Convince শব্দটির অর্থ হল উপলব্ধি করানো/তর্কে পরাভূত করা/ বিশ্বাস করানো/ সন্তুষ্ট করা। আর Accept অর্থ গ্রহণ করা।
দুটো শব্দই দৈনন্দিন জীবনের কার্যক্রমের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আদতে শব্দ বললে ঠিক পরিপূর্ণ ব্যপকতা বুঝানো হয় না। যাপিত জীবনের দুটো বৈশিষ্ট্যকে প্রকাশ করতেই সংক্ষেপে শব্দদুটো প্রকাশ করা হয়। স্বচ্ছতার জন্য, যেহেতু প্রেম আকর্ষণীয় সেহেতু প্রেমের গল্প তৈরি করা হুল। তবে গল্পটা অকল্পনীয় নয় কিন্তু মনস্তাত্তিক।
প্রথমেই প্রধান দুটো চরিত্র, ফয়সাল ও মালবিকা- কে বুঝা দরাকার। ফয়সাল যথেষ্ট বুদ্ধিমান ছেলে। তবে মজার বিষয় হল সে বুদ্ধিকে মানিয়ে চলে। অর্থাৎ, সর্বত্র বুদ্ধিকে প্রশ্রয় দেয় ন। তার নিজস্ব কিছু নীতি রয়েছে, রয়েছে সুনির্দিষ্ট কিন্তু ব্যপক বিস্তারিত দৃষ্টিভঙ্গি, যৌক্তিক মানসিকতা। পারতপক্ষে নিজস্ব যুক্তি উদ্ভূত নীতির বাহিরে বিচরণ করতে চায় না। কিন্তু যে- কোন পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। অথচ তথাগত স্রোতে গা ভাসালেও মস্তিষ্ক ভাসায় না।
মালবিকা সহজ-স্বাভাবিক মেয়ে। সুন্দরী তাকে বলাই যায়। বাস্তব বুদ্ধিদীপ্ত মেয়েরা যেমন হয় আরকি।
ফয়াসাল মালবিকাকে ভালোবাসে। তা ভালোবাসা’ত আর একদিনেই হয় না। ভালো লাগতে লাগতেই একদিন ভালোবাসা হয়। মালবিকারও যে ফয়সালকে মন্দ লাগে তা নয়। দু’জনেই একে অপরকে নিয়মিত সময় দেয় সাধারণ পরিবেশে। ফয়সাল একসময় বুঝতে পারে যে সে মালাবিকাকে চায়। প্রকাশও করে মালবিকার কাছে।
ধরা যাক, ফয়সালের আবেগ প্রকাশিত হওয়ার কিছুদিন পূর্বে আরও দু’চারজন যুবক নানা কায়দায় মালবিকাকে ভালোবাসার প্রস্তাব পাঠিয়েছে। এদের মধ্যে দু’একজন আবার সুদর্শন ও সামাজিক মর্যাদায় প্রতিপত্তিসম্পন্ন এবং বুদ্ধিদীপ্ত তরুণ। এর সবই ফয়সালের জানা। অন্যদিকে, সামাজিক হিসেবে ফয়সাল যে খুব চাহিত পাত্র তা নয়। কিন্তু ফয়সালের বিষয়টা মালবিকার কাছে অন্যরকম। কেননা জ্ঞান অপ্রকাশিত হলেও ফয়সালের বুদ্ধিমত্তা মালবিকার কাছে প্রশ্নাতীত। আর ফয়সালের মানবিক মূল্যবোধ প্রামাণিত দৃষ্টান্ত রেখেছে মালবিকার অতীত জীবনে। কিন্তু মালবিকা মানুষ, তাই হাজার প্রশ্নের দ্বন্ধে ভুগে। প্রশ্ন জাগে- মালবিকাকে উচ্চ সামাজিক প্রতিপত্তি সম্পন্ন দুটো ছেলে প্রস্তাব করাতেই কি তার প্রতি ফয়সালের আগ্রহ বেড়েছে? নাকি সত্যিই ফয়সাল মালবিকাকে ভালোবাসে, তাকে গভীর আবেগে চায়। দ্বন্ধে দ্বন্ধে মালবিকা সিন্ধান্তে পৌছাতে পারে না। মালবিকা ফয়সালকে ঠিক পরিস্কার কোন জবাব দেয় না। হয়ত না করে হ্যা এর মত অথবা হ্যা করে না এর মত। অবশেষে ফয়সালের আবেগকে বুঝতে চায় সে। নিজের অভ্যন্তরেই সুযোগ দেয় যেন মালবিকাকে (convince) সন্তুষ্ট করে ফয়সাল। (দৃষ্টিকোণ-১)।
ফয়সাল যৌক্তিক মানুষ, মালবিকার সংশয়কে বিপরীতভাবে নেয় না। কিন্তু সে মালবিকাকে (convince) সন্তুষ্ট করতেও চেষ্টা করে না। বরং সে চায় মালবিকা তাকে (accept) গ্রহণ করুক। ফয়সাল নিজেকে যতটুকু বুঝতে পারে তার প্রায় পুরুটাই মালবিকার কাছে প্রকাশ করে। ফয়সাল কে? সে কি/কিভাবে চিন্তা করে অর্থাৎ তার দৃষ্টিভঙ্গি, জীবনের কাছে তার চাহিদা, তার ভবিষ্যত মনস্তাত্তিক কর্মপরিধির পরিকল্পনা, তার লক্ষ্য ইত্যাদি। সে প্রকাশ করে কিন্তু কোন কিছুতেই (convince) সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করে না। অর্থাৎ ফয়সালের বক্তব্যে মালবিকাকে মানানোর জন্য কোন যুক্তির আশ্রয় থাকে না। যুক্তি যা থাকে তা শুধু বিষটির প্রাকৃতিক স্বাভাবিকতার পক্ষে, মালবিকাকে মানানোর জন্য নয়। একটি উদাহরণ টানা যাক, হয়ত মলবিকা জিজ্ঞেস করল- তুমি কেন আমাকে ভালোবাস? অথবা আমাকে কেন চাও?
ফয়সাল বেশ বুঝতে পারে মালবিকা কি শুনতে চায়- “ আমি তোমার সরলতা, সতত সর্বোপরি তোমার দৈনন্দিন যাপিত জীবন যা স্বাভাবিক কিন্তু স্বতন্ত্র ও মাধুর্যপূর্ণ তাতে মুগ্ধ। অথবা এমন কোন জবাব যা বাস্তবতার বোধগম্যতার বাহিরে যেমন- আমি তোমাকে ভালোবাসি কারণ আমি তোমাকে ভালোবাসি”।
কিন্তু ফয়সাল জবাব দেয় অন্যকিছু- তোমার সাথে চলাফেরায় ক্রমান্বয়ে ভালোবেসে ফেলেছি। কারণ’ত আমি খুজিনি।
মালবিকার মনে প্রশ্ন জাগে- তাহলে দু’দিন পর অন্য কারোর সাথে মেলামেশার প্রয়োজন হলে ধীরে ধীরে তাকেই ভালোবেসে ফেলবে?
বুদ্ধিদীপ্ত ছেলে ফয়সাল বেশ বুঝতে পারে তার প্রতুত্ত্যর মালবিকার মনে কি ধরনেরর প্রশ্নের ঝড় তুলেছে। কিন্তু তার ভাবনায় তখন অন্যকিছু- মালবিকা আমার সমস্ত কিছু যতদূর আমি বুঝতে পারি তার সবই তোমার কাছে প্রকাশিত। আমার যা জীবন চরিত্র তার সবটুকু (accept) গ্রহণ করলে নিশ্চয় বুঝতে পার এমন বৈশিষ্ট্যের মানুষ অন্য কোথাও যেতে পারে না।
মালবিকা ফের প্রশ্ন করে- আমায় কি খুব বেশি ভালোবাস ফয়সাল?
ফয়সালের হয়ত বলা উচিত- মা-বাবার পর আর কারোর প্রতি এতটা ভালোবাসা টের পাইনি যতটা তোমার প্রতি পাই। কিন্তু ফয়সাল মালবিকাকে (convince) সন্তুষ্ট করতে চায় না। ফয়সাল চায় তার গ্রহণ। চায় মালবিকার কাছে সামগ্রিকভাবে তার গ্রহণযোগ্যতা থাকুক। তার সামগ্রিকতাকে যদি মালবিকা গ্রহণ নাই করতে পারে তবে সে পরবর্তীতে মালবিকার জীবনে একটা বিড়ম্বনা ছাড়া আর কিছুই হবে না। তাই ফয়সাল অন্য জবাব দেয়- ভালোবাসা ‘ত মাপা যায় না মালবিকা, অন্তত আমি পারিনা। ভালোবাসা’ত সময়ের মিথোস্ক্রিয়ার (time interaction) উপরও নির্ভরশীল। তোমাকে আরো কাছে পেলে হয়ত আরো অনুরক্ত হব তোমার। ভবিষ্যৎ ত ভবিতব্যই জানে।
যা লিখলাম ঠিক তা না হলেও কথোপকোথনের ধরণট এমনি হয় ওদের মাঝে। ফয়সালের একেকটা প্রত্যুত্তর মালবিকার মনে নতুন প্রশ্ন/সংশয়ের জন্ম দেয়। মালবিকা চায় ফয়সাল তার আবেগকে এমনভাবে প্রকাশ করুক যেন সে বুঝতে পারে ফয়সাল সত্যিই তাকে ভালোবাসে। যেন ফয়সালের বক্তব্যে ব্যক্তি মালবিকার অস্তিত্ব থাকে। যেন ফয়সালের বক্তব্য ব্যক্তি মালবিকা নির্ভর হয়।
কিন্তু ফয়সাল ভাবে প্রাকৃতিক নিয়মকে স্বীকার করাই’ত ফয়সালের বৈষিষ্ট্য। আর রক্ত-মাংসের ফয়সালের ঊর্ধ্বে যে ফয়সালের অস্তিত্ব তা’ত এমনি কতগুলো বৈশিষ্ট্যের সমষ্টিমাত্র। যদি ফয়সালের এই বৈশিষ্ট্যগুলো সত্য ও সুন্দর হয়, তাহলে তুমি সামগ্রিক ফয়সালকে গ্রহণ কর। আর যদি তা-নাই হয় তাহলে কি লাভ এই বৈশিষ্ট্যগুলো তোমার চাহিত মোড়কে পুরে তোমার কাছে উপস্থাপন করার। আজ হয়ত (convince) সন্তুষ্ট হবে কিন্তু আগামীর ফয়সালের মোড়ক উন্মোচিত হবেই। আর তখন ত তাকে গ্রহণ করতে পারবে না। মোড়ক হারানোর সাথে তোমার সন্তুষ্টিও হারাবে আগামীর ফয়সাল।
Convince: works in the way of the person wants to be convinced.
Accept: works in the way of the person needs to be accepted.
Gray zone: Convince is the polite manipulation of Accept.
কাউকে convince করার অর্থ হল তাকে কোন বিষয়ে সন্তুষ্ট করা। যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে কাউকে বিষয়টি বুঝানো। বুঝানোর সময়, যে বুঝবে তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সামঞ্জস্য রেখে বিষয়টি উপস্থাপন করেতে হয়।
আর, কারোর কাছে accepted হওয়ার অর্থাৎ কেউ একটি বিষয় গ্রহণ করার অর্থ হল- বিষয়টি যেমন আছে বা বিষয়টি নিজস্ব স্বকীয়তায় যেভাবে প্রকাশিত/উপস্থাপিত ঠিক সেভাবেই গ্রহণ করা। ফয়াসাল যখন কোন একটি অভিব্যক্তি প্রকাশ/উপস্থাপন করে তখন সে তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিতে করে, যা তার সহজাত-স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। কিন্তু যদি অন্যকে (convince) সন্তুষ্ট করার জন্য করতে যায় তাহলে অন্যের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রাধান্য দিতে হবে। আর তখনই বিচ্যুতি ঘটবে তার যা ফয়সাল উপস্থাপন করছে অর্থাৎ উপস্থাপিত বিষয়টি এক হলেও সামগ্রিক উপস্থাপনটি পুরোপুরি ফয়সালের থাকবে না। তাই সন্তুষ্টির চেয়ে গ্রহণের ব্যপকতা অধিক।কোনকিছু accepted হলে সেই বিষয়টির সন্তুষ্টির ব্যাপার প্রশ্নাতীত। কিন্তু কোন বিষয়ে (convince) সন্তুষ্ট হলেও প্রশ্ন থেকে যায় তা গ্রহণযোগ্য কিনা।
আর একটু সহজ করলে বিষয়টি দাড়ায়- convince হল “মেনে নেওয়া” আর accept হল “মনে নেওয়া”। জীবনের বাস্তবতায় মেনে নেওয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু মনে নেওয়া-কে আদর্শের মানদন্ডে না রাখলে মেনে নেওয়া বিষয়টির মান ক্রমশই নিম্নগামী হবে। আর্থাৎ আদর্শ থেকে বিচ্যুতি ত্বরান্বিত হবে।
# শুরুতে উপস্থাপিত গল্পের প্রেক্ষিতে বলছি- প্রতিটা প্রশ্ন ও তার জবাব নির্ভরশীল ছিল দুটো ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে। ধরা যাক মালবিকার প্রশ্নটি- তুমি আমাকে কেন ভালোবাস ফয়সাল? মালবিকার দৃষ্টিভঙ্গি ছিল এমন যেন- এর জাবাবে সে (convinceds) সন্তুষ্ট হতে পারে। অন্যদিকে ফয়সালের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল এমন যেন- জবাবটি গ্রহণযোগ্যতা না হারায়। কিন্তু কার সাপেক্ষে গ্রহণযোগ্যতাকে দেখা হচ্ছে? যদি মালবিকার সাপেক্ষে হয় তাহলে বিষয়টি মালবিকা যেভাবে চায় তাই হওয়া উচিত। কিন্তু ফয়সাল যদি গ্রহণযোগ্যতাকে সত্যের সাপেক্ষে বিবেচনা করে? তাহলে যা সত্য তাই জাবাব হওয়া উচিত। আদতে দৃষ্টিভঙ্গিটা হওয়া উচিত ভালোবাসার। অর্থাৎ মানুষ কেন ভালোবাসে এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই প্রশ্ন ও জবাবটি বিবেচনা করা উচিত।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৪:৫৮