somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভ্রমন কাহিনী ৪ - কক্সবাজার অভিযান

০৬ ই জুন, ২০১৪ রাত ১১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চট্টগ্রাম অভিযান এর পর থেকে......

এক
কক্সবাজার যাত্রা

চট্টগ্রামের একটা হোটেলে আমরা।
রুমির ডাকে ঘুম ভাঙলো। ও অনেক আগেই হোটেলে এসেছে আমাদের সঙ্গে থাকা ব্যাগ গুলো জমা রাখার জন্য। প্ল্যান ছিলো ১টা ব্যাগ রেখে বাকি গুলো ওর কাছে জমা রাখব যাতে আমরা একটু রিল্যাক্স মুডে কক্সবাজার ঘুরতে পারি। রাতে আমরা তিন জনই বেসুমার ঘুমিইয়েছি, ফলে রুমি আমাদের রুমের বাইরে কড়া নাড়ে-মোবাইল করে কিন্তু আমাদের ঘুম আর ভাঙ্গে না। এভাবে বেচারা রুমি ঘন্টা খানেক হোটেলের বাইরে থাকার পর টেনিদা রুমের দরজা খোলে তারপর আবার শুয়ে পড়ে তারপর আবার সটাং খাট থেকে উঠে আমাদের তাড়া দিয়ে বিছানা থেকে তোলে। গোটা দলের টীম লিডার হিসাবে তার তো একটা দায়িত্ব আছে নাকি!

টেনিদা সপাং ডাবল প্যান্ট পরে, ৩টে বস্ত্র গায়ে চাপিয়ে বলে যা ত্যাঁদড় শীতরে বাবা রাতে কি হয় কে জানে। আমিও একটার ওপর আরেকটা প্যান্ট পরে রেডি হয়ে নেই। ওদিকে লজিক রাব্বি বেশ ইয়ো ইয়ো মুডে অ্যাংরি বার্ড এর লাল গেঞ্জি পরে রেডি। এই গেঞ্জি নিয়ে ঢাকায় বার কয়েক খেপানো হয়েছে। রাব্বি ওটা পরে কক্সবাজার নামলো আর দেখা গেলো গেদুবাচ্চা থেকে শুরু করে হাফ প্যান্ট পরা বাচ্চারাও ওই একি গেঞ্জি পরে গুটু গুটু পায়ে সারা কক্সবাজারময় ঘুরে বেড়াচ্ছে!

সকালের নাস্তার জন্য আমরা রুমির পছন্দের একটা রেস্তোরায় গেলাম। খাসীর মাংস, ঘিলু আর পরোটা দিয়ে নাস্তা করে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে তুলতে বাস স্ট্যান্ডে অপেক্ষা করছি গাড়ীর জন্য। এসময় রুমি দিলো বড় চমক। আমাদের যাওয়ার বহর দেখে সেও বলে যাবে আমাদের সাথে। টেনিদা দাঁত খিকিয়ে বলে তাই চলো তবে টিকিট তো পাওয়া চাই। এই যাত্রায় ও ভাগ্যকে কাঁচকলা দেখিয়ে টেনিদা লাস্ট সীটের একটা টিকিট বগলদাবা করে দাঁত কেলানো বিজয়ের হাসি মুখে নিয়ে টিকেট কাউন্টার থেকে বের হয়ে আসলেন।

বেস্ট বাস সার্ভিস অব দ্যা ওয়ার্ল্ড (!) বিআরটিসি এর একটা এসি বাসে সকাল ১১ টায় শুরু হলো আমাদের কক্সবাজার যাত্রা।

দুই
পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার

দুপর আড়াইটা নাগাদ আমারা সৌন্দর্যের লীলাভূমি কক্সবাজারএসে পৌছলাম। এর আগে হিমছড়ি, ইনানী না লাবণী বীচে যাওয়া হবে এই নিয়ে বার কয়েক বাকবিতান্ডা হওইয়ার পর স্থানীয় জনগণের ভোটে লাবনীবীচে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।(এর আগে হিমছড়িআর ইনানীতে অবশ্য আমি ২০০২ এ একবার যাই) আর তাছাড়া ৩১ শে রাত উপলক্ষে রাতে এখানে (লাবনী) কনসার্ট হচ্ছে। আমরা হাটছি আর দেখছি, দেখছি আর হাটছি। টেনিদা আর রুমি আনমনা হয়ে উঠেছে।

কক্সবাজারের সৌন্দর্য শুধু দেখার, বর্ননার নয়। অসীম আকাশের নীচে অসীম এ সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশের এক আশ্চর্য সম্পদ।

টেনিদা মনেমনে হই-হল্লোরে মাতোয়ারা এই সমুদ্র সৈকতে রাতের শীত ঠেকানোর ছক কষছেন। তিনি এক একটা প্ল্যান বলেন আর নিজেই নিজের বাহবা দিয়ে বেশ জমিয়ে তুলেছেন। তার একটা প্ল্যান হলো বেশী শীত হলে বালু খুঁড়ে তাতে শুয়ে বালু চাপা দেওয়া, এটা বলেই মুখে এমন একখানা ভাব ফুটিয়ে তুল্লেন যেন ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড এর পরবর্তী সীজনের হোস্ট তিনিই, কোথাকার কোন ছোকরা ব্যাক গ্রীল না ফ্যাক গ্রীল তার অনুপস্থিতির সুযোগে বেশ টাকা কামিয়ে নিচ্ছে এই প্রোগ্রামকরে!

দুপরে (প্রায় বিকালে) একটা হোটেল থেকে সমুদ্রের রূপচাঁদা আর ইলিশ মাছ দিয়ে খাওয়া-দাওয়া করে আমারা আবার বেরিয়ে পড়লাম বীচে হাটাহাটি করতে। এর মধ্যে লজিক্যাল রাব্বি এক বাজি ফেঁদে বসে আমার সাথে! একটা সীমানা দেখিয়ে বলে হেঁটে ওখান থেকে ফিরে আসতে পারলে ৫০০ টাকা। আমি রাজি হয়ে রওনা দেবো দেবো রাব্বি তখন আরেকটু দূরে নতুন সীমানা দেখিয়ে বলে আমি কিন্তু ওইটার কথা বলছি! এবারো রওনা দেওয়ার মূহুর্তে রাব্বি বলে ওখান থেকে এখানে এসে আবার ৯০ ডিগ্রি এঙ্গেলে উলটা দিকও যেতে হবে যতদূর চোখ যায়!! মানে বীচের এমাথা ওমাথা আমাকে যেতে হবে যতদূর চোখ যায়! এই না হলে লজিক্যাল রাব্বি। রুমি আর টেনিদা এই নিয়ে লজিককে খেপিয়ে তুললে ও গড় গড় করতে থাকে আর জোরপূর্বক সেই ঠিক আছে এটা বোঝাতে চায়। তুমি রাব্বি আবার বাজি লাগো এই বলে টেনিদা বিটকেল হাসি দিয়ে ইয়ারকির মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়


ছবিঃ সমুদ্রে দাঁড়িয়ে আমার বছরের শেষ সূর্যাস্ত দেখা।

তিন
বছরের শেষ সূর্যাস্ত

বিকালের মৃদু আলো চিকমিক করছে। আমি পানিতে নেমে পড়লাম। টেনিদা উদ্ভ্রান্তের মত দৌড়া দৌড়ি করছে (হাঁটার মতো)। এদিকে আমি বোধহয় বিশেষ কিছু করে বসলাম। আমি আমার ছিপে ছিপে শরীর নিয়ে দৌড় লাগালাম সমুদ্রের ঢেউ এর সাথে, পানির মধ্যে কিন্তু বিশেষ দৌড়ানো যায় না ফলে আমাকে নাকি বাংলা ছিনেমার টেলি সামাদের মত দেখাচ্ছিল সেই রকম! তীরে ফিরে রাব্বি আর রুমি দাঁত কেলিয়ে কেলিয়ে বলল আমার এই দৌড় নাকি পুরো কক্সবাজার বাসি হা করে দেখেছে! এতটাইএন্টারটেইনিং ছিলো!

সূর্য লালচে আলো ছড়িয়ে ডুবে যাচ্ছে আমি সমুদ্রে দৌড় ঝাপ দেওয়ার ফাঁকে ফাঁকে তা দেখছি। আমাদের সবার জন্য সেটা একটা অসাধারন মুহূর্ত। অন্তত এরকম একটা সূর্যাস্ত দেখার সৌভাগ্য হওয়ায় আল্লাহ তায়ালার কাছে অশেষ সুকরিয়া।

আগেও একবার বলেছি এখনও একবার বলছি সমুদ্র তীরের সন্ধ্যা মায়াবি। মায়াবী সন্ধ্যায় সমুদ্রের গর্জন আর চারিদিকে আগুন আলোর যে আবেশ তার সাথে পৃথিবীর সমস্ত দুঃখ সাথে নিয়ে ঝাপিয়ে পড়া যায় অচেনা কোন সুখের জন্য (একটু বেশী কাব্যিক কথা বলে ফেললাম হে হে)

চার
বারবি কিউ পার্টি

হোটেল কি প্যারাডাইস যেনো। সেখানে ভয়ঙ্কর অর্থ খসিয়ে নাম লেখালুম বারবি-কিউ- পার্টিতে। চারিদিকে তালেতালে বাজছে হিপ-হপ মিউজিক। রঙ্গিন আলোর খেলা ছড়িয়ে পড়েছে রাস্তার আনাচে কানাচে। টুনাইট ইজ অ্যা পার্টি নাইট। উপর্যপুরি তন্দুর, চিকেন, বটি কাবাব আর কোল্ডড্রিঙ্কস খাওয়া হলো। আর একটা স্পেশাল খাবারের কথা না বললেই নয়, সেটা সালাদ। কিভাবে সালাদটা বানানো কে জানে, এই সালাদ খেতে খেতে দিন রাত পার করে দেওয়া যায়। টেনিদা আর লজিক তো পারলে সালাদের বাটি খেয়ে ফেলে।

দুটো ছাতা ঠিক করলাম আমরা (সমুদ্রের পাশে গাঁ এলিয়ে দেওয়ার ওই ছাতা)। দিনের বেলায় এই ছাতা পাই নাই। প্রচন্ড ভীড় থাকে দাম ও বেশী থাকে। তো এই ক্ষোভ ঝাড়াড় জন্য রাতে ছাতা ভাড়া নেওয়া। টেনিদা রীতিমত ছাতাওয়ালাদের ঠেঙিয়ে(ছাতা দিবি না আবার!) ২ টো ছাতা আদায় করে নিলেন ঘন্টা ৫০ টাকায়! ওদিকে কনসার্ট শুরু হয়ে গেছে, আমারা একটু জিড়িয়ে নিচ্ছি যাতে রাত ১২ টায় ফুল এনার্জি থাকে। টেনিদা বেশ আয়েশ করে সিগারেট টানতে টানতে দূর থেকে ভেসে আসা গানের সাথে সাথে তাল দিতে লাগলেন।

পাঁচ
শুরু হলো নতুন বছর

একের পর এক গান গেয়ে যাচ্ছে তারকা শিল্পীরা। সবার নাম মনে নেই (এন্ড্রু কিশোর, হৃদয় খান এরা ছিলো) আর থেকে থেকে আকাশে আতশবাজি ভেসে উঠছিলো। টেনিদাকে এর মধ্যে ভীড়ে হারিয়ে ফেলেছি আমরা। মোবাইল নেটওয়ার্ক জ্যাম হয়ে আছে, তাকে কানেক্ট করা যাচ্ছে না। এরকম পরিস্থিতি হতে পারে যেনে আমরা একটা হট স্পট ফিক্সড করে রেখছিলাম, বিশেষ একটা টাওয়ার। তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করা হলো। টেনিদা বেশ ভারিক্কি চালে ঠোঁটে সিগারেট গুজে দিতে দিতে এমন ভাব করলেন যেনো তিন হারিয়ে যান নি হারিয়ে গিয়েছিলাম আমারা!

রাত ১২ টা বাজতে ১০ সেকেন্ড বাকি। সমুদ্র তীরের হাজারো জনতা একি সাথে কাউন্ট ডাউন শুরু করলো। ১০, ০৯,......... ...০৫......০৩। বিপুল আলোক বিস্ফোরনে কেঁপে উঠলো কক্সবাজারের আকাশ বাতাস। নতুন বছর শুরু হয়ে গিয়েছে। একের পর এক আতশবাজিতে ছেয়ে যাচ্ছে আকাশ। অসাধারন অনুভূতি, স্মরণীয়মুহূর্ত। দিগ্বিজয়ের আনন্দে আমরা আবার হেটে বেড়াতে শুরু করলাম কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে।



ছবিঃ আমার সহযাত্রীরা । ( বা থেকে- রাব্বি, রুমি আর টেনিদা)


ছবিঃ রাতের কনসার্ট।


ছবিঃ রাতের কনসার্ট।
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×