somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তীব্র ভালবাসার অন্ধত্ব ও পক্ষপাতিত্ব

০২ রা নভেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোটকালে দেখেছি কিছু কিছু অভিভাবক তাদের সন্তানদের স্কুলে দিয়ে যেতে নিজেরাই আসতেন। তাঁরা কেমন বিরক্তির চোখে দেখতেন আমাদের; আমরা যারা ঐ মুহূর্তে অভিভাবকহীন, স্কুলের বেঞ্চিতে বসে, যারা একাই চলে এসেছি স্কুলে কিংবা মা-বাবারা দিয়ে চলে গেছেন। ঐ অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিয়ে এসেই চলে যেতেন না। কক্ষের ফার্স্ট বেঞ্চে নিজের ছেলে বা মেয়েকে বসানোর জন্য রীতিমত তোরজোড় শুরু করে দিতেন। যে সময়ের কথা বলছি, আমি তখন টু কি থ্রি’তে পড়ি। সুতরাং যাদের সাথে সেই ভদ্রলোক বা ভদ্র মহিলা-গুলো নিজেদের বাচ্চাকে ফার্স্ট বেঞ্চে বসানোর জন্য যুঝতেন, তারা ছিল শিশু। এই কাজ তারা করতেন স্কুল-ঘণ্টা শুরু হওয়ার আগে, শিক্ষক-শিক্ষিকা’দের অলক্ষ্যে। আসলে যুঝা ঠিক নয়, তাঁরা ধমকে, ভুলিয়ে-ভালিয়ে, কখনও বল প্রয়োগ করে অন্য বাচ্চাদের উঠিয়ে দিয়ে নিজেরটাকে বসাতেন। আমি তাদের প্রচণ্ড ঘৃণা করতাম। খুব ভয়ও করতাম কারণ তাদের চোখে আমাদের জন্য ছিল তীব্র বিরক্তি আর স্বার্থ লাভের একটা বিজাতীয় অস্থিরতা। তারা হয়ত ভাবতেন, কেন এই শয়তানগুলা ফার্স্ট বেঞ্চে সিট দখল করে বসে আছে? কেন এমন নয় যে আমার সন্তান ফার্স্ট বেঞ্চে বসে শিক্ষকদের বেশি কাছে থাকবে আর এইসব থাকবে পেছনের বেঞ্চিতে। কেন এমন নয় যে শুধু আমার ছেলেটা/মেয়েটাই ফার্স্ট হবে আর এইসব হাবিজাবি বাচ্চাকাচ্চা হবে লাস্ট!

তাদের এই নিজেদের সন্তান’দের জন্য কুৎসিত পক্ষপাত আমার ভেতরে খুব বিশ্রী এক অনুভূতির জন্ম দিত। মনে মনে ভাবতাম আমাকেও’তো আমার বাবা-মা ভালবাসেন। তবে এদের আচরণে কেন মনে হয় আমি অনাহুত আর শুধু ওনার সন্তানরাই স্বাগত; অগ্রাধিকার পাওয়ার যোগ্য? এখন বুঝি যে ঐ অনুভূতিটা ছিল অস্তিত্ব-সঙ্কট। ঐ অভিভাবকরা জানতেন না যে নিজের সন্তানটিকে বেশি সুবিধা পাইয়ে দিতে গিয়ে অন্যান্য শিশুদের মনে তারা তীব্র অস্তিত্ব-সঙ্কটের জন্ম দেওয়ার মত গুরুতর অন্যায় করছিলেন। তাদের সন্তানদের জন্য তীব্র ভালবাসা, পক্ষপাতিত্ব তাদের তা বুঝতে দেয়নি। পরবর্তীতে স্কুল কর্তৃপক্ষ অভিভাবকদের স্কুলের ভেতর ঢোকা নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন।

এ ধরনের বিশ্রী পক্ষপাত এখনও বিদ্যমান; বিভিন্ন ক্ষেত্রে, বাস্তবতায়, বিভিন্ন মাত্রায়। আমরা নিজেদের সন্তানদের ভালবাসতে গিয়ে ভুলে যাই আমার সন্তানের অধিকতর সুবিধার বিশেষ ব্যবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত যে হতে পারে, সে একটি শিশুই। তারও আমার সন্তানটির মতই সমান অধিকার আছে বাঁচার, শিক্ষা পাওয়ার, ভালবাসা পাওয়ার। ঠিক একইভাবে বিভিন্ন পরিসরে এই বিশ্রী পক্ষপাতিত্ব বিভিন্ন রূপে সেজে-গুজে আসে আমাদের মাঝে। কখনও আসে স্বজনপ্রীতি হয়ে, কখনও অঞ্চল প্রীতি হয়ে। তারপর জাতীয়তাবাদ’তো আছেই। পক্ষপাত হতে পারে ভাষা-গত অনন্যতার কারণে, হতে পারে চামড়ার রঙের কারণে, হতে পারে জাতিগত ভিন্নতার কারণে। দেশপ্রেম হল দেশের সমগ্র দেশের মানুষের জন্য ভালবাসা, প্রেম। দেশপ্রেম হল দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষার সচেতনতা। দেশের উন্নয়ন-চিন্তা ও পদক্ষেপে অবশ্যই থাকবে ন্যায্য প্রতিযোগিতার মানসিকতা। কিন্তু তা যদি পক্ষপাতিত্ব হয়, তা যদি ভারতীয়দের প্রতি ঘৃণা, মায়ানমারের জনগণের প্রতি বিদ্বেষ, আফগান বিতৃষ্ণায় গিয়ে ঠেকে আর তার কারণ হয়ে থাকে "আমার দেশ সবার চেয়ে সেরা" টাইপের অবান্তর বোধ, তবে তা দেশপ্রেম নয়, তা জঘন্যতা, স্বার্থপরতা, নীচতা, পক্ষপাতিত্ব, স্বাজাতিকতা বা রেসিজম।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:২৫
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক্যারাভান-ই-গজল - তালাত আজিজ

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৬ ই জুন, ২০২৪ ভোর ৬:৩১


ভারতীয় অন্যতম গজল শিল্পীদের তালিকায় তালাত আজিজের নাম অবশ্যই থাকবে বলে আমার ধারনা। তার বেশ কিছু গান আমার শোনা হয়েছে অনেক আগেই। জগজিৎ সিং, পঙ্কজ উদাস ও গুলাম আলী সাহেবের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওহাবী-সালাফি-মওদুদীবাদ থেকে বাঁচতে আরেকজন নিজাম উদ্দীন আউলিয়া দরকার

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই জুন, ২০২৪ দুপুর ২:৩৩

১.০
ঐতিহাসিক জিয়া উদ্দীন বারানী তার তারিখ-ই-ফিরোজশাহী বইতে শায়েখ নিজাম উদ্দীনের প্রভাবে এই উপমহাদেশে জনজীবনে যে পরিবর্তন এসেছিল তা বর্ণনা করেছেন। তার আকর্ষণে মানুষ দলে দলে পাপ থেকে পূণ্যের পথে যোগ... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই ৩০ জন ব্লগারের ভাবনার জগত ও লেখা নিয়ে মোটামুটি ধারণা হয়ে গেছে?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৬ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৯



গড়ে ৩০ জনের মতো ব্লগার এখন ব্লগে আসেন, এঁদের মাঝে কার পোষ্ট নিয়ে আপনার ধারণা নেই, কার কমেন্টের সুর, নম্রতা, রুক্ষতা, ভাবনা, গঠন ও আকার ইত্যাদি আপনার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আর্তনাদ

লিখেছেন বিষাদ সময়, ১৬ ই জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২১

গতকাল রাত থেকে চোখে ঘুম নাই। মাথার ব্যাথায় মনে হচ্ছে মাথার রগগুলো ছিঁড়ে যাবে। এমনিতেই ভাল ঘুম হয়না। তার উপর গতকাল রাত থেকে শুরু হয়েছে উচ্চস্বরে এক ছাগলের আর্তনাদ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন তার আকাশের বলাকা || নিজের গলায় পুরোনো গান || সেই সাথে শায়মা আপুর আবদারে এ-আই আপুর কণ্ঠেও গানটি শুনতে পাবেন :)

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৬ ই জুন, ২০২৪ রাত ১০:০০

ব্লগার নিবর্হণ নির্ঘোষ একটা অসাধারণ গল্প লিখেছিলেন - সোনাবীজের গান এবং একটি অকেজো ম্যান্ডোলিন - এই শিরোনামে। গল্পে তিনি আমার 'মন তার আকাশের বলাকা' গানটির কথা উল্লেখ করেছেন। এবং এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×