somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হৃদয়ের গান...!!! (আমার শোনা সেরা ১০)

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গান, মানুষের মনের সুপ্ত ভাব প্রকাশের অন্যতম সেরা মাধ্যম। কিছু গান নির্দিষ্ট কিছু সময় বা দিনের জন্য, আবার কিছু গান আজীবনের।

কিছু গানে মন সহসাই ভালো হয়ে যায়, আবার কিছু গান শুনলে মনে চায় গায়কের স্পর্শকাতর অঙ্গে কইশা লাথি মারি!!! তেমনি লক্ষ-কোটি গানের মধ্যে থেকে আমার এই ক্ষুদ্র জীবনে শোনা সেরা গানের কথাগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করলাম...

১) বাংলা আমার মাতৃভাষা। আর তালিকার ১ম গানটি শুনলেই বুঝতে পারবেন আমাদের মাতৃভাষার গৌরবময় সৌন্দর্যের বিশালতা -

** ওরা আমার মুখের ভাষা কাইরা নিতে চায় ।।
ওরা কথায় কথায় শিকল পরায় আমার হাতে-পায়ে
ওরা কথায় কথায় শিকল পরায় আমাদেরই হাতে-পায়ে
ওরা আমার মুখের ভাষা কাইরা নিতে চায় ।।

কইতো যাহা আমার দাদায়, কইছে তাহা আমার বাবায় ।।
এখন কও দেহি ভাই মোর মুখে কি অন্য কথা শোভা পায়
কও দেহি ভাই
এখন কও দেহি ভাই মোর মুখে কি অন্য কথা শোভা পায়
ওরা আমার মুখের ভাষা কাইরা নিতে চায় ।।

সইমু না আর সইমু না, অন্য কথা কইমু না
যায় যদি ভাই দিমু সাধের জান, আহা যায় যদি ভাই দিমু সাধের জান,
এই জানের বদল রাখুম রে ভাই, বাব-দাদার জবানের মান
ও হো..হো..হো….বাব-দাদার জবানের মান

যে শুইনাছে আমার দেশের গাঁওগেরামের গান
নানান রঙয়ের নানান রসে, ভইরাছে তার প্রাণ ।।
যপ-কীর্তন, ভাসান-জারি, গাজীর গীত আর কবি সারি ।।
আমার এই বাংলাদেশের বয়াতিরা নাইচা নাইচা কেমন গায়
বাংলাদেশের
আমার এই বাংলাদেশের বয়াতিরা নাইচা নাইচা কেমন গায়
ওরা কাদের মুখের কথা কাইরা নিতে চায় ।।

তারি তালে তালে হৈ ঢোল করতাল বাজে ঐ
বাশি কাশি খঞ্জনি সানাই, বাশি কাশি খঞ্জনি সানাই
এখন কও দেখি ভাই এমন শোভা কোথায় গেলে দেখতে পাই
ও হো..হো..হো….কোথায় গেলে দেখতে পাই

পূবাল বায়ে বাদাম দিয়া লাগলে ভাটির টান
গায়রে আমার দেশের মাঝি
ভাটিয়ালি গান, (ভাইরে) ভাটিয়ালি গান
তার ভাটিয়াল গানের সুরে মনের দুসখু যায়রে দূরে
বাজায় বাশি সেইনা সুরে রাখাল বনের ছায়
রাখাল বনের ছায়
ওরা যদি না দেয় মান আমার দেশের যতই যাক
তার সাথে মোর নাড়ীর যোগাযোগ, আছে তার সাথে মোর নাড়ীর যোগাযোগ
এই আপদ-বিপদ দুঃখে কষ্টে এ গান আমার ভোলায় শোক
ও হো..হো..হো….এ গান আমার ভোলায় শোক

এই ঠুং ঠুংয়া ঠুং দোতারা আর সারিন্দা বাজাইয়া
গায়ের যোগী ভিক্ষা মাগে প্রেমের সারি গাইয়াগো
প্রেমের সারি গাইয়া ।।

একতারা বাজাইয়া বাউল ঘুচায় মনের সকল আউল ।।
তারা মার্ফতি মুর্শিদি তত্ত্বে পথের দিশা দিয়া যায়
মার্ফতি মুর্শিদি তত্ত্বে পথের দিশা দিয়া যায়
ওরা তাদের মুখের কথা কাইরা নিতে চায় ।।

ওরে আমার বাংলারে, ওরে সোনার ভান্ডারে
আরো কত আছে যে রতন আহা আরো কত আছে যে রতন
মূল্য তাহার হয়না দিলেও মনি মুক্তা আর কাঞ্চন
ও হো..হো..হো….মনি মুক্তা আর কাঞ্চন

আরেক কথা মনে হইলে আঁখি ঝইড়া যায়
ঘুম পাড়াইনা গাইত যে গান মোর দুঃখিনী মায় ।।
ওমায় সোনা মানিক যাদু বলে চুমা দিয়া লইত কোলে
সোনা মানিক যাদু বলে চুমা দিয়া লইত কোলে
আরো আদর কইরা কইত মোরে আয় চান আমার বুকে আয়
আদর কইরা
আরো আদর কইরা কইত মোরে আয় চান আমার বুকে আয়
ওরা মায়ের মুখের কথা কাইরা নিতে চায় ।।

কও আমার মায়ের মত গান, আমার মায়ের মত প্রাণ
বাংলা বিনে কারো দেশে নাই, বাংলা বিনে কারো দেশে নাই
এই মায়ের মুখের মধুর বুলি কেমন কইরা ভুলুম ভাই
ও হো..হো..হো….কেমন কইরা ভুলুম ভাই

এই ভাষারই লাইগা যারা মায়ের দেয় ভুলান
দেশের মাটি বুকের খুনে কইরা গেছে লাল ।।
মনে কইরা তরার কথা কান্দে বনের তরু লতা ।।
তাইতো ঘরে ঘরে কত মা তায় চোখের জলে বুক ভাসায়
ওরা মায়ের মুখের কথা কাইরা নিতে চায় ।।

২) বাংলার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের জন্য এই গানের কথাগুলোই যথেষ্ট -

** আমি বাংলায় গান গাই, আমি বাংলায় গান গাই,
আমি আমার আমিকে চিরদিন এই বাংলায় খুঁজে পাই
আমি বাংলায় দেখি স্বপ্ন, আমি বাংলায় বাঁধি সুর
আমি এই বাংলার মায়াভরা পথে হেঁটেছি এতটা দূর
বাংলা আমার জীবনানন্দ বাংলা প্রাণের সুখ
আমি একবার দেখি, বারবার দেখি, দেখি বাংলার মুখ |

আমি বাংলায় কথা কই, আমি বাংলার কথা কই
আমি বাংলায় ভাসি, বাংলায় হাসি, বাংলায় জেগে রই
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় চিত্কার
বাংলা আমার দৃপ্ত স্লোগান ক্ষিপ্ত তীর ধনুক,
আমি একবার দেখি, বারবার দেখি, দেখি বাংলার মুখ |

আমি বাংলায় ভালবাসি, আমি বাংলাকে ভালবাসি
আমি তারি হাত ধরে সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে আসি
আমি যা’কিছু মহান বরণ করেছি বিনয় শ্রদ্ধায়
মেশে তেরো নদী সাত সাগরের জল গঙ্গায় পদ্মায়
বাংলা আমার তৃষ্ণার জল তৃপ্ত শেষ চুমুক
আমি একবার দেখি, বারবার দেখি, দেখি বাংলার মুখ |

৩) সফলতার পথে বাঁধা পেরিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জোগাতে এই গানের জুড়ি মেলা ভার -

** যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে ।
একলা চলো একলা চলো একলা চলো একলা চলো রে ।।

যদি কেউ কথা না কয়, ওরে ও অভাগা,
যদি সবাই থাকে মুখ ফিরায়ে সবাই করে ভয়-
তবে পরান খুলে
ও তুই মুখ ফুটে তোর মনের কথা একলা বলো রে ।।

যদি সবাই ফিরে যায়, ও রে ও অভাগা,
যদি গহন পথে যাবার কালে কেউ ফিরে না চায়-
তবে পথের কাঁটা
ও তুই রক্তমাখা চরণতলে একলা দলো রে ।।

যদি আলো না ধরে, ওরে ও অভাগা,
যদি ঝড়-বাদলে আঁধার রাতে দুয়ার দেয় ঘরে-
তবে বজ্রানলে
আপন বুকের পাঁজর জ্বালিয়ে নিয়ে একলা জ্বলোরে

৪) মনুষ্যত্বের বিকাশে এই গান অপরাজেয় -

** মানুষ মানুষের জন্যে
জীবন জীবনের জন্যে
একটু সহানুভূতি কি
মানুষ পেতে পারে না… ও বন্ধু।

মানুষ মানুষকে পণ্য করে,
মানুষ মানুষকে জীবিকা করে,
পুরোনো ইতিহাস ফিরে এলে
লজ্জা কি তুমি পাবে না… ও বন্ধু।

বলো কি তোমার ক্ষতি
জীবনের অথৈ নদী
পার হয় তোমাকে ধরে
দুর্বল মানুষ যদি।

মানুষ যদি সে না হয় মানুষ
দানব কখনো হয় না মানুষ
যদি দানব কখনো বা হয় মানুষ
লজ্জা কি তুমি পাবে না… ও বন্ধু।

৫) সামাজিক অবক্ষয় এবং মূল্যবোধের চরম অবনতির একটি ক্ষুদ্র উদাহরণ তালিকার ৫ নং গানটি -

** ছেলে আমার মস্ত মানুষ, মস্ত অফিসার
মস্ত ফ্ল্যাটে যায় না দেখা এপার ওপার।
নানান রকম জিনিস আর আসবাব দামী দামী
সবচেয়ে কম দামী ছিলাম একমাত্র আমি।
ছেলের আমার আমার প্রতি অগাধ সম্ভ্রম
আমার ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম!

আমার ব্যবহারের সেই আলমারি আর আয়না
ওসব নাকি বেশ পুরনো,ফ্ল্যাটে রাখা যায় না।
ওর বাবার ছবি,ঘড়ি-ছড়ি,বিদেয় হলো তাড়াতাড়ি
ছেড়ে দিলো, কাকে খেলো, পোষা বুড়ো ময়না।
স্বামী-স্ত্রী আর আ্যালসেশিয়ান-জায়গা বড়ই কম
আমার ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম!

নিজের হাতে ভাত খেতে পারতো নাকো খোকা
বলতাম আমি না থাকলে কি করবি রে বোকা?
ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদতো খোকা আমার কথা শুনে-
খোকা বোধ হয় আর কাঁদে না,নেই বুঝি আর মনে।
ছোট্টবেলায় স্বপ্ন দেখে উঠতো খোকা কেঁদে
দু’হাত দিয়ে বুকের কাছে রেখে দিতাম বেঁধে
দু’হাত আজো খুঁজে,ভুলে যায় যে একদম-
আমার ঠিকানা এখন বৃদ্ধাশ্রম!

খোকারও হয়েছে ছেলে,দু’বছর হলো
তার তো মাত্র বয়স পঁচিশ,ঠাকুর মুখ তোলো।
একশো বছর বাঁচতে চাই এখন আমার সাধ
পঁচিশ বছর পরে খোকার হবে ঊনষাট।
আশ্রমের এই ঘরটা ছোট,জায়গা অনেক বেশি-
খোকা-আমি,দু’জনেতে থাকবো পাশাপাশি।
সেই দিনটার স্বপ্ন দেখি ভীষণ রকম
মুখোমুখি আমি,খোকা আর বৃদ্ধাশ্রম!

৬) তালিকার ৬ নং গানটি আমার শ্রদ্ধেয় বিবাহিত গুরুজনদের জন্য (আবেগাপ্লুত হয়ে গেলে আরীফিন তূর্য দায়ী না হয়েও ক্ষমাপ্রার্থী) -

** আমি ফাইসা গেছি, আমি ফাইসা গেছি,
আমি ফাইসা গেছি, মাইনকার চিপায়।

আমারও দিলের চোট বোঝে না কোনো হালায়।।

কোন্‌ পাগলে পাইছিল করছি শখের শাদী
খ্যামা তার যিমুন তিমুন, ভাবে শাহজাদী।

সকাল-বিকাল, রাইত-দুপুর বউয়ে দেয় ঠেলা
কয় ‘বউ পুষার মুরাদ নয়, তয় বিয়া করছস কেলা।

আমি ইধারকা মাল ওধার করি, সারাদিন পেজকি মারি
দিনের বেলায় আরতদারী, রাইতে চোরাকারবারি।
দিন-দুনিয়া সবই গেল, জীবন ভেস্তে যায়।।

মাইয়া আমার চিজ একখান, যেমুন ফিল্মের নায়িকা
মাধুরী, ঐশ্বরিয়া, কাজলরে, কয় অফ যা।

পোলায় আমার শিক্ষিত, পড়ে দশ কেলাশের উপরে।
হাত খরচা না দিলে, ইংলিশে গাইল পাড়ে।

মনে মনে কই আমি, গাইলের আর হুনছস কি
আমগো গাইল হুনলে পড়ে, খাড়াইব মুরদাবি।

আমি হালায় কলুর বলদ ফাইটা জীবন যায়।।

৭) তালিকার পরবর্তী গানটি কিছুটা বিতর্কিত হলেও এর মাঝে নির্মম বাস্তবতা লক্ষণীয় -

** কোন পথে ওরা চলছে হায় পরওয়ারদেগার
যে হাতে ওদের কোরআন শরীফ তবে সেই হাতে কেনো তলোয়ার
নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবার বলে দিচ্ছে জিহাদের ডাক
হত্যা করছে ওরা মানবজাতি তোমার আশরাফুল মাখলুকাত

কোন পথে আমরা চলছি হায় পরওয়ারদেগার
বাড়িতে বাড়িতে আছে কোরআন শরীফ
তবে নেই তার কোনো তেলাওয়াত
আল্লাহ আইন কায়েম হোক ওরা তুলছে দাবি প্রতিদিন
লাকুম দিনুকুম ওয়ালিয়াদিন আমার লাকুম দিনুকুম ওয়ালিয়াদিন

প্রতিদিন বৈষম্য আর বিদ্বেষ দেশ জুড়ে
প্রতি ওয়াক্ত প্রতিবাদ শুধু আযানের সুরে সুরে
ওরা জাইতুনের ডাল মাটিতে ছুড়ে ফেলে অস্ত্র তাক করেছে
ওরা শান্তির পায়রাকে হত্যা করে শকুন পুষতে শিখেছে

কোন পথে আমরা চলছি হায় পরওয়ারদেগার
তোমার অস্তিত্ত স্বীকার করি আমরা যে গুনাহগার
ধর্মান্ধ উগ্রবাদীদের নাম দিলাম মৌলবাদ
পাল্টে জবাব ওরা দিলো আমাদের তোরা নাস্তিক মোরতাদ

একি আমরা দেখছি হায় পরওয়ারদেগার
হত্যাকারী আর জেনাকারীরা সেজেছে নব্য পায়গাম্বার
একাত্তরের কাফের সর্দারকে ক্ষমা করেছে আদালত
রোজ হাশরে তুমি ক্ষমা করবেনা এই আমাদের ইবাদত

দেশ কাল আর শান্তির কথা ভেবে রয়েছি আমরা নীরব
যখন নীরবতা ওরা দুর্বলতা ভাবে রক্ত করে টগবগ
ওদের প্রতিটি হুমকি প্রতিটি আঘাত রুখতে আমরা শিখেছি
ওদের স্বাধীন বাংলার পতাকাতলে আশ্রয় করে দিয়েছি(২)

কোন পথে আমরা চলব হে পরওয়ারদেগার
বাংলাদেশের সব ধর্মে আছে সম অধিকার
অনেককাল তোমার কেটে গেছে মাবুদ মন্দিরে মসজিদে
এখন সময় এসেছে মাবুদ তুমি ফিরে এসো অন্তরে

কোন পথে আমরা চলছি হে পরওয়ারদেগার
পৃথিবীর তামাম কালাম কিতাবে তুমি ফিরে এসেছো বারেবার
তাই বেহেশ্তি দ্বীন দুনিয়া যাদের অধিক মাথাব্যাথা
ওরা ভুলে গেছে তোমার ভালোবাসা আর প্রাচীন পরম্পরা

প্রতিদিন বৈষম্য আর বিদ্বেষ দেশ জুড়ে
শঙ্খ আর আযানের ধবনি উঠুক মন্দিরে মসজিদে
ওরা উতকৃষ্ট মানবজাতির দাবিতে অস্ত্র তাক করেছে
ওরা তোমার বিধান লঙ্ঘন করে জল্লাদ হতে শিখেছে
ওরা জাইতুনের ডাল মাটিতে ছুড়ে ফেলে অস্ত্র তাক করেছে
ওরা শান্তির পায়রাকে হত্যা করে শকুন পুষতে শিখেছে

৮) আধ্যাত্মিক চিন্তা-চেতনার এক অসাধারণ উদাহরণ তালিকার ৮ নং গানটি -

** লোকে বলে বলেরে
ঘর-বাড়ি ভালা নাই আমার
কি ঘর বানাইমু আমি শূণ্যেরও মাঝার।।

ভালা কইরা ঘর বানাইয়া
কয়দিন থাকমু আর
আয়না দিয়া চাইয়া দেখি
পাকনা চুল আমার।।

এ ভাবিয়া হাসন রাজা
ঘর-দুয়ার না বান্ধে
কোথায় নিয়া রাখব আল্লায়
তাই ভাবিয়া কান্দে।।

জানত যদি হাসন রাজা
বাঁচব কতদিন
বানাইত দালান-কোঠা
করিয়া রঙিন।।

৯) যৌবনের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে অজেয় কে জয় করার অদম্য স্পৃহা ব্যক্ত করেছে এই গানটি -

** দুর্গম গিরি কান্তার মরু দুস্তর পারাবার হে!
লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশীথে, যাত্রীরা হুঁশিয়ার।।
দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, ভুলিতেছে মাঝি পথ-
ছিঁড়িয়াছে পাল কে ধরিবে হাল, কার আছে হিম্মত।
কে আছো জোয়ান, হও আগুয়ান, হাঁকিছে ভবিষ্যত,
এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার।।

তিমির রাত্রি, মাতৃ-মন্ত্রী সান্ত্রীরা সাবধান-
যুগ-যুগান্ত সঞ্চিত ব্যথা ঘোষিয়াছে অভিযান।
ফেনাইয়া ওঠে বঞ্চিত বুকে পুঞ্জিত অভিমান,
ইহাদেরে পথে নিতে হবে সাথে, দিতে হবে অধিকার।।

অসহায় জাতি মরিছে ডুবিয়া, জানে না সন্তরণ-
কান্ডারী, আজি দেখিব তোমার মাতৃ-মুক্তি-পণ।
হিন্দু না ওরা মুসলিম-ওই জিজ্ঞাসে কোন্‌ জন,
কান্ডারী, বল, ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মা’র।।

গিরি-সংকট, ভীরু যাত্রীরা, গরজায় গুরু বাজ-
পশ্চাৎ পথ যাত্রীর মনে সন্দেহ জাগে আজ।
কান্ডারী, তুমি ভুলিবে কি পথ? ত্যজিবে কি পথ মাঝ?
করে হানাহানি, তবু চল টানি’-নিয়েছ যে মহাভার।।

ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেল যারা জীবনের জয়গান-
আসি’ অলক্ষ্যে দাঁড়ায়েছে তারা দিবে কোন বলিদান!
আজি পরীক্ষা জাতির অথবা জাতেরে করিবে ত্রাণ,
দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, কান্ডারী হুঁশিয়ার।।

১০) দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের এতো সুন্দর বর্ণনা অন্য কোন গানে আছে বলে আমার জানা নেই। কথায় আছে, ‘শেষ ভালো যার, সব ভালো তার’। তাই তালিকায় আরও উপরে ঠাই পাবার কথা থাকলেও এই গানটিকে ইচ্ছে করেই সবার শেষে রাখলাম -


** তুমি মিশ্রিত লগ্ন মাধুরীর জলে ভেজা কবিতায়
আছো সারোয়ার্দী, শেরেবাংলা, ভাসানীর শেষ ইচ্ছায়
তুমি বঙ্গবন্ধুর রক্তে আগুন জ্বালা জ্বালাময়ী সে ভাষণ
তুমি ধানের শীষে মিশে থাকা শহীদ জিয়ার স্বপন
তুমি ছেলেহারা মা জাহানারা ইমামের একাক্তরের দিনগুলি
তুমি জসিম উদদীনের নকশী কাথার মাঠ, মুঠো মুঠো সোনার ধুলি
তুমি তিরিশ কিংবা তার অধিক লাখো শহীদের প্রাণ
তুমি শহীদ মিনারের প্রভাতফেরী, ভাইহারা একুশের গান
আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি
জন্ম দিয়েছো তুমি মাগো, তাই তোমায় ভালোবাসি
আমার প্রাণের বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি
প্রাণের প্রিয় মাগো তোকে, বড় বেশী ভালোবাসি।

তুমি কবি নজরুলের বিদ্রোহী কবিতা, উন্নত মম শির
তুমি রক্তের কালিতে লেখা নাম, সাত শ্রেষ্ঠ বীর
তুমি সুরের পাখি আব্বাসের দরদভরা সেই গান
তুমি আব্দুল আলীমের সর্বনাশা পদ্নানদীর টান
তুমি সুফিয়া কামালের কাব্যভাষায় নারীর অধিকার
তুমি স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের শাণিত ছুরির ধার
তুমি জয়নুল আবেদীন, এস এম সুলতানের রংতুলির আঁচড়
শহীদুল্লাহ কায়সার, মুনির চৌধুরীর নতুন দেখা সেই ভোর
আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি
জন্ম দিয়েছো তুমি মাগো, তাই তোমায় ভালোবাসি
আমার প্রাণের বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি
প্রাণের প্রিয় মাগো তোকে, বড় বেশী ভালোবাসি।

তুমি বিস্মৃত লগ্নমাধুরীর জলে ভেজা কবিতায়
তুমি বাঙ্গালীর গর্ব, বাঙ্গালীর প্রেম, প্রথম ও শেষ ছোঁয়ায়
তুমি বঙ্গবন্ধুর রক্তে আগুন জ্বালা জ্বালাময়ী সে ভাষণ
তুমি ধানের শীষে মিশে থাকা শহীদ জিয়ার স্বপন
তুমি একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে বেজে ওঠো সুমধুর
তুমি রাগে অনুরাগে মুক্তিসংগ্রামে সোনাধরা সেই রোদ্দুর
তুমি প্রতিটি পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধার অভিমানের সংসার
তুমি ক্রন্দন, তুমি হাসি, তুমি জাগ্রত শহীদ মিনার
আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি
জন্ম দিয়েছো তুমি মাগো, তাই তোমায় ভালোবাসি
আমার প্রাণের বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি
প্রাণের প্রিয় মাগো তোকে, বড় বেশী ভালোবাসি ।

(বিঃদ্রঃ এটা নিতান্তই আমার ব্যক্তিগত তালিকা। তাই কারো ভালো নাও লাগতে পারে। সবার চিন্তা-চেতনা তো আর এক না। তাই আপনাদের কোন পছন্দ থাকলে জানানোর চেষ্টা করবেন। আর মানুষ মাত্রই ভুল, তাই দয়া করে কোন ভুল থাকলে তা ধরিয়ে দিবেন।)
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×