somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

৩২ ঘন্টায় নরক দর্শন

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম দর্শনে ওটাকে নরক বলে চিনতে পারিনি । বোনটা যখন বিছানায় পড়ল, তড়িঘড়ি করে অ্যাডমিট করলাম, গিয়ে দেখি পূর্বের অভিজ্ঞতার তুলনায় এ তো প্রায় স্বর্গ ! পাঁচতলায় অবস্থিত ওয়ার্ডটায় জানালার পাশে সবচে খোলামেলা পরিচ্ছন্ন বিছানাটা । এর কদিন আগে দেখেছিলাম কলেরা হাসপাতাল (আমি অ্যাডমিট হইনাই)। সেই বিভৎস স্মৃতি মনে করে শিউরে উঠলাম । বাথরুমটাও পরিচ্ছন্ন । হাই-কমোড । বাহ !

জীবনে কোনদিন হাসপাতালে ভর্তি হইনাই । আমার অসুখ-বিসুখ খুব কমই হয় । কত পঁচা-বাঁসি-রাস্তার খাবার খেলুম । অন্যরা যা খেয়ে সঁটকে গেল , আমি তাই খেয়ে অট্যহাস্য করেছি । রাস্তার চটপটি ফুচকা গোগ্রাসে গিলেছি , রিক্সাওয়ালা মামাদের সাথে চায়ের দোকানে চা খেয়েছি ।
একবার হলো কি, খুব সকালে পরীক্ষা দিতে যাচ্ছি । সারাদিন পরীক্ষা চলবে । আম্মু নাশতা বানায় দেয়ার সময় পায়নাই । বললো আমি যেনো দোকান থেকে পরোটা-টরোটা কিছু কিনে নিয়ে যাই । আমি গিয়ে দেখি রাস্তার দুই পাশে দুই পরোটার দোকান । প্রচন্ড গতিতে পরোটা বানানো চলছে । একজন ক্রমাগত ঘাম মুছছে আর পরোটা বানাচ্ছে । অন্যজন একটু পরপর নাক পরিস্কার করছে আর পরোটা বানাচ্ছে । আমি খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম । কোন দোকান থেকে পরোটা কেনা উচিৎ !!!? অনেক ভেবে শেষ পর্যন্ত যে ব্যাটা ঘাম মুছছে তার কাছ থেকে পরোটা কিনলাম :|

তো বুঝতেই পারছেন আমার মন কত লৌহকঠিন :D:D:D

এ হেন আমি কি না সামান্য জ্বরে চিৎপটাং ? তা হবেনা । জ্বর ব্যাটাকে আমি থোড়াই কেয়ার করি । প্রথম ২ দিন মোটামুটি জ্বর নিয়ে অফিস করলাম ( কেউ টেরও পায়নাই ) । তারপর দিন প্রবল জ্বর নিয়ে সামুতে একখানা পোস্ট দিলাম । সেই পোস্টের পরিণতি কি হইলো বুঝার আগেই আমি কাইত । পরে ডাক্তারগণ আবিস্কার করছিলো আমার হইছে হাম ! থুক্কু , ডেঙ্গু, ....... থুক্কু , হাম....থুক্কু .....কি যে হইছে তা কেউ জানেনা !!!! শেষ দিনটা পর্যন্ত প্রায় ১০ জন ডাক্তার এই হাম থুক্কু ডেঙ্গুর খেলা খেললো X((X((X(( অবশেষে এক বৃদ্ধ বদ্যিবাবা আসিয়া কহিলেন , বসন্তরা সাত বোন । তাহাদের ৪ জনকে চিনা গিয়াছে বাকি ৩জন অদ্যাবধি অনাবিস্কৃত !! আমারে যে ধরিয়াছে সে এই ৩ বোনের কোন একজন , হামের হামসকল (লুক-অ্যালাইক) ।

অবশ্য আমার আব্বা দাবী করিল যে , কিছুদিন আগে হামহাম ঝর্ণা পরিদর্শনে যাওয়ার ফলেই নাকি আমার এই দুর্গতি !

হাসপাতালে ভর্তি হবার আগের দিন। সারা গায়ে বিচ্ছিরি রকম হাম গজিয়ে উঠল । সে যে কি ভয়ংকর অনুভূতি বাপু , তোমার না হলে তা বুঝবে না । নিজের চেহারা দেখে আতংকে পরদিন সকালে ভিরমী খেলাম । টের পাচ্ছিলাম আমার শরীরে বিন্দুমাত্র শক্তি আর অবশিষ্ট নেই । কারন আগের ৩ দিন শুধু পানি ছাড়া আর কিছুই খাওয়া হয়নি । আমার বোনেরও এই অবস্থা হয়েছিলো । ওকে স্যালাইন দিয়ে রাখা হয় । আমি মিনমিন করে আব্বুকে বল্লাম , আমাকেও স্যালাইন দাও । আমি মুখে কিছু খেতে পারবো না ।

আমি ভেবেছি স্যালাইন দিলে বুঝি আর কিছু খেতে লাগেনা । মনে হয় ক্ষুধাও লাগেনা । ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে অসুখের সময়টা পার করে দেয়া যাবে । /:)

তারপরে তো আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করলো । সেই একই ওয়ার্ড, একই বেড । শুধু ১০ দিনের মাথায় রোগী বদলে গেছে । বোনের জায়গায় আমি ।

বললে বিশ্বাস করবা না । গোটা দশেক ডাক্তার মিলে ৭দিন ধরে আমার বোনের রোগনির্নয় করতে পারলেনা । তার আগেই ও ভাল হয়ে বাড়ীতে চলে এল । এইবার আমার পালা । আমি কিছুটা শঙ্কিত । "আসছে আষাঢ় মাস....কি জানি কি হয়..." । তারপরেও মনে আশা , ডেঙ্গু অথবা হাম এ দুটোর মধ্যেই সিলেবাস থাকবে । আমার বোনের ওপর এই দুটারই চিকিৎসা চালানো হয় । ও যেহেতু ভাল হয়েছে , কাজেই.....।

হাসপাতালটা দারুন তো ! ঈদের ছুটির আগে আগে এত্ত ডাক্তার বারবার এসে দেখে যাচ্ছে । প্রথমে ২-৩জন একসাথে এসে গম্ভীরভাবে আমাকে আধঘন্টা ধরে পরীক্ষা করল । চোখ উল্টান । জিভ দেখান । বদ ডাক্তারটাকে জিব বের করে ভেংচি কেটে মনে একটু শান্তি পেলাম । সে ব্যাটা আমার প্রেসারও মাপলো । বলে কিনা , এহে অনেক লো প্রেসার । আরে ফাজিল তুই কি ভাবছিস আমি ৩দিন ধরে কাচ্চি বিরিয়ানি খাইতেছি যে হাই প্রেসার উঠবে X(( ?


তারপর আমাকে ওষুধ দিল । দেখি আমার বোনকে দেয়া ওষুধের সাথে তার কোনো মিল নাই । আমাকে প্রায় ৩ গুন বেশী ওষুধ দেয়া হইছে । স্যালাইন তো আছেই । আমি ক্ষীন স্বরে প্রতিবাদের চেষ্টা করে যাচ্ছি । এ কেমন কথা ! ও সবসময় আমার থেকে বেশী সুবিধা পাবে !! ট্যাবলেট খেতে ওর কোনো কষ্টই হয়না মুড়িমুড়কির মত খেয়ে ফেলে । এদিকে আমার সিভিট খেতেও কষ্ট হয় । তাছাড়া একই যাত্রায় পৃথক ফল , পৃথক ওষুধ একই ডাক্তার কি করে দেয় ? ডাক্তার আমাকে ঝাড়ি দিয়ে বলে , বাসায় বসে আপনার বোনের ওষুধগুলা খেয়ে নিলেই তো পারতেন , এখানে আসার কি দরকার ছিল ?

অপারগ হয়ে ট্যাবলেটগুলা গেলার চেষ্টা করলাম । ইয়াত্ত বড় সাইজের ভোম্বা ট্যাবলেট । আমার গলার ফুটো কক্ষনো ওর চে বড় নয় । তাও আবার একেকবারে ২টা করে খেতে হবে । সারাদিনে ৮টা । এ তো মাত্র একরকমের ওষুধ , ভাইরাসকে কাবু করার জন্য । এছাড়া জ্বর নামানোর জন্য খেতে হবে নাপা । সেও আরেক ভোম্বা । এটাও দুটো করে । আরো আছে ফুসকুড়ি কমানোর ওষুধ । পেটব্যাথার ওষুধ । সব দুটো দুটো করে । এরপরে দিল ঠান্ডার ওষুধ । সবশেষে দিলো গ্যসট্রিকের ওষুধ । এসব খেয়ে পেটে যেন গ্যাস না হয় তাই । আমি চিঁ চিঁ করে বললাম , ডাক্তারবাবু , এত ওষুধ খেলে আমার বমি আসে । আর যায় কোথায় ! অমনি ডাক্তারবাবু প্রেসক্রিপশন নিয়ে তাতে বমির জন্য আরও এক রকমের ওষুধ লিখে দিলেন । আমি টুঁ শব্দটি করবার সাহস হারিয়ে ফেললাম । যদি তার জন্যও নতুন ওষুধ লেখা হয় :|

যাবার আগে ডাক্তার বললো , এত ওষুধ খালি পেটে খাওয়া যাবেনা । ৪ বেলা পেট ভরে খেতে হবে :-/

আরে বাবা ! আমি তো এখানে আসলামই এজন্য যে আমার মুখে খাবার শক্তি নাই । পানিও খেতে পারছিনা ট্যাবলেট দূরে থাক । হাতে একটা স্যালাইন ঢুকিয়ে পড়ে থাকব আর আপনাআপনি ভালো হয়ে যাব । এ ব্যাটা বলে কি ??? :|

অবশেষে ডাক্তার চলে যেতেই নার্সের আগমন । এই নার্সটা সত্যিই ছিলো দরদী টাইপের । আমার হাত ফুটো করে স্যালাইন লাগিয়ে দিয়েছে ঠিকই কিন্তু ভাল ব্যবহার করেছে । এরপর ট্যাবলেট খেতে হবে । আমি হিসাব করলাম । মূল ট্যাবলেটটা খাওয়ার আধঘন্টা পর অন্য ট্যাবলেট । এর কিছুক্ষন পর নাপা । এসবের আগে আবার কিছু সলিড খাবার খেয়ে নিতে হবে । কিছু খেয়ে নেয়ার আধঘন্টা আগে আবার গ্যস্ট্রিক আর বমির ওষুধ । আর সাত কোর্সের এই ডিনারের শেষে ডেজার্ট হিসেবে কফ সিরাপ ( চুল ছিড়ার ইমো ) ।

এই চক্র শেষ হতে না হতে পরের চক্রের সময় হয়ে যায় । :((:((:((



(চলবে.....)


( লেখাটা বেশী বড় হয়ে যাওয়াতে পর্ব করে দিলাম । অল্প কথায় নরকের আসল রূপ চিনানো যাবেনা । পরের পর্বে থাকছে ডাক্তারবাবুদের ডাঙ্গুলি খেলার বর্ণনা । )

সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ১:১২
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×