somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দাজ্জালের সময় পৃথিবীর অবস্থা ও মুসলিমদের করণীয় -৬ষ্ঠ পর্ব

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



দাজ্জাল ও খাদ্য উপকরণ

দাজ্জাল আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে এমন একটি পরীক্ষা হবে, যার মাধ্যমে ঈমানদারদেরকে যাচাই করা হবে, তারা আল্লাহর ওয়াদার উপর কতটুকু বিশ্বাস রাখে। যারা এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে, তাদের জন্য আল্লাহ অনেক মর্যাদা ও প্রতিদান বরাদ্দ রেখেছেন। এ কারণেই দাজ্জালকে সব ধরনের উপকরণ প্রদান করা হবে।

দাজ্জাল সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, তার কাছে বিপুল পরিমাণ খাদ্য উপকরণ থাকবে। সে যাকে ইচ্ছা খাদ্য দিবে, যাকে ইচ্ছা না খাইয়ে মারবে। বর্তমানে পৃথিবীতে বাৎসরিক আয়ের দিক দিয়ে খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনকারী সবচেয়ে বড় কোম্পানিটির নাম ‘নেসলে’। এই প্রতিষ্ঠানটি ইহুদী মালিকানা এবং এদের মিশন সমগ্র পৃথিবীর খাদ্য উপকরণকে নিজেদের মুঠোয় নেওয়া।

এই কোম্পানিটি বর্তমানে খাদ্য উপকরণ, পানীয়, চকলেট, সবধরনের মিষ্টান্ন দ্রব্য, কফি, গুড়োদুধ, শিশুদের দুধ, পানি, আইসক্রিম, সবধরনের আচার ও স্যুপসহ ২৯ টি ব্র্যান্ডের খাবার। ১৯০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানিটি সবচেয়ে বেশি বাণিজ্যিক প্রসারতা লাভ করে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। এরপরে প্রসারতার ধারাবাহিকতায় এটি আরও পাঁচটি বিশ্বখ্যাত বড় বড় খাবার কোম্পানিকে কিনে নেয়। ২০১২ সালের হিসাব অনুযায়ী এই কোম্পানির ৮৬ টি দেশে ৪৫০ টি কারখানায় ৩,২৮,০০০ শ্রমিকসহ মোট কর্মী সংখ্যা ৩,৩৯,০০০ জন।

আর এই বস্তুবাদী ও ভোগবাদী জগত খাদ্য পানীয়র বেলায় নেসলের উপর নির্ভরশীল। আর মুখরোচক রকমারি খাবার মানুষকে অলস বানিয়ে দেয়, শরীরকে স্থূলাকার করে ফেলে আর নানা রোগের জন্ম দেয়। অথচ পরিমিত সাধাসিধে খাবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার সাহাবীদের সুন্নত। যা আজকাল একমাত্র তাকওয়াপূর্ণ পুরুষ ও মহিলাদের ক্ষেত্রেই যা মেনে চলা সম্ভব।

নু’আইম ইবনে হাম্মাদ সংকলিত ‘আলফিতান’ –এ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) এর সূত্রে উল্লেখিত হয়েছে, ‘দাজ্জালের সঙ্গে ঝোল ও এমন গোশতের পাহাড় থাকবে, যা কখনো ঠাণ্ডা হবে না’।

বর্তমান যুগে পৃথিবীতে নানা স্তর অতিক্রম করে খাদ্য ও পানীয় নিরাপদ রাখার জন্য স্বতন্ত্র কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান দাঁড়িয়ে আছে। এই সকল প্রতিষ্ঠান ‘ফুড প্রসেসিং ও প্রিসার্ভেশন’ নামে ১৮০৯ সাল থেকে কাজ করে যাচ্ছে। ১৮০৯ সালে নিকোলাস অ্যাপার্ট সর্বপ্রথম খাদ্যের প্রিসার্ভেশন পদ্ধতি আবিস্কার করে। এই সকল প্রতিষ্ঠানের কাজই হল খাদ্য ও পানীয় বস্তুকে আধুনিক থেকে আধুনিকতর পদ্ধতিতে সংরক্ষিত করা বিষয়ে গবেষণা করা। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো এ যাবত বহু সংখ্যক পদ্ধতি আবিস্কার করে ফেলেছে। সেই পদ্ধতিগুলোর কিছু পদ্ধতি এমন, যেগুলোতে খাদ্যকে এক বিশেষ মাত্রার তাপে গরম রেখে সংরক্ষণ করা হয়। স্যুপ, আচার, সবজি, গোশত, মাছ ও ডেইরি সংক্রান্ত বস্তুসমূহ এই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। কাজেই এই যে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘গোশতগুলো গরম হবে এবং ঠাণ্ডা হবে না’ কথাটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ও অর্থবহ।

প্রাকৃতিক খাদ্যদ্রব্য আল্লাহপাক মানুষের প্রয়োজনে সৃষ্টি করেছেন এবং প্রতিটি ভূখণ্ডে সেখানকার মানুষের মেজাজ,মৌসুম ও ভৌগলিক অবস্থান হিসাবে নানা প্রকার ফলমূল ও শাকসবজি উৎপন্ন করেন। এসকল বস্তুসামগ্রী সেই দেশের নাগরিকদের মালিকানায় ছিল। নিজেদের ক্ষুধা নিবারণে তারা কারও মুখাপেক্ষী হওয়ার কথা ছিল না। নিজেদের উৎপাদিত ফসল নিজেরাই ভোগ করত। কিন্তু আল্লাহর শত্রু ইহুদী গোষ্ঠীর বিষয়টি সহ্য হল না। তারা এই সব উৎপাদনকে নিজেদের হাতে নিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা প্রস্তুত করল। ঠিক এমন, যেন এই গোষ্ঠীটি আল্লাহর অবতারিত মান্না ও সালওয়ায় সন্তুষ্ট না হয়ে অর্থব্যবস্থাকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে আল্লাহর নিকট সবজি ও ডালের আবেদন জানিয়েছিল, যাতে সম্পদ কুক্ষিগত করে নিজেদের দুষ্ট স্বভাবের প্রকাশ ঘটাতে পারে।

আর এর জন্য তারা ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’ এর মতো বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন সময় এমন আদেশ জারি করিয়ে নিল, যার আওতায় প্রাকৃতিক খাদ্য ও পানীয় সামগ্রীকে বিভিন্ন রিপোর্টে বিভিন্ন অজুহাতে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সাব্যস্ত করা হয়েছে। যার ফলে বিশ্ব ধীরে ধীরে প্রাকৃতিক খাদ্য ও পানীয় সামগ্রী থেকে দূরে চলে গেছে ও বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল ও স্থানীয় কোম্পানিগুলোর প্রস্তুতকৃত খাদ্য সামগ্রীর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশে আটা, ময়দা, সুজি, তেল, ঘি, দুধ, জিরা, মরিচ, হলুদ, বিভিন্ন মসলা থেকে শুরু করে রেডি হালিম, রেডি চিকেন কারী, মাটন কারী, রেডি বিরিয়ানি, রেডি খিচুরি, রেডি ক্ষীর মিক্সসহ প্রায় সব ধরনের খাদ্য উপকরণ আজ বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল ও স্থানীয় কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের অধীনে বাজারজাতকৃত। অথচ আজ থেকে ১০০ বছর পিছনে ফিরে তাকালে দেখা যায়, এই সকল প্রাকৃতিক খাদ্য ও পানীয় সামগ্রী খেয়ে আমাদের পূর্ব পুরুষরা দীর্ঘায়ু লাভ করেছেন।

তারা তথ্য প্রকাশ করল, মাটির পাত্রে খাবার খাওয়া ক্ষতিকারক। আর যায় কোথায়! অমনি মানুষ সমাজ থেকে মাটির থালা বাসন পাত্রের ব্যবহার তুলে দিল। কিন্তু মজার বিষয় হল, সেই বাসন ফাইভস্টার হোটেলে পৌঁছে গেল আর বলা হল, এগুলোতে খাওয়ার মজাই আলাদা।

তাই বর্তমানে মুসলমান ডাক্তারদের কর্তব্য হল, আপনারা জাতিকে সে সকল অপকারিতা সম্পর্কে অবহিত করেন, আন্তর্জাতিক কুফরি শক্তির ষড়যন্ত্রের ফলে জাতি আজ যার শিকার। যদিও বর্তমানে সময়টি এমন যে, সত্য বললে আগুন আর মিথ্যার সামনে ডলারের বৃষ্টি বর্ষিত হয়, তবুও কারও যদি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসের উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস থাকে যে, দাজ্জালের সময়টিতে যেটি আগুন হিসাবে পরিদৃশ্য হবে, সেটিই মূলত শীতল পানি হবে, তা হলে মুসলমান ডাক্তারদের সেই পথটিই অবলম্বন করা দরকার, যেটি তাদের জন্য উপকারী বলে বিবেচিত হবে। আমাদেরকে সব সময়ের জন্য স্মরণ রাখতে হবে, সত্য বলার অপরাধে যে আগুন বর্ষিত হয়, এগুলোই আসলে ফুলবাগান। আর মিথ্যার সামনে মাথানত করার ফলে যে ডলারের বৃষ্টি বর্ষিত হয়, এগুলোই মূলত আগুন।

বস্তুত আমরা খাদ্য উপকরণের ক্ষেত্রে যতই প্রকৃতি থেকে দূরে সরে কোম্পানি নির্ভর হয়ে পড়ছি, ততই আমরা দাজ্জালকে আল্লাহর প্রদত্ত বিশ্বের উপর ব্যাপক ক্ষমতার কাছে সহজ করে দিচ্ছি। কারণ, দাজ্জাল তার বিশ্বব্যপী ব্যাপক ক্ষমতার গুনে এ সব কোম্পানির উপর অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে আর নিজেকে রিজিকদাতা হিসাবে দাবি করবে।

দাজ্জাল ও সম্পদ কুক্ষিগতকরণ

বর্তমানে পৃথিবীর সমস্ত খনিজ উপাদানের উপর প্রত্যক্ষভাবে হোক কিংবা পরোক্ষভাবে হোক ইহুদীদের নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠিত।

আপনি হাদিসে পড়েছেন, দাজ্জালের কাছে সম্পদের অসংখ্য পাহাড় থাকবে। তারই প্রস্তুতি হিসাবে ইহুদীরা পৃথিবীর সমস্ত সম্পদকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিচ্ছে। পৃথিবী থেকে গোল্ড স্ট্যান্ডার্ডকে বিলুপ্ত করে সোনাকে নিজেদের কব্জায় নিয়ে তারা বিশ্ববাসীর হাতে রং বেরঙয়ের কাগজের টুকরা (কারেন্সি নোট, ক্রেডিট কার্ড ইত্যাদি) ধরিয়ে দিয়েছে। এগুলোকে ইহুদী দাসত্বের শিকলে ফেঁসে যাওয়া বিশ্ব নোট কিংবা সম্পদ মনে করে থাকে। তবে এই আত্মপ্রবঞ্চনা ও ঘোর শীঘ্রই কেটে যাবে। বরং এখন তো মানুষের হাত থেকে নোটও ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে এবং হাতে প্লাস্টিকের কার্ড ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অদূরদর্শী মানুষ প্লাস্টিকের কার্ডটি হাতে নিয়ে নিজেকে কোটিপতি, মিলিয়ন-বিলিয়নপতি ভাবছে।

কম্পিউটারের কীবোর্ডের সামনে বসে হাতের আঙ্গুলের ইশারায় কোটি টাকার হিসাবকারী সেদিন কি করবে, যেদিন কিবোর্ড টিপতে টিপতে আঙ্গুল ক্লান্ত হয়ে যাবে, কিন্তু নিজের অনলাইন একাউন্টের হিসাব মিলবে না? এমন পরিস্থিতির এমন একটা ঝলক গেল কিছুদিন আগে বিশ্ব অর্থমন্দার আলোকে বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করেছে। যেটি ছিল ইহুদী মস্তিস্কের সৃষ্ট ফসল এবং দাজ্জালি শক্তির আন্তর্জাতিক পরিকল্পনার একটি অংশ। কোন কোন দেশ শেয়ার বাজারের দরপতনের মতো ঘটনায়ও দেখেছেন কিভাবে চোখের সামনে ডিজিটাল স্ক্রিনে কেনা শেয়ারের বিপরীতের মোটমূল্য নামতে থাকে। তাই মুসলমান ব্যবসায়ীদের প্রতি পরামর্শ, আপনারা নিজেদের কাছে রঙ বেরঙ এর কাগজের টুকরো জমানোর পরিবর্তে সোনা রুপা জমান। অন্যথায়, অতিশীঘ্র সমুদয় সম্পদ থেকে হাত ধুয়ে নিঃস্ব হয়ে যেতে পারেন।

ইহুদীরা ইতিমধ্যেই বড় বড় কোম্পানিগুলোকে নিজেদের মুঠোয় নিয়ে নিয়েছে। এখন তারা এর পরের ধাপে চেষ্টা চালাচ্ছে বিভিন্ন শপিং মলের লিমিটেড কম্পানি খুলে বড় বড় শহরগুলোতে দৈনন্দিন বাজারকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে।

বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ এই দুটি প্রতিষ্ঠান সমগ্র পৃথিবীকে বর্তমানে নিজেদের দাস বানিয়ে রেখেছে এবং বিভিন্ন দেশের উন্নয়ন ও গঠনের পরিকল্পনা এখানেই প্রস্তুত হয়। আপনি যদি এই দুই প্রতিষ্ঠানের ঋণ চালু করা এবং পরিশোধ করার পদ্ধতিগুলো গভীরভাবে জানেন, তাহলে দাজ্জালের আবির্ভাবের আগে কিভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন জাতিকে অর্থনৈতিক দাস বানাতে হয়, বুঝতে পারবেন।

অপরাপর সম্পদের পাশাপাশি ইহুদীদের দাজ্জালি শক্তি মানবসম্পদের কুক্ষিগতকরণেও পিছিয়ে নাই। তাই তারা তাদের শত্রু মুসলমানদের হয় পঙ্গু বানিয়ে ফেলছে, না হয় নিজেদের নিয়ন্ত্রিত দেশে ডেকে নিয়ে তাদেরকে নিজেদের কাজে ব্যবহার করছে। আলেম বলুন আর মুসলমান প্রযুক্তিবিদ বা চিন্তাবিদ বলুন, এমন প্রতিজন মুসলমানের উপর তারা চোখ রাখছে। এদের মধ্যে বহুসংখ্যক মুসলমানদের মাথা ক্রয় করে নিয়েছে। তৈরি করছে দরবারী আলেম আর মুসলিম নাম সদৃশ ইসলাম বিরোধী চিন্তাবিদ। যাদেরকে ক্রয় করতে পারেনি তাদেরকে ‘সন্ত্রাসী’ লেবেল দিয়ে হত্যার পথ বেছে নিয়েছে। এমনকি এক্ষেত্রে তারা নিজ দেশের নাগরিকের ক্ষেত্রেও পিছ পা হয়নি। বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন মুসলিম দেশেও সত্যাশ্রয়ী আলেমগণের গণহত্যা এই ধারারই একটি অংশ বিশেষ। যার কারণে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এব্যাপারে উম্মতকে সতর্ক করে গেছেন।

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

“আলেমদের জীবনে এমন একটি সময় আসবে, যখন তাদেরকে এমনভাবে হত্যা করা হবে, যেভাবে চোরদেরকে হত্যা করা হয়। আহ, সেদিন আলেমরা নির্বোধের ভান ধরত যদি”। (আস সুনানুল অয়ারিদাতু ফিলফিতান খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৬৬১; আত তাকরীব খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৩১; আল মীযান খণ্ড ৪ পৃষ্ঠা ৩৩৪)

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, “আমি সেই সত্ত্বার শপথ করে বলছি, যার হাতে আমার জীবন, নিঃসন্দেহে আলেমদের জীবনে এমন একটি সময় আসবে, যখন তাদের কাছে লাল সোনার চেয়েও মৃত্যু বেশি প্রিয় হবে। তোমাদের কেউ তার ভাইয়ের কবরের কাছে গেলে বলবে, হায়, এর জায়গায় যদি আমি হতাম”। (মুসতাদরাকে হাকেম, পৃষ্ঠা ৮৫৮১)

যদিও উম্মতের এই বিজ্ঞ আলেমদের হত্যাকাণ্ডকে নানা মহল আপন আপন দৃষ্টিভঙ্গিতে মূল্যায়ন করছে। অথচ এই হত্যাকাণ্ডকে হাদিসে রাসুলের আলোকে মূল্যায়িত করা আবশ্যক ছিল।



বর্তমানে সত্যের মোকাবিলায় মিথ্যা চূড়ান্ত যুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে ফেলেছে। ইবলিসিয়াত সর্বত্র প্রকাশ্যে নগ্ন নাচ নাচতে চাইছে। মহান আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের বোধ বিশ্বাস ও চেতনাকে হৃদয় থেকে মুছে দিয়ে মানুষদের থেকে দাজ্জালিয়াত ও ইহুদিয়াতের “ওয়ার্ল্ড অর্ডার” এর সম্মতি আদায়ের প্রচেস্টা ও পাঁয়তারা চলছে।

এমতাবস্থায় যারা ইবলিশের ইঙ্গিত ও পরামর্শে কাজ করছে, তারা সত্যের এই সুউচ্চ মিনার ও আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীকগুলোকে সহ্য না করারই কথা, যাদের আঙ্গুলের একটি ইশারায়, কলমের একটি খোঁচায় দাজ্জালের শক্ত প্রাচীরে ফাটল ধরিয়ে দিতে সক্ষম। মিথ্যার আতঙ্ক এই আলেমগন এ যুগেও ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র সেই মর্মই বর্ণনা করতে বদ্ধপরিকর, যার ঘোষণা উচ্চারিত হয়েছিল আজ থেকে চৌদ্দশত বছর আগে সাফা পাহাড়ে।

কাজেই দাজ্জালের ‘এডভান্স ফোর্স’ এদের কি করে সহ্য করতে পারে!

দাজ্জালের মোকাবিলায় কৃষক সমাজ

যারা দাজ্জালের প্রভুত্ব মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানাবে, দাজ্জাল তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে ফিরে যাবে। এ যুগে কৃষক সমাজ বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে পারবে। বিষয়টিতে বিস্তারিত আলোচনায় প্রবেশ করার আগে একটি শব্দের মর্ম বুঝে নিন।

শব্দটি হল ‘পেটেন্ট’, যার অর্থ ‘আবিষ্কৃত দ্রব্য তৈরি বা বিক্রয়ের একক অধিকার’। এটি একটি আইন, যা মালিকের মালিকানা স্বত্তকে প্রমাণিত করে। এটি নতুন এক আন্তর্জাতিক কৃষিনীতি, যাকে কৃষক সমাজের উন্নতি ও স্বচ্ছলতার ক্ষেত্রে বিপ্লব নাম দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই নীতি কৃষকের হাত থেকে উৎপাদিত শস্যের এক একটি দানা কেড়ে নেওয়ার গভীর এক চক্রান্ত।

ইহুদী কোম্পানিগুলো যদি কোন শস্যবীজকে পেটেন্ট করে নেয়, তা হলে তার এই অর্থ এই দাঁড়ায় যে, সে এটির মালিক হয়ে গেছে। যেমন – তারা যদি একটা নাম দিয়ে কোন মুসলিম রাষ্ট্রের কোন বিশেষ প্রজাতির চালকে পেটেন্ট করে নেয়, তাহলে সেই মুসলিম দেশের প্রতিজন কৃষক সেই বিশেষ প্রজাতির চালের বীজ উক্ত কোম্পানির কাছ থেকে কিনতে বাধ্য হবে। এমতাবস্থায় যদি তারা নিজেরা বীজ উৎপাদন করে, তা হলে এই অপরাধের দায়ে তাদেরকে জরিমানা আদায় করতে ও জেলের বাতাস খেতে হবে। যেহেতু এই ধরনের বীজ কৃত্রিম উপায়ে জেনেটিক পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়, তাই এই ধরনের বীজ একবছরই ফসল উৎপন্ন করতে সক্ষম। পরবর্তী বছর যদি পুনরায় এই চালের চাষ করতে হয়, তাহলে নতুন বীজ ক্রয় করতে হবে। সেই সঙ্গে ফসলের রোগ বালাই দমনে ওই কোম্পানির ওষুধই কাজ করবে।

এই আইনটি দেখতে খুবই সরল মনে হয়। কিন্তু বিষয়টি ‘যার লাঠি তার মহিষ’ ধরনের। এই আইনের উপর ভিত্তি করে আন্তর্জাতিক ইহুদী কোম্পানিগুলো বিশ্ব বাজারের উপর নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠার পর এবার পৃথিবীর উৎপাদিত শস্যের উপর কব্জা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এই আইন তৈরি করেছে, যাতে কাল যদি কেউ তাদের কথা মান্য করতে অস্বীকৃতি জানায়, তাহলে তাকে খাদ্যের প্রতিটি কণার জন্য মুখাপেক্ষী বানিয়ে দেওয়া যায়।

পেটেন্ট বিলের মাধ্যমে এভাবে তারা ধীরে ধীরে উৎপাদিত শস্যের উপর কব্জা প্রতিষ্ঠিত করে চলছে। অল্পদিনের মধ্যেই তারা সমগ্র পৃথিবীর শস্যের উপর কব্জা প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে। বিষয়টি আরও ভালোভাবে বুঝতে হলে ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই ‘ফার্মারস কোর্ট’ এ পেটেন্ট নিয়ে কৃষকদের সাথে পেটেন্টকারী কোম্পানির কত কেস চলছে।

খাদ্য উৎপাদনকে নিজের মুঠোয় নেওয়া ছাড়াও ইহুদীদের আরও একটি ধ্বংসাত্মক মিশন হল, তারা জীবাণু অস্ত্রের মাধ্যমে যে কোন ফসল ধ্বংস করে দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করছে। হয়তো ইতিমধ্যে কিছু জীবাণু অস্ত্র তৈরিও করে ফেলেছে।

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা কিছু বর্ণনা করেছেন, সে সব অবশ্যই পূর্ণ ও বাস্তবায়িত হবে। বাহ্যিক পরিস্থিতি এখনই তার অনুকুল হোক আর না হোক। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, পরিস্থিতি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুকুল হতে চলেছে। কাজেই এখনও সে সব ভয়াবহতা ও দুর্যোগ সম্পর্কে উদাসিন থাকা বিবেক ও দ্বীনদারির পরিচয় নয়।


সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৩
৯টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×