somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দাজ্জালের সময় পৃথিবীর অবস্থা ও মুসলিমদের করণীয় -৫ম পর্ব

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



দাজ্জালি শক্তির মিডিয়া যুদ্ধ ও সাংবাদিকদের দায়িত্ব

যেমনটি বলা হয়েছে, দাজ্জালের ফেতনায় বাস্তবতার চেয়ে মিথ্যা ও প্রতারণা বেশি থাকবে এবং সেই মিথ্যা-প্রতারনাকে সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়ার উপায় হবে মিডিয়া। তাই যে সব সাংবাদিক নিজেদেরকে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মত মনে করেন এবং নিজেদেরকে দাজ্জালের ফেতনা থেকে নিরাপদ রাখতে ইচ্ছা করেন, তারা সর্বাবস্থায় দাজ্জালি শক্তিগুলোর মিথ্যা ও প্রতারণার বিরুদ্ধে নিজেদের কলম ও জবানকে ব্যবহার করুন। সারা বিশ্বের কুফরি মিডিয়া ইসলামের বিরুদ্ধে বিষ উদগীরন করছে এবং নিজেদের ভুল ব্যবস্থাপনাকে শান্তি ও সুবিচারের আয়োজন হিসাবে প্রমাণিত করতে চাচ্ছে। এমতাবস্থায় মুসলমান সাংবাদিক ভাইয়েরা কি শুধু এই অজুহাতে আপন ধর্মের উপহাস-মশকারা সহ্য করে নিতে পারে যে, আমি যদি ইসলামের পক্ষে লিখি, তাহলে আমার চাকরি চলে যাবে? এর অর্থ কি এই নয় যে, দাজ্জাল এসে বলবে, আমার কথা মেনে নাও; আমার কথা মেনে নাও; অন্যথায় তোমার রিজিক কেড়ে নেওয়া হবে?

এটি কোন সংগঠনের যুদ্ধ নয়। না কোন রাষ্ট্রের, না বিশেষ কোন গোষ্ঠীর। বরং এটি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মত ও ইবলিসের গোলামদের মধ্যকার লড়াই। বিশেষ কোন বিভাগে নয় – এই যুদ্ধ চলছে মানবজীবনের সব কটি অঙ্গনে। তাই ইবলিসের গোলামরা সেই কাজগুলোই করছে, যেগুলো তারা জীবনভর করে আসছে। কিন্তু মানবতার বন্ধু মুহাম্মদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মত কা’ব ইবনে আশরাফের উত্তরসূরিদেরকে আপন নবীর দ্বীন-ধর্ম নিয়ে তামাশা করতে দেখে কিভাবে নীরব থাকবে?

নবী করীম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রচার-মাধ্যমের গুরুত্বকে কখনো অবহেলা করেননি, বরং মিডিয়াযুদ্ধের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে সে যুগের প্রচলিত প্রচার মাধ্যমকে সময় ও সুযোগ মতো পূর্ণাঙ্গরূপে ইসলামের দুশমনদের বিরুদ্ধে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। ইসলামপূর্ব যুগে কাবার দেয়ালকে সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করা হতো। কাফেররা বিভিন্ন কুৎসামূলক কথা রটনা করত। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘রাসূলের কবি’ খ্যাত হযরত হাস্সান বিন সাবেত রা.কে বলতেন, ‘হে হাস্সান! আল্লাহর রাসূলের পক্ষ থেকে জবাব দাও। আল্লাহ রূহুল কুদস (জিবরাইল) দ্বারা তোমাকে সাহায্য করবেন।’ নির্দেশ পালনার্থে হযরত হাস্সান বিন সাবেত রা. নিজের ইলহামী কাসীদার সাহায্যে কাফের-মুশরিক ও ইসলামের শত্রুদের এমন দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতেন যে, তাদের কয়েক পুরুষ পর্যন্ত তারা একথা ভুলতে পারত না। এক বর্ণনায় আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জন্য মিম্বর স্থাপন করেছিলেন, যে মিম্বরে দাঁড়িয়ে তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষ হতে জবাব দিতেন। একবার আরবের এক গোত্র নবী করীম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কাব্য ও বক্তৃতায় মোকাবেলার চ্যালেঞ্জ করে বসল। রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলেন। তিনি ‘রাসূলের কবি’ খ্যাত হযরত হাস্সান বিন সাবেত রা. এবং ‘খতীবে রাসূল’ খ্যাত সাম্মাস বিন কায়েস রা.কে মোকাবিলার জন্য নির্বাচন করলেন। দু’জনই কবিতা আবৃত্তি ও বাকশৈলীর চিত্তাকর্ষক প্রদর্শনী করলেন। মুসলমান কবি ও বক্তার শ্রেষ্ঠত্ব সবাই স্বীকার করে নিল। উমরাতুল কাযার সময় যখন রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরামের হালতে তাঁর প্রতি প্রাণ উৎসর্গকারী সাহাবায়ে কেরামকে সঙ্গে নিয়ে মক্কা মুকাররমায় প্রবেশ করছিলেন তখন রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে সামনে চলে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা বীরত্বের সঙ্গে কিছু কবিতা আবৃত্তি করতে লাগলেন। ওই পংক্তিগুলোতে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদব ও সম্মানের প্রসঙ্গ যেমন ছিল তেমনি কাফেরদের প্রতি ধমকিও ছিল। ওমর রা. তাঁকে বারণ করার চেষ্টা করলেন। নবী করীম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘হে ওমর! তাঁকে কবিতা আবৃত্তি করতে দাও। এটা ওই লোকদের ওপর তীর ছুঁড়ে মারার চেয়েও বেশি কার্যকরী।’ দুশমনের নাকের ডগায় পৌঁছে তাদেরকে ভীত-সন্ত্রস- করে তোলার এর চেয়ে সুন্দর পদ্ধতি আর কী হতে পারে! কেননা হুদাইবিয়ার চুক্তিপত্রে ‘অস্ত্র প্রদর্শনীর’ ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল, কিন্তু ‘কবিতা আবৃত্তির’ ওপর কোনো বাধা ছিল না।

প্রচারণার প্রচলিত ও সহজলভ্য পদ্ধতি ব্যবহারের পাশাপাশি নবী করীম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘ইহুদী প্রচার-মাধ্যম’ এর প্রতিরোধের প্রতিও বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। কাব ইবনে আশরাফ ইহূদী প্রোপাগান্ডার এক শক্তিশালী ভিত ছিল। তার যেমন অঢেল সম্পদ ছিল তেমনি সে ছিল একজন কবি। নারীদের অবাধ ও স্বেচ্ছাচারী স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তাকে গণ্য করা যায়। কবিতায় মুসলিম নারীদের নাম ধরে ধরে কুৎসা রটাত। রিসালাতের প্রতি কটূক্তিকারীদের আশ্রয়স্থল ও সাহায্যকারীও ছিল সে। বুদ্ধিবৃত্তিক সহায়তা দান এবং মক্কার কাফেরদেরকে সংঘবদ্ধ করার জন্য মক্কা মুকাররমা চষে বেড়াত। কাফেরদের সমাবেশে আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি কটূক্তি করে কবিতা পাঠ করে শোনাত। নবী করীম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশে হযরত মুহাম্মদ ইবনে সালামা রা. ওই অভিশপ্তকে খতম করেন এবং চিরদিনের জন্য তার মুখ বন্ধ করে দেন।

ইহূদী আবু রাফে ‘কুফুরী সাংবাদিকতার’ (এটাকে যদি সাংবাদিকতা বলা হয়) সবচেয়ে বড় আর্থিক সহায়তাকারী ছিল। ইসলামের বিরুদ্ধে পানির মতো পয়সা ব্যয় করতো। অসৎ ও উত্তেজনা সৃষ্টিকারী কবিদের সেবায় দিরহাম-দিনারের থলি পৌঁছে দিত। সে কবিরা যেন জীবন-জীবিকার দিক থেকে সম্পূর্ণ দুশ্চিন্তামুক্ত হয়ে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে মিডিয়াযুদ্ধে অবতীর্ণ হতে পারে এর সব ব্যবস্তা সে করে দিত। দীনী জযবায় উজ্জীবিত কয়েকজন নও মুসলিম তাকেও তার চিরস্থায়ী ঠিকানা জাহান্নামে পাঠিয়ে দেন। রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন এ সংবাদ পেলেন অত্যন্ত আনন্দ প্রকাশ করলেন এবং ওই ভয়াবহ শত্রুকে যারা জাহান্নামে পাঠিয়েছেন তাদের কামিয়াবীর জন্য দুআ করেছেন।

শেষোক্ত দু’টি ঘটনার ক্ষেত্রে ইসলামবিরোধী প্রোপাগাণ্ডা ছাড়াও ছিল ইসলামবিরোধী অব্যাহত ষড়যন্ত্র এবং শান্তিপূর্ণ সহানস্থানের চুক্তি ভঙ্গের মতো অমার্জনীয় কিছু উপাদান ও উপলক্ষ্য। তাছাড়াও এসব ঘটনার কারণ ও হেকমত বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। কিন্তু আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে একথা বলতে পারি, ওই যুগে প্রচলিত মিডিয়াকে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসলামের উপকার ও ফায়দার জন্য পূর্ণাঙ্গরূপে ব্যবহার করেছেন। মিডিয়া আগ্রাসন ও ইসলামবিরোধী প্রোপাগাণ্ডার বিষয়টিকে তিনি সামান্যও এড়িয়ে যাননি বা উপেক্ষা করেননি। আধুনিক প্রযুক্তি যখন থেকে প্রচার মাধ্যমে উৎকর্ষ সাধন করে এবং বক্তৃতা ও কবিতা আবৃত্তির পাশাপাশি সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশনের ভূমিকা যুক্ত হয় তখন থেকে মিডিয়ায় এক বিপ্লব সংঘটিত হয়ে যায়। ঘরের কোণেকোণে পর্যন্ত দুশমনদের অনুপ্রবেশ ঘটে। এতে মহিলা ও শিশুদের মানসিকতা সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়। মিডিয়ায় ইসলাম ও মুসলমানদের দুশমনদের একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম হয়। বর্তমানে প্রায় পুরো মিডিয়া জগৎটা পশ্চিমা পদলেহী এবং ইহূদী-খৃষ্টানদের এজেন্টে ছেয়ে গেছে। নগ্নতা ও অশ্লীলতাকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। মানবিক মূল্যবোধের ধারণাটাই তারা পাল্টে দিয়েছে। মিথ্যাকে সত্য এবং বাতিলকে হক বানিয়ে পেশ করা হচ্ছে।

বাণিজ্যিক রেডিও-টেলিভিশনগুলো সংবাদের শুরুতে এবং সংবাদপত্রের প্রথম পৃষ্ঠায় অথবা সম্পাদকীয় পৃষ্ঠায় কুরআনের কোনো আয়াত অথবা হাদীসে নববীর তরজমা প্রচার বা প্রকাশ করে সাধারণ মানুষের মনে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছে যে, পুরো সংবাদ অথবা পুরো প্রোগ্রামে ইসলামের স্পিরিট ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। ইসলামের লেভেল লাগিয়ে দেওয়ার পর চাই উগ্র বিনোদনের পৃষ্ঠাসহ অনেক কিছু ইসলামের খাতায় সংযুক্ত হয়ে যায়। মিডিয়ায় ইসলাম ও মানবিক মূল্যবোধের বিরুদ্ধে একতরফা যুদ্ধ চলছে। সাংস্কৃতিক দুর্বৃত্তরা ভদ্রতা ও মানবিকতার চেহারা ঢেকে অশ্লীলতা ও নির্লজ্জতার প্রবাহে ভেসে যাচ্ছে। মানবতাবিধ্বংসী কালচারে আজ ছেয়ে যাচ্ছে চারদিক।

অতএব, হে কলম সৈনিকগণ, দাজ্জালি শক্তিগুলো মিডিয়ার ফুঁৎকারে ইসলামের প্রদীপকে নিভিয়ে দিতে চায়। আর আপনি একদিকে ইসলামের অনুসারী, অপরদিকে একজন মিডিয়াকর্মী। এক্ষেত্রে আপনি ইসলামের আমানতদার। আপনার কলমের উত্তাপ যেন ইসলাম-প্রদীপের আলোকে প্রজ্জলিত রাখে, সেক্ষেত্রে আপনার দায়িত্ব পালন করতে হবে। আপনি বিশ্বাস রাখুন, আপনার রব আপনার জন্য এই জগতের তুলনায় অনেক বেশি উন্নত জগত তৈরি করে রেখেছেন।

দাজ্জাল ও মিডিয়াযুদ্ধ

খলীফা আব্দুল হামিদ দ্বিতীয় (১৮৪২-১৯১৮, ইসলামী খেলাফতের ৯৯ তম খলীফা এবং তুরস্কের উসমানিয়্যা সাম্রাজ্যের ৩৪ তম সুলতান) পশ্চিমা মিডিয়াগুলো সম্পর্কে একটা মন্তব্য করেছিলেন। তা হল, ‘এগুলো শয়তানের সন্তান’। কিন্তু তিনি যদি এ যুগের মানুষ হতেন, তাহলে একে ‘দাজ্জালের চোখ ও কণ্ঠ’ নাম দিতেন।

দাজ্জাল আরবি ‘দাজলুন’ থেকে ব্যুৎপন্ন। ‘দাজলুন’ অর্থ আচ্ছাদিত করা। দাজ্জাল অর্থ অনেক আচ্ছাদনকারী। দাজ্জালকে এজন্য দাজ্জাল বলা হয় যে, সে নিজের মিথ্যা ও প্রতারণার মাধ্যমে সত্যকে ঢেকে ফেলবে। প্রতারণার মাধ্যমে সে বড় বড় লোকদেরকে বিভ্রান্ত করে ফেলবে। তার ধোঁকা ও প্রতারণার ফাঁদে পড়ে মানুষ দেখতে না দেখতে ঈমান থেকে হাত ধুয়ে বসবে।

পুরো ইলেকট্রনিক মিডিয়া (স্যাটেলাইট ও ইন্টারনেট) ও প্রিন্ট মিডিয়া জগতকে কয়েকভাগে ভাগ করা যায়।

১) সংবাদ মাধ্যম (নিউজচ্যানেল, ছাপানো নিউজ পেপার, অনলাইন নিউজ পেপার)

২) বিনোদন মাধ্যম (কমার্শিয়াল চ্যানেল, চলচ্চিত্র ও নাট্য শিল্প সংস্থা)

৩) যোগাযোগ মাধ্যম (সহজলভ্য ইন্টারনেট ও সুলভ মূল্যে মাল্টিমিডিয়া মোবাইল ফোন ও নিম্নকলরেট)

৪) প্রচার মাধ্যম (বিভিন্ন স্যাটেলাইট চ্যানেল, নিউজ পেপার ও বিলবোর্ডের অ্যাড)

সংবাদ মাধ্যমঃ পশ্চিমা প্রচার মাধ্যমগুলোর কর্মধারাও অনেকটা এরকম। তারা যে বাস্তবতাকে পৃথিবীর দৃষ্টি থেকে লুকানো প্রয়োজন বোধ করছে, তার গাঁয়ে তারা সংশয় ও সন্দেহের এমন চাদর জড়িয়ে দেয় যে, মানুষ তার তলদেশ পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম হয় না। পক্ষান্তরে যে বিষয়টিকে তারা প্রমাণিত করার ইচ্ছা করে, মিথ্যার হাজারো সুদর্শন গেলাফ চড়িয়ে তাকে সপ্রমাণিত করে ছাড়ে। যেমন- তারা যদি আজ সংবাদ প্রচার করে, সমগ্র অস্ট্রেলিয়া সমুদ্রে ডুবে গেছে, তা হলে এই ‘পশ্চিমা মিডিয়ায় আস্থাশীল বিশ্ব’ এর জন্য সংবাদটি বিশ্বাস না করে উপায় থাকবে না।

আর বর্তমানে এই পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যম ও সংস্থাগুলো সারা বিশ্বে নিজেদের অবস্থান এমনভাবে গত এক শতকে পাকা করে নিয়েছে যে, বিশ্বের প্রতিটি ভূখণ্ডেই স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোও এই পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যম ও সংস্থাগুলোর সংবাদের উপর ভিত্তি করেই আন্তর্জাতিক সব সংবাদ প্রচার করে। ফলে যখন কোন ভূখণ্ডে একটি ঘটনা ঘটে, স্থানীয়ভাবে ওই ভূখণ্ডে ঐ ঘটনা সম্পর্কে যে সংবাদই প্রচার হোক না কেন, বিশ্ব সেটাই জানবে যা কিনা এই পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যম ও সংস্থাগুলো প্রচার করবে।

সুতরাং, দাজ্জাল যখন সশরীরে এসে নিজের খোদাই দাবি করবে, এই ইহুদি-খ্রিস্টানদের নিয়ন্ত্রণাধীন এই পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যম ও সংস্থাগুলো সারা বিশ্বে সগৌরবে তা প্রচার করবে এবং এক শ্রেণীর দুর্বল ঈমানের মুসলমান নামের দাবিদার প্রথম ধাক্কাতেই তা বিশ্বাস করে ঈমান হারিয়ে ফেলবে।

বিনোদন মাধ্যমঃ সকল প্রকার বিনোদন চাই তা সিনেমাই হোক বা নাটকের মতো স্বল্প দৈর্ঘ্য সিনেমাই হোক, এক কথায় এগুলোর গুরু হল হলিউড - সরাসরিই হোক বা ঘুরিয়ে পেচিয়েই হোক। হলিউডকে ইবলিসের মতবাদের দুর্গ আখ্যায়িত করাই অধিক সঙ্গত। দাজ্জালি ব্যবস্থাপনার পথকে সুগম করার জন্য এই প্রতিষ্ঠানটি অনেক বড় ভূমিকা পালন করছে। এমন একটি বস্তু, যার অস্তিত্ব জগতে নাই, তাকে বাস্তবতার রূপ দিয়ে বিশ্ববাসীর সামনে উপস্থাপন করা এবং মডার্ন চরিত্রের মানুষদের মস্তিষ্কে বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার ক্ষেত্রে এর কোন বিকল্প নেই। এই প্রতিষ্ঠানটি ইহুদীদের প্রস্তুতকৃত পরিকল্পনাসমূহের পক্ষে জনমত তৈরি করছে। বিশেষ করে ইদানিং বিভিন্ন সিনেমায় দেখানোর চেষ্টা করছে, সারা বিশ্বে প্রচুর গণ্ডগোল, অশান্তি আর বেইনসাফী। আর এগুলোর উপশমে/পরিত্রাণে হাজির হচ্ছেন এক মহানায়ক। কখনও মানুষ রূপে বা ভিনগ্রহ থেকে এলিয়েন রূপে। আর কার্টুন সমূহে তো আছেই সুপারম্যান, ব্যাটম্যান আর বেন টেন নামে প্রবল শক্তির অধিকারী একজন যে কোন বিপদ হতে মুক্তিদাতা। আর এর পাশাপাশি ব্যভিচার আর অশ্লীলতাকে বিশ্বব্যপী শিল্পের রূপ দেওয়ার ব্যাপারে এই হলিউডেরই সহদোর মূর্তিপূজারীদের বলিউডের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির বিষয়টি এখন আর খোলাসা করে বলার কিছু নেই। আক্ষেপের বিষয় হল, বিভিন্ন ভূখণ্ডের বুদ্ধিজীবী নামধারীরা এই সকল মিডিয়ার নর্তকী-গায়িকার আঙুলের ইশারায় পুতুলের মতো নাচছে। কিন্তু তারপরও প্রগতিবাদী ও মুক্তচিন্তার বাহক ভাবছে। অথচ বাস্তবতা হল, তাদের বিবেক বুদ্ধি সেই কবে হলিউড আর নিজ ভূখণ্ডে হলিউডের শাগরেদ কমার্শিয়াল চ্যানেল, চলচ্চিত্র ও নাট্য শিল্প সংস্থার কাছে নিলাম হয়ে গেছে।

যোগাযোগ মাধ্যমঃ এই খাতে সহজলভ্য ইন্টারনেট ও সুলভ মূল্যে মাল্টিমিডিয়া মোবাইল ফোন ও নিম্নকলরেট একটি বিশেষ ভূমিকা রাখছে এবং রাখবে। ‘গ্লোবাল ভিলেজ’ এর কনসেপ্টকে মাথায় রেখে বিশ্বের টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থাকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যেখানে তাতক্ষনিকভাবে প্রতিটি সংবাদ পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। যদিও প্রথমে মানুষের দৈনন্দিন কাজের সুবিধার্থে এই তারহীন ফোনব্যাবস্থার শুরু আর মার্কিন সেনাবাহিনীর অফিসিয়াল কাজে ব্যবহারের জন্য ইন্টারনেটের আবিস্কার। কিন্তু কালের বিবর্তনে আর প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সুযোগে বানিজ্যিকভাবে এই সকল প্রযুক্তি নির্ভর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে গিয়ে সহজলভ্যতা ও কলরেটকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে এখন তা প্রয়োজনীয়তাকে ছাপিয়ে গিয়েছে। এখন এগুলো অবদান রাখতে শুরু করেছে যুবক যুবতীর অবৈধ সম্পর্কে টিকিয়ে রাখতে। মাল্টিমিডিয়া সেটে ফোনে কথা বলার সুবিধার পাশাপাশি ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা এখন এখন আর প্রয়োজনীয় ইমেইল যোগাযোগের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এখন তা গান, মুভি আর ফেসবুক চ্যাটিং এর ভিন্ন বিশ্ব। খুব কম সংখ্যক ব্যক্তিই পারছেন শরীয়তের সীমার ভিতরে থেকে এই সব প্রযুক্তি ব্যাবহার করতে। দুর্বল ঈমানের যুবক যুবতীরা ঘরে বসে কোন নড়াচড়া ছাড়াই দাঁড়িয়ে, বসে কিংবা শুয়ে গড়ে তুলছে পাপের পাহাড়।

প্রচার মাধ্যমঃ এই মিডিয়া জগতকে প্রচার মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করতে গিয়ে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তার পণ্যের প্রচার করতে গিয়ে আবারও যেন মনের অজান্তেই শয়তানের দাসে পরিণত হয়েছে। বিলবোর্ডসহ নিউজ পেপার ও বিভিন্ন চ্যানেলে অ্যাড দিতে গিয়ে যেন নারীকে পণ্যের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে। ব্যভিচার আর অশ্লীলতাকে পুঁজি করে তৈরি করছে অ্যাড। স্বল্প সময়ের এই এক একটি অ্যাড এ ঈমান-আকিদা ও শরীয়তের বিধান তথা ধর্মীয় শিক্ষার সাথে সাংঘর্সিক অনেক কথাই থাকে যা মনের অজান্তে কোমল মতি শিশুদের মনে ঢুকে যায় এবং সেগুলোকেই সত্য ও সঠিক বলে ধরে নেয়। যার ফলে পরে তার জন্য ধর্মীয় শিক্ষাকে গ্রহণ করা বা মেনে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে, এমন কি কখনও কখনও চ্যালেঞ্জ করে ঈমানহারা হয়ে পড়ে।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪৮
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×