান্টিক সব স্বপ্ন , সব বিশ্বাস । আল্লাদীপনা ভেসে যায় । সব যায় কি ? কখনো কখনো আচমকা এক ঝলক শৈশব , ছেলেমানুষী হয়তো কারো চোখে ধরা পড়ে । জানিনা সে কি ভাবে ! আমি ভাবি , কোনটা আসল আমি ?
যারে ঘর দিলা , সংসার দিলা রে .....
তারে....
বৈরাগী মন কেন দিলা ?
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০১০ দুপুর ১২:৫৬